22 Dec 2015

মদের ঝাঁকুনি


ঝাঁকুনিটা কার বেশী পড়েছিলো
শীতের না গাড়ির ?
ধুর্ ধুর্ ! মদের খালি ঝাঁকুনি
ছলকে ছলকে পড়ে যায় হাতে
জামায় প্যান্টে গাড়ির সিটে
শেষে ফ্লোর ম্যাটে


মদের ঝাঁকুনিতে মাথা নাড়াই হতাশায়
মদের ঝাঁকুনিতে প্রবীরদাকে চেয়ে দেখি
মদের ঝাঁকুনিতে রাস্তা ছোটে ফুলস্পিডে
মদের ঝাঁকুনিতে আবার
ছলকে ছলকে পড়ে যায় হাতে
জামায় প্যান্টে গাড়ির সিটে
শেষে ফ্লোর ম্যাটে


এতো ঝাঁকুনিতেও
বেরোয় না কলমের কালি
পেটে পড়ে না ঝাঁঝের ঝরনার ঝননরণন
দাঁতের কামড় বসাই দু-তিন পকোড়ায়
তাও অতিমাত্রা হতাশায়
ছলকে ছলকে পড়ে যায় হাতে
জামায় প্যান্টে গাড়ির সিটে
শেষে ফ্লোর ম্যাটে


রয়্যালিটি হলো না
চ্যালেঞ্জিং হলো না
হাতের গ্লাস শুধু শুধু
ওঠে ইঞ্চির ধাপে ধাপে
ফের নামে সেন্টিমিটারের ধাপে ধাপে
ফ্লোর ম্যাটের একফুট আগে অবধি 


ছলকে ছলকে পড়ে যায় বিষাদে
আমার মদের আমোদে

14 Dec 2015

চুম্বকীয় ফ্রেশনার


১.
কেউ একজন হাই তুললে বেরিয়ে পড়ে একটানা চুম্বকীয় ফ্রেশনার । তারপর থেকে হাই তোলার পরম্পরীণ হাওয়া চারদিকে খেলে বেড়ায় । খেলতে থাকে এর ওর মুখে । ছোঁয়াচে বলে কেউ কেউ তুড়ি মেরে কাটিয়ে দেয় । বাকিরা আর তেমন প্রোটেক্ট করে না । চাদরচাপা পড়ে লম্বা হয়ে যায় একে একে । যা ঘটে গেলো তাতে কোথাও নাটক নেই অথচ বেশ নাটকীয়তার ছাপ আছে ।

২.
এই স্টেজ থেকে হেঁটে ফিরে ওই স্টপেজ অবধি । এই পেজ থেকে পড়া শুরু করে ওই ফুটেজ খাওয়া পর্যন্ত । এতো টালবাহানা সহ্য করে কেউ ? না । কিন্তু কে একবারের জন্য থেমে ভাববে যে সবকিছুতে আসলে লুকিয়ে থাকে এজের একমুখীনতা ? অভিজ্ঞতা ম্যাটার করেও না এই ক্ষেত্রে । শুধু বিশ্রাম চাই সবার । বিশ্রামের সাথে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই ।

৩.
উপুড় হয়ে শুয়ে আছি এখন । পিঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আমার ভবিষ্যৎ । নিশ্বাসের সাথে উঠছে আর প্রশ্বাসের সাথে নামছে । আমি চিৎ হতে পারি না এই সময় । চাইও না । ভবিষ্যতে কী আছে জানি না তাও আমার হার্ট মাটিকে খালি বিট করে যাচ্ছে । প্রতি মিনিটে গড়ে বাহাত্তর বার 'হিট দ্য ফ্লোর' । এটাই বাস্তব । বাস্তবের অপর নাম ভাগ্যোৎসব ও সংস্কৃতি ।

৪.
অনেকে হয়তো মানতে চাইবে না ভাস্কর চক্রবর্তীর দুটি লাইন -
"হাতচিঠির দিন শেষ,
যৌন-বন্ধুত্বের যুগ শুরু হলো" । আমিও মোবাইলের যুগে গ্যাঁট হয়ে বসে থেকেও মানতে পারছি না কিছুতেই । হাত ও হাতের আঙুল সমানে চলে এখনো । চিঠি চলে এখনো ইনবক্স টু আউটবক্স । যৌনতার সংজ্ঞা নিয়ে পুরাণ ঘেঁটে দেখার চেয়ে বন্ধুতে বন্ধুতে যৌনশিল্পের লেনদেন অনেক আরামদায়ক । অনেক সহজ । বরং পুরাণ যারা লিখে গেছেন, তাদের কাছের বন্ধুরাও যৌনতৃপ্তির একশোটা উপায় বাতলে দিতে পারতেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।

৫.
দিন ছোটো হয়ে এলেই বড়দিন আসে । রাত বড়ো হতে না হতেই সান্টাবিরোধী হয়ে উঠি । শূন্যে ঘুষি মেরে বলি শীত আসছে না কেন । এও একধরণের অসহিষুতা । সান্টা ক্লজের লাইফ এবছর হয়তো প্যারিস অ্যাটাকের মতো কিছু একটায় শেষ হতে চলছে । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা । এদিকে শীতের জন্যে রইলো উপেক্ষার ক্রিসমাস ট্রি । সাজুগুজু করে আছে যেখানে সেখানে আরো একবার ধর্ষণ হবে । সরি ভুল বললাম । একবার নয়, অনেকবার । শীতে বর্ষায় গরমে বসন্তে - বারে বারে ।

8 Dec 2015

সাদা খরগোশের বিষণ্ণতা


তোমাকে ক্যাডবেরি দেবো
পরিবর্তে একটু দিতে পারবে
ওই সাদা খরগোশের বিষণ্ণতা ?
পিওর কটন
একজামা দুঃখের সাথে হালকা ফর্মালিটির মাখামাখি


রাস্তায় নেমে পড়েছি, তুমিও এসো
অন্ধকার অন্ধকার খেলবো
দুজনে মিলে
কুসংস্কারের ককটেল খাবো না আর
নারীবিদ্ধেষী মকটেল ছোঁবো না আমরা দুজন
দুজনে মিলে খেলবো 

অনলি ডার্ক অ্যান্ড ডার্কার

মনে পড়ে । গতদুপুরে যে হাসিটা দিলে
ভালোই ছিলো সেটা
কেন মুছে দিলে ?
নতুন পেনসিল কেনার পয়সা আছে বলে
নাকি চলতি সপ্তাহের অনিশ্চয়তায় 


ক্যাডবেরি শেষ
ঠোঁটে লেগে আছে কিছু নিঃস্বতার দুধ
আমার আঙুল চলবে না তবুও
এই অন্ধকারে
খরগোশটি বরং একটু আমার সাথে থাকুক না
শেষ কয়েকটি প্রহরে

30 Nov 2015

বিজ্ঞান, ইতিহাস, ছাদ, কন্ডোম ও চাঁদ


#
গরম ধোঁয়া ঠেলে চায়ের মধ্যে বিস্কুট কিছুসময় ধরে চুবিয়ে রাখলেই প্রচুর নুন, দুধ, বেকিং পাউডার এর ওর থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে সাঁতরে বেড়ায় । বিক্ষিপ্তছন্দে । ছোটো কাপটার সীমাবদ্ধতা তখনই হয়ে ওঠে অপরিসীম । বিজ্ঞানকে তখনই বড্ড ঘেন্না করতে ইচ্ছে করে । বিজ্ঞানীদের গায়ে থুথু ফেলার জন্য ক্ষুদ্রমন ছটফট করে । স্টিফেন হকিংস, আইনস্টাইন, নিউটনদের তত্ত্বগুলোর উপরে কাপটাকে উল্টে গরম চা ঢেলে তছনছ করে দিতে ইচ্ছা করে । 


#
ম্যাসিডোনিয়া না মাকেদোনিয়া কোনটা বলা শোভনীয় এই ভেবে লাভ নেই । গ্রীস, যুগোস্লাভিয়া আর বুলগেরিয়ার মধ্যে কে যেন দানার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে ম্যাসিডোনিয়াকে যাতে বহুযুগ আগেকার হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনবে সাদা পায়রাগুলো । পারবে কি তারা এমন জাতীয়তাবাদকে ঠোঁটে তুলে নিতে ? তুললেও হয়তো গলা দিয়ে নামাতে পারবে না, কারণ সেইসময়কার বীর আলেকজান্ডার নিজের এক পরমবন্ধুকে খুন করেছিলো । অঃ একটা কথা বলে রাখি - ছুরি উঁচিয়ে কারো বুকে তৎক্ষণাৎ বসিয়ে দিয়েছি এরকম দৃশ্য চোখের সামনে মাঝেমাঝে ভেসেও ওঠে । 


#
আমরা অনেকে ছাদে যাই । সিঁড়ির প্রতিটা ধাপে খচিত থাকে ছাদে যাওয়ার ইতিহাস । যে একলা বৃদ্ধ বা একলা বৃদ্ধা অকপটে বলে ফেলে, "আমার যা পাওয়ার বা চাওয়ার বা হওয়ার সবই পেয়েছি । এখন শুধু উপরে যাওয়া বাকি" । তাদের জন্যে বোধ হয় এইসব ছাদ নিষিদ্ধ একটা জায়গা । ছাদকেও ছাড়িয়ে যেতে হবে কিনা । ভাবতে কেমন যেন একটা লাগে । মনটাও বড়ো আকুল হয়ে ওঠে এসময় । আসলে আমি একজন ছাদপ্রেমী, অথচ আমাকে একদিন ছাদকে শেষবারের মত ছুঁতে না পেরেই চলে যেতে হবে । 


#
সত্যির চেয়ে মিথ্যা সংখ্যায় বহুগুণ বেশি । বহুগামিতা মিথ্যার একটি বড়ো চরিত্র । মিথ্যার বিশেষ কোনো সামাজিক তকমা নেই । থাকলেও সেটা হয় সেকেলে টাইপের বা আদিবিপ্লবী পচাগন্ধ গোছের । কেউ কি বুঝতে পারছে না যে সত্যির জন্মহার কমে আসছে ? ওদিকে মিথ্যার জন্মহার বাড়লেও মৃত্যু নেই বরং পপুলেশন বাড়িয়ে চলার লক্ষ্যে স্থির । আমি লুকিয়ে লুকিয়ে বানাবো মিথ্যার জন্মনিরোধক কন্ডোম যা সুযোগ বুঝে সকলের জিভ টেনে বের করে পরিয়ে দেবো । জানি না তোমরা আমাকে কী ভেবেছো । তবে জেনে রেখো নিজের জিভটাকেও বাদ দেবো না এই সুযোগতালিকা থেকে । 


#
বেডরুমের জানলার বদলে বাথরুমের জানলা দিয়ে চাঁদ দেখতে বেশি ভালোবাসি । নামমাত্র বাথরুম, অথচ বাথকে রোজ রোজ পূর্ণতা দেয় দিনেরবেলার আলো । এই একঘেয়েমি কেটে যায় রাত্রিবেলায় বিছানা ছেড়ে যখন বাথরুমে ঢুকি আর চাঁদের হাসিমুখ দেখতে পাই । চাঁদ সবসময় দেখা দেয় না বলে হয়তো এই বাথরুমের একটিমাত্র খোলা কাঁচের জানলাকে আরো বেশি আবেদনময়ী লাগে । এতোটাই যে ফ্ল্যাস্ করতেও ভুলে যাই । গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বালিশের কাছে ফিরে যাই একরকমের নেশা নিয়ে ।

কাগজের এরোপ্লেন


কাগজের এরোপ্লেন । একটা নয় । দশ-বারোখানা । বানাতে বানাতে দুই পেগ ততক্ষণে শেষ । ব্লেন্ডারস্ প্রাইড নিয়ে কি আর থাকা যায় ?! তোমার প্রাইড বা কী নিয়ে শুনি আগে ? জানো না তো । হা হা হা । আমিও জানি না কীসে প্রাউড ফিল করি । পিয়ারলেস ভবনের সামনে যে অল্পঠাণ্ডার ভীষণ হাওয়া খেলে সেই হাওয়ায় কী এমন আছে ? দশটা এরোপ্লেনের মধ্যে একটা না দুটোমাত্র ওড়ে রাজভবন থেকে শহীদ মিনার অবধি । বাকীসব পায়ের কাছে টলোমলো খেয়ে পড়ে । 

টেবিলের তলায় কুড়ে পাওয়া এরকম একটা কাগজের ভাঁজ খুলে দেখি বার্ ডান্সারদের শরীরীভাষায় লেখা কিছু অজানা কাহিনী । চাইনিজের মতো ততটা অবোধ্য নয়, নর্থ ইন্ডিয়ানের মতো ততটা রিচ নয় । পেটে সয় এমন নৃত্য, প্রাণে সয় এমন নারীসৌষ্ঠব । আমরা কয়েকজন মিলে বধির, তবু আমাদের কান সোজা গিয়ে পড়ে ওদের শরীরে ।

ওদের খোলা বগল আমাদের তিরিশ মিলিলিটারের সমান । একটাও চুল নেই তাই চুমুকের পর চুমুক চলে নিশ্চিন্তমনে । আমরা ধরে নিই যে পাইলট হয়ে চালাচ্ছি । কী চালাচ্ছি হুঁশ নেই, তবে যাত্রীসংখ্যা নেহাত কম নয় । পাশের টেবিল থেকে যেন শোনা যাচ্ছে প্রকৃত পাইলটের বাউলিয়ানা । ককপিট হঠাৎ করে মাতোয়ারা হলে যা হয় । কাগজের শেষ ভাঁজটুকু না খুললে এতোকিছু ঘটতো না বইকি । 

বিল চলে আসে । কাগজের বিল । মাথার এ-পাশ ও-পাশ কাটিয়ে এরোপ্লেন ওড়ে । সেটাও কাগজের । প্রথমটার জন্যে বন্ধুরা আছে । দ্বিতীয়টার জন্যে শিল্পীহাত দুটো আছে যা কখনো থামে না । ভুল করলেও ।

23 Nov 2015

হাঁসদের হাঁটাচলা


চলো, হাঁসদের হাঁটাচলা একটু দেখে আসি । হাঁসদের পেছনের দিক থেকে আমরাও হাঁটবো আর দেখবো ওদের ওয়াকিং স্টাইল । বেশ ফ্যাশনেবল্ লাগে । সাঁতাররত হাঁসদের দেখতে যতটা মধুর, তার চেয়ে বড় আকর্ষণীয় এদের 'হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়ে' । একটা করে পা ফেলার সাথে এদের বডি সুইং করে । 

ক্লাস এইটে পড়ার সময় বাড়ির টিভিতে কেবল্ আসে । ফ্যাশন শো বলে একটা চ্যানেল ফ্লিপ করে করে দেখতাম আর প্রায়-ই দেখি অর্ধস্বচ্ছ বা স্বচ্ছ পোশাক পরা মেয়েদের নির্বিকার মুখ নিয়ে ক্যাটওয়াক । বুঝতাম না এদের উদ্দেশ্য ঠিক কী ? বাজারে আসা নতুন নতুন ডিজাইনের জামাকাপড় গায়ে পরে শো করা নাকি জামার তলায় থাকা রক্তাভ-সাদাচামড়ায় মোড়া ঈশ্বরদত্ত ডিজাইন শো করা ? গায়ে জামা ফিট হলো কি হলো না তা নিয়ে মডেলদের বা ডিজাইনারদের কারো মাথাব্যাথা নেই । শুধু হেঁটে যাও, একটু থেমে ইচ্ছেমতো পোজ মেরো, ফিরে এসো । ব্যাস্ । তবু নিয়ম করে দেখতাম চট করে চ্যানেলগুলো ঘোরাতে ঘোরাতে । যতদূর মনে পড়ে এই বিশেষ চ্যানেলের নম্বর ছিলো নাইন্টি এইট, যদিও একবারে নয় আর আট টিপে দেখার সুযোগ পাই নি কখনো ।

হাঁটাচলার মধ্যে যে একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট, পার্সোনালিটির কিছু পার্সেন্ট বাঁধা আছে তা অনেক পরে ফিল করতে শুরু করি । কেউ সামনের দিকে একটু ঝুঁকে ঘাড় কায়দা করে বেঁকিয়ে হাঁটে, কেউ পিঠ সোজা রেখে মাথা নিচু করে হাঁটে, কেউ আবার সবকিছুর মাঝামাঝি যার উপরে পথযাত্রীদের চোখ পড়ার চান্স সবথেকে কম । তার সাথে রয়েছে হাঁটার স্পিডের রকমারি । কারো কম, কারো আবার অস্বাভাবিক বেশি কোনো তাড়া না থাকলেও । 

ইন্টারন্যাশনাল সেলিব্রিটিদের হাঁটাচলার ধরণ কেমন একটা ঘোরলাগা । সেলিব্রিটি বলেই হয়তো তাই লাগে । ব্যারাক ওবামাকে ইয়ং মডেলদের মত করে হাঁটতে দেখে কতবার মুগ্ধ হয়েছি । তাকেই এতে মানায় । মোদীকেও দেখি তার নিজের মত করে হাঁটতে । মন্দ লাগে না । কানাডার সদ্য প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডিও যেভাবে রিপোর্টারদের প্রশ্নের পর প্রশ্নের জবাবে হাঁটার ছন্দ একইরকম রেখে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলো সেটাও বেশ ঈর্ষণীয় । চোখের অভ্যাস বলে যদি ব্যাখ্যা দিতে হয় সেটা হবে ভুল । যেমন হেঁটে হেঁটে হেঁটে হেঁটে ৩৪ বছরের গর্বচূর্ণ করার একক কৃতিত্ব যার তার সেই হাঁটাচলা আজও জঘন্য লাগে । ধীরতা নেই, ধৈর্যতা নেই, ছন্দ নেই, ছন্দপতনও নেই । মন্ত্রী মন্ত্রী ভাব, কিন্তু ছন্নছাড়া ভাব । 

তার চেয়ে চলো হাঁসদের হাঁটাচলার উপর একটু নজর দিই । নিজের খানিকটা হাঁটাও হবে যদিও কোনোদিন জানতে পারবো না কেমন করে যে হাঁটি...

শিকড়গড়া মনের সন্ধানে


বিস্তৃত শিকড়গড়া মন যার, সে কখনো কারো ক্ষতি করে না । নিজে আরো ডুবে যায় কল্পনায় । অন্তরালে চলতে থাকা একরকমের অস্তিত্বহীনতা । নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার নেশা । তলে তলে এমনকি পাতালে তার নানাবিধ ডালপালা মেলতে থাকে । মেট্রোরেলের কর্তৃপক্ষও টের পায় না এমন অভিজাত আত্মহননের গুপ্তকথা । 

নীলুর একমাত্র বোন নতিস্বীকার করে নি । দেড়বছর হলো সে কেরোসিন দিয়ে কেলো সিন ক্রিয়েট করে চলে গেছিলো । পৃথিবীর মাটির উপরেই । প্রকাশ্যে । আলো বাতাস যথেষ্ট ছিলো । দর্শকমাত্র ছিলো তার পরিবারবর্গ । তার এই চলে যাওয়াটা স্টেজের ম্যাজিসিয়ানের বিপজ্জনক খেলার একটা 'ইচ্ছাকৃত' ভুলের সমান । দারুণ একটা শো-অফ ছিলো তার সেই হলুদ-লাল-কালচে-বাদামী ভয়াবহ আগুনে অন্তর্ধানদৃশ্য । 

কি ভয়াবহ ! কি ভয়াবহ ! ঈর্ষা করা একধরণের হীনমন্যতা । এতে পৃথিবীর বাকি কারো কিছু গো-কাম হয় না । 

নীলু একদিন বলেছিলো মন খারাপ করা নাকি একপ্রকারের আরামপ্রিয়তা । গোয়ায় সমুদ্রের ধারে অচেনাদের ভিড়ে একলা ডাবে স্ট্র । দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে মনখারাপের অ্যান্টিজেনিক সুড়ুৎসুড়ুৎ স্যালাইনের বিলাসিতা ।

ফুড়ুৎপাখির মত সুখ ! বহুদিনের পুরোনো মাকড়শার জাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারার সুখ । এমন সুখের মকটেল বিনা পয়সায় পাওয়া যায় । প্রস্তুতিপর্ব ও রেসিপি ছাড়া ।

আমি আহত হই এসব বুঝতে বুঝতে । অতিরিক্ত জ্ঞানাহত হওয়া মোটেই সুখকর নয় । স্টারমার্কে ফের চলে যাই । চলে যাই অসংখ্য শিকড়গড়া একটিমাত্র মনের সন্ধানে, যেখানে বাস্তবজ্ঞানের প্রবেশাধিকার নেই ।

16 Nov 2015

বিচির ছিরি


কার যেন মন্ত্রে তিনবার কেঁপে উঠলো । শীত শীত আর শীত । সারা গায়ে সে ভালো করে ছায়া জড়িয়ে নিলো । ছায়ার তলায় আমি ও তোমার গত তিনরাত্রি ।

পাহাড় কেটে দিচ্ছে অসংখ্য পা । হাতগুলো আকাশের দিকে । চাঁদের গায়ে আঙুলের ছোঁয়া লাগে । মাটিমাখা নখের হালকা খোঁচা পেয়ে রক্ত ঝরে । আজকের তারিখটা মুছে দিয়ে নতুন বাঁক নিলো সে ।

পেডোফিলরা হাসে । শিশুরা হাসে । ছায়াও হাসতে হাসতে খুলে পড়ে যায় তার গা থেকে । একগ্লাস জল খাবো বলে সে । সামনে নদী থাকতেই বাড়ি কেন ? স্টিলের গ্লাসগুলো ভেসে ওঠে । জিজ্ঞাসু চোখের সামনে, পিপাসু মনের অনেক রাতে ।

আমাকে পাগল ভেবে চুপটি করে বসে থেকো না । জোরে জোরে বলো যে আমি একটা সুস্থ পাগল । যাতে গোটারাত শুনতে পায় তোমার গলা ও আমার পাগলামির কিছু ধাতবশব্দ । দুটো স্টিলের গ্লাস একসাথে ঠুকে দিলে যেরকম শোনায় ।

এতক্ষণে চাঁদের আলো পেলো নদীর বুক । শীতের সেই বিচ্ছিরি মন্ত্র তবুও থামে নি । চাঁদের গায়ে ঝিন্নির দাগ লেগে গেলেও বোঝা যায় সে কতখানি বিচির ছিরি ।

'দুনিয়া এক হও' দু'দলে ভাগ হয়ে আসছে


যেখানে স্বপ্ন অধরা মনে হয়, সেখানে কেউ আদৌ সেই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে পেরেছে ?

যেখানে বিপদসংকুল অঞ্চলে যাওয়া বারণ, সেখানে মানুষের দুঃসাহসিকতা কেউ আদৌ আশা করতে পেরেছে ?

যেখানে শব্দবাজির নিষিদ্ধতা নিয়ে কড়াকড়ি, সেখানে পটকা ফাটার বাড়াবাড়ি নিয়ে কেউ আদৌ থামাতে পেরেছে ?

যেখানে খোলাপোশাক যৌনকামনা জাগায়, সেখানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড়ে ঢাকা মহিলাদের টার্গেট করার সম্ভাবনা কেউ আদৌ কল্পনা করতে পেরেছে ?

যেখানে স্কুলের ছাদে যাওয়ার ন্যূনতম রাস্তাও বন্ধ, সেখানে কিশোরকিশোরীদের আবেগবুদ্ধির জোরে নিজেদের ছাদে যাবার রাস্তা বের করা কেউ আদৌ আঁচ করতে পেরেছে ?

যেখানে প্রাণীহত্যা আইনত অপরাধ বলে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে, সেখানে রবিবাসরীয় মাংস পরমতৃপ্তিতে চিবিয়ে খাওয়ার বদলে কেউ আদৌ মুখ ফুটে বলতে পেরেছে ?

যেখানে ক্লাইমেট নিয়ন্ত্রণ করার পন্থা নেওয়ার কতকগুলো নিয়ম বের করা হয়েছিলো, সেখানে গ্লোবাল টেম্পারেচার তিল তিল করে বাড়তে থাকায় কেউ আদৌ খবরে জানার আগে নড়েচড়ে বসতে পেরেছে ?

যেখানে গেরুয়া-সাদা-সবুজ নিয়ে যে মানুষের প্রকাশ্যে ব্যঙ্গবিদ্রূপ, সেখানে নীল-সাদা-লাল গরাদে সেই একই মানুষের বন্দী থাকার স্বাভাবিকতা-অস্বাভাবিকতার প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেউ আদৌ দিতে পেরেছে ?

যেখানে থামাতে পারা ও থামতে জানা এই দুটোর মধ্যে চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেখানে গাদাগুচ্ছের আবেগের ডিম পেড়ে মেন্টালিটির বিচিত্র রঙের বলগুলো নিয়ে অবচেতনে জাগলিং করার অভ্যাস নিয়ে কেউ আদৌ সচেতন হতে পেরেছে ?

"কেউ আদৌ পেরেছে ?" এটা বোধ হয় আর প্রশ্ন হয়ে থাকবে না । পেরেছে কোথাও না কোথাও, কিন্তু সেগুলো অনেকাংশে ইম্প্রোভাইজেশন থেকে ঘটে এসেছে ।

পৃথিবী এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে শেষের দিকে এগোচ্ছে যেটা সারা বিশ্বজুড়ে মানুষদের সচেতনতার অভাবে বা নিজেদের অ্যাকশনপ্ল্যান নিয়ে ভুলভ্রান্তির সৌজন্যে । তার সাথে উগ্রপন্থী ইসলামদের রাজত্বের ভবিষ্যৎ খুব সুন্দর ছন্দে পা মিলিয়ে হাঁটছে এতে আশ্চর্য হবার কী বা আছে ! পৃথিবীর প্রাকৃতিক ধ্বংসের সাথে সাথে আইসিস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনদের লম্বা লম্বা কর্মসূচীর শেষতম কাজটি যেন একই দিনে একই মুহূর্তে সম্পাদিত হয়ে যাক, সেই আশা রেখে চলা যাক ।

এভাবে 'দুনিয়া এক হও' দু'দলে ভাগ হয়ে আসছে । সে দশটা বছর লাগুক কি একশোটা বছর লাগুক ।

11 Nov 2015

পরীক্ষার্থী ও শিখা


জীবনের সবথেকে বড়ো ধৈর্যের পরীক্ষায় বসলাম ।

খোলা আকাশের নীচে কালচে ধোঁয়াটে ছাদ । এই একলা পরীক্ষার্থীকে ঘিরে কাছেদূরে এ-বাড়ির গা ও-বাড়ির গা । এ-ছাদের পাঁচিল ও-ছাদের পাঁচিল । এ-চিলেকোঠার ঘর ও-চিলেকোঠার ঘর । প্রায় সবেতে-ই আস্তানা গেড়ে বসেছে টুনির ঝলমলে পরিবার । এমন উৎসবমুখর পরীক্ষাগারে দিব্যি হাওয়া । চামড়াশুকানো ঠাণ্ডা । কোনাকুনি একটা সিমেন্টের বেঞ্চের তলায় মোমবাতি । মাথায় তার নিভুনিভু জ্বলন্ত, শিখা উন্মত্ত ।

ছবিতে বুক উঁচু । হলদেটে ক্লিভেজ - কোমর বেঁকানো । পুরো সেডিউজড্ । একনিমেষে খুলে ফেললাম । বেরিয়ে এলো কতকগুলো বারুদকাঠি । চুমকির মত ঝিকিমিকি সবকটাই । একটা বাছলাম । মোমবাতির দিকে এগোলাম । নিরীহ কামানের মত তাক করা হলো । শিখার মুখ খালি এদিক ওদিক করছে, "প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও, পায়ে পড়ি" । তাও শিখাকে হ্যারাস করে যাচ্ছি । তার মুখে কাঠি খুঁচিয়ে মলেস্ট করে যাচ্ছি । একবার ভাবি তার মুখখানা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরি তাহলে শুভকাজটা সেরে নিতে পারবো । না, সারামুখে শুধু আগুন । পুড়ে যাবে হাত । অগত্যা খুঁচিয়ে দিতে থাকি তার অস্থির মুখে । মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক তাকাই । পাক খাওয়া খ্যাঁক হাওয়া, উত্তর না জানা অসহায় আমি আর একগুঁয়ে জেদী শিখা । ত্রিকোণ ক্যাওস । প্রেমের এক বারুদ-ও লক্ষণ নেই । 

কোমর টনটন করছিলো । হাঁটুর ডিম পচে যাচ্ছিলো । চোখের তারা গলে গিয়ে খসে পড়ে যাবে এমন ট্রানজিশন । শিখা কখন যে আমার দিকে তাকাবে ? ততক্ষণে শিখার বয়স একমিনিটের হিসেবে একটা বছর ধরলে পনেরো-ষোলো মিনিটে ষোড়শী হয়ে গেছে । কোন যে শাস্ত্রের একটা শ্লোকে বলা আছে - ষোড়শী রমণ সর্বব্যাধিহর । শাস্ত্রের এমন বচন কি মিথ্যা হয় ? কাঠির প্রথমাংশ শুধু কালো হয়ে গেলো ।

আকাশের দিকে নিরুপায় মুখ তুলি । রকেটগুলো উড়ছে । ফেটে ফোয়ারার মত লাল-সবুজ-সোনালী হয়ে আকাশের কোষ্ঠ প্রকোষ্ঠ ভরে দিয়ে মিলে যাচ্ছে । হঠাৎ দেখি হাওয়া নেই । কেবল আমি আর শিখা । আর কেউ নেই এই একলা ছাদে । সাথে সাথে শিখা স্থির হয়ে আমার দিকে তাকালো । তারা ফুটলো অবশেষে । 

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে সহনশীলতা একান্ত কাম্য । তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি কোনোমতে গ্রাহ্য নয় । এটাই রি-উপলব্ধি করলাম পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ।

9 Nov 2015

গোলাপের রং হলুদ হতে পারে


নুলিয়ার গায়ের রং কালো হলেও লোহার মত শক্তপোক্ত শরীরের সাথে নিজের পুরুষসদৃশ শরীরকে সমর্পণ করে লেপ্টে থাকার কামনাবাসনাক্ষুধা পরিমলের মত কাল্পনিক চরিত্রের মধ্যে থাকা কতখানি যে সত্য, কতটুকু বা স্বাভাবিক সেটা আঁচ করতে শুরু করলাম । 

না, ভুল ভেবেছো । এখানে লেখক স্বপ্নময়দার সৃষ্টিচরিত্র পরিমলের সাথে আমার কোনো মিল নেই । আমি নিজে নুলিয়ার জায়গায় থেকে সদ্য আলাপ হওয়া এক গে বন্ধুর ফিলিং বোঝার চেষ্টা করছি কিছুদিন যাবৎ । বন্ধুটি একবারও বলে নি, "অ্যাই আম আ প্রাউড গে" । একবারও মুখ ফুটে উচ্চারণ করে নি, "আমি পুরুষ হয়ে জন্মালেও মনেপ্রাণে সম্পূর্ণ নারী" । অথচ তার চালচলন বলে দেয় আমাদের থেকে আলাদা । মেয়েলি গোছের বলতে যা যা উপলক্ষণ সবই তার মধ্যে উপস্থিত । আমি এমন নই যে এলজিবিটি-এর অন্দরমহল নিয়ে বিশেষ উৎসাহিত, বরং সামনে এরকম কাউকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকানো আমার বরাবরের অভ্যাস । স্পষ্টত অস্বস্তিজনক অভ্যাস যাকে বলে । বিবেকে লাগলো কিনা সেদিকেও মন সায় দেয় নি । গত শুক্রবার মুকবধিরদের একটা ক্লাবের নতুন সদস্য হবার সুবাদে ওখানকার পুরোনো সদস্যদের সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলাম । তাদের মধ্যে একজন মুকবধিরের চলাফেরা, আচারআচরণ যেন স্বাভাবিক ঠেকছিলো না বেশ কিছুক্ষণ ধরে । চেহারায় একটু রোগাপাতলা এবং ছোটোখাটো । আরেকটু খেয়াল করতেই যা সন্দেহের উদয় হলো সেটা অমূলক কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্যে একজনকে ডেকে জানতে চাইলাম । যা অনুমান করেছিলাম সেটাই । একটু হলেও ব্যাপারটা রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছিলো আমাকে ।

মুকবধিরদের জন্য আলাদা সামাজিক স্বীকৃতি । অন্ধজনদের জন্য আলাদা সমাজগঠন । অ্যাসিডাক্রান্ত মহিলাদের জন্য আলাদা দলবদ্ধ সংগঠন । সন্তানদের উপেক্ষা পেয়ে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য আলাদা পৃথিবী । মৃগীরোগীদের জন্য আলাদা আলোবাতাস । যৌনকর্মীদের জন্য আলাদা ঝড়বৃষ্টি । এই আলাদা আলাদা সমাজের কথা আমরা আকছার জেনে থাকি নিউজে বা সোশ্যালমিডিয়ার সৌজন্যে । এলজিবিটি-এর তেমনি আলাদা গ্রুপও আছে মূল-সমাজের অলিগলিতে তা খোঁজার সাধ্যবহির্ভূত আমরাই বেশিরভাগ । আবার একরকমের দল নিজেদের ছাড়া সম্পূর্ণ অন্যরকমের দল বা তাদের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ । করতেই বা যাবে কেন ?! এটাই সমাজের বহুচ্ছিদ্রময় ছবি । কিন্তু টু-ইন-ওয়ান ? দুটো ভিন্ন সমস্যা যদি একজন মানুষের মধ্যে থাকে ? আমার দেখা ক্লাবের সেই বন্ধুর মধ্যে দুটো রকমের জিনিস বর্তমান - মুকবধির প্লাস গে । এই পৃথিবীতেও অবশ্যই এরকম সম্ভব । হেলেন কেলার একইসাথে অন্ধ ও মুকবধির । আমার মামাবাড়ির এক প্রতিবেশীর ছেলে একইসাথে মৃগীরুগী প্লাস অর্থোপেডিক্যালি প্রতিবন্ধী । এরকম জোড়া জোড়া সমস্যা নিয়ে জীবনে চলতে থাকার মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় যতই অন্তরালে পড়ে সচেতনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাক । 

সেই মেয়েলি পুরুষবন্ধুর সাথে আমার চোখাচোখি হতেই আমি অস্বস্তিজনক অভ্যাসে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম । কিন্তু সে স্মার্টভঙ্গীতে এগিয়ে আমার সামনে হাজির হলো আর সাইন লাঙ্গোয়েজে জানালো, "সোমদা, আমি তোমার নাম অনেক শুনেছি । তুমি আমাদের গর্ব ।" আমি বিনয়ী সেজে কিছু বলার আগে কোত্থেকে এক দাদাটাইপের মুকবধির এসে সোজা তার মাথায় চাঁটি মেরে চা আর বিস্কুট আনার নির্দেশ দিলো । ব্যবহারের মধ্যে একটা হ্যাটা, একটা ঘেন্না, একটা অপমান এবং একটা দুর্বলের উপরে শক্তির আস্ফালন সবমিলিয়ে খুব প্রকটিত হয়ে আমার চোখে আর মনে এসে আঘাত এনেছিলো । সদ্য সদস্য হয়েছিলাম বলেই কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেছিলো আমার । পরে সুযোগ পেয়ে ওর কাছে গিয়ে নাম বাড়ি সব জিজ্ঞেস করলাম । হাতের মুদ্রায় যেটুকু বোঝার তা বুঝে নিয়ে যেই বন্ধুসুলভ হাসিটা দিলাম করমর্দন করতে করতে । সে হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ধরে নিজের শরীরকে আমার শরীরের সাথে লেপ্টে ছিলো । আমি ছাড়াবার চেষ্টা করতে গিয়েও পারিনি । 

বলতে দ্বিধা নেই যে কলেজজীবনে প্রথম প্রেমিকার প্রথম আলিঙ্গন, পরবর্তীকালে নানা আবেগের পাল্লায় পড়ে মেয়েবন্ধুদের নরম তুলতুলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা, বর্তমানে বৌয়ের শরীরী আদর - এগুলো পেয়ে এসেছি । কিন্তু এই একমাত্র 'গে'বন্ধুর ওইরকম আকস্মিক আমাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথা আমার বুকে রাখার মেয়েলিপনা খুব একটা 'আলাদা'ও নয় । অস্বস্তির সাথে সাথে বেশ রিয়্যালাইজ করছিলাম ওর শরীরীভাষায় বেজে উঠেছিলো কোনো এক পুরুষপ্রেমিক খোঁজার আর্তি, সে এক সম্পূর্ণ নারীসুলভ বেদনা । সে ছিলো এক অনন্যসুন্দর অনুভূতি । আমার চোখে কখন যে জল এসে গেছিলো জানি না তবু কোথায় গিয়ে সংবরণ করেছিলাম ।

স্বপ্নময়দার লেখায় পড়েছিলাম একজন সমকামীর সপ্রতিভ উক্তি -"গোলাপের রং হলুদ হতে পারে । সাদাও হতে পারে ।"

2 Nov 2015

কতবার যে কুলকুচি করেছি


শুধু শুধু 'মাস্টার'-আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেলো । ব্রিজটা এখন 'আপনি'তে উঠে ক্রমদীর্ঘমান ।

ঝিঙেপোস্ত দিয়ে ভাত মেখে মুখে পুরে দিতেই বুঝতে পারলাম আমার এমন নিজের খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবৃত্তির যতটা সামাজিক কারণ আছে, তার চেয়েও বেশি রয়েছে স্বজাগতিক কারণ । তবুও আমারটা খুবই ক্ষুদ্র দেখায় তার বিচারবুদ্ধিতে । উল্টে ব্রিজটার দীর্ঘতা তার হাতে ।

পুঁটিমাছের মুড়ো চিবোতে চিবোতে চোখ বুজলাম । সে হয়তো জানবে না এমন বনসাই-বোধ আমার ছোটোবেলা থেকে নিত্যসঙ্গী । এমন লিলিপুট-দর্শন আমার মায়ের পেটের রক্ত থেকে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাহিত হয়ে আসছে । 

অবশেষে দুটো খালি বাটিসহ একটা গুচ্ছকাঁটাসুদ্ধু বাটি একে একে তুলে থালায় রাখতে রাখতে খেয়াল করলাম ব্রিজটা পার করার সাধ্য আমার থাকলেও সেই সুযোগটুকু দেবে না, যতদিন না আমার জগতের ভিতরদেশ তার মানচিত্রে জায়গা পাচ্ছে । আমার 'ভুল'টাকে শোধরানোর জন্যে আমি নেই, কারণ আমি নিজেই ভীষণ 'মিসটেক'প্রবণ । 

নিজের মুখ ধুয়ে ফেললাম, তার রাগ মুছে ফেলতে পারি নি । পারবো কিনা জানি না, তবে আর জোর নেই ব্রিজটাকে ভেঙে চুরমার করে ফেলার ।

সে নিশ্চয়ই জানে কতবার যে কুলকুচি করেছি ।

26 Oct 2015

সময় খুঁজে পাবি না


- সময়, তোমার ব্যাপার স্যাপার দেখছি আলাদা ।

- মানে ? কিসে আলাদা আমি ?

- লোকে তোমায় সম্মান করে সেটা বোঝো না ।

- না তো ।

- বাহ্ রে শালা ! লোকে বলে তুমি নাকি নিজে গিয়ে সব ঠিক করে দাও । কথায় কথায় তোমার নাম মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করে, 'সময় সব ঠিক করে দেবে' ।

- দূর ব্যাটা ! আজকাল লোকের অত সময় নেই আমার নাম মনে রাখার । যখন বলে, 'আমার সময় খুব কম' কিম্বা 'আমার একদম সময় নেই রে', তখন বুঝে উঠতে পারি না যে জ্বলন্ত কয়লা হয়ে পুড়ছি না ছাই হয়ে উঠছি । শুধু ভিতরে ভিতরে অসম্ভব কষ্টে মরি ।

- হুম । সে তো ঠিক । একে বলে সময়ের দুঃসময় । কেউ আর তোমার সাথে থাকতে চায় না, কারণ তোমাকে শুধু ২৪ ঘন্টায় বেঁধে রাখা হয় না । কোটি কোটি আলোকবর্ষতেও তোমার নাম পাল্টায় না ।

- আমার নাম পাল্টাবে বা কেন ?! নাম স্থিতিশীল হলেও গতি একমুখী এবং একই হারে প্রগতিশীল । যদিও মাঝে মাঝে স্লো হই বা ফাস্ট ও হই পাঁচ-দশমিনিটে লোকের লাইফস্টাইলের কথা মাথায় রেখে । 

- ঠিক ! তাই বলে তো আমি ঘড়িতে তোমাকে পনেরো মিনিট এগিয়ে রেখেছি । দেখছো না তোমাকে কত ভালোবাসি যে সামনের দিকে এগিয়ে রেখেছি । আই লাভ ইউ, সময় !

- ভালোবাসার নিকুচি করেছে ! আজকাল দেশেবিদেশে আমার নাড়িভুঁড়ি সব বের করে কীসব টেকনোলজি দিয়ে বিদঘুটে একটা যন্ত্র বানিয়ে বসছে । কী বলে তাকে যেন ?

- টাইম মেশিন ?

- ইয়েস ইয়েস । ওই ভূতুড়ে কাণ্ড চলছে আমায় ক্লোনিং করে আর উল্টোদিকে ছুটছে লোকজন । সাদাকালো স্মৃতি, সেপিয়া অ্যালবাম,মোনোক্রমের রমরমা একটু চেখে দেখতে অ্যাত্তো বাড়াবাড়ি করার মানে বুঝি না । সত্যিই বুঝছি না, ভাই !

- আরে ! এটা তো মজা । এরে কয় খ্যাতির বিড়ম্বনা । আমি হলে এরকম একটা টাইম মেশিন পেলে চড়বো-ই চড়বো । কিন্তু পাই কোথায় ? হাম গরীব আদমি হ্যাঁয় ।

- ঝাট জ্বালাস না তো । লাখ লাখ কামাচ্ছিস । আমার ইউনিট বছরহিসেব ধরলে দশটা মাইলস্টোন কমপ্লিট হলে তুই শালা কোটিপতি হবি রে । সবাইকে না হলেও আমাকে তো ভুলে বসবি নির্ঘাত ।

- কখনোই না । তোমাকে কি ভুলতে পারি আমি ? পনেরো মিনিট এগিয়ে রাখা কি চাড্ডিখানি কথা ? তাছাড়া ওইরকম একটা টাইম মেশিন পেলে তোমার অমন সুন্দর মুখখানা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাবো । বলো যাবে তো ?

- না, যাবো না । আমার কাজ শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা । বাকিসব আমাকে ফলো করে প্রতি সেকেণ্ডে । পৃথিবীর ঘূর্ণনকালের সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উল্টোপথে হেঁটে বিশ্বকে কনফিউজড করে দিতে চাই না ।

- আরে ব্যাকএন্ডে চলবে তোমার সরি মানে তোমার ক্লোনের মোটর । আর তুমি রিয়েল থাকবে যেমনটি আছো আর ফ্রন্টএন্ডে চলতে থাকবে । কেউ কিছু করবে না । অযথা চাপ নিও না এসব নিয়ে । টেকনোলজির পক্ষে সবই সম্ভব ।

- থাক ! তুমি তোমার টাইমমেশিন নিয়ে কেটে পড়তে পারো । আমাকে আমার মতই চলতে দে । 

- কি মুশকিল ?! একটুও দেখতে ইচ্ছে করে না তোমার শৈশবকাল ? তোমার আবিষ্কারক কে সেটা আমরা কেউ জানি না, অনেকে হয়তো নানাভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছে তোমাকে নিয়ে সে বিজ্ঞানে হোক, ধর্মে হোক বা দর্শনের হাত ধরে হোক । কিন্তু নিজের ক্ষেত্র নিয়ে সেই বির্বতনের ইতিহাসে চোখ রাখতে কৌতুহল হয় না তোমার ? সময়, তুমি এত অনাগ্রহী নিজের দেশের বাড়িঘর নিয়ে ?

- স্টপ ইট ননসেন্স ! এভাবে আমাকে নস্ট্যালজিয়াতে জড়াবি না । আমার নিজের বড় একটা সম্পদ হলো নস্টালজিয়া । তাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে একদম পছন্দ নয় আমার । ওকে যত্ন করে ভাঁজ করে বুকপকেটে রেখে চলি । বুকপকেটের দিকে তাকাই না ভুলেও । শুধু চলি আর চলি । 

- তোমাকে নিয়ে আর পারি না । তোমার জেদের কাছে হার মানতে হচ্ছে । অথচ চারপাশে দেখি টাইমমেশিন নিয়ে লোকের ম্যানিয়া । আর তোমার তাতে ভ্রুক্ষেপ ও নেই । বেশ তো । চললাম আমি ।

- যা । তবে ঘড়ির ব্যাটারি চেঞ্জ করতে ভুলিস না । নাহলে আমাকে আর পাবি না ।

- দেখা যাবে । সময় পেলে চেঞ্জ করবো ।

- আগে চেঞ্জ কর । চেঞ্জ না করলে আমাকে থুড়ি সময় খুঁজ পাবি না । 

- বস্ ! আমার সময় হবে কিনা জানি না ।

- হা হা হা । রাগ করলি ? আচ্ছা বুঝলাম । আমার কিন্তু আয়-উপায় নেই । চলি আমি । শুধু চলি আর চলি ।

12 Oct 2015

'আইস এজ'


সবে হাই ফেভার থেকে সেরে উঠেছে । এখনো বেশ দুর্বল । দুর্বলতার সামনে দিয়ে হেঁটে চলছে দুই অ-বন্ধু । ম্যানফ্রেড ও সিডনি । গুরুগাম্ভীর্যবাহী ম্যানফ্রেড তথা ম্যানিকে ফলো করতে করতে একসময়ে জিজ্ঞেস করলো সিড - "হোয়াটস্ ইওর প্রবলেম?", জবাবে ম্যানি একবিন্দুও না থেমে সোজাসুজি জানালো - "ইউ আর মাই প্রবলেম ।" বরফমাঠের উদ্দেশ্যহীনতা, শুকনো গাছগাছড়ার একাকীত্ব, ঝোড়োহাওয়ায় পাতার সহজে ছিঁড়ে যাওয়ার করুণত্ব, হারিয়ে যাওয়া একটি ফুটফুটে শিশুর অভিভাবকতা ঘিরে শত শত 'প্রবলেম' নিয়ে অ্যানিমেশন মুভি 'আইস এজ' । একেকটা প্রবলেমের সাথে জুড়ে থাকে এক বা একাধিক ফানি মোমেন্টগুচ্ছ । যেন মজাদার মুহূর্ত ছাড়াই প্রবলেমগুলো ঠিকঠাক ডিফাইন করা যায় না ।

ওষুধক্লান্ত দুর্বলতার সাথে জোটে খিলখিল হাসির দ্যুতি । অনেকটা এইরকম দ্যুতিময় আলো দেখেছিলাম সদ্যখোলা ফ্লাইওভারের দুধার ঘেঁষে । যদিও যাই নি ওদিকে । কারণ কেসটা প্রবলেমেটিক । সাতমাথার ক্রসিঙে সংকটময় অবস্থার খবর পড়লাম গতকাল আর আজ দুদিন পরপর । কাল থেকে নাকি শুরু হয়ে যাবে পাড়ায় পাড়ায় পূজো যা শুনে অনেক উদ্যোক্তার ভ্রু কুঁচকে যায়, "এতো দেখছি মহাঝামেলা" । আদেশ দিদির ছাড়া আর কারুর নয় । তার কাজ কেবল প্রবলেমবাজি করা । মাঝে মাঝে আপনমনে হেসে যাই এই ভেবে যে সুনীলের যুক্তিসিদ্ধ কর্ণপ্রীতির চেয়ে প্রকটিত হয়ে ওঠে কর্ণচরিত্র নিয়ে পাঠকসমাজের দু'পক্ষের মধ্যে 'আপনার সমস্যাটা ঠিক কোথায়' রেষারেষি । ফ্লাইওভার পেরিয়ে পার্কসার্কাস মোড়ে নামতে না নামতে দুই পক্ষ থেকে বেড়ে সাত পক্ষের গোলমাল শুরু হয়ে যায় । 

সর্বনাশ হয়েছে । ধোনি নাকি আর আগের মত খেলতে পারছে না । ভাবছি গোটাভারতের প্রতিনিধি হয়ে সিড্ যদি এগিয়ে ধোনিকে জিজ্ঞেস করে বসে - "হোয়াটস্ ইওর প্রবলেম?", তবে তার উত্তরে ধোনি কি সত্যিই সত্যিই একদিন ম্যানির মত সেই ম্যামথ টাইপের ছোবল মারতে পারবে যা দেখলে জনস্রোত আবার আগের মত সাতপক্ষ থেকে দুইপক্ষ থেকে একপক্ষে নেমে স্বাভাবিক ছন্দে চলতে শুরু করবে ? 

'আইস এজ'কে দুভাগে আলাদা করলে দাঁড়ায় আইস অর্থাৎ বরফ যার মানে ঠাণ্ডা কুল এবং এজ অর্থাৎ বয়স যা শুধু ক্রমবর্ধমান । ধোনি নিশ্চয়ই মুভিটা দেখেনি যা দুর্বলশরীর নিয়ে আমার ছেলে তিন-তিনবার দেখে ফেলেছে । এতে নিজের বা অন্য কার কোথায় কী প্রবলেম হবে বা হচ্ছে তাতে ছেলের ভারী বয়ে গেছে ।

28 Sept 2015

লাস্ট সুতো


এটা লাস্ট সুতো । ছিঁড়ে ফেলা যায় একটু পরে । কিম্বা কাল পরশু ব্রেকফাস্ট সেরে ক্যাঁচ করে কেটে দেওয়া যায় । অথবা নেকস্ট উইকেণ্ডে লাঞ্চের পর দাঁতে চেপে একটানে পগারপার করিয়ে দেওয়া যায় । একটু দেরী হলেও সামনের মাসের সব বিল মিটিয়ে টিটিয়ে সুতোটাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা যায় । লাস্ট তো । শেষ বলে ছয় হাঁকার মত টেনশন নেই । শেষ বাস মিস করার মত তাড়া নেই । শেষ ট্রেনে উঠতে না পারার মত চাপ নেই । এই সুতোটার প্রতিকূলতার সংশয়ে ও অনুকূলতার বিষয়ে অতশত ব্যতিব্যস্ত না হয়ে সুপারকুল থাকা শ্রেয় ।

ভাষণ দিতে দিতে স্টেজে আব্দুল কালামের আকস্মিক পতন একটা ঘটনা । দুর্ঘটনাবশত ভাগ্যবঞ্চিত দুঃ গোছের কেস । প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীবিয়োগ আরেকটা কেস । হঠাৎপ্রবণ কালের নিয়মের সাথে নিজেদের তৈরী নিয়ম মিশিয়ে দেবার জন্যে কোনো হালুম শোনার দরকার নেই । হালুম শোনার আগেই বেমালুম কারুর খাদ্যবস্তু হয়ে যেতে পারে বুকের বাঁদিকের টিপটিপুনিটা । তাই বলে এতো ছটফট করার কি আছে ?! কালামের শেষ বক্তৃতায় কোনো ব্যস্ততার ছাপ ছিলো না কারণ তিনি জানতেন না ওইভাবে দুম করে নিভে যাবেন । প্রণববাবুও জানতেন না তাই সুস্থির ছিলেন অনির্ণীত বিয়োগফলের আগে পর্যন্ত, ফের যোগ দিলেন নিজের কাজের জগতে । সুতোর ব্যাপারেও একই কথা খাটে । হয় নিজে থেকে কেটে ঝুলে যাবে, না হয় মানবদেহের যেকোনো একটা সামান্য ধারালো অংশ দিয়ে সুতোটাকে 'দ্য এণ্ড' করবে । সে নরম মাংসপিণ্ডের জিভ হতে পারে, আবার রক্তবাহী মারণরোগ ও হতে পারে ।

সিএবি-এর সেই সুতোটা মিস্ করেছে জনগণ । দেখেও ভালোভাবে দেখতে পেলো না - কবে কী ভাবে লাস্ট সুতোটা বেরিয়ে গেলো । বলা যেতে পারে লাস্ট সুতোটার যা মাহাত্ম্যকাহিনী তা পরিপূর্ণ হবার সুযোগ হলো না । দরকার ছিলো একটা সুনির্বাচনের অপেক্ষা যা অতি পরম যত্নে সুতোটা কেটে ফেলে দিতে পারতো জনসমক্ষে, জনগণের মতামতের কাঁচির ধার নিয়ে । তা হয় নি । মুখ্যমন্ত্রীর সুপারফিসিয়াল দিদিগিরি অনেককাল ধরেই আমাদের মুখস্থকরা নামতার মধ্যে পড়ে রয়েছে । তার সাথে যুক্ত হলো মহারাজের জিভের বেনোজল । এমন লোভী যার হাবভাব 'সম্মানটা আগে নিয়ে নিই, যোগ্যতা পরে দেখাবো' । ঠিক দাদাগিরিসুলভ নয় । 

কেকেআর আর পুনে ওয়ারিয়ার্স দুটোতেই 'শেষ সুতো' নিয়ে দাদার তাড়াহুড়ো-গিরি কেউ ভুলবে না আশা করি । তেমনি সিএবি-তে 'যোগ্য'পদ পাবার লোভে দুনিয়ার চলতি সমস্ত অপেক্ষাকে উপেক্ষা করে লাস্ট সুতোটাকে পটাং করে ছিঁড়ে ফেলা একটা জঘন্যতম কীর্তি ।

14 Sept 2015

হারিয়ে গেলো কানের লতি দুটো


কোথায় যে হারিয়ে গেলো ফুটোসহ কানের লতি দুটো । নরম তুলতুলে । টোকা মারলে খুদে স্প্রিংয়ের মত দু-তিন নড়ক নড়ে এমন হাড়বিহীন কানের লতি জোড়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সকাল থেকেই ?! শুধু পড়ে আছে হীরের দুল জোড়ায় জোড়ায় । কী যে হবে এই দুলগুলোর ! আর তো ফুটোতে চড়ে ঝুলতে পারবে না । বোধ হয় কানের লতি দুটো কেউ চুরি করে নিয়েছে । হীরের দুল ছেড়ে কানের লতি ?! কেসটা কম আশ্চর্যের নয় বইকি ।

হাতের কব্জিও হাওয়া । হাতের নাড়ি যেখানে টিপটিপ করতো, সেখানে এখন একটা চারআঙুল সমান ফাঁক । মনে হচ্ছে কেউ জীববিদ্যার ল্যাবে কাজ করবে বলে কব্জিটা কেটে নিয়ে গেছে । রোলেক্স বা টাইটান বা এস্পিরিট বা ফসিলস্ এদের যান্ত্রিক কারুকার্য যেন গুরুত্বহীন আজকাল । কাঁটা ঘোরানোর পেছনে যে জটিল প্রযুক্তি কাজ করে তার মূল্য কব্জির চেয়েও কম । কী যে দিনকাল পড়েছে !

কার বা কাদের এত বড়ো স্পর্ধা এইসব চুরি করার সেটা জানি না । তবে বুঝতে পারি একটা আস্ত হৃৎপিণ্ডের দাম কত হতে পারে এই গরমবাজারে । প্রাণচুরি গেছে অথচ প্রাণহীন মানুষটা আরামসে খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমোচ্ছে এমন গল্প কেউ কোনোদিন শুনে থাকলে অবাক হবে না । কারণ টাকার লোভের চেয়ে বড় অপরাধ হলো বোধবুদ্ধির এলোমেলোতা ।

8 Sept 2015

হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়াম


অত বালবিচার না করে একটা দেওয়াল বেছে নিলাম । তার উপরে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকলাম । সারা শরীরের ভর হাতদুটির উপরে ছেড়ে দিলাম । দেওয়াল-হাত-আমি-মেঝে মিলে একটা ট্রাপিজিয়াম তৈরী হলো । বাড়তি বলতে আমার গলাসহ মাথা । হ্যাঁ গলাসহ । গলাকাটা মাথা দিয়ে হয়তো হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়ামটার মতো জিনিস বানানো সম্ভব হতো না কোনোদিন । সারামৃত্যু ট্র্যাপড্ হয়ে থাকার সত্যিই কোনো মানে হয় না । মৃত্যুরূপ জীবনক্ষুধার রয়্যাল্টি রয়্যাল চ্যালেঞ্জ দিয়েও মাপা যায় না । 

মাথাটাকে মেঝের দিকে ঝুঁকে ডান পা একটু তুলে দেওয়ালকে নিজের সমস্ত শক্তিদান করার চেষ্টা করলাম । দেওয়াল কিন্তু নিজেই একটা ধ্রুবক । জানি আমার এমন ঢ্যামনামিতে তার কিছু যায়ও না আসেও না । কিন্তু তাতে কী হয়েছে ! আমিও আমার খোলনলচেসুদ্ধ ঢ্যামনাঢ্যামনি নিয়ে এক ঊজ্জ্বল ধ্রুবতারা । যতই ঠেলা দিই ধ্রুবককে, ধ্রুবতারার মত জ্বলতে থাকি সমানুপাতিক হারে । রাতের আকাশের একধারে আসল ধ্রুবতারা দেখতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছাদের সিঁড়ি দুপদাপ করে ভাঙে, ঠিক তেমন এই নকলাধমকে দেখতে কেউ যদি ধানসিঁড়িটি চুপিসারে ভেঙে আসতো তো ভালো লাগতো ।

ক্রমেই বাড়তে থাকে । এই শক্তিবৃদ্ধির আরেক নাম হলো ফ্রাস্টুলেপনা । এর দিন নেই তো রাত থাকবে ? এর বিরাম নেই তো ব্যারাম থাকবে ? এর আরাম নেই তো হারাম থাকবে ? থাকবে না আবার ? আলবাৎ থাকবে । সব থাকবে বলেই তো কিছু আর বাকি থাকে না । শুধু হতচ্ছাড়া হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়ামটা একইভাবে পড়ে থাকে ।

17 Aug 2015

পেটস্থ কথা


যে কথাটা বলবো ঠিক করেছিলাম সে এখনো পেটের ভিতরে । আঙুল টিপে দেখলাম পেটের নানা জায়গায় কোথাও কথার প্যাঁচ রয়েছে কিনা । কোথাও সেরকম কিছু নেই । নিশ্বাসবন্ধ করে ভুঁড়ি কমাতে কমাতে একসময় পাঁজরের সীমারেখা পেরিয়ে ভিতরের দিকে ঠেসে দিলাম পুরো পেটটাকে । তাও কথাটা কঁকিয়ে উঠলো না । কী করি ? কী করি ? নাভিকে ঘিরে থাকা পাতলা লোমজঙ্গলে আঙুলের বুলি কাটতে থাকলাম যেভাবে গর্ভবতী মায়েরা মাখনের মত মসৃণ ফোলাপেটে হাত বুলিয়ে আনমনা হয়ে থাকে । মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে শিশু মুখ লাল করে ওঁয়া-ওঁয়া কাঁদে । মায়ের পেট শিশুর প্রথম ও শেষ অন্তর্জাগতিক ক্লাসরুম কিনা । কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে ক্লাস থেকে বার করলে যেমন হয় । 

আমার ওই বলবো-বলবো কথাটা নিতান্ত যে সে নয় । আবার বের করাও মোটে সহজ নয় । একবার বের করলে আর ঢোকানো যাবে না । কথাটা কাঁদবে না ঠিক, তবে অন্যকে কাঁদাতে পারে বোধ হয় । আমি নিজেই কাউকে কাঁদাবার পাত্র নই, অথচ কত কেঁদে কেঁদে বুড়ো হচ্ছি । ভারী চিন্তায় পড়লাম পেটস্থ কথাটা নিয়ে । কেমন হবে কথাটা ? খিস্তি হবে না মিষ্টি হবে ? যদি খিস্তি হয়, তাহলে ভালো হয় । অনেক মিষ্টি কথাকে শাসন করে দিতে পারবে এককথায় । এই খিস্তিতান্ত্রিক সমাজে কে না চায় ?! আর যদি মিষ্টি হয় ? তাহলে হাজার চিন্তা তাকে ঠিকঠাক সেফটি দেওয়ার ব্যাপারে । একদিন একলা রাতে চলার পথে যদি সব খিস্তিরা মিলে সুযোগ পেয়ে মিষ্টিকে টেনে হিঁচড়ে...ওমা গো বাবা ! খুব ভয় লাগে ! অমনি কথাটি একদিন মিষ্টিবাদী হয়ে উঠবে ? কথার মিছিল বেরোবে যখন তখন ? অসম্ভব ! অসম্ভব টু আ গ্রেট এক্সটেন্ট !

এতো ভেবে কী লাভটা হচ্ছে ? এই কলিযুগে খিস্তি মিষ্টি সব সমান । একেকটা দেবশিশুকে জন্মের পর থেকেই ছোটোবড়ো পাপের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় অজান্তে, তেমনি এই না-বলা একটামাত্র কথার মধ্যে দেবত্ব ধরে রাখলে কেমন যেন দমবন্ধ লাগে । 

কাজেই বের করে ফেলা যাক কথাটিকে । কোনো কনসাল্টেশন ছাড়াই । তারপর যা হবার তাই হবে ।

3 Aug 2015

সবাই তোর মতো আর আমি সবার মতো


আমি তোর বাবা হলে তোর সাথে বসে একসাথে জুতো পালিশ করতাম,

আমি তোর মা হলে ইলিশভাজা টুকরো টুকরো করে তোর মুখে গুঁজে খাওয়াতাম,

আমি তোর দিদি হলে তোর ডান কানটি মলে দিয়ে বলতাম, "ন্যাকামো হচ্ছে!",

আমি তোর বোন হলে তোর বাঁ কানটি মলে দিয়ে বলতাম, "আমার কারেন্ট বয়ফ্রেণ্ডের মন তোর চেয়েও অনেক শক্ত!",

আমি তোর দাদা হলে তোর মাথার পিছনে চাঁটি মেরে তোর আঙুলের ফাঁকে 'বাহুবলী'র দুটো টিকিট ঠুসে দিতাম,

আমি তোর ভাই হলে মিলান কুন্ডেলা-কে একপাশে ঠেলে তোর কাছে ফ্লার্টিং টিপস্ নিতাম,

আমি তোর প্রেমিকা হলে তোর ডান হাত তুলে আমার বাঁ স্তনের উপরে চেপে রাখতাম,

আমি তোর খুব কাছের বন্ধু হলে বলতাম, "বস্, তুই আমাকে কীভাবে ভেঙে পড়তে হয় একটু শেখাবি ?" 

আমি আদতে তোর কেউই নই,
তাই হাসছি ঘেমো জাঙিয়া টেনে নামাতে নামাতে ।


সবাই তোর মতো
আর আমি সবার মতো, 


আলাদা শুধু আমাদের রাস্তায় এবং তার জায়গায় জায়গায় গর্তের সাইজে ।

28 Jul 2015

শুধু জিভের সুবোধ্য নড়াচড়া


কাকে না কাদের আঁকতে আঁকতে
নিজে কখন যে হয়ে গেলাম একপ্রকারের
নড়বড়ে প্রোফাইল, 


খেয়াল ছিলো না । 

নিজেকে তখন একটা কাঁচফ্রেমে বাঁধবো বলে গেছিলাম
পাড়ার একটা দোকানে ।


দেখলাম অজস্র প্রোফাইলসহ ফ্রেম
বেশ কিছু বিখ্যাত, কিছু আবার ছোটলোকি বিপ্লবখ্যাত
পাশাপাশি অনেকগুলো খালি ফ্রেম,
এরকম একটা খালি বেছে কাঁচের পিছনে ঢুকে হয়ে গেলাম ফ্রেমবাঁধা প্রোফাইল ।


বাড়িমুখো হলাম আর ভাবতে থাকলাম
আমার গায়ে ধুলিবালি জমা পড়বে কালে কালে,
কেউ মনে রাখবে না,
কেউ মুছেটুছে দেবে না,
কেউ নিতে আসবে না আমাকে,
কেউ বিক্রি করার চিন্তাও করবে না ।


টেবিল অথবা সোফার পেছনের দেওয়াল
অথবা
বইয়ের তাকে ঝাঁকুনি খেয়ে কাত হয়ে পড়ে যাওয়াটাই হবে
আমার নতুন অ্যাকাউন্ট । 


ছ'নম্বর কাঁকুলিয়া লেন থেকে উড়ে এলো
রোনাল্ডিনহোসুলভ একটা টাইমিং ফ্রি-কিক ।
ঝন্ ঝন্ করে উঠলাম,
সেকেণ্ড কাটতে না কাটতে দেখতে পেলাম
আমার আর জন্মশহরের মাঝখানে
কিছু আর বাকি নেই । 


বিলকুল ফাঁকা একটা শহুরে গ্যালারিতে
দাঁড়িয়ে আছি ন্যুডিটির ভারী বোঝা নিয়ে,

অথচ গোটা শহরের আজকের সুনজর
ঘরোয়া সেইসব অটুট প্রোফাইলের দিকে যাদের
কোনো বেঞ্চমার্ক নেই,
কোনো প্যারামিটারও নেই । 


আছে শুধু জিভের সুবোধ্য নড়াচড়া ।

23 Jul 2015

ক্রমশঃ বসবে অনুভূতির হাট


আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে পৃথিবী শান্ত থাকলেই সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, মানুষ শান্ত থাকলেই পৃথিবী মানুষের চারদিকে ঘোরে আর ধর্ম শান্ত থাকলেই মানুষ ধর্মের চারদিকে ঘোরে । যদি বিজ্ঞানের তাপমাত্রা জিরোর নিচে নামে, তাহলে সমস্ত ধর্ম বিজ্ঞানের চারদিকে ঘুরঘুর করবে আর মনের সুখে গুণগুণ করে গাইবে ।

এই সরলতম সমীকরণে ক্রমশঃ বসবে অনুভূতির হাট ।

16 Jul 2015

Happy B'day, My dear Nikki


Nikki, 

I know you have completed 5 years, but yet to have a Facebook account, yet to understand the attractiveness of virtual world, yet to feel bitterness of real world, yet to stand on the huge valley of mystery of women, yet to handle woman empowerment and yet to realize what I'm trying to explain to you. 

But you definitely know what I'm saying is nothing but some blessing words which are beckoning you and your growing world. Let your world around you be grown, not you. Because we humans only grow up vertically since birth, but not horizontally. 

No matter how little your horizon is today, I'm wishing you a very happy birthday!!!! 

This is a small congratulatory picture we were framed in together.


13 Jul 2015

একটু অন্ধকার পাই কোথায় বলতে পারেন


চাই এমন একটা গা-ছমছমাট অন্ধকারের অ্যাম্বিয়েন্স । তার ভিতরে ডুবে থেকে একটু একটু বাড়তে থাকবে অ্যাডভেঞ্চার-ঘেঁষা ঢুলুনি । যেই সেই অ্যাডভেঞ্চার নয় কিন্তু । 'চাঁদের পাহাড়' বা 'ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স'-এর মত মাংসমোড়া শরীর নিংড়ে রক্ত বের করা অভিযানও নয় । এ অভিযান এমন একটা 'চিরতরে হারিয়ে যাওয়া' যার শেষে অপেক্ষায় থাকে প্রেমের চিরকালীনতা । প্রেমিকা জলজ্যান্তা হোক, মৃতা হোক, বাস্তবের গণ্ডীঘেরা হওয়া চলবে না । এইভাবে অন্ধকার ফুঁড়ে খুঁজে পাওয়া প্রেম আতসবাজি হয়ে এনে দেবে কবিসম্মানের মত সাময়িক রিল্যাক্স ।

বিয়াত্রিস (বিয়াত্রিচে) যেমন তাঁর নিজের পঁচিশবছরের জীবিতকালে কোনোদিন জানতে পারেন নি একজনের ভালোবাসার কথা, বনলতা তেমনি এতো কাছে থেকেও হয়তো আঁচ করতে পারেন নি একজনের ভালোবাসার আর্তি । বিয়াত্রিসকে জীবনে মাত্র একবার না দুবার দেখেছেন দান্তে । জীবনানন্দ আগে কখনো দেখেছেন কিনা জানা নেই, জানতে পারি শুধু সমুদ্রের পর সমুদ্রে কাটিয়ে অবশেষে বনলতাকে দেখতে পান এক গভীর অন্ধকারে ।

দিশাহীন নাবিকের মত মুখ তুলে বনলতাকে দেখতে পান । নাটোরের অন্ধকার বুকে চুল খুলে রেখে বসেছিলেন মিসেস সেন, তাঁর মুখোমুখি বসে শুধু তাঁর পানে চেয়ে বসেছিলেন সমুদ্রক্লান্ত মিস্টার দাশ । তখনো কবি হয়ে ওঠেন নি । একমাত্র অন্ধকারের ব্যাপকতা আর সমুদ্রের বিশালতার মাঝে 'হাজার বছর' কাটিয়ে শেষপর্যন্ত বনলতা সেনের সহযোগিতায় কবিত্ব কুড়িয়ে পান । ঠিক যেন হীরের জ্বলজ্বলানি দেখতে পেয়ে একদৃষ্টে তার জরিপ করা । মন্ত্রমুগ্ধের মত । 

মিস্টার দান্তে আলিঘিয়েরি বাস্তবের বিয়াত্রিসকে মনে রেখেছিলেন নিজের দীর্ঘ কুড়ি বছরব্যাপী ভবঘুরের জীবন কাটিয়ে । শেষজীবনে লেখেন 'ডিভনা কোমডিয়া' (ডিভাইন কমেডি) তাতে বলেছেন যে এক গভীরতম অন্ধকার অরণ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । উনিও ছিলেন দিশাহীন । বেছে নিয়েছিলেন অন্ধকারের ব্যাপকতা আর অরণ্যের গভীরতা । নিজেকে তার মধ্যে রেখে ঢেকে হারিয়ে ফেলেন আর বহুরাস্তা পেরিয়ে স্বর্গরাজ্যের মুখোমুখি হন । সেখানে খুঁজে পান মাত্র নয়বছর বয়সে দেখা সেই প্রেম অর্থাৎ বিয়াত্রিসকে । এই অসামান্য অভিযান চালিয়ে উনি সারা ফ্লরেন্সের পক্ষ থেকে কবিসম্মান পেয়ে যান মৃত্যুর অনেক পরে, যা পান নি ফ্লরেন্সের তৎকালীন পোপের অরাজনৈতিক শাসনকালে থাকাকালীন ।

এই 'পাওয়া'টা আরো অনেকের জীবনে ঘটে এসেছে । নানা ভাবে । বেশিরভাগ আলোর ঝলকানির উপস্থিতিতে । কিন্তু পথহারা মোহময়ী অন্ধকারকে সিলেক্ট করার নেশা সবার মধ্যে থাকে না । সমুদ্রে বা অরণ্যে নিজের তুচ্ছ সত্তাটুকুকে ভাসিয়ে বা পাঠিয়ে সেখান থেকে সর্বকালীনপ্রেম খুঁজে পাওয়ার আইডিয়া বেশ বুনো গোছের । ঠিক যেন দশটা আঙুলের নখ ফাটিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে অন্ধকারের বুক কেটে চিরে ভিতর থেকে অতিদুর্লভ ধনরত্ন পাওয়ার ঊচ্ছ্বাস । নেই কোনো মাথাধরা সূত্র । নেই কোনো খটরমটর ছককষা । নেই কোনো রহস্যাবরণ । বরং সবটাই প্রেম খোঁজার অভিযান । সাথে 'অন্ধকার' হলো সেইসব লিমিটলেস্ অভিযানের প্রতিপদেপদে তেষ্টামেটানো ঠাণ্ডাজল । 

তাই বলি একটু চাইছি অন্ধকার । না পেলে ছটফট করি আর সাথে নাগাড়ে চলে "মশাই, একটু অন্ধকার পাই কোথায় বলতে পারেন ?"

ছাইভর্তি কামরা


বাজি রেখে ধোঁয়া ছাড়ছিলে
যতক্ষণ না বাজি জিতে যাও
শেষপর্যন্ত জিততে পেরেছিলে
পারমিতার ধারণা ছিলো তুমি হেরে বসবে শেষধোঁয়া ছাড়বার আগে


ট্রেন সোদপুরের প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে
জানলা দিয়ে দূরের মেঘপ্রাসাদের উপরে পারমিতার উদ্ধত চোখ
নিজেকে কুইন এলিজাবেথের সমতুল্য ভাবে সে
কিন্তু দেখতে পায়নি
স্যার ওয়াল্টার রালের ছায়া কখন এসে পড়েছিলো
তোমার সহজাত ভদ্রচোখেমুখে
আর দেখতে পাবেও বলে মনে হয়না
এই অসমতা বুঝিয়ে দেয় কামরার এককোণে
পড়ে থাকা তামাকের ছাইগুলো 


মুখ ঘুরিয়ে খিলখিল করে অনেকক্ষণ হেসেছিলেন আসল রানী
নকল রানী তো আর হাসলো না
কেবল তুমিই একবার মুচকি হেসেছিলে
সিগারেটের শেষটুকরোটা পায়ের তলায় পিষতে পিষতে

স্যার ওয়াল্টার বেঁচে থাকলে
তোমাকে ঠেলেঠুলে পরের স্টেশনে নামিয়ে দিতেন
আর প্রতি রোববারে তোমার পড়ার ঘরে যেতেন
নিজে থেকে আগুন ধরিয়ে দিতেন
উনি পারেন তোমার খুব কাছের একজন সিগারেটবন্ধু হতে 


ট্রেন থেমেছিলো
পারমিতা নেমে গেছিলো
তুমি আর নামো নি
নতুন বাজি রেখে আবার ধোঁয়া ছাড়বে বলে


ছাইভর্তি কামরায় আর কেউ ওঠে নি

8 Jul 2015

হাঁচিকান্না আর হাসিকাশি


জোরে জোরে হাঁচলাম । একেবারে প্রাণখোলা হাঁচি যাকে বলে । যত হাঁচি তত নাকটানা । হাঁচতে হাঁচতে দু'জায়গায় জল এসে গেলো । জল মুছে নিতে না নিতে ফের হাঁচার উপক্রম হয় । শেষ কবে এতো হেঁচেছি মনে নেই । কিন্তু এতে কারো মনে কৌতুহল জাগে না, তাই জিজ্ঞেসও করে না - "কী হলো ? এতো হাঁচছো কেন ?" যেভাবে হাসলে লোকে জানতে চায় । হাসির মত হাঁচিটা তবুও আরামদায়ক । আরো হাঁচি আসুক আর মেরে ফেলুক, এমনটাই চাই বার বার এই অতি ক্ষুদ্রজীবনে ।

সময়ের মুহূর্ত অতিদ্রুত পাল্টে যায় । গলা ছেড়ে যেন কাশতে ইচ্ছা করছে । কাশিটা উথলে বেরিয়ে আসতে চাইছে । কিছুতেই চাই না যে বুকফাটা কাশিটা বেরিয়ে আসুক । চেপে ধরে রাখার কি যে আপ্রাণ চেষ্টা ! নইলে একবার কাশতে শুরু করলে মা ছুটে চলে আসবে আর বলবে - "এতো কাশছিস কেন বসে বসে ? পাখাটা কমাতে পারিসনা ?" যেভাবে কাঁদলে লোকে থমকটমক দেয় । কান্নার মত কাশিটা তবুও বেশ কষ্টদায়ক । চাই না এমন কাশি বার বার আসুক এই অতি বৃহৎ জীবনে ।

জানি যে হাঁচিকান্না আর হাসিকাশি মিলে জীবনটা এলেবেলে হতে হতে কবে একদিন থেমে যাবে । তার আগে কত হেঁচে কত কেঁদে কত হেসে কত কেশে বাকিটা কমপ্লিট করতে পারবো - নো আইডিয়া !

6 Jul 2015

গ্রিসের ক্রাইসিস


আথেন্সীয় ইতিহাস উইকি ঘাঁটতে গেলে
রাগে কিড়মিড়ান সক্রেটিস
তারপরে বিরক্ত হতে হতে
শেষে হয়ে যান
এক অত্যাশ্চর্য শান্তশিখা


শিখা জানায় -
বিশ্বের সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিক দেশজুড়ে
কেমন একটা গন্ধ-গন্ধ
এ গন্ধটা হেব্বি ঘ্রাণকটু
শিখার যুক্তি -
এটা পোড়াগন্ধ নয়
অ্যারিস্টোফিনিসের বগল থেকেও নয়
ক্লাউডের কোনো নাটকীয়তা নেই এই গন্ধে
শিখার দাবী -
গন্ধটা আসছে তোমাদের থেকে
তোমাদের জ্ঞানশূন্য পেটের গ্যাস থেকে 


অপমানে ফুঁ দিতে যাই শিখাকে
রে রে করে তেড়ে আসেন প্লেটো
পরনের তাঁর শুধু চাদরখানি
প্রায় খুলবে খুলবে করে
সারা দিন সারা রাত


চাদর জানায় -
আমার গুরুর আদতে অ্যাপোলজি নেই
আমি লিখি প্রেম
উনি তাও লেখেন না কিছুই
তবু ওনার হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি
চাদরের যুক্তি -
পাতলা চাদরে হয় না গন্ধ
মোটা মোটা চাদরে হয়
যত প্রেমের বোঁটকাগন্ধ
চাদরের দাবী -
গন্ধটা আসছে তোমাদের থেকে
তোমাদের প্রেমশূন্য বাসি মুখের ভিতর থেকে


তেলেবেগুনে জ্বলে টানতে যাই চাদর ধরে
ছুটতে ছুটতে চলে আসেন অ্যারিস্টটল
পিঠে তাঁর ঝোলাব্যাগভর্তি বিজ্ঞান বই
ব্যাগটা নামিয়ে দেন
বের করেন একগাদা বই


বই জানায় -
পদার্থের আগে অ, পরে আমার গুরু
প্রেম এমন একটা পদার্থ
যা ওনার মনে মনে বংশবিস্তার করে
তাই উনি অপদার্থ নন
বইয়ের যুক্তি -
নতুন বইয়ের যা গন্ধ
বহুপুরোনো বইয়ের গন্ধ তার লক্ষগুণ ক্ষিপ্র
বইছাড়া গন্ধ তোমরা খালি শুঁকেছো
বইয়ের দাবী -
গন্ধটা আসছে তোমাদের থেকে
তোমাদের পচাগলা গুগল-নির্ভরতা থেকে


হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাই বহুপুরোনো বইকে
হা হা করে হাসির রোল পড়ে
চমকে দেখি শিংওলা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট
এগিয়ে আসছে
স্লো মোশনে যেভাবে হাঁটে টপ মডেলরা 


মডেল জানায় -
আমার স্যারের বই পড়ে যা লাভ
ততোধিক লাভ টাকাপয়সা লুঠ করলে
প্রচুর অর্থবান হও আগে
অসীম ক্ষমতাবল নাও যতটা পারো
মডেলের যুক্তি -
টাকার গন্ধ অতুলনীয়
এ গন্ধ রোখা দায়
গন্ধ নেই যখন, তখন তোমরাই সব অর্থহীন
মডেলের দাবী -
গন্ধটা আসলে একটা স্ফীত ক্রাইসিস
আসছে তোমাদের গণতন্ত্র থেকে


বালিশে ঠেস দিয়ে ভাবি আর ভাবি
ভারতে এসেছিলো তো একবার
এই সুগঠিত মডেল, না ?
আথেন্স কি আর ফিরে পাবে এমন অর্থনৈতিক মডেল ?

নাকি নাকি নাকি
অদূর ফিউচারে ভারতেও
ছড়িয়ে পড়বে একই ক্রাইসিস
সাথে সেই 'গন্ধ' ?

বিনয়ী সাজা


বিনয়ী সাজার মধ্যে একটা কাজ আমরা যেন স্পষ্ট দেখতে পাই - অহংকারকে পড়িমরি করে কম্বল দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া । অহংকারকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে না জানলে যেমনতেমন বিনয়ের অবতার সাজার কোনো মানে সত্যিই নেই ।

An open letter to the 'DreamGirl'


Hema Malini, the 'Dreamgirl', 

Hope you're doing good. You've already enough of wishes from the whole nation, from Indian film industry. Your baskets are poured fully with medical help and other 'genuine' helps. 

Now please let me help you to split the word which earned your fame 'Dreamgirl' into two pieces. Just two pieces only. Not too enormous ones you have in wishlist. Not those scattered ones the family of Chinni have been offered. Not a number of hits you had punched throughout your film career. Not multiple times you used to shake legs in many a onetime shot scene. Just two only. The smallest one digit even number that every child is about to learn, know and build his(er) own career. May be Chinni was two years old, but was about to learn new things. Like every other kid including your recently newborn granddaughter, she had had a long journey to be filled with lot of happenings just before she met you. 

Yes, she met you, not the luxury Mercedes car you rode, not the nonchalant chauffeur who easily got the release within 24 hours, ultimately not the darkness of world to be explored. Rather, but rationally, Chinni was a 'Girl' with a big, bigger and probably biggest 'Dream'. A 'Girl' on whom her parents used to have a longstanding 'Dream'. A 'Dream' that actuates every a single 'Girl' like Chinni, also like you were a pampered kid once upon a time, also like your two pampered daughters since they were very small. Ultimately Chinni was judiciously not much different from your congratulatory granddaughter. 

I've watched Sholay and other superhit movies several times. On TV screen you were definitely like an inseparable combo of 'Dream' and 'Girl' in my sense. In my father's yesteryear eyes you were indeed a wonderful 'Girl' of a very sweet 'Dream'. But you possibly don't know what exactly a 'Dream' means to a small baby 'girl' in other way round. You only know how to retain your face bringing again back to a 'Dreamgirl' as if you wanted that very badly, too speedily, impossibly scared out of losing past image. You have become an MP who's amongst those who want their wages hiked by 100%. That will undoubtedly be materialized on papers very much soon before your injured face gets completely cured as well as cosmetically natural. But is this only reason we should call you as a 'Dreamgirl' ? That way you were simply and easily rushed towards the hospital escorted by doctors, nurses and securities leaving the family of Chinni behind spotlessly in an entire damaged car, is an antithesis to the way you used to keep your arms folded around many injured heroes, and either crying for the help or getting fully engaged to help with your own hands. Your so-called bold character didn't even get bothered by her 'reel' injuries. 

And coming into 'real' life, what did you do to Chinni? Straightforwardly nothing you did. Unpretentiously not a prompt action you have taken but awkwardly putting your white handkerchief on your cutting 'image'. That was too hellish to be tolerated by an ordinary guy like me. A father like me. A person with his utterly crestfallen heart like me.

If you can't help me, let me help myself to take those two splits - 'Dream' and 'Girl' and try to reorganize them in a new definition that doesn't suit you, Hema Malini!

3 Jul 2015

ডিএনএ কাটতে হবে


ডিএনএ কাটতে হবে বলে বিশেষ কর্মক্ষম একটা ব্লেড খুঁজছি ।

এমন সূক্ষ্মতার সাথে কাটা যাবে যাতে কিছু রোগ-উপরোগ পুঁজের মত বেরিয়ে আসবে । শুকিয়ে যাওয়া ধ্যাবড়ানো রোগের খোসাগুলো টুপটুপিয়ে খসে পড়ে যাবে ব্লেডের এক বা দু ঘা'তে । মড়ার মত ভাসবে নিউক্লিয়াসে পড়ে । বাকি যেসব রোগ (বেশিরভাগ) ধরা যায় না, সেগুলোকে বার বার ইলেকট্রনিক ফুলকি দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে । পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া নিকষ রোগগুলো সব দানা দানা হয়ে ছড়িয়েছিটিয়ে বেড়াবে একই নিউক্লিয়াসে ।

দমবন্ধ হয়ে বেচারা ক্রোমোজোম তার সারা গা থেকে খুলে ফেলতে থাকবে প্যাঁচানো সিঁড়ির মত দেখতে বস্তুটি অর্থাৎ ডিএনএ । পরপর সাজানো সিঁড়ির ধাপগুলো ব্লেডের ঘা দিয়ে ভেঙে দু'খান করতে হবে । ততক্ষণে ডিএনএ একটু একটু করে প্যাঁচ খুলে সিধে হতে থাকবে । এমন লম্বা ও সোজা হয়ে যাবে ডিএনএ টা যেন মনে হবে চোদ্দোকোটি পুরুষ ধরে একটা রেড কার্পেট শূন্যে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে । বংশপরম্পরায় কেউ আর ওই কার্পেটের উপর দিয়ে যেতে পারবে না । 'ওয়েলকাম ড্রিংক'জাতীয় আন্তরিক অভ্যর্থনাটুকু থাকবে না গোড়াতেও ।

এভাবে পড়ে থাকা শেষ বংশপত্রটি সযত্নে তুলে রাখবো । পরে কোনো একদিন পত্রটি কায়দা করে ভাঁজ করে জাহাজ বানাবো । তাকে ভাসিয়ে দেবো সেই দুষিত নিউক্লিয়াসে । আস্তে আস্তে চোরাবালির মত কাজকর্ম করতে শুরু করবে নিউক্লিয়াসটা । শেষ হতে থাকবে । বরং সাহিত্যগত ভাবে বলতে গেলেই 'নিঃশেষ' ।

সেই ব্লেডটা এখনো খুঁজছি । খুঁজছি দু-হাত ছড়িয়ে । বৃষ্টি হয়তো বুঝতে পেরেছে । তবু না-বোঝার ভান করে ঝমঝমিয়ে পড়ছে আর দিচ্ছে আমার হাতদুটির তালুকে পুরোপুরি ভিজিয়ে । আচ্ছা, সব রোগ কি ভিজে যায় এতে ?

30 Jun 2015

ও তুমি ঠোঁটবন্দিনী


উপরে আছে একটা ঠোঁট । তার ঠিক নিচেও আছে আরেকটা ঠোঁট । পাতলা নয়, পুরুষ্টুও নয় । মধ্যবিত্ত এরকম দুটো ঠোঁট একমনে দেখছি । দেখেই যাচ্ছি । দেখা যেন বন্ধ হতে চায় না । আয়না অবাকাহত হয় আমার এই আত্মোষ্ঠপ্রীতি দেখে । নানা পজিশনে লিপ-এক্সারসাইজ করতে করতে নকল করছি কত সেলেব্রিটিদের । একবার মেরিলিন মনরোর মত ঠোঁটদুটো হালকা ফাঁক করে, একবার ক্যামেরন ডিয়াজের মত নিচের ঠোঁটের আদ্ধেকটা কামড়ে ধরে, একবার সানি লিওনের মত ঠোঁটদুটোকে পাউট করে, একবার উত্তমকুমারের মত হাফমুন শেপড্ করে, একবার জিম ক্যারির মত ঠোঁটদুটোকে একসাথে চেপে ফ্লিপারের মত কাঁপিয়ে থুতু ছিটিয়ে আয়নার ওইজায়গাটুকু অস্বচ্ছ করে ফেলি । 

চুপিচুপি নানা ব্র্যান্ডের লিপস্টিকের দিকে তাকাই আড়চোখে । যদি লাগাই উপরের ঠোঁটজুড়ে, যদি দিই লিপলাইনার যাতে উপরিঠোঁটখানি অনেকটা চূড়াভাঙা এভারেস্ট-এভারেস্ট লাগে, যদি নিচের ঠোঁটভরে মেখে দিই, যদি লিপলাইনার দিয়ে নিচের ঠোঁটের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিই । কিন্তু কিছুতেই হাত নড়ে না । কোন দুঃখে ঠোঁট রাঙাবো যখন চোখ রাঙিয়ে দিতে পারি দরকারে বেদরকারে । শুধু ড্রেসিং টেবিলে রাখা গুচ্ছের লিপস্টিকগুলো ওইভাবে দাঁড় করে থাকে আর আয়নায় প্রস্ফুটিত আমার বিনালিপস্টিক ঠোঁটদুটো অনবরত অভিনয় করে যায় । 

অ্যাত্তো ঠোঁটপাগল যে আমি মাঝেমাঝে ভেবে পাই না আমার এই ঠোঁট আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের লিপস্টিক-সাফ-করে-মোছা ঠোঁটের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?! না গড়নে, নাই বা আকারে-বিকারে ?! কোনো প্রশ্ন করে বিরক্ত করি না নিজেকে, উল্টে আয়নাকে বোঝাই - 'ও তুমি ঠোঁটবন্দিনী, আগে তো দেখেইছি' !

26 Jun 2015

ধুঁকোমান জীবনের লক্ষ্যবস্তু


বুঝতে আর বাকি নেই । জীবন-কুণ্ডলীতে কোনো লক্ষ্য রেখে চলতাম না । এখনো চলি না । বরং আমি নিজেই নিজে হয়ে উঠছি ধুঁকোমান জীবনের একটা নিমিত্ত লক্ষ্যবস্তু । তীরবিদ্ধ হয়ে আসছি যদিও হার্টকে বুলস্-আই বানানো অত সহজ নয় । যে মুহূর্তে হার্ট এফোঁড়-ওফোঁড় হবে, সেই মুহূর্তে বুঝে যাবো আমার লক্ষ্যের স্থিরতা । তাতে তীর ছোঁড়া থেমে যাবে । মেডেলের বদলে জীবন উপহার পাবে শুধু চাপা একটা শ্বাস যার দৈর্ঘ্য আমার আর জীবনের মধ্যিখানের দূরত্বটুকুর সমান ।

22 Jun 2015

ক্লিনসেভড্ হবার সুখ


কাঁচাপাকা ছাগদাড়ির আবডালে যে একটা নিষ্পাপ কচি চিবুক আছে সেটা ভুলে গেছিলাম । আজ খেয়াল করলাম চিবুকের গড়ন বেশ রাজপুত্তুর-রাজপুত্তুর । মাঝের হালকা খাঁজে রূপকথারা চুপটি করে বসে আছে । ক্লিনসেভড্ হবার সুখ মোটে-ই নিছক নয় ।

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ


সব মনে নেই । অত মনে রাখার বয়স ছিলো না । মনে আছে এটুকু যে বাবা-মার হাত ধরে একটা সিনেমাহলে গেছিলাম আর বিশাল বড় বড় জন্তুদের ছোটাছুটির বেশ কিছু আবছা সিন নিয়ে কেমন একটা ঘোর লাগার মধ্যে বাড়ি ফিরেছিলাম । সেই ছোটোবেলায় দেখা জুরাসিক পার্ক বাড়তে বাড়তে কবে যে ওয়ার্ল্ড হয়ে গেলো । এদিকে আমি বেশি বাড়তে পারি নি । টেনেটুনে বাড়ার পর পাঁচ ফুট সাতে আটকেই গেলাম । এমন আন-ইম্প্রেসিভ হাইট নিয়ে ওইসব সুপারডুপারপারাপার হাইটের প্রাগৈতিহাসিক জন্তুদের দেখতে গিয়ে নতুন কি যে পেলাম এখনো বুঝতেই পারিনি । 

নিশ্চয় থ্রি-ডি জমানায় দেখার সুযোগ পেলাম । বোতাম টিপে সিটকে অটোমেটেড বিছানা মত করিয়ে শুয়ে দেখার মজাও পেলাম ঠিক । চিজ্ পপকর্ন যেমন একটা করে খপ করে মুখে তুলে নিচ্ছিলাম, তেমনি একটা করে মানুষকে পপকর্ন পেয়ে মুখখানা অ্যাত্তোবড় হাঁ করে খপাখপ করে তুলে গিলছিলো জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের দানবিক মুখ্যচরিত্র । জেনারেলি হরর্ ফিল্মে যেকোনো ঘটনা ঘিরে গা শিরশির বা ঘিনঘিন করার পোস্ট-এফেক্টের যে বীভৎসতা ন্যূনতম হলেও দেখায়, এখানে তেমন নৃশংসতার বালাই নেই যা দেখলে চোখ বন্ধ করতে বা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । খাপটি মেরে বসে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে সামনে এসে পড়া, পালাতে গিয়ে ফের খপ্পরে পড়া, লম্বাটে দাঁতালো মুখওয়ালা ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসছে-পিছিয়ে আসছে এমনসব রুদ্ধশ্বাসদৃশ্য নানা অ্যাঙ্গেল থেকে রিপিট করা - সব মিলেমিশে বেশ জমজমাট অথচ কেমন-যেন-একটা-প্রত্যাশিত জার্নি । শেষের দিকে একে ওকে কামড়ে-আঁচড়ে-টেনে-হিঁচড়ে যা যুদ্ধ হলো তাতে মনে হলো মুভির নাম 'জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ' হলে অত্যুক্তি শোনাতো না । কাপটা মিসিং ছিলো শুধু । 

ইরফান খান ? বলতে খুব খারাপ লাগছে যে ভারত থেকে উড়ে আসা একজন উচ্চমানের প্রতিভাবান শিল্পীকে একরকম ফিনিশ করে দেওয়াটা আমাদের ভারতীয়গর্বের পক্ষে যথেষ্ট ছিলো না । আরো কিছু দেখানো যেতো ইরফানকে নিয়ে অথবা অমন করে ট্রাজিক হিরো না বানিয়ে শেষ অবধি বাকিদের সাথে রাখা যেতো কারণ ওনার অ্যাক্টিং কম্প্যুটারাইজড্ ডাইনোসরদের চেয়েও অনেকবেশি ন্যাচারাল এবং স্পন্টেনিয়াস বুদ্ধিদীপ্ত লাগছিলো । 

আ স্ট্যান্ডিং ওভেশন ফর ইউ ওনলি, ইরফান ।

কোষের কোনো দোষ নেই


কোষে কোষে ছেয়ে গেছে চারদিকে । নিত্যনতুন কোষ তৈরী হচ্ছে । সেই থেকে শুরু হয় আজবতাজ্জব সব অঘটনীয় ঘটনা । কিম্বা চলে ঘটনীয় অঘটনের বাহার । আদতে সবের মূলে রয়েছে কোটি কোটি কোষ ও তাদের হরেকরকম্বা ক্রিয়াপ্রক্রিয়া । গোড়ায় রয়েছে যত উদ্ভট কোষীয় প্ল্যান । আমরা হারতে হারতে জিতবো নাকি জিততে জিততে হারবো সব নিয়ন্ত্রণ করে একমাত্র জটজটিলতম কোষ স্বয়ং - ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রতম মানবিক কন্ট্রোলার । বল তেড়ে আসছে দেখেও ব্যাট তুলবে না ঠুকতে থাকবে সেটা ঠিক করে ব্যাটসম্যানের কোষবৃত্তীয় কার্যক্রিয়া । ছয় হাঁকবে না ডট্ বলের রিওয়ার্ড দেবে সেটা আঁক কষে দেয় কোষবাবাজী । নিশ্চিত আউট হবে কিনা সেটা ক্লিক করে দেয় ফিল্ডারের ইনভিশিবল্ বস্ শ্রীমান কোষ । ডার্কলুইসের তত্ত্ব শুরু হয়েছে কোটিশত কোটি কোষের সম্মিলিত প্রয়াসে যার কোপ পড়ে ২২ জনের উপরে । প্রত্যেকের কোষনিষাদ শোনা যায় মাঠের ঘাসে ঘাসে কান পাতলে । জয়সূচক কোষের দাম কেউ দেয় না আলাদা করে । হারসূচক কোষের নাম কেউ ডোবায় না আলাদা করে । 

বেচারা কোষের কোনো দোষ নেই । প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় কোষ, সাথে কোষনির্ভর মানুষ এবং তার হারজিতনামা ।

15 Jun 2015

মোট ২০৬টা হাড়


জীবনবিজ্ঞানের দৌলতে আমাদের সবার জানা প্রাপ্তবয়স্কমানুষের দেহে মোট ২০৬টা হাড় । ক্লাসটিচার যখন বলে ২০৬টা হাড়, তখন আমরা সাথেসাথে নিজেদের ইউনিফর্মের আড়ালে যে ছালচামড়ামোড়া কাঁচাবয়সী শরীরের দিকে তাকাই আর একটু গা টিপে দেখি হাড়টাড় শক্ত অথচ আন্দাজে হাড়গোড় গুনে গুনে দেখা পাগলামির চুড়ান্ত নিদর্শন ভেবে মুচকি হাসি । বাড়িতে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যখন ফের একই সংখ্যা নিয়ে পড়া হয়, তখন ক'জন বা প্র্যাকটিকালি হাড় গোনার কথা ভাবি ?! আমাদের থিওরিটিক্যাল দৌড় ওইখানে শেষ যখন পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে ২০৬ লিখে স্কোর হিসেবে একের মধ্যে এক নিশ্চিত করে নিই । 

৩২টা দাঁত থাকে জানি বলে বা জানতে পারলে অনেকেই জিভের ডগা দিয়ে নিজে নিজের বিকশিতদন্ত ছুঁয়ে দেখেছি । ৩৬টা না ৩৩টা না ৩২টার কম পাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে । ঠিক ঠিক ৩২টা দাঁত বের করতে লাগামছাড়া জেদী হতেও দেখেছি অনেকের মধ্যে । সফল না ব্যর্থ হলো তা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না, বরং পাঠ্যবিষয়ানুসারে সত্যি সত্যি যে ৩২টা দাঁত হয়, সেই কৌতুহলের বশে গুনতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয় । কিন্তু দাঁত সংখ্যায় কম, সহজলভ্য, দৃশ্যমান,পাশাপাশি ইঁটের মত সাজানো থাকে বলে চট করে গোনা যায় । হাড়ের বেলা তা কোনোভাবে সম্ভব নয় একমাত্র জীবিত থাকা অবস্থায় । কিন্তু কঙ্কাল হাতের কাছে পেলে সেটা নিশ্চয়ই সম্ভব । রবিনসন স্ট্রিটকাণ্ডের প্রসঙ্গ এখানে আনার চেষ্টা করছি বইকি তবে যেকোনো সহজবোধ্য বিষয় হাতের কাছে পেলে তা নিয়ে লেগে পড়ার স্বাভাবিক কৌতুহল আর না-দেখা-কেবল-শোনা গোছের বিষয় খতিয়ে দেখার ইচ্ছা - এই দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাকটা একবার মনে করানোর ট্রাই করছি । 

মিউজিয়ামে দেখেছি সংরক্ষণে রাখা মানুষের আদিকঙ্কালকুল । আর্টস্ ফ্যাকাল্টিতে দেখেছি কঙ্কালকে সামনে দাঁড় করিয়ে তার ছবি ক্যানভাসে এঁকে দেওয়ার প্র্যাকটিস । ল্যাবে দেখেছি এককোণে রাখা কঙ্কালের উপস্থিতিতে অন্যান্য যাবতীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা । মুভিতে দেখেছি ভিস্যুয়াল এফেক্টসহ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে আসা কঙ্কাল নিয়ে হরেকরকম অদ্ভূতুড়ে স্টোরিলাইন । বইতে দেখেছি অলৌকিক গল্পের প্লটে কঙ্কালদের ধরে আনার লেখকদের বাধ্যবাধকতা । স্কেয়ারি হাউজে দেখেছি ঝুলে থাকা কঙ্কালের হঠাৎ করে হাড়হিম করা দাপাদাপি (চমকমিশ্রিত বিদকুটে দর্শনজনিত ভয়ও পেয়েছি) । মলে দেখেছি কঙ্কালের কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে পোজ মারা । এতকিছু সত্ত্বেও কঙ্কালে যে আদৌ ২০৬টা হাড় আছে, সেটা গুনে দেখেছি একবারও ? গোনার কথা মাথায় আনি ক'জন ? ২০৬ না তার কম না তার বেশি সেটা গুনতে যাওয়াকে আমরা কৌতুহলের মধ্যে ফেলবো ? নিছক ছেলেমানুষি বা "মাথাখারাপ নাকি? খেপেছিস?" মার্কা গাল পেড়ে খাওয়া অ্যাভয়েড করি বলে গুনি না ? উল্টে যে সত্যিই গোনে বা গুনতে যাওয়ার চেষ্টাটুকু করে তাকে সাইকো বলে গালি দিতে আমরা বেশিরভাগ অভ্যস্ত ।

বস্তুত সাইকো বা মানসিক বিকৃতির শিকার - এই তকমা পেয়ে আসা একজন শিক্ষিত মধ্যবয়সী গত ছয়মাস ধরে একটা মানুষের কঙ্কালকে পাশে শুইয়ে কাটিয়েছেন, খাইয়ে এসেছেন, কাপড় পরিয়ে এসেছেন পরিবারের সসদস্যজনিত সম্মানটুকু বজায় রেখে । উনি যা করেছেন, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে শুধু বদহজম নয়, শকথেরাপিস্টদেরও রীতিমত শক খাইয়ে দিতে ওস্তাদ । গুনে গুনে ছয়টা মাস মানে প্রায় ২৬ থেকে ৩০টা সপ্তাহের সময় ছিলো ওনার হাতে । আমার প্রশ্ন - উনি কি কঙ্কালের হাড়গুলো গুনে দেখেছেন ? ২০৬টা কিনা তার প্রমাণ দেখার জন্য একদিনও চেষ্টা করেছেন ? ছেলেমানুষি বা "মাথা খারাপ হয়েছে ? খেপেছিস ?" গোছের পাগলামিটুকু করেছেন ? খুব সম্ভবতঃ করেন নি, কারণ ওনার উদ্দেশ্য 'ভিন্নধর্মী' ছিলো ।

কিন্তু একজন স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক সেটা বুঝি তার একমাত্র 'উদ্দেশ্য' বা 'ধর্ম' দিয়ে নির্ধারিত হয় ? যদিই বা হয়, তাহলে আমরা এখনো 'ধর্ম'-এর ঊর্ধ্বে আসতে পারি নি, না ?

8 Jun 2015

সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের ভঙ্গিমা


শূন্যে মারা বল লুফে নেওয়ার সময়, তিনচারতলার বারান্দা থেকে ফেলা লেটারবক্সের চাবি লুফে নেওয়ার সময়, কেউ 'এই নে' বলে কিছু জিনিস ছুঁড়ে দিলে সেটা লুফে নেওয়ার সময় - হাতদুটো দক্ষ ফিল্ডারের মত সেটআপ করতে করতে একটুখানি পিছিয়ে জিনিসলব্ধ করা হয় । মুখে কিছু বলতে হয় না এইসময়ে । যে বল মারলো, যে চাবি দিলো, যে আগাম জানিয়ে জিনিসটা ছুঁড়ে দিলো - তার চোখমুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না । হাতদুটিবন্দী যাতে হয় তার জন্য মনোনিবেশ করতে হয় শুধু । জিনিসটার গতিমুখ, গতিবেগ, হালকা না ভারি, ধারালো না ভোঁতা সেই বুঝে হাতদুটি খুলে সেটআপ করতে হয় । কাজটা সফল হয় হাতদুটিকে অক্ষত রেখে জিনিসটা বন্দী করতে পারলে ।

এর উল্টোটা যদি করি মুখে কোনোরকম শব্দ না করে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখমুখের দিকে লক্ষ করে হাতদুটিকে হুবুহু ফিল্ডারের মত সেটআপ করে একটু এগিয়ে দেখানোর খিস্তিবাচক অর্থ অনেকে ধরতে পারে না । এই 'সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ'-এর যে একটা স্ল্যাং দিক আছে, সেটা বুঝতে না পারলেই বাধ্য হয়ে সেই শব্দটা জিভের ডগা থেকে ছিটকে বের করতে হয় আমাদের । ফিসফিসিয়ে বা সশব্দে । কিন্তু কেন এত অধৈর্য হয়ে পড়ি আমরা ? জাস্ট হাতদুটি তালপাতার খালি থালার মত করে এগিয়ে ব্যক্তিবিশেষের সামনে সার্ভ করা যথেষ্ট নয় ? ব-যুক্তপদ মুখ ফসকে বেরিয়ে থালায় পড়লেই তবে ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়, সেটা কিছুতেই চাই না । 

প্রাচ্যদেশীয় তথা বাঙলা খিস্তিবাচক সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে পূর্বপশ্চিমজুড়ে লোকের যতটা অসুবিধা, ঠিক ততটা বা ততোধিক সুবিধা ওই পাশ্চাত্য খিস্তিসূচক হাতের মুদ্রার মানে বুঝতে । খুব ছোট্টো অথচ কি সহজ ভঙ্গিমা এই ল্যাঙ্গোয়েজের ! একটা হাত (ডানপন্থী হোক বামপন্থী হোক) মুষ্টিপাকিয়ে পাঁচটা আঙুলের মধ্যে শুধু মধ্যমাকে সটান করে ছাড়ান দেওয়া । সারাবিশ্বে চলে এই অভূতপূর্ব সুন্দর সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের জনপ্রিয়তা । প্রাচ্যেও এই প্রথা সমান তুঙ্গে যা দেখলে অনায়াসে বুঝে যায় আমবাঙালি ।

শুঁকি বিশ্বাসঘাতকতার তীব্রতা


সুগন্ধি সাবানজলে ধোয়া হাত দিয়ে মেঘগুলো মুছে দিই । পরিষ্কার আকাশের বুকে নাক ঠেকিয়ে শুঁকি বিশ্বাসঘাতকতার তীব্রতা ।

অন্তঃস্বপ্ন


স্বপ্নে দেখলাম যে কাল সারারাত টানা ঘুমিয়েছি মাত্র । ঘুমের মধ্যে তেমন স্বপ্ন দেখি নি । অন্তঃস্বপ্ন না দেখাটা আমার দেখা সেরা একটা স্বপ্ন । এটা কোনো হাসির ব্যাপার নয় । 

স্বপ্নের ক্লান্তি হয় । স্বপ্নের বিরক্তি হয় । স্বপ্নের রাগানুরাগ হয় । স্বপ্নের অ্যাসিডিটি হয়, আবার নানা অসুখবিসুখও হয় । এতকিছুর পর স্বপ্নের মধ্যে আরেকটা স্বপ্ন কোত্থেকে এসে বাসা বাঁধলে সেই স্বপ্ন আর স্বপ্ন-ই থাকে না । মারণরোগের মত বংশবৃদ্ধি ঘটায় দ্বিতীয়টা । দিকে দিকে ছড়িয়ে যায় ভাইরাসের মত । প্রথম স্বপ্নটা মরে যায় রোগগ্রস্ত হয়ে । দ্বিতীয়টা শুধু ছটফটানি দেয়, ঘামের ঢেউ তুলতে তুলতে । তৃতীয় স্বপ্ন দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেই ঘুমটা ভাঙে আর দেখি তৃতীয়টা আসলে অন্য কারো স্পর্শ । চতুর্থ স্বপ্ন তখন আমায় ছুঁতে না পারার আফসোসে ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দেয় । তার দেখাদেখি টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বপ্নরা হতাশ হয়ে একে একে হিসিতে ভিড়ে যায় । তার মধ্যে যেগুলো আহাম্মক অথচ জেদী বলে টিকে থাকে সেগুলো ফ্ল্যাশের জলের তোড়ে হারিয়ে যায় । কিন্তু তাই বলে এতো স্বপ্নাস্বপ্নি আর পোষায় না । তার বদলে প্রথম স্বপ্ন একা একা একরাত নির্বিঘ্নে কাটাতে পারলেই বেস্টসেলার । 

সিরিয়াসলি মিন করছি ।

18 May 2015

তেমনি বদবৃষ্টির দরকার


খামখেয়ালকে পাশবালিশের মত করে প্রশ্রয় দিই হাতদুটি পেছনে রেখে পায়চারী করতে করতে । ঘাম ঝরে পড়ুক পাখা থেকে মেঝেতে । এর সাথে আরেকটু নির্লজ্জ বৃষ্টি একান্ত কাম্য যখন এই চরমদশায় লজ্জার কোনো বালাই নেই । ঘামের যেমন কোনো সৎ উদ্দেশ্য থাকে না, তেমনি বদবৃষ্টির দরকার যে অন্তর্বাসকেও অন্তরে অন্তরে বাসে

15 May 2015

মানুষের আরেকটা 'নিয়তি'


জন্ম আর মৃত্যু ছাড়াও মানুষের আরেকটা 'নিয়তি' আছে । সেটা হলো সৃষ্টি । সে সৃষ্টি সুকাজের হোক, অকাজের হোক, কুকাজের হোক, সৃষ্টি-ই সৃষ্টি । জন্মে আমরা আনন্দোৎসব পালন করি । মৃত্যুতে আমরা শোকাহত হয়ে চুপচাপ থাকি বা থাকার ভান করি । সৃষ্টিতে আমরা কিছু করি না ? আনন্দ, দুঃখ, রাগ, অনুরাগ, ঘৃণা, সন্দেহ, মাথায় হাত বুলিয়ে নেড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে পায়ে ইলেকট্রনিক করাত চালানো অবধি কতকিছু করে থাকি । সবটাই সৃষ্টিনির্ভর বলে সৃষ্টিসুখের পাশাপাশি কেউ যদি 'সৃষ্টিদুঃখ' ওয়েবম্যাগের সম্পাদনা করে, তাকে আটকানোর দায় কেউ নেবে না নিশ্চয়ই । আদরের নৌকার পেছনে যদি 'অনাদরের স্টিমার' ভাসতে দেখা যায়, কেউ ভ্রু কোঁচকাবেও না । 

সৃষ্টির নামে মানুষের জীবনব্যাপী নিয়তিকে কেন্দ্র করে আমরা যা যা প্রকাশ্যাড়ালে করি, সেগুলোকে বর্ণনা করা গেলেও বর্ণনাতীত হয়ে থাকে । কারণ সৃষ্টি মানুষকে আলাদা করে চেনায়, স্বাতন্ত্র্য দেয়, স্বীকৃতির শিরোপালড়াইয়ে নামায় যেখানে জন্ম বা মৃত্যু কোনোটাই এতো বড় ভূমিকা নিতে পারে না মানুষের জন্য । পেট থেকে পড়ে গেলেই সে বড় হয়ে যে অমুকত্ব লাভ করবে তা বোঝা দায় । প্রাণ ভুস্ করে চলে গেলেই নামী না অনামী দেখে আমরা নিজেরা অনেকসময় ঠিক করেও উঠতে পারি না কি করা উচিত ।

একমাত্র মানুষের সৃষ্টি আমাদের মানসিকতাকে বিভিন্নস্তরে মাল্টিটাস্কিং করে তুলতে পারে তাই একটা আকস্মিক মৃত্যুর ( যেমন 'কাছের মানুষ', 'অন্য বসন্ত'-এর লেখিকার মৃত্যু ) চেয়ে একটা বা ততোধিক সৃষ্টিরহস্য আসলে অনেক অনেক বেশি রহস্যজনক ।

4 May 2015

ঈর্ষা হয় কেবল


বাব্বাঃ ! পণ্ডিত হলেই পণ্ডিতিগিরি করতে হবে ?! 

পাশ্চাত্যের বাতাস নাক উঁচু করে টেনে শ্বাস নিতেন । মাত্র দু'বছরের জুনিয়রের একটা 'খুব ভালো' কাজ নিয়ে কাটাছেঁড়া করা থেকে পিছপা হন নি । সিনিয়র হলেন প্রয়াত মানিকদা, জুনিয়র হলেন জীবিত মৃণালদা । পরেরজনের সুপারহিট ছবি 'আকাশকুসুম' বেরোতে না বেরোতে-ই প্রথমজনের দাদাগিরি । শুধু তাই নয়, সিনেমার জ্ঞান নিয়ে গালভরা বিশ্লেষণ করার সাথে 'আকাশকুসুম'-এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেলেন । তার জবাবে 'আকাশকুসুম'-এর নির্মাতা স্বয়ং এবং গল্পকার আশিস বর্মন দুজন মিলে যা বোঝানোর তা বলে গেছেন । তাতেও থামে নি মানিকদার কড়া সমালোচনা । এই মসিযুদ্ধ এতদূর গড়াতে গড়াতে প্রায় ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যাচ্ছিলো । যেমন?

একজায়গায় মানিকদা 'আকাশকুসুম' নিয়ে সমালোচনা করে শেষে এই লাইনটা লিখেছেন - 'Contemporary moral : A crow-film is a crow-film is a crow-film.'

তার উত্তরে মৃণালদা লিখেছেন,
"In trying to derive a 'contemporary moral' Mr. Ray by adding three doubtful prefixes, has conveniently reconstructed a famous line which originally belonged to the French film director Jean Luc Goddard: 'A film is a film is a film'. In this connection it may be interesting to note that Mr. Goddard, unlike Mr. Ray prefers to remain a moral and will perhaps 'suffer' many human frailities including 'persistent lying' even in beds."


চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ের বয়ানে উঠে আসা 'দ্য স্টেটসম্যান'পত্রিকায় ছাপা এদের দুজনের মধ্যে চিঠিচাপাটির এই বিতর্কিত যুদ্ধটা আজকের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জমানায় হয়তো অতটা বিস্ময়কর লাগে না । কিন্তু মানিকদার মত একজন, যিনি হাবেভাবে সংযত ভারতীয় তথা বিশ্ববরেণ্য বাঙালী ঋষি-টাইপ, কেতা-কায়দাহীন, যাবতীয় রমরমা ক্ষেত্রের অর্ধেকটা নিয়ে অনীহাভাব, যৌনসুড়সুড়িয়ে নয়, কান্নাপ্রবণ ক্ল্যাইমাক্স থেকে শত শত হাত দূরে থাকাপ্রিয়, তিনি কিনা তার নিজস্ব সংযমীভাব ভেঙে মৃণালদার বহুশ্রমজাত একটা চুড়ান্ত সাফল্য পাওয়া কাজ নিয়ে পড়লেন ? কাজের মূল থিমের টপিক্যালিটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নিজের পাণ্ডিত্য ফলানোর চুলকানি পেয়ে ? এ থেকে বোঝা গেলো বিশ্বজোড়া খ্যাতি নিয়ে থাকলেও আঁত নামক যে মনপিণ্ড থাকে তার আগ ও পর নিয়ে ভীষণ ইনসিকিয়রিটিতে ভুগতেন মানিকদা স্বয়ং ।

মানিকদা যখন এইধরণের ইগোইস্টিক ছিলেন, তখন রিল্যাক্স করে বলতে পারি যে আমারও ইগো আছে । সুন্দরভাবে সেজেগুজে আছে মনের অন্তরে । সমগোত্রীয় বা ভাইয়ের বয়সী কারো সাফল্য দেখলে আমার ইগোতে চুনকালি পড়ে যায় আপনাআপনি । কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্যে বা অন্য কারো সামনে সমালোচনা করিনা, ঈর্ষা হয় কেবল । অস্বীকার করবো না । 

চুপচাপ থেকে মনে মনে জ্বলি,
যতই না প্রকাশ্যে তারিফ করি ।।

বোরিং লাগছে


বোরিং লাগছে । বোরড্ হচ্ছি । এই বোরডম্ চাই নি । তবে আমার এই বোর-বোর ভাবটার জন্য কেউ দায়ী নয় । 

ন্যাচারালি বর্বর হতে যা যা উপকরণ লাগে, তার সবগুলো আমার রক্তনদীর মধ্যে বইতে বইতে দুধারে সরে গেছে । আর সেখানে পলিমাটির মত জমা পড়েছে । অনেকটা কোলেস্টেরল টাইপের । ঘরে রাখা চিভাস্ রিগাল, অ্যান্টিকিউটি ব্লু বা ওল্ড মঙ্ক কারো প্রতি টান অনুভব করছি না । মাকে শুধালাম, "আমার আজ ড্রিংক করতে ইচ্ছা করছে না, কেন বলো তো?", শুনে মায়ের সারা চোখেমুখে পাঁচশো না ছয়শো ওয়াট আলো জ্বলে উঠলো । মালবিদ্বেষী মা তো । আমার মত একজন মালের পক্ষে মাল খাওয়ার আকস্মিক নিঃস্পৃহতা মায়ের কাছে 'বখাটে একটা ছেলে না পড়ে-টড়েই মোটামাইনের বড় চাকরি পেয়ে গেলো' গোছের একটা অনাবিল সু-সু-সুখবর । অগত্যা মায়ের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিতে হলো, কারণ মায়ের মুখের এমন উদ্ভট পাওয়ারের আলো দেখার মত চোখ তখনো ফোটে নি আমার । সময়টা ছিলো অসময়-ই ।

ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও পা'দুটোকে টেনেটুনে নিতে হলো । পায়ের এই বোরিং-চরিত্র মাঝেমাঝে আমাকে একসাথে অবাক ও বিরক্ত করে দেয় । সে যাকগে । অন্ধকারের সামিল হলাম ব্যালকনিতে এসে । মনে পড়ে গেলো গতপরশুর রাতে দেখা মুভি 'দ্য বেস্ট অফার' । গল্পের মূলনায়ক একজন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ । শুরু থেকে পাহাড়সমান গ্র্যাভিটি নিয়ে চলতো । নিজের প্রৌঢ়কালের ৩৫ বছরব্যাপী সংগ্রহে রাখা দেশবিদেশের নামী-অনামী বহু চিত্রশিল্পীর আঁকা একেকজন নারীর ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা ছবিগুলো ছিলো তার একমাত্র অক্সিজেন । সুবিশাল প্রাসাদোপম বাড়িজুড়ে একা থাকতো আর অতিগোপনীয় সিকিয়রিটির কোড-নাম্বারচালিত একটা গোল হলঘরের সারা দেওয়ালে টাঙানো থাকতো সংগৃহীত সেই সমস্ত ছবি । সেক্রেটারি আর কিছু বন্ধুবান্ধব অবশ্যই আছে, কিন্তু তাদের কারো কাছে শেয়ার করতো না তার এই অক্সিজেনের প্রক্সি । গল্পের মাঝবরাবর থেকে যদিও অন্যদিকে মোড় নেয় । 

এদিকে বারান্দাবন্দী আমার মাত্র দু-তিনদিনের মধ্যে বোরিং লাগার বিষয়টা গল্পের ওই বৃদ্ধের তিরিশের উপর বছরগুলো একটানা একইভাবে কাটিয়ে ছবিগুলোর সামনে নিয়মিত নিজের মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার কাছে যারপরনাই তুচ্ছ । মাইক্রো লেভেলে গিয়ে সেই তুচ্ছতা ধরতে গেলে দেখা যায় তা নিজে উধাও । এমনটা হওয়া অপ্রত্যাশিত নয় বইকি । আকাশের দিকে মুখ তুললাম । দেখলাম একটা বড়সড় মেঘ পাতলা চাদরের মত চাঁদের মুখের সামনে দিয়ে ভেসে চলছে মৃদুগতিতে । পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে থেকেই এই একটা চাঁদ আকাশে পড়ে রয়েছে । একইভাবে । কাটতে-কাটতে এবং জুড়তে-জুড়তে । আমার গায়ের রোম সব খাঁড়া হয়ে গেলো ।

আচ্ছা, চাঁদের বুঝি বোরিং লাগে না ?

'কলিকাতা'য় নবকুমার


'কলিকাতা' কথাটি বলতে আটকাচ্ছে কেন ? শুরু থেকেই নবকুমারকে দিয়ে সমরেশ মজুমদার এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ।

চিৎপুর, বেলগাছিয়া, দর্জিপাড়ার সাথে যে একটা 'খারাপ'পাড়া আছে তার চেহারা কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে একটা মানসিকতার প্রশ্নোত্তর । পেটের দায়ে পড়ে মেয়েরা যে কাজ করে তার বাইরেও তাদের একটা স্বাভাবিক জীবন আছে । তাদের কষ্টযন্ত্রণাও ভদ্রপাড়ার মানুষদের মত । তাদের জীবনের অভিমুখ হয়তো একটাই কিম্বা বলা যেতে পারে চিহ্নহীন, বর্ণগন্ধহীন, মনশূন্য শরীর বেচে অলক্ষ্যে রোগব্যাধি বাঁধিয়ে নেওয়ার একটা উদ্দেশ্যহীন নিশানা । একটা মেয়ের যোনি শত শত শিশ্নের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পাশাপাশি মানুষের চিৎকার-আর্তনাদ, পুলিশি বর্বরতা, সামাজিক মোড়কের আড়ালে থাকা নিষ্ঠুর সত্যতা - সবই আমাদের চেনা শোনা এবং জানা ।

সমরেশবাবু নবকুমারের চরিত্রকে একজন স্ট্রাগলার বানিয়ে তার ভাগ্যে একটার পর একটা রাস্তা খুলে দিতে লাগলেন । এমন ভাগ্যবান চরিত্র তার গ্রাম্য-সারল্যচরিত্রকে ছাপিয়ে গেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমরা যারা পাঠক তারা কেউ এতখানি ভাগ্যবান হতেও পারি নি আমাদের ভদ্রসভ্যশোভনীয় জীবনের স্রোতে ভেসে যেতে যেতে, যেখানে নবকুমার তার বঙ্কিমীজালে আটকে পড়া কপালকুণ্ডলার মত অগুনতি নারীর সহজলভ্য যোগসূত্র সব উপেক্ষা করে সৎবান থেকে গেছে নিজের গুণে সেটা খুবই বিরল । খোদ কোলকাতায় থেকে 'কলিকাতা' স্পষ্ট উচ্চারণের মত । 

এমন ব্যতিক্রমী জীবন কার না চাই ? সবাই হয়তো চাই মনে মনে কিন্তু তা সম্ভব নয় । তাই শুধু বেঁচে থাকুক এই কলমের সাবলীলতায় । আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই 'কলিকাতা'য় ।

বনধের সাফল্য


জনগণের নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা এনে দেয় বনধের সাফল্য । আর বনধের ব্যর্থতা শুধু ওই ১২ ঘন্টায় ।

27 Apr 2015

প্রাকৃতিক দুর্যোগ


এটাই মনে করিয়ে দেয় আদিমযুগের মানুষ কিভাবে সংঘবদ্ধ হতে শিখেছিলো । এটাই বুঝিয়ে দেয় মানুষমাত্রেই ভেদাভেদ ভুলে যায় । অসহায়তা ও ভয় শক্তিমানদেরও হার মানায় । সন্ত্রাসভাব উবেটুবে যায় । আর কত কি মানবিক বিটকেল গুণ - সব একসাথে বিলীন হয়ে যায়, একবার এটাই শুরু হলে । পরমশত্রুকেও বড়ো আপন-আপন লাগে এইসময়ে ।

এখন বুঝতে পারছি মানবসমাজ বা মানবসভ্যতা বলে যেটা বর্তমান, সেগুলো আমরা নিজেরা তৈরি করি আর বিকৃত করেও ফেলি পাশাপাশি । একমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাসটুকু মনে করিয়ে দেয় যে সভ্যতা বা সমাজ বা গণতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র এগুলো সব একেকটা মিথ্যাঝুলি । মানুষ সবদিক থেকেই সমান হয়ে যায় যখন পায়ের তলায় মাটি কেঁপে ওঠে ।

টাউনশিপের নামাবলী


হাসির পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে হাস্যকর । ক্ষমতার কোনো বিকল্প নেই যেখানে নামে শুধু ক্ষ-এ ক্ষয়ে যায় । যবে হাতজোড় করে দীর্ঘযুদ্ধে পরাজিত দলের প্রতি ঊজ্জ্বল হাসিমুখে অভিবাদন জানালো, সবে থেকেই গোলমেলে । ধর্ষণ তো এমনিতেই বহুকাল সিলেবাসের বাইরে । যাদবপুরের উপাচার্যকে যেভাবে মাত্র আধ-ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলো, তেমনি ওয়াই-ফাইয়ের 'দৌরাত্ম্য'কে ট্যাক্সির সাথে তাল রেখে অটোরিকশাতুল্য করে ফেলতে আধ-মিনিটও লাগে নি । তাকে প্রমাণছাড়া সারদাকাণ্ডের অন্যতম কন্ট্রোলার বললেও গণতন্ত্রের আঁতে ঘা লাগে না, বরং গণতন্ত্রের ইচ্ছানিচ্ছার অধিকারকে কখনো প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে পড়ছে না । কি যে করে বা কেন করে বা কিভাবে করে - এগুলো আজকাল হয়তো আর আলোচনার বিষয় নয়, হলেও কেউ মাথার একটাও চুল ছিঁড়তে রাজি হবে না । 

কিন্তু আগের সপ্তাহের রবিবাসরীয়তে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর লেখা 'নামাবলী' পড়তে পড়তে যে একটা বিবর্তনবাদের গন্ধ পেয়েছিলাম নামের মধ্যে (অবশ্যই কেবল মানুষের নাম নিয়ে) সেটা ভীষণভাবে উগ্র হয়ে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটা টাউনশিপের নামকরণে । বোলপুর, কল্যানী, শিলিগুড়ির সাথে কলকাতার হার্দ্যিক সংযোগ যে সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক সংযোগের চেয়েও বড়, সেটা এইসব টাউনশিপের এমন বিবর্তিত নামাবলী দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় । সমস্যাটা কিন্তু এখানে নয়, অন্য জায়গায় । সেটা হলো আপামর জনসাধারণের সাথে বসে তাদের মতামত নেওয়া । কারণ নতুন বছরের মুখে পড়ে আমরা অনেকে যেমন চেকে, ফর্মে, খাতায় পুরোনো বছর লিখে ফেলি । অভ্যাস । তবে সামান্য । অ্যানুয়াল অভ্যাসের কোনো ভ্যালু নেই । জন্ম থেকে যারা একই শহরের নাম নিয়ে যে একটা 'অভ্যাস'-এর মধ্যে যেতে হয়েছে সেই অভ্যাস যেই সেই নয় । একটা জিনগত ধারার মত যুগ-পরম্পরা যা মানুষের কোষে কোষে মিশে থাকে । চেতনে অবচেতনে উপচেতনে শহরের নামগুলো ঘুরে বেড়ায় যেভাবে মা সামনে না থাকলেও 'ও মা', 'কিছু ভাল্লাগছে না মা' কথাগুলো আপনা থেকে মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসে । এরকম স্বতঃস্ফূর্ততার কোনো মানসিক অঙ্গ থাকে না যেটা নিয়ে আলাদা করে বসে কাজ করতে হয় বা ঝামেলায় পড়তে হয় । এবার থেকে বেশ পরিশ্রম যাবে এইসব দিদিদত্ত নতুন নতুন নামের সাথে জীবনের স্বাভাবিকতা জুড়ে দিতে । চিরাচরিত 'বিচ্ছেদ্য' সম্পর্কে গ্যালন গ্যালন আঠা ঠেলে 'অ' জুড়ে দেওয়ার বিরক্তিকর প্রয়াস । 

এবারের পুরভোট দিই নি তো কি হয়েছে ?! বিধানভোট দিতে পারি হয়তো কিন্তু কাকে দেবো এখনো বুঝে উঠতে পারিনি । তবে এটা সিওর আমার মত হাজার হাজার মানুষের জিনগত অভ্যাস নিয়ে ওলটপালট করে এমন 'নিমিনিছি' খেলার জন্যে ক্ষমতার মমতা ফিরে পাওয়ার চান্স আরো একবার কমে গেলো । তলানিতে এসে ঠেকে ছিলো এতদিন ধরে, নেকস্ট তলানির এন্ট্রি পাস পেতে দেরি নেই ।