22 Jun 2015

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ


সব মনে নেই । অত মনে রাখার বয়স ছিলো না । মনে আছে এটুকু যে বাবা-মার হাত ধরে একটা সিনেমাহলে গেছিলাম আর বিশাল বড় বড় জন্তুদের ছোটাছুটির বেশ কিছু আবছা সিন নিয়ে কেমন একটা ঘোর লাগার মধ্যে বাড়ি ফিরেছিলাম । সেই ছোটোবেলায় দেখা জুরাসিক পার্ক বাড়তে বাড়তে কবে যে ওয়ার্ল্ড হয়ে গেলো । এদিকে আমি বেশি বাড়তে পারি নি । টেনেটুনে বাড়ার পর পাঁচ ফুট সাতে আটকেই গেলাম । এমন আন-ইম্প্রেসিভ হাইট নিয়ে ওইসব সুপারডুপারপারাপার হাইটের প্রাগৈতিহাসিক জন্তুদের দেখতে গিয়ে নতুন কি যে পেলাম এখনো বুঝতেই পারিনি । 

নিশ্চয় থ্রি-ডি জমানায় দেখার সুযোগ পেলাম । বোতাম টিপে সিটকে অটোমেটেড বিছানা মত করিয়ে শুয়ে দেখার মজাও পেলাম ঠিক । চিজ্ পপকর্ন যেমন একটা করে খপ করে মুখে তুলে নিচ্ছিলাম, তেমনি একটা করে মানুষকে পপকর্ন পেয়ে মুখখানা অ্যাত্তোবড় হাঁ করে খপাখপ করে তুলে গিলছিলো জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের দানবিক মুখ্যচরিত্র । জেনারেলি হরর্ ফিল্মে যেকোনো ঘটনা ঘিরে গা শিরশির বা ঘিনঘিন করার পোস্ট-এফেক্টের যে বীভৎসতা ন্যূনতম হলেও দেখায়, এখানে তেমন নৃশংসতার বালাই নেই যা দেখলে চোখ বন্ধ করতে বা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । খাপটি মেরে বসে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে সামনে এসে পড়া, পালাতে গিয়ে ফের খপ্পরে পড়া, লম্বাটে দাঁতালো মুখওয়ালা ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসছে-পিছিয়ে আসছে এমনসব রুদ্ধশ্বাসদৃশ্য নানা অ্যাঙ্গেল থেকে রিপিট করা - সব মিলেমিশে বেশ জমজমাট অথচ কেমন-যেন-একটা-প্রত্যাশিত জার্নি । শেষের দিকে একে ওকে কামড়ে-আঁচড়ে-টেনে-হিঁচড়ে যা যুদ্ধ হলো তাতে মনে হলো মুভির নাম 'জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ' হলে অত্যুক্তি শোনাতো না । কাপটা মিসিং ছিলো শুধু । 

ইরফান খান ? বলতে খুব খারাপ লাগছে যে ভারত থেকে উড়ে আসা একজন উচ্চমানের প্রতিভাবান শিল্পীকে একরকম ফিনিশ করে দেওয়াটা আমাদের ভারতীয়গর্বের পক্ষে যথেষ্ট ছিলো না । আরো কিছু দেখানো যেতো ইরফানকে নিয়ে অথবা অমন করে ট্রাজিক হিরো না বানিয়ে শেষ অবধি বাকিদের সাথে রাখা যেতো কারণ ওনার অ্যাক্টিং কম্প্যুটারাইজড্ ডাইনোসরদের চেয়েও অনেকবেশি ন্যাচারাল এবং স্পন্টেনিয়াস বুদ্ধিদীপ্ত লাগছিলো । 

আ স্ট্যান্ডিং ওভেশন ফর ইউ ওনলি, ইরফান ।

No comments:

Post a Comment