27 Apr 2015

প্রাকৃতিক দুর্যোগ


এটাই মনে করিয়ে দেয় আদিমযুগের মানুষ কিভাবে সংঘবদ্ধ হতে শিখেছিলো । এটাই বুঝিয়ে দেয় মানুষমাত্রেই ভেদাভেদ ভুলে যায় । অসহায়তা ও ভয় শক্তিমানদেরও হার মানায় । সন্ত্রাসভাব উবেটুবে যায় । আর কত কি মানবিক বিটকেল গুণ - সব একসাথে বিলীন হয়ে যায়, একবার এটাই শুরু হলে । পরমশত্রুকেও বড়ো আপন-আপন লাগে এইসময়ে ।

এখন বুঝতে পারছি মানবসমাজ বা মানবসভ্যতা বলে যেটা বর্তমান, সেগুলো আমরা নিজেরা তৈরি করি আর বিকৃত করেও ফেলি পাশাপাশি । একমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাসটুকু মনে করিয়ে দেয় যে সভ্যতা বা সমাজ বা গণতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র এগুলো সব একেকটা মিথ্যাঝুলি । মানুষ সবদিক থেকেই সমান হয়ে যায় যখন পায়ের তলায় মাটি কেঁপে ওঠে ।

টাউনশিপের নামাবলী


হাসির পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে হাস্যকর । ক্ষমতার কোনো বিকল্প নেই যেখানে নামে শুধু ক্ষ-এ ক্ষয়ে যায় । যবে হাতজোড় করে দীর্ঘযুদ্ধে পরাজিত দলের প্রতি ঊজ্জ্বল হাসিমুখে অভিবাদন জানালো, সবে থেকেই গোলমেলে । ধর্ষণ তো এমনিতেই বহুকাল সিলেবাসের বাইরে । যাদবপুরের উপাচার্যকে যেভাবে মাত্র আধ-ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিলো, তেমনি ওয়াই-ফাইয়ের 'দৌরাত্ম্য'কে ট্যাক্সির সাথে তাল রেখে অটোরিকশাতুল্য করে ফেলতে আধ-মিনিটও লাগে নি । তাকে প্রমাণছাড়া সারদাকাণ্ডের অন্যতম কন্ট্রোলার বললেও গণতন্ত্রের আঁতে ঘা লাগে না, বরং গণতন্ত্রের ইচ্ছানিচ্ছার অধিকারকে কখনো প্রাধান্য দিয়েছে বলে মনে পড়ছে না । কি যে করে বা কেন করে বা কিভাবে করে - এগুলো আজকাল হয়তো আর আলোচনার বিষয় নয়, হলেও কেউ মাথার একটাও চুল ছিঁড়তে রাজি হবে না । 

কিন্তু আগের সপ্তাহের রবিবাসরীয়তে স্বপ্নময় চক্রবর্তীর লেখা 'নামাবলী' পড়তে পড়তে যে একটা বিবর্তনবাদের গন্ধ পেয়েছিলাম নামের মধ্যে (অবশ্যই কেবল মানুষের নাম নিয়ে) সেটা ভীষণভাবে উগ্র হয়ে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটা টাউনশিপের নামকরণে । বোলপুর, কল্যানী, শিলিগুড়ির সাথে কলকাতার হার্দ্যিক সংযোগ যে সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক সংযোগের চেয়েও বড়, সেটা এইসব টাউনশিপের এমন বিবর্তিত নামাবলী দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় । সমস্যাটা কিন্তু এখানে নয়, অন্য জায়গায় । সেটা হলো আপামর জনসাধারণের সাথে বসে তাদের মতামত নেওয়া । কারণ নতুন বছরের মুখে পড়ে আমরা অনেকে যেমন চেকে, ফর্মে, খাতায় পুরোনো বছর লিখে ফেলি । অভ্যাস । তবে সামান্য । অ্যানুয়াল অভ্যাসের কোনো ভ্যালু নেই । জন্ম থেকে যারা একই শহরের নাম নিয়ে যে একটা 'অভ্যাস'-এর মধ্যে যেতে হয়েছে সেই অভ্যাস যেই সেই নয় । একটা জিনগত ধারার মত যুগ-পরম্পরা যা মানুষের কোষে কোষে মিশে থাকে । চেতনে অবচেতনে উপচেতনে শহরের নামগুলো ঘুরে বেড়ায় যেভাবে মা সামনে না থাকলেও 'ও মা', 'কিছু ভাল্লাগছে না মা' কথাগুলো আপনা থেকে মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসে । এরকম স্বতঃস্ফূর্ততার কোনো মানসিক অঙ্গ থাকে না যেটা নিয়ে আলাদা করে বসে কাজ করতে হয় বা ঝামেলায় পড়তে হয় । এবার থেকে বেশ পরিশ্রম যাবে এইসব দিদিদত্ত নতুন নতুন নামের সাথে জীবনের স্বাভাবিকতা জুড়ে দিতে । চিরাচরিত 'বিচ্ছেদ্য' সম্পর্কে গ্যালন গ্যালন আঠা ঠেলে 'অ' জুড়ে দেওয়ার বিরক্তিকর প্রয়াস । 

এবারের পুরভোট দিই নি তো কি হয়েছে ?! বিধানভোট দিতে পারি হয়তো কিন্তু কাকে দেবো এখনো বুঝে উঠতে পারিনি । তবে এটা সিওর আমার মত হাজার হাজার মানুষের জিনগত অভ্যাস নিয়ে ওলটপালট করে এমন 'নিমিনিছি' খেলার জন্যে ক্ষমতার মমতা ফিরে পাওয়ার চান্স আরো একবার কমে গেলো । তলানিতে এসে ঠেকে ছিলো এতদিন ধরে, নেকস্ট তলানির এন্ট্রি পাস পেতে দেরি নেই ।

24 Apr 2015

যখন বলি বেঁচে নেই


যখন বলি বেঁচে নেই, তক্ষুনি বুকের ধুকপুকুনি হয়ে যায় অভিমানিনী ।

20 Apr 2015

বইয়ের সঙ্গী কোল্ড ড্রিংক্সের স্ট্র


পাতার পর পাতা বোঝা আর জানা এদুটোর প্র্যাকটিস ভালোই চলে অথচ 'ঋদ্ধতা' নামে যে স্বাস্থ্যকর বস্তুটি আছে তার প্রভাব ভীষণ ঝিমঝিমে । প্রথম ঝিমের সাথে দ্বিতীয় ঝিম নিজে থেকে হ্যান্ডশেক করে না কখনো । প্রথমটাকে দ্বিতীয়টা আনুগত্যের প্রলোভন দেখায় না বিন্দুমাত্র । দুটো ঝিমের মাঝে ভালোলাগার ঝুমুরঝুমুর বিরতিও নেই । 

ঝিমিয়ে পড়লে চশমাসহ মাথাটা ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মত একদিকে হেলে পড়ার যে একটা ভারিক্কি সম্ভ্রম তৈরী করে তার সম্ভাবনা কোথাও থাকে না । শুধু ঘাড়-ঝাঁড়া দিয়ে উঠে পড়তে হয় । পাশে পড়ে থাকা একটা সাদা স্ট্রাইপ দেওয়া হালকা গোলাপী রঙের স্ট্র তুলে গুঁজে দিতে হয় ওই ঝিমঝিমে প্রভাবশালীর খাঁজে ।

আপাতত বইয়ের সঙ্গী কোল্ড ড্রিংক্সের স্ট্র । তাছাড়া পেজমার্ক হিসেবে স্ট্র-এর ভূমিকা নেহাত কম নয় । আরেকটু খোলসা করে বলতে গেলে স্ট্র-কে বেঁকিয়ে সেই বেঁকে যাওয়া মুখটুকু বইয়ের বাইরে আনার মধ্যে একটা রিল্যাক্স ভাব থেকে যায় যাতে ওই একমাত্র স্ট্র-এর মুখটা পরে কখনো ফিরিয়ে আনতে পারে জ্ঞানপিপাসা । 

বইটা নিজে নয় ।

6 Apr 2015

ফাস্ট অ্যাণ্ড ফিউরিয়াস রাত


বিদ্যুৎ ধীরেসুস্থে কাঁটাচামচ দিয়ে চমচম খাচ্ছে,
বাজ আছাড়ের পর আছাড় খেয়েও বিনাবাক্যে গা থেকে ধুলো ঝাড়ছে,
বৃষ্টির ফোঁটাগুলো শুক্রাণুবেগে মরণঝাঁপ দিচ্ছে,
এমন 'ফাস্ট অ্যাণ্ড ফিউরিয়াস' রাত কার না ভালো লাগে ? 


বহির্জগতের রূপাস্বাদন করতে করতে গতকালে দেখা এফ.এফ.৭ এর বেশ কিছু সুপার অ্যাকশনের সিন চোখের সামনে ভেসে এলো । পল ওয়াকারের মৃত্যু যতটা অপ্রত্যাশিত ছিলো, সপ্তম সিকোয়েলজুড়ে তার বহুগুণ বেশি অপ্রত্যাশিত সব অ্যাকশনপ্লে দেখলাম । কারণ ? অঙ্কের মত সোজা । প্রতিটা স্টেপ ছিলো মৃত্যুবীজের অঙ্কুরোদয়ের প্রাঙ্গণ । একেকটা এমন রুদ্ধশ্বাসভরা স্পিডে চলার সিন যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত, সেখানে হিরোহিরোইনদের পরের পর স্যাকসেস যেকোনো থ্রিলিং ভিডিও গেমের 'মিশন লেভেল (!) কমপ্লিট, গো টু নেকস্ট লেভেল' গোছের । খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে নাই বা গেলাম, কিন্তু ওই ল্যাপিতে অ্যাক্সেসকোড পেতে মরিয়া সেক্সি মেয়েটাকে যেভাবে একটা সুপারবেগে চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে ল্যাপিসমেত বের করে আরেকটা সুপারবেগে চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে ঢুকিয়ে আনা হলো তাতে আমি নিজের হাড়টাড় টিপে একবার চেক করে দেখতে বাধ্য হয়েছিলাম যে সত্যিই বেঁচে আছি তো ?

ভিন ডিজেলের মৃত্যু যখন বাকিরা একরকম নিশ্চিত ভেবে ধরে নিচ্ছিলো, তখনো পল ওয়াকার তাকে বাঁচাতে তার বুকে বার বার চাপ দিচ্ছিলো । এরকম দৃশ্য দেখে কে বলবে যে এই প্রাণপণে প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টারত পল আসলে আর বেঁচে নেই ?! এমন এক মৃত্যুমুহূর্তের ভাগীদার এভাবে ভিন আর পলের মধ্যে চালাচালি হয়ে গেলো । সিনেমা থেকে বাস্তবে । সেই বাস্তবটা চিরকালের বাস্তবিক হয়ে থেকে গেলো ।

আমাদের চারপাশে যত তাণ্ডবনৃত্য চলুক না, সবটাই অানরিয়্যাল সিনেমাটোগ্রাফিতে ধরা দিতে অপারগ কিম্বা দিতে পারলেও তা হয়ে যায় অপ্রত্যাশিত অথচ মর্মান্তিক উলটপুরাণ ।

3 Apr 2015

হতভাগা বন্ড


বসার সিট পেয়ে যাই যেখানে যাই না কেন, কিন্তু কোনোটাই নির্দিষ্ট নয় । ভি.আই.পি.-রা এর ঠিক উল্টো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় । আমি তুলনায় বেশি সুখে আছি একজন পি.আই.ভি হয়ে অর্থাৎ পার্সন ইন্ ভ্যাগাবন্ডেজ ।

সাকসেসফুল ভ্যাগাবন্ড হওয়ার জন্যে একটা ডিগ্রীর খুব প্রয়োজন । সেটা হলো তিনশো ষাট । আমি কি পারবো সেই ডিগ্রী অর্জন করতে ?

ভাস্কো দি গামা, ইবন বতুতা, ক্যাপ্টেন জেমস্ কুক, কলম্বাস এদের কারো না কারো যাত্রাপথে আমার পূর্বপুরুষদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই তার দর্শন পেয়ে ঋদ্ধ হয়েছিলেন যা নথিপত্রে লিখে যান নি । তাই আমার সেই নাম-না-জানা ভবঘুরে পূর্বপুরুষ ভাগ্যবান হলেও আমি এক হতভাগা বন্ড শুধু । 

চুপিচুপি একা বেরিয়ে পড়ার সাহসটুকু একটা পরকীয়া প্রেম চালানোর মানসিকতার এক-তৃতীয়াংশ যদি হতো, একথা ভাবতে ভাবতে কতবার যে ঘুমিয়ে পড়েছি জীবনসঙ্গিনীর বুকে মাথা রেখে ।