3 Nov 2016

স্মার্ট-বুলেট


খুঁচিয়ে তোলা হয় অন্তর্দাহ
কাঁটাচামচ দিয়ে,


ছড়িয়ে আছে
পৌষমাসের পুরোনো কিছু আসবাব,
সর্বনাশের মুখে
ঝুলে আছে ঝলসানো কাবাব ।


কারো শনিবার,
কারো রবিবার । 


স্মার্ট-বুলেট,
খুবই স্মার্ট একটা বুলেট ।

যা বেরোবে সাধারণ খেলনা বন্দুক থেকে
বিঁধে যাবে কারো পেটে, কারো বুকে,
কারো পিঠে, কারো বা সেক্স অর্গ্যানে;
ফোন স্ক্রীনে তক্ষুনি আসবে ক্রিমিনাল চার্ট ।


কারো আঙুলের ডগায় শনিবার
কারো হাতের শুকনো তালুতে রবিবার ।


স্মার্টবুলেট গলে যাবে
নিরপরাধের শরীরে ।
বিছিয়ে যাবে হাইড্রোফিলিক পলিমারের সাম্রাজ্য
গড়ে উঠবে পটাশিয়াম ফেরেটের সৈন্যশিবির ।


স্মার্টবুলেট বিষিয়ে যাবে অপরাধী,
খুনি, ধর্ষক আর ধর্মান্ধদের শরীরে শরীরে ।


কারো হিংস্র আমিষ শনিবার
কারো নিরামিষ সহিষ্ণু রবিবার,


এর সাথেও
কারো চাই একটিমাত্র নিরিবিলি স্মার্ট শনিবার
কারো প্রাণপণে চাই নিষ্প্রভ কয়েকটি রবিবার ।

12 Sept 2016

থাকতে চেয়েছিলাম চুপ করে


থাকতে চেয়েছিলাম চুপ করে
এরা কিন্তু তাই থাকতে দেয় নি
আমি অনুপম রায় নই
এরা আমার মুখে খোদাই করে দিয়েছে
দাঁতসুদ্ধু হাসি ।


অভিনয় জানি না
এবং দাঁতগুলো ধবধবে সাদা নয় বলে
হাসিটা হাসিই ছিলো,
সাজানো ছিলো প্রকৃত হাসিই
দাঁত ও ঠোঁটের বৈঠকে । 


তিস্তার ফ্রকের কোলে রাখা
ধূসর পাথরগুলো খুব জোর হেসেছিলো
আমাকে দেখে
হাসিমুখে অপেক্ষা করছিলাম
আত্মকথা শোনার জন্য । 


কার আত্মকথা ? তিস্তার নয়,
ওই পাথরগুলোর আত্মকথা ।
তিস্তা হাসে নি তো
আমাকে দেখে, সে শুধু
ফেলে দিয়েছে পাথরগুলো তার ফ্রক ঝাড়িয়ে ।


একটা পাথর কুড়িয়ে নিলাম
আরেকটা নিলাম, আরো দুটো
আরো আরো
এদের আত্মকথা নিশ্চয় আলাদা আলাদা
এই ভেবে ভেবে শেষ হয়
ধূসর পাথর কুড়োনো ।


জানি না কেন হাসি নেই তিস্তার মুখে
বরং এতো কৌতূহল তার চোখে
তার কারণ আমার হাসি নয়
এই পাথর কুড়োনো জীবনটাও কি আমার !
এটাই বোধহয় তাকে একটু ভাবালো । 


হেসে নিলাম আবার, আরো কিছু সময় নিয়ে
এরপর তো থাকতে হবে চুপ করে
আমার আত্মকথা বেশ পরিষ্কার আসে
চুপ করে থাকার ভিতর দিয়ে
পাশাপাশি মিলিয়ে দেখবো ওদের আত্মকথাও ।

5 Sept 2016

ট্রেনে চড়া ভুলে গেছি


কলকাতার বুক ছেড়ে মেঠো রাস্তা ধরে দৌড়চ্ছে আমার ছোটোবেলা । তার সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেন ছুটে চলছে পাশের রেললাইন ধরে । কে আগে পৌঁছাবে মামাবাড়ি ? বোধ হয় আমার ছোটোবেলা । দেখতে দেখতে ট্রেন একসময় পেছনে পড়ে যায় । দিদা আমার মামাবাড়িতে থাকতেন । এখন উনি আর নেই । ট্রেনে চড়া ভুলে গেছি ।

কাউকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করি


কাউকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করি মাঝেমাঝে । টাকাপয়সার জন্য নয় । প্রিয়জনের প্রতি মানুষের শর্তহীন ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে দেয় । সেইজন্যে । কিন্তু একটা মুভিতে দেখলাম একজন জার্নালিস্টকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো, পরে জানা যায় তার ফ্যামিলি তার মুক্তিপণ দিতে রাজি নয়, বরং মেরে ফেললে খুশি হয় । কিডন্যাপারদের চোখেমুখে তাই একইসাথে বিস্ময় ও বিরক্তির মারকাটারি ছাপ ।

কফিরঙা এক যুবতী


কফি খেতে ভালোবাসে অনেকে । কফির কালচে বাদামী রং অনেকের ভীষণ প্রিয় । কফি থেকে ওঠা গন্ধধোঁয়া অনেকের নাকে আসে একেকটা সুখবরের মতো । কালকে দেখলাম কফিরঙা এক যুবতীকে । আমার চোখ তৎক্ষণাৎ 'অনেকের' মতো হতে না পেরে তফাতে সরে যায় ।

ধর্ষণের চেনা মুখ


ভার্জিনিটি ধরে রাখা এখন একটা প্রাচীনপন্থা । লুকোচুরি খেলতে খেলতে কুমারীকাল পেরিয়ে আসা আজকাল সমাজের নতুন শিহরণ । এই দুটোর মাঝে পড়ে যেটা জল থেকে উঠে আসা মাছের মতো কাতরাচ্ছে, তার নাম আমি অনেক ভেবেচিন্তে দিই 'ধর্ষণের চেনা মুখ' ।

হাড় চিবোতে চিবোতে


হাড় চিবোতে চিবোতে গোটা একটা পৃথিবীর ছবি ভেসে ওঠে । পৃথিবীটা কিভাবে শেষ হতে চলছে তার একটা নকসা সাজানো থাকে সেইসব চিবিয়ে ফেলে দেওয়া হাড়গুলোতে । কেউ আর দেখে না আবর্জনা বলে । নিরামিষাশী হয়ে পৃথিবীকে আরেকটু কাছ থেকে দেখার উপায় যে নেই ।

22 Aug 2016

আমি কি বাঙালী?


পুজো আসছে । তার আগেভাগে পুজোর মেজাজ শুরু হয়ে গেছে অনেকের । কটা দিন বাকী সেই কাউন্টডাউন থেকে । বইবাজারে পূজাবার্ষিকী ম্যাগাজিনের বিক্রি দেখে । গড়িয়াহাটে অটোর দৌরাত্ম্যকে ছাপিয়ে ওঠা কেনাকাটারত ভিড়ের দৌরাত্ম্য দেখে । পাড়ায় কারো ফ্ল্যাটে দল বেঁধে গানের রিহার্সাল থেকে । কারো আবার বিরক্তিপ্রকাশ, "পুজো আসছে ? সে অনেক দেরী, দেড়মাস মত ।"

কিছুদিন হলো আমার মায়ের যুগ্মপরিচালনায় ছোটোদের নাটকের পরিচর্যা শুরু হয়ে যায় ।


গতকাল মা হঠাৎ আমার কাছে এসে বসলো । মায়ের মুখের বলিরেখা প্রতিবছরে একটু একটু করে স্পষ্ট হয় । এবারেও লক্ষ্য করলাম বাড়তি কিছু বলিরেখা যা পুজোর মেজাজের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে । আমি উইকএন্ডের শর্টটার্ম মুড একপাশে সরিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে দেখলাম । মা আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
"তুই কি বাংলা লাইনগুলো ইংলিশ হরফে লিখতে পারিস ?"


আমি নড়েচড়ে বসলাম, "কী বললে ?"


মা রিপিট করলো । আমি তাচ্ছিল্যের মুখভঙ্গি করে বললাম,
"হ্যাঁ, আমরা তো তাই করি হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে ।"


মা শুনে মুখের বলিরেখা আরেকটু এক্সটেন্ড করে জানতে চাইলো,
"চার পাতা এরকম বাংলা সংলাপ ইংলিশ হরফে লিখে দিতে পারবি ?"


প্রায় আঁতকে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম, "কেন, কার আবার লাগবে ?"


খাঁটি বাঙালি হবার সুবাদে আমার শুদ্ধ বাঙালিত্বে কে যেন ধারালো জিনিস দিয়ে খোঁচা মেরে দিচ্ছিলো ।


উত্তর এলো, "রিও-এর ।"


আহ্ ! চলছে রিও অলিম্পিক । পদকতালিকায় ভারত লাস্টবেঞ্চার হলেও আবেগের ঝড়বৃষ্টির দাপটে আমাদের সবার মন একেবারে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে ফার্স্ট । কাদের জন্যে সেটা আর বললাম না ।


যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা হলো পুজোর মুখে বাঙালিয়ানার মোড়কে থাকা মনটাকে ছুরি বসিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিলো আমাদের পাড়ার রায়চৌধুরী ফ্যামিলির অবাঙালিত্ব । ওদের যে ১৩ বছরের সুদর্শন কিশোর আছে, তার ডাকনাম 'রিও' । দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর, ফর্সা, লম্বা ছিপছিপে যা সাধারণ বাঙালী গড়পড়তার থেকে অনেক দূরে ।


'রিও'র বাবা-মা দুজনেই খোদ কলকাতার সাউথ পয়েন্টার । ওর মা অর্থাৎ আমাদের বৌদি যাকে অন্যতম হাসিখুশি সুন্দরী মনে করি সে আমার মাকে কবে একদিন বলেছিলো,
"স্কুলে রিও-এর ফার্স্ট ল্যাঙ্গোয়েজ ইংলিশ, সেকেন্ড হিন্দি, থার্ড ফ্রেঞ্চ ।"


যে ফ্যামিলিতে কারো ফ্রেঞ্চকাট নেই, কেউ হিন্দিভাষী নয়, কেউ ইংলিশে ফটাফটায় না পাড়ার কারো সাথে, সেই ফ্যামিলিচিত্রে একটা দাগ কেউ কেটে দিলো । কার বা এমন ডিসিশন বাংলা ভাষাকে পুরো অবহেলা করার সেটা এই রিও অলিম্পিকের ভারতের সোনাপদকলাভের স্বপ্ন আর পুজোর পুরোদস্তুর মেজাজের মাঝখানে এসে আমার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ালো ।


"ওদের এতো কিসের পাকামি ? বাংলায় বলতে পারলেই হলো ? থার্ডেও বাংলা রাখলো না ? ফোর্থ ল্যাঙ্গোয়েজ বলে যদি কিছু রাখতো, তাতেও বুঝি চাইনিজের হিজিবিজি কাটতো ? আলবাৎ কাটতোই ।"
মায়ের সামনে রাগের চোটে কথাগুলো বলতে বলতে মনে হলো চতুর্থ স্থানাধিকারী বাঙালী জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকারের কপাল ঢের ভালো অবহেলিত বাংলা ভাষার থেকে । রিও অলিম্পিকের মাঝে এই বাঙালী 'রিও' রায়চৌধুরীর ভবিষ্যৎ কেরিয়ার আমার কাছে একটু হলেও ধন্দে ফেলে দিলো ।


স্টারমার্কে যতবার যাই, ততবার ওই একটা বই কিনবো কিনবো করেও আর কেনা হয় না । এবারে ভাবছি গিয়ে বইটা কিনে পড়বো । বইটা হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'আমি কি বাঙালী?'

3 Aug 2016

ঠিক কোথায় মন ফেলে এসেছি


মাঝে মাঝে খুঁজি ঠিক কোথায় মন ফেলে এসেছি ।
একসময়ে দেখতে পাই রাস্তার মোড়ে একটা ছোটোখাটো ভিড়,
তাতে গিজগিজ করছে অচেনা কতজনের ফেলে রাখা মনগুলো ।
সেই ফাঁকে আমার মন আমায় দেখামাত্র হাত নেড়ে বলে দেয়, "আমি এখন খুব ব্যস্ত, তুমি পরে একদিন এসো"।

যাওয়া কিন্তু একই রকমের হয়


জায়গা কত রকমের হয় ।
যাওয়া কিন্তু একই রকমের হয় ।
প্লেন, ট্রেন, গাড়ি, বাইক ও সাইকেল এগুলো তো তার বহুরূপতা ।
যারা পায়ে হাঁটে, তাদের কাছে খবর পৌঁছায় যে,
জাহাজটা এখনো মাঝসমুদ্রে ।

ঘামের পিছু নেয় অনেকে


পারদ আর ঘাম একইসাথে বিপরীতমুখী হয় ।
পারদকে কেউ সঙ্গ দেয় না ।
ঘামের পিছু নেয় অনেকে ।
ঘামই তাদের বুঝিয়ে দেয় রাজ্য কীভাবে চালাতে হয় ।

দুর্ভাগ্যলিখন



'বৃক্ষ বার বার যৌবন ফিরে পায়'।
মানুষ একবার যৌবন পায় ।
কেউ কেউ যৌবনোদয়ের আগে মৃত্যু পায় ।
একজনের দুর্ভাগ্যলিখনের উপর নির্ভর করে কে কতটা দোষী বা নির্দোষ ।

26 Jul 2016

শুভ বৃষ্টিসকাল


শুভ বৃষ্টিসকাল । ছাতা ভিজে যায় বলেই মাথা ভিজে যায় নি । ছাতার তলা দিয়ে বৃষ্টিজলের নির্লজ্জ অবাধলভ্য যাওয়া আসা আছে বলেই গেঞ্জির অনেকটা ভিজে গেছে । হাফ বারমুডার পুরোটা ভিজে গেছে । বাকি উন্মুক্ত পা দুটো জুড়ে লোম ভিজে জড়িয়ে জড়িয়ে পুরো আবস্ট্রাক্ট আর্ট হয়ে গেছে ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । কেউ নিজের ইচ্ছায় জীবনঝাঁপ দেয় বৃষ্টিতে । কেউ সর্দিকাশির ভয়ে নিজের শরীর ও মাথাকে বাঁচিয়ে রাখে যথাসম্ভব । আমি আর শৈলেয়ী দ্বিতীয়দলে । দুজনের হাঁচি একইসাথে একইসময়ে হয় বলে দুটো ছাতা বের করে ছাদে গেছিলাম । একটা রঙীন ছাতা, অন্যটা কালো ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । সকালের আলো বেশ খানিকটা নিভিয়ে পার্থিব অপার্থিব সবকিছুকে ভিজিয়ে দেওয়ার অনুরোধ বা আদেশ কেউ কাউকে দেয় না । হঠাৎ করে হয়ে যায় । নিজেকে ঢেকে রাখতে রাখতে ভিজে যাই আমরা সকলে । ঘরবন্দী যারা, তারাও ভিজে যায় ছবি দেখতে দেখতে । যারা অন্ধ, তারাও ভিজে যায় শব্দ শুনতে শুনতে । যারা অন্ধ আর বধির, তারাও ভিজে যায় অনুভব করতে করতে ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । অফিস টাইমে বৃষ্টিসকালের ভিতরে বৃষ্টি থাকে না, সকালও থাকে না । ছুটি আর বৃষ্টিসকালের মধ্যে সম্পর্ক 'ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ড্রাইভ'-এর মতো একধরণের পাগলামি । কত মানুষ এভাবে চাপা পড়ে বা দুর্ঘটনায় মরে যায় কেউ না চাইলেও । এই পাগলসম্পর্কের কোনো প্রেডিকশন থাকে না বলেই আমরা ভিজতে পারি চাইলে, বা না চাইলেও । 

শুভ বৃষ্টিসকাল । এই মুহূর্তে এই ভেজা শহরে কতজন কটা লাইন লিখে ফেলেছে বা লিখে যাচ্ছে এখনো? এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা নামের কোনো নিষ্ঠুরপ্রকৃতি দেখা যায় না । কোনো স্বীকৃতিপত্র দাবী করে না এমন মুহূর্ত । যারা লেখে বা লিখতে ভালোবাসে, তাদের অনেকের হাতে উঠে আসে সকাল, মনে ঢুকে যায় বৃষ্টি, এতকিছুর মধ্যে দু'এক কলম দেখতে দেখতে হয়ে ওঠে একটা সুন্দর বৃষ্টিসকাল ।

18 Jul 2016

যখন ওদের চোখে আমার নার্ভাসনেস্ ধরা পড়বে



যে আমাকে সাহসী বলে পিঠ চাপড়ায়, তাকেই সবথেকে ভয় পাই । একদিন না একদিন আমার সম্মানকে তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলে দেবেই যখন ওদের চোখে আমার নার্ভাসনেস্ ধরা পড়বে ।

ছড়িয়ে দিতো আমার সমস্ত গুপ্তকাহিনী



নদীর ধারে কখনোই দশমিনিটের বেশি বসি নি, তাই আমার অতীত এখনো নদী জানে না । নইলে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতো আমার সমস্ত গুপ্তকাহিনী ।

লাগে শুধু ইশারার পর ইশারা



গাছতলায় যেতে খুব ভালো লাগে কারণ ওখানে আমার মতই আরো অনেকে যায় জীবনের একটামাত্র অক্ষমতার যজ্ঞপালন করতে । এতে আগুন-ঘি লাগে না, লাগে শুধু ইশারার পর ইশারা ।


জনপ্রিয়তার আরেকটা ডাকনাম



জনপ্রিয়তার আরেকটা ডাকনাম হলো ভেজ্ ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেনের কম্বিনেশন । পেটে চলে ফাইনাল খেলার টানটান উত্তেজনা ।


আমি কি সত্যিই ভদ্রলোক



সন্দেহ হয় আমি কি সত্যিই ভদ্রলোক ? ভালোমানুষ হওয়ার চেয়ে ভদ্রলোকি চাল দেখানোর ট্রেণ্ড আমার হরমোনে হরমোনে ঢুকে গেছে ।


হুমায়ূন বলতে বুঝি শুধু আহমেদ-কে



হুমায়ূন বলতে বুঝি শুধু আহমেদ-কে । আজও কোথাও যাবার না থাকলে তাঁর কাছে যাই কাউকে আগাম না জানিয়ে । 



11 Jul 2016

স্বপ্নজাল


ঘুমোতে ভালোবাসলেও অপ্রকৃতিস্থ স্বপ্ন দেখার ভয়ে আজকাল ঘুম কম হয় । অনেকে কিন্তু স্বপ্নজাল বুনতে ভালোবাসে জেগে থাকতে থাকতে । তাদের সেইসব জাল আমি দেখতে পাই না । আমার চেনা একজনের স্বপ্নজাল বোনার অভ্যাস রীতিমত নেশাপ্রবণ । তার চোখদুটো আধবোজা থাকে । বাকি খোলাটুকু জায়গাজুড়ে শুধু আকাশ আর সমুদ্রজল । একটা তারা খসে পড়লেই বা একটা ডলফিন লাফিয়ে উঠলেই যাকে পায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । চুমু খাওয়ার সময়ে তার চোখদুটো সম্পূর্ণ খোলা ও নিষ্প্রভ থাকে ।

দশ মাস গায়ের চামড়াটামড়া খুলে থাকি


জানো ? আমি দশ মাস গায়ের চামড়াটামড়া খুলে থাকি । বাকি দু'মাস তোমরা ছুটিতে বা মনে মনে কোথায় যে বেড়াতে চলে যাও । তোমাদের গায়ের চামড়ার সাথে তখন আরো অনেককিছু লেপ্টে থাকে । নিজেদের চামড়ার শিহরণ একবারও ছুঁতে পারো না । আমার চামড়ার দাম বুঝবে কী করে, শুনি ? ছাড়ো এইসব । দেখো, দেখো, আমার চামড়ায় কি সুন্দর পৃথিবী আঁকা হচ্ছে আর তাতে অগুনতি প্রাণ হাসছে । কেউ দয়া করে এই অজানা নতুন শিল্পীকে বিরক্ত করবে না । বরং এডগার অ্যালান পো-এর রোমহর্ষক কাহিনীসব পড়ো । বেশি করে পড়বে । অনেক বেশি করে, তবে চামড়ার গতি হবে । বুঝলে সখা ?

মুখস্থবিদ্যা


বইয়ের প্রথম পাতা কয়েকবার পড়ার পর স্বামী বিবেকানন্দের ছবির দিকে অবাক হয়ে দেখি । আবার পড়ি সেই পাতাটা । একই লেখা । একই বিষয় । একই কথামালা । একই শব্দমালা । আবার চোখ চলে যায় স্বামীজির আত্মবিশ্বাসী চোখদুটিতে । ফের পাতাটায় চোখ বুলিয়ে নিই । কিছুতেই মনে রাখতে পারি না । শেষে মেনে নিতে বাধ্য হই যে গোটা গোটা আস্ত বই নিয়ে মুখস্থবিদ্যা রবিঠাকুরের মাত্র চার লাইনের 'সজ্ঞান আত্মবিসর্জন'-এর সমকক্ষ ।


7 Jul 2016

ব্রেন-ওয়াশ


এ জন্মে ব্রেন ইতিমধ্যে হাজারো শিটস্-এ ভর্তি আছে । 
পুরো ওয়াশ করতে সারা জীবন লেগে যাবে ।

পরজন্ম বলে যদি সত্যি ফত্যি কিছু থাকে,
নিশ্চিন্তে টেররিস্ট্ হবো ।


রবিন শর্মার একটা উক্তি এ জন্মের জন্য রেখে দিলাম - 
'Don't live the same year 75 times and call it a life.'

শুধু ৭২ এর বদলে ৭৫ হলে কী আর মন্দ হবে ?!

4 Jul 2016

অ্যান্টি-ডারউইন সংস্কৃতি


লৌহযুগ বা সিন্ধু সভ্যতার মত একসময়কার প্রভাবশালীত্ব যেমন শেষ হয়ে গেছিলো, তেমন চিরতরে হারিয়ে যাবে ওবামা-যুগ, ইইউ-যুগ, এনএসজি-যুগ থেকে শুরু করে সুব্রহ্মণম-যুগ, কেজরী-যুগ, গান্ধী-যুগ, মোদী-যুগ, মা-মাটি-মানুষের যুগ । একসাথে নয় । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন মত ও বিভিন্ন কারণ নিয়ে, নিজ নিজ জায়গায় বসে থেকে হাজিরা দিয়ে দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে । এইসব যুগের দাপট আমাদের বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অজান্তে একদিন না একদিন থেমে যাবে । তাদের জায়গা দখল করে বসবে নতুন নতুন কি-যে-হবে-জানিনা-যুগ সব ।

এই ক্রমাগত পাল্টে যাওয়ার মাঝ দিয়ে একটিমাত্র ধারা একইভাবে চলছে । একই দিকে, একই লক্ষ্যে, একই মতে, একই কারণে, একই স্টাইলে ছেয়ে যাচ্ছে চারদিকে । স্থানকালপাত্রে একই নয় । এ ধারার নাম সন্ত্রাসবাদ । এই যুগের সারা অভিধান ঘেঁটেঘুঁটে দেখলেও পাওয়া যায় না 'সমাপ্তি' কিম্বা 'বিবর্তন' । 

প্রকৃতির খামখেয়ালি স্বভাব, তাবড় তাবড় শিল্পীর নানা সৃষ্টিদান, আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্সের ওভারস্মার্টনেস, আই.ও.টি. বিপ্লব - সবকিছুই একমাত্র একমুখী সন্ত্রাসবাদের কাছেও যেন বড্ড বেমানান । 

সন্ত্রাসবাদীদের এমন ঠ্যাঁটামি নিয়ে শুধু ভয় কেন, বিস্ময় ও শ্রদ্ধায় ডুবে আছি ।

এদের ঘেন্না করতেও ভুলে গেছি । কেবল মুগ্ধ হয়ে দেখছি এদের সরল প্রবাহধারা । কি সুন্দর এবং সহজ এদের অ্যান্টি-ডারউইন সংস্কৃতি, তাই না ?

গুটিসুটি মেরে আছে অজস্র বুনোহাঁস


সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি বেডরুমে কেউ আলো জ্বালিয়ে রেখে গেছে । দরজা দিয়ে যদি দেখি অন্য রুম বেশ অন্ধকারপ্রায় । উল্টোদিকে জানালার কাঁচে বৃষ্টির সাজানো ছাঁট যদি দেখি । ঘড়িতে সকাল দশটা-কে সন্ধ্যামণির মত যদি দেখায় । তাহলে...

তাহলে ধরে নেবো বর্ষাতি পরে আছে শহরারণ্য । তার ভিতরে গুটিসুটি মেরে আছে অজস্র বুনোহাঁস । তারা এক্ষুণি সাঁতারে ডুব দিতে চায় না ।

27 Jun 2016

নিয়তির কূটনৈতিক তৎপরতা


হারিয়ে গেছে রত্ন
শুকিয়ে গেছে গর্ভ
আপাতত বইছে বিষণ্ণতা
ফ্যালোপিয়ান টিউবজুড়ে


কে শুনতে চায় সাময়িকতার জাদুমন্ত্র ?

একদা ছিলো মস্ত বড়ো স্বপ্ন
সেই প্রকাণ্ড স্বপ্নের ধারেকাছে
ছিলো না যন্ত্রণাবাহী হৃদ
ছিলো না জটিলতার চিন্তক
ছিলো না কোনো পার্থিব নিবন্ধ
ছিলো শুধু একটা নিষিক্ত ডিম্বাণু 


কে গিলতে চায় যৌনতার বিষ ?

যোনিপথ থেকে নিশ্চিহ্ন সমস্ত বায়োলজি
তলপেট চেপে আছে শূন্যতার মোচড়
বুকে বাজছে মোহনার শেষ সুর
চোখে চলছে জল ও প্রশ্নের মধ্যে দ্বন্দ্ব 


কে ধরতে চায় বন্ধুহাতের সিম্প্যাথি ?

পড়ে আছে নারীদেহ
স্বাধীন নয় এই দেহ ও তার আন্তঃনগর
এখন সে চিকিৎসাধীন
এও একধরণের লজ্জাকর পরাধীন
বাইরে জ্বলছে আর পুড়ছে
বিশ পঁচিশটা সিগারেট 


কে বুঝতে চায় জরায়ু ও তার নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের ?

সবই নিয়তির কূটনৈতিক তৎপরতা
সবকটি শ্বাসমুহূর্তে থাকে না আশ্বাস ।

স্নিগ্ধ হাওয়া ও অন্যমনস্কতা


ঘন ঘন স্নিগ্ধ হাওয়া আমাকে কিছু করতে দেয় না । সেদিকে ঘুরিয়ে দেয় যেদিক থেকে এমন স্নিগ্ধতা আছড়ে আছড়ে পড়ে । 

কুতুব মিনার যেভাবে অক্ষয় থাকে, সেইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যায়না । হাওয়া ফুরিয়ে যাবার অনেক অনেক আগেই আমার অন্যমনস্কতা ফুরিয়ে যায় একেকটা যুগের অবসানের মতো ।

20 Jun 2016

Father's Day


Morning ! 

Too Sunday-azy to charge today's morning a 'Good'. 

I was reading newspaper. 

Too Sunday-dle to turn fan on. 

From nowhere my son came and sat on my lap crumpling the newspaper partially.
Too Sunday-assive to push him away from my lap.
I asked him, "Gorom lagchhe, pakha ta chaliye dao". 

Too Sunday-izzy to get off his father's lap.

Instead he raised his voice loudly against my father who was busy talking with someone on phone, standing very near to the switchboard, "Dadadua, pakha chalabe".

Too Sunday-eary to turn down grandson's order. 

Fan is finally turned on, showering a blissful comfort. 

The usual Sunday thing.

This is probably one of many Sundays on which we celebrate our Father's Day so Lazily, so Idly, so Passively, so Dizzily and so Wearily

17 Jun 2016

কোলির লাইফে একটি সেরা হনিমুন


কোনো এক ভরা মনসুনে
ও আর আমি । 



একসাথে চান করেছিলাম ।
আমার চান ও দেখেছে ।
আমি দেখেছি ওর চান ।
আমি মুগ্ধতাচ্ছন্ন ।
ও আত্মসিক্তাচ্ছন্ন ।



আমরা তবু সেপারেটেড,
আজন্ম ।



চারতলার একটামাত্র
খোলামেলা জানালা
আমাদের মাঝে উঠে এসে পড়ে আছে ।



ওর ভালো নাম কলিকাতা ।
ডাকনাম কোলি ।



শত অভিযোগ বিকশিত হোক
আমাদের এই বিরল শান্ত চানসম্পর্কে ;

ওর নাম কোথাও কখনোই ভুলেও
রেজিস্টার করবে না
আমার লিখিত আপ্রুভ্যাল ছাড়া । 



জাস্ট জেনে রাখো
সেদিনের মনসুন ছিলো
কোলির লাইফে একটি সেরা হনিমুন ।

15 Jun 2016

দশটি আঙুলের নির্বিবাদ


দাঁতে নখগুলো কেটেকুটে বের করে ফেলি
প্রাচীনতম শহরের ধ্বংসাবশেষ
সবার সামনে 


সবাই দেখে
মুখে কিছু বলে না
আড়চোখে দেখে
মুখে কিছু বলে না
বার বার দেখে
মুখে কিছু বলে না ওরা কেউ


আধুনিক বিষণ্ণতায় কেউ কেউ সপ্রতিভ
বাকীরা ডুব মারে ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বে


এদিকে শুয়ে আছে বেশকিছু প্রাচীনকঙ্কাল
একেকটা কেটে ফেলা নখের সাইজে লুপ্তপ্রায় প্রজাতিভুক্ত 


মিউজিয়ামে তুলে রাখার নির্বুদ্ধিতাটুকু
আমার আছে 


কেউ অন্তত এসে একবার দেখে যাক
আমার দশটি আঙুলের নির্বিবাদ

13 Jun 2016

ক্লিভেজের মহাকর্ষতত্ত্ব


কিছুদিন ধরে ভাবাচ্ছে ক্লিভেজের মহাকর্ষতত্ত্ব । সম্পূর্ণ নিরাভরণের চেয়েও অতিবল । কেন যে এমনটা হয় তা জানি না, যেমন স্টিফেন হকিংস্ জানে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাফল্যের কারণ । আমি কি তাহলে হকিংসের খুব কাছাকাছি এসেছি এই না বোঝার লেভেলে ? নাকি জাস্ট একজন ভুয়ো বিজ্ঞানী সেজে থাকাটাই বেশ সেফ ! 

এটুকু বলতে পারি টেবিলে চাপড় মেরে যে ভেজ্ না নন্-ভেজ্ - কোনোটাই হতে পারে না এই সুন্দর সুন্দর ক্লিভেজগুলো । এমন অসম্পূর্ণতা আমাকে পূর্ণিমাতিথিতে পৌঁছে দিয়ে আসে বার বার ।

খুদে আকারের ইনফ্যাচুয়েশন


রঙ্গরসের সাথে আমার তেমন কোনো রক্তযোগ নেই । হাসি যে আমার খুব সুন্দর এটা ছোটোবেলা থেকে জেনে এসেছি এর ওর মুখে । তাই হয়তো বিনাকারণে আমার মুখে হাসি দেখে আজও কেউ সাহস পায় না চেপে ধরে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করার, "হাসছিস কেন ?" উল্টে তারাও হাসি হাসি মুখ করে আমাকে দেখে ।

আমি মনে মনে ধরে নিই একে বোধ হয় একধরণের ফ্যান্সি বলা হয় । কিম্বা খুদে আকারের ইনফ্যাচুয়েশন ।

জলপানে O সুরাপানে


জলপানে আমি হয়ে যাই একজন বীরযোদ্ধা । পেশিশূন্য সৈনিক । এমন একটা প্রাণী যার নিরস্ত্রীকরণের কোনো খাতাকলম নেই । আছে শুধু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের নীরব প্রস্তুতি । 

সুরাপানে কিন্তু ভুলে যাই আগের গুলো বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস । ভুলে যাই সমস্ত সম্পর্কের ভূগোল । ভুলে যাই সবকিছুর বিজ্ঞান । ভুলে যাই আমার শৈশবকালীন সিঁড়িভাঙ্গার অংক । 

একমাত্র আমি আমিই থাকি শতকরা একশোভাগ ।

শামুক O সিজোফ্রেনিয়া


পায়ের একদম কাছে একটা ছোটখাটো ঘনঝোপ । ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এগিয়ে আসছে একটা খয়েরিরঙা শামুক । আমি খুব সম্ভবত সিজোফ্রেনিয়াতে ভুগছি । শামুকের গতিপথ যেন মহাপ্রস্থানের পথ । 

ক্রমশঃ এগিয়ে আসছে আমার পায়ের দিকে আর আমি তাকে সিজোফ্রেনিক ভাষায় বলে যাচ্ছি, "হে তুমি আমার কাছে মরতে আসছো, হে তুমি আসছো আমাকে জেলে পুরে দিতে । আমার পরিবারকে কে বা দেখবে তুমি আমার পায়ের তলায় মরলে, হে শামুকভাই ?"

'ভালোলাগা' আর মিথাইল গ্রুপ


'ভালোলাগা'টাকে মিথাইল গ্রুপের একটা অনিবার্য সদস্য বলে গণ্য করা যায় অকুণ্ঠমনে । হাইড্রোকার্বন গ্যাসের সাথে তাৎক্ষণিক ভালোলাগার এতো মিল যে সারা মন খুবলে নিলে হয়তো পেয়ে যেতে পারি কার্বন আর হাইড্রোজেনের অবাক-করে-দেওয়া রতিক্রিয়া । এমন ক্ষুধা এক একটা ভালোলাগায় বিষিয়ে থাকে যা পরে চলে গেলে চারদিকে কেমন যেন একটা আত্মার গন্ধে ভরে যায় ।

এখন আমার গা বেশ গরম আর ঘামহীন, ছেলের ঘেমো ঠাণ্ডা শরীরের পরশ পেয়ে আমার পাহাড়ঝর্ণাসীমিত 'ভালোলাগা' আরো বেশি সময় নিয়ে টিকে থাকার স্বাদ খুঁজছে । বেরিয়ে আসতে চাইছে হাইড্রোকার্বন সিরিজের বাঁধাধরা সাদস্যসম্মানটুকু ছিঁড়েখুলে । স্বাধীনতালাভের এক অবর্ণনীয় অবর্জনীয় অকাব্যিক হাহাকার ।

আমার গা ঘেঁষে সে বলছে, "বাবা হোয়াটস্অ্যাপ দেখো আমি মেসেজ দিচ্ছি, একটু মেসেজ দাও না"। 

পিতাপুত্রের এই রসায়ন একটু অন্যভাবে বেঁচে থাকুক ।

27 May 2016

নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড়ো গুণ


সানসেট আমার তেমন প্রিয় নয় । শুধু অপেক্ষায় থাকি তার অস্ত দেখার। 

রোজ দেখতেও পাই না । অফিসকারাগারে বন্দী থাকলে সে সুযোগ পাই আর কোথায় ! তবু সারা মন যেন অপেক্ষায় মরতে চায় ।

অন্ধকার নামতে না নামতে রাস্তায় বাড়িতে গলিতে আলো জ্বলে ওঠে । জ্বলে ওঠে সিগারেট । জ্বলে ওঠে মাদকাসক্তি । জ্বলে ওঠে শহরের হাসি । 

সাথে হাইড এন্ সিক্ খেলে ছায়া । এ ছায়া তোমার আমার সবার । তোমার ছায়ার যমজবোন তো আমার ছায়া । টুইন-টুইন ছায়ার সাথে ফ্ল্যাশিং আলোর কম্বিনেশন আমার খুব প্রিয় । 

শহরের আলোতে কাউকে না কাউকে লাগে সুনয়নী সুবক্ষী সুনিতম্বী সর্বোপরি সুহাসিনী । এতোকিছু লাগে বলে আলো উপহার দেয় ছায়া । এই ছায়ার হাত ধরি কেমন করে ?

রোজ কেবল স্থির তৈলচিত্রের মত দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে অন্ধকারে । এখানেই আলোছায়া আমার সাথে নিঃসঙ্গতা করে ।

মিটিং রুমে সেদিন লিওনার্দো, ভন গগ্, পিকাসো, দালি সবাইকে থামিয়ে কে একজন যেন জোরগলায় বলেছিলো, নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড়ো গুণ হলো বিশ্বাসঘাতকতার সাথে মোকাবিলা করতে করতে জিতে যাওয়া ।

16 May 2016

ডিসক্রিমিনেশনের শিকার শুধু বর্ষা একা নয়


কাল বৃষ্টি পড়েছিলো । একে চমকবৃষ্টি বলে ছেড়ে দেওয়া ভালো । এর থেকেও আরো ভালো হয় যদি বিদ্যুতের ঘ্যানঘ্যানানি না শোনো । শোনার দরকার নেই যখন চমক সেরকম আর নেই ।

তুই বড্ড বেশি ঘ্যানঘ্যান করছিলিস, না ? ঠিক যেন মড়াবিদ্যুৎ । 

চোখে গাদাগুচ্ছের মেঘ জমা রাখার অনেক কারণ যে আছে তা বুঝি । খুব যে বুঝি তা নয় । প্লেনে বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ভরা আকাশের মেঘরাজ্য থেকে সরে এসে তোর ওই মেঘস্য চোখদুটোকে আমার মুখের উপরে ফেলেছিলি, মনে আছে ?

এভাবে আবহবিদের মত বোকা বোকা বিশ্লেষণ করতে পারবো না তোর মনের ভিতরটা । এক্সট্রিমলি সরি !

ইশারায় বুঝিয়ে দিলো তার পিরিয়ড শুরু হয়েছে কাল মাঝরাত থেকে । সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দিকে মুখ তুলে তাকালাম । চশমা কিন্তু রোদের নয় । তাকাতেও পারলাম না ।

চশমা মুছতে মুছতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার তো হলো, অথচ প্রকৃতির এখনো কেন এমন অনিয়ম ?"

রাস্তায় একটা ক্ষণস্থায়ী ছায়া পেয়ে শুয়ে পড়েছে একটা কুকুর । মেঝেতে শুয়ে পড়লাম আমি । ওই কুকুরের মত চোখকান বুজে । কতক্ষণ বা শুয়ে থাকা যায় ?

কুকুরের গায়ে একটাও কাপড় নেই । ও-ই বেশি আরাম পাচ্ছে বোধ হয় ।

"বেশ হয়েছে ! বাঞ্চোৎ কোথাকার !" জিজা ঘোষের হয়ে আত্মপ্রসাদে ডুব দিচ্ছি । চান হয় নি এখনো । সারা গা থেকে বেরোচ্ছে আবেগের বিটকেল গন্ধ । ভুলে যাস না ভাই, ডিসক্রিমিনেশনের শিকার শুধু বর্ষা একা নয় ।

সেও জিজাদিদির মত দারুণভাবে ফাইটব্যাক করবে বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ।

সব্যসাচীর আরেক ডিফেনিশন


সব্যসাচীর আরেক ডিফেনিশন হলো - বাঁ হাতখানি বেডরুমের জানালা গলিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে রেখে ক্রমাগত ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডায় ভিজিয়ে দেওয়া, সাথে ডান হাতে ধরা ম্যাগাজিনে কোলকুত্তা নিয়ে স্বপ্নময়দার রম্যরচনায় ক্রমাগত খিল্লিয়ে হেসে নেওয়া ।

9 May 2016

গুচ্ছ-বুমবুম



১)
আজ কী বার ? কার যেন মৃত্যুদিন ?
ঠিক এই রকম একটা দিনে, একটা কড়া রোদ্দুর, কাঁকড়াবিছের মত, চেপে ধরে বসেছিলো একটা ফর্সা গালে ।

এই গালটা যার, তার জন্যে এনেছো রজনীগন্ধা ? কই দেখি !
.
২)

দার্জিলিংকে সারপ্রাইজ্ নেমন্তন্ন করতে গেছে নাকি দার্জিলিং নিজে এসে ওদের হাতে টিকিট তুলে দিয়েছিলো - কিছুতেই মনে পড়ছে না । পুরোনো রেকর্ড একটু ঘেঁটে দেখা হোক।
এটা তো সেই জ্যাকেট যে ঘুমোতে ঘুমোতে গোটা দার্জিলিং ঘুরে এসেছিলো ।
.
৩)

তারপর ? আবার খুন । আবার । তারপরেও আবার খুন । খুন অ্যাফটার খুন । একই ছোরা চলছে এই শরীরে, ওই শরীরে । এই নবাগত লেফ্ট হ্যান্ডেড নাইফস্-ম্যান থামবে না কি শালা ?
শ্রীযুক্ত চার্লস্ শোভরাজ কমেন্ট্রি বক্সে এইমাত্র মাইক হাতে নিয়ে বলে বসলেন, 'খুনবিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি বার-বার পড়ো ধরা' ।
.
৪)

সিটি লাইটস্ দেখার পর সে প্রতীক্ষা করলো পাঁচদিন একটা কথাও বলবে না । একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না । একটা আওয়াজও বের করবে না গলা থেকে ।
এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে নিজের সুন্দর গোঁফের দুইপাশ আধইঞ্চি করে ছেঁটে ফেলেছে ।
.
৫)

ধবধবে সাদা ব্রায়ের দু'কাপে কতটা রাত ভরে নেওয়া যায় ? এই উত্তর খোঁজার জন্য সব জানালা খুলে রাখা ছিলো সারা অমাবস্যা জুড়ে । গত পূর্ণিমায় সাদা দাড়ি কেটে ফেলেছিলো, পাকধরা চুলে কলপ দিয়েছিলো, সাদা জামা আর কালো প্যান্ট কেচে নিয়েছিলো বুড়োলোকটা ।
তাই, পরিষ্কার হয়ে যাওয়া প্রতিটা সুতোর লিবিডো আজ একটু পরেই হঠাৎ বেড়ে গেলো ।

2 May 2016

ভোট দিতে যাচ্ছি


যখন বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) সব ছোটো বড়ো শহর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণে অসহায়, সেখানকার মানুষেরা অসহায়, চারদিকে আশাহত অন্ধকার ও বিরামহীন ক্লান্তি, তখনকার পরিস্থিতির ভয়াবহতার ছবির মাঝে এক জায়গায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন,

"রহমান অসাধ্য সাধন করতে পারে । রহমানকে যদি বলা হয় - রহমান, তুমি যাও তো, সিংহের লেজটা দিয়ে কান চুলকে আসো । সে তা করে আসতে পারবে । সিংহ সেটা বুঝতেও পারবে না । অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে - রহমান অসম্ভব ভীতু ধরণের ছেলে ।"

এরকম একটা সেল্ফ-কনট্রাডিক্ট চরিত্র । যে কঠিন-কঠিনতর-কঠিনতম কাজ অনায়াসে করে দিতে পারে, সেই একটা আস্ত কাওয়ার্ড । কোথাও দেখেছি আমরা এমন সুমেরু-কুমেরু ? সচরাচর দেখা যায় না । হুমায়ূন নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা লিখেছেন কিনা নো আইডিয়া, তবে মোটেই ভুল করেন নি । যেমন আমি । ওই সুমেরু-কুমেরু জাতীয় । রহমানের মত । কাল ভোট দিতে যাচ্ছি বলে । 

একটা নির্দিষ্ট বোতামে টিপবো । লাল ইলেকট্রনিক অ্যারো জ্বলবে । একটা দলের জন্যে । কোন দল ? নাহলে সোজা নোটা ! এই ডিসিশন মেকিং শুধু বোতাম টেপার মুহূর্তের নয় । চলছে অনেকদিন ধরে । পশ্চিমবাংলায় আগেরগুলো দফায় গুণ্ডাপাণ্ডামির খবর জানতে জানতে চলছে । চলছে 'যত মত তত পথ'-এর কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার সাথে । চলছে দুর্নীতির রুমাল দিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘাম মুছতে মুছতে । রক্তাক্তজীবনের ছবি দেখতে দেখতে শুধুমাত্র একটা বোতাম টেপার 'অসাধ্যসাধন' করার দায়িত্ব সেরে আসতে হবে । ঠিক যেন রহমানের মত আদেশ পালন করতে যাবো । সিংহরূপী দলের কান চুলকে দিয়ে আসবো তার লম্বা লেজ দিয়ে, অথচ কেউ জানতেও পারবে না, বুঝতেও পারবে না কার কানে লেজের খোঁচা মেরে চম্পট দিলাম ! 

তবু আমি কাওয়ার্ড । হ্যাঁ বুকে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে বলবো, একশোবার বলবো, 'আমি অত্যন্তরকমের ভীতু' । হয়তো ভীতু হওয়ার সৌভাগ্য আমার একার নয় । অনেকের । তোমাদের সকলের । আমরা ভয় পাই পুরোনো আমলের রাজসিক সরকারকে । সদ্যোজাত সরকারকে দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যাই । অজানা তীব্র ভয়ের ঠাণ্ডাস্রোত বইছে মনের শিরায় শিরায় - নতুনভাবে যে দল ক্ষমতায় আসবে তার নতুন দুর্নীতিবাজির দুশ্চিন্তায় ।

একাত্তর সালের দুর্বিষহ আবহমানে রহমানের মত যদি কন্ট্রোভার্সিয়াল ক্যারেক্টার বাস্তবজীবনে দেখে যান আহমেদ সাহেব, তাহলে গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠা এই 'ভয়' গণতন্ত্রের এখনকার প্রধান হাতিয়ার । সেই হাতিয়ার সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি সিংহ তথা মনস্টারের কানে একটু সুড়সুড়িয়ে আসার উপলক্ষে ।

শেক্সপীয়ারিয়ান ক্ল্যাসিক গালভাণ্ডার


প্রতিটা গালির ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে একটা ইউনিভার্সাল ট্রুথ । ভালোমন্দ স্বাদ পেতে গিয়ে যেমন টেস্টবাড গুলো জিভজুড়ে চাতকপাখির মত মুখ হাঁ করে থাকে, তেমনি শেক্সপীয়ারিয়ান ক্ল্যাসিক গালভাণ্ডার থেকে শুরু করে নবারুণীয় অাধুনিক ফ্যাঁতাড়ুসত্তা যেকোনো সময়ে প্রস্তুত থাকে টকঝালমিষ্টি গালিগালাজ যখন তখন ফ্যায়ার করার জন্য ।

আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে 'দ্য ব্যার্ড অফ্ অ্যাভন' এমন এক অসামান্য স্টোরেজ বানিয়ে গেছেন তাঁর বিখ্যাত নাটকগুলোর নানা চরিত্রের সংলাপের পর সংলাপে । এই স্টোরেজের বিপুলতা সামলাতে একজন সাধারণ মানুষের স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট নয়, হয়তো সম্ভব হতে পারে সদ্যআবিষ্কৃত ডি.এন.এ. এর প্রতি গ্রামে এক মিলিয়ন টেটাবাইট ডিজিট্যাল তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে । ধরা যাক, 'আ মিডসামার নাইটস্ ড্রিম' থেকে পাওয়া একটা খুব মিষ্টি স্বাদের গালি - "ক্যাঙ্কার ব্লসম্" (Canker Blossom) অথবা 'হেনরি ফোর - পার্ট ওয়ান' থেকে নিঃসৃত টক স্বাদের গালি - "ফলস্ ক্যাটারপিলার" (False Caterpillar), কিম্বা একটা বেশ বড়ো সাইজের অপমানজনক শব্দবিন্যাস - "ম্যাড মস্টাচিও পার্পল হিউড্ মল্ট-ওর্মস্" (Mad Moustachio Purple hued Malt-Worms) । কি ভয়ঙ্কর রকমের ক্ল্যাসিক সব ! কি পাওয়ারফুল শৈল্পিক কামান একেকটা ! আরো আছে এই 'ইনসাল্ট কিট'-এ যা গত চার শতক ধরে সমানে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । এমনকি একটা চার্ট রেডি আছে যার তিনটি আলাদা লম্বা লম্বা লিস্ট । এই প্রতিটা লিস্ট থেকে যেকোনো একটা শব্দ তুলে পাশাপাশি জুড়ে দিলে হয়ে যাবে শেক্সপীয়ারিয়ান গালিবোমা । 

কে বয়ে বেড়াবে এই পাহাড়সমান গালিবোঝা ? কে দাঁতে কামড়ে পিন ছিঁড়ে অন্তত সাত সেকেণ্ড অপেক্ষা করবে গালিবোমা ছোঁড়ার আগে ? কারা বা শিল্পসংস্কৃতির বাপ-মার নামধাম জপবে ? বাঙালীরা তো নয় যদি না আগ্রহ থাকে । ওই পাটি ব-এ উগড়ে দিতে পারলেই খুশি । খুব বেশি হলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বাপ-মা তুলে মনের সব বিষ এজ্যাকুলেট করে দেয়, তবে ক্ষান্ত দেয় । কিন্তু কোনোটাই ক্ল্যাসিক নয় । নেই সংস্কৃতির ছোঁয়া, নেই সাহিত্যসম্পদের বাঁচোয়া । নবারুণবাবু দেখিয়ে গেছেন এইসব গালিগালাজের ব্যাপার অত শিল্পযত্নের দরকার নেই । আমাদের অনেকের সেটা নিয়ে আপত্তি থাকে না । 

তবু একেক সময় মনে হয় এসব সস্তা মেটাফরিক্যাল পরিবেশ ছেড়ে কোথাও চলে যাই । চলে যাই দূরে কোনো এক নির্জন জায়গায় । আমার সাথে যাবেন উইলিয়াম শেক্সপীয়ার । দরকার হলে একজন ইন্টারপ্রেটার রিক্রুট করবো । প্রতি উইকএন্ডে একথলি সাম্মানিক ঝকঝকে গালিমুদ্রা তার হাতে তুলে দেবো । কেননা সবার মত ইন্টারপ্রেটারেরও খুব দরকার কাছের বা দূরের কাউকে না কাউকে চরম মৌখিক শাস্তি দেওয়া । কিন্তু তা হবে মিড-ভিক্টোরিয়ান অার্কিটেকচারের কাছাকাছি পর্যায়ের ।

সে ভুগছে ভার্টিক্যাল কমপ্লেক্সিটিতে


এক অতি বৃদ্ধ হেঁটে চলছে
বয়সের ভার তার দু'পায়ে 


পাশ বরাবর সারি সারি গাছ
সবকটাই কুঞ্চিত প্রাচীন


গাছগুলোকে ছাড়িয়ে সে হেঁটে চলছে একভাবে
চলছে সে
যেন বাকি বয়স মেপে মেপে


এই বৃদ্ধ জানে না
তার বয়স কখনো ছাড়িয়ে যেতে পারবে না
গাছের বয়সকে


হয়তো বা সে ভুগছে ভার্টিক্যাল কমপ্লেক্সিটিতে

26 Apr 2016

শনি আর রবির মধ্যে ইগো-ক্র্যাশ


শনি আর রবির মধ্যে ইগো-ক্র্যাশ হয় । বাকি পাঁচজন পড়ে থাকে মানুষের ইগোর নীরব দর্শক হয়ে ।

18 Apr 2016

রামধনুর সন্ধানে


রামধনুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছে কারা সব
হাতের তালুতে জলতেল ভরিয়ে দিই
আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিই
রামধনুর সন্ধান মেলে
হাতেনাতে


ওরা ফিরে আসে নিখোঁজ ডায়েরি করে
জামা ছাড়ে
ঘাম মোছে
খালি গায়ে ঢেলে দেয় সেই রামধনু
অজান্তে


আমার এক বন্ধুর খুব শখ
সাতটা রঙ নিয়ে একটা মকটেল বানানো
আমি চেপে যাই
বলি নি ওকে আমার সামান্য ঘরোয়া আর্কিওলজি
অনিচ্ছাতে


একদিন জানতে পারি
তার বানানো মকটেল এখন ভাইরাল
লুফে নিচ্ছে সে লোভনীয় সব অফার
জমা রাখছে একের পর এক
আপনপাতে


জল আনি
তেল আনি
মিশিয়ে দিই আগের মত আলোর নিচে
কই ? রামধনু আর দেখা দেয় না সেই
নমুনাতে

4 Apr 2016

ইটস্ আ বাগ্


আই.টি. জগতবাসীদের ভাষায় বলা হয় 'ইটস্ আ বাগ্' । কিন্তু এই একটা 'বাগ্' কতটা পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে যেটা একজন আই.টি. ইঞ্জিনীয়ারের চেয়ে একজন কনস্ট্রাকশন বা সিভিল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারকে অনেকগুণ বেশি উঁচু স্থানে রেখে দেয় । বিশেষ করে একটাই 'বাগ' যদি শত শত মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়, সে 'বাগ্' যতই ছোটো বা ধরা-না-দেওয়া হোক ।

খবরের সূত্রে জানলাম যে ফর্টি নাম্বার পিলার আর ফর্টি ওয়ান নাম্বার পিলারের মাঝের দূরত্ব প্রায় ষাট মিটারের বেশি যা কিনা অন্য যেকোনো পর পর দুটো পিলারের মধ্যিকারের চেয়েও বেশি ছিলো । হতেই পারে রাস্তা যেখানে বাঁক নিচ্ছে সেখানে এই গ্যাপ বেশি রাখতে বাধ্য হয়েছে । ফর্টি নাম্বার পিলারের মধ্যে যে পাইলিং, ক্যাপিং, পায়ার, তার দুটি আর্ম, গির্ডারস্ আর ডেক যেভাবে ধাপে ধাপে থাকে, সেই পুরো ডিজাইন হয়তো ঠিক আছে । এমনকি প্যারালাল দুটোর যেকোনো একটা ডেকে ঢালাই করার পর শুকিয়ে গেলে, অন্যটাতে কাজ শুরু করার নিয়মটাও খাতাকলমে এবং কার্যক্রমানুসারে একদম ঠিক । সবটাই এক্সপার্টের মত । এক্সপার্টের বিশ্লেষণ ধরে আমি যদি বলি সেই না-জানা বা বলাই বাহুল্য 'সম্ভাব্য' বাগটা ঠিক কোথায়, ঠিক কোনখানে রয়ে গেছে সেটা অত হিসেব কষে বলা মোটেই চাড্ডিখানি কথা নয়, তাহলে কী পদ্ধতি নেওয়া যেতে পারে ?

প্রথমে মানুষের নিরাপত্তা আসে, পরে যাখুশি তালিকাভুক্ত দিব্যি চোখ বন্ধ রেখে করা যায় । যে কাঁচামাল দিয়ে তৈরী করা হয়েছে সেটার গুণ মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার মধ্যে যতটা রাজনৈতিক গন্ধ বেরোয়, ঠিক ততটাই 'ইঞ্জিনীয়ারনৈতিক' ফিল্টার লাগানো উচিত ছিলো বলে আমাদের সকলের একই মত । যেমন রেগুলার মনিটরিং করা, একজন এক্সপার্টের মতে ওই বিপজ্জনক গ্যাপের মধ্যে দু-তিনটে টেম্পোরারি সাপোর্টার রেখে ঢালাইয়ের কাজ শুরু আর শেষ করা, সাপোর্টার সরানোর সময়ে পিলারের দুর্বলতা ডিটেক্ট করা ইত্যাদি ইত্যাদি । সবার আগে যেটা করা উচিত ছিলো, সেটা হলো কাজ চলাকালীন তৎসংলগ্ন এলাকায় যেন কোনো মানুষজন না চলাফেরা করে । কিন্তু তা তো হয় নি সেটা আমরা সবাই জানি, এখনো প্রচুর মানুষের ভিড় ওই বাকি পিলার গুলো জুড়ে । তাদের মাথায় যেকোনোমুহূর্তে ভেঙেচুরে পড়ার ভয় তো থাকছেই । 

এবারে আসি 'বাগ্'প্রসঙ্গে । একটা ভুল ম্যাগ্নেফাইয়িং গ্লাস দিয়ে ধরা যে যায় না, সেটা আই.টি.তে সত্যি হলেও সেখানে সাপোর্টিং রিসোর্স বা টুল বা ভেন্ডারের অভাব কখনোই হয় না, তেমনি মানুষের প্রাণ নিয়ে সরাসরি কাজ করার দুর্ভাগ্য আই.টি.তে কারো নেই । যে প্রডাক্ট বা অ্যাপস্ লঞ্চ করে, তা কম্পিউটারস্ক্রিনে সীমিত । ব্যবহারিক মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই এখানে । কিন্তু বিল্ডিং, ফ্লাইওভার তৈরী করার সাথে যেসব ইঞ্জিনীয়ারিং জড়িত, সেগুলোর প্রতিটা হাজার হাজার প্রাণের সমতুল্য । ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে পড়তে বা পাশ করে জীবনের মাঝপথে নিজেকে হত্যা করা যায় নিশ্চয়ই । কিন্তু অন্যদের মেরে ফেলার ঝুঁকি কেউ তো নেবে না, তবু 'ঝুঁকি'টা থেকে যায় কারণ ন্যূনতম একটা 'বাগ্' তথা ত্রুটি এক্ষেত্রে একটা মারণাস্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় ।

চিকিৎসার জগতে যারা আছে, তাদের সাথে এইসব ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিনীয়ারদের সম্মানের লড়াই বাঁধাবার লোক আমি নই । শুধু বলতে চাই - এরকম অসংখ্য 'ভুলাণু' সবার রক্তে বয়ে চলে আজীবন, যতদিন না সেগুলো একত্রিত হয়ে আপনাআপনি ছিটকে 'ডেডলোড' হয়ে অন্যের বুকে আছড়ে পড়ছে । 

এখানে রাজনীতির হাত একেবারে নগণ্য ।

14 Mar 2016

নিমতার পাপড়ি


সময়ের স্বভাবদোষে
একাত্ম হয়ে যাই নিমতা ফুলের সাথে


সক্কাল বেলাতেই ফোটে সে
শরীরকে কোনোভাবে দাঁড় করাই তাকে দেখে
রোদ সামান্য উঠতে না উঠতেই
ঝরে পড়ে যায় ঝর ঝর করে
মন তাতে হয় অ্যান্টি-ঝরঝরে 


জলের একটু নিচে
একটা মাছের ঠোঁটে লেগে যায়
নিরুদ্দিষ্ট নিমতার একটা পাপড়ি


মাছটির উপবাস শুরু হয় 
তখুনি
বদলে যায় একাত্মতার নাম
পাল্টে যায় চুমু খাওয়ার সমস্ত গাইডলাইনস্


চেয়ে থাকি অপলক
পরিবর্তনক্লান্ত বায়োলজিক্যাল সিস্টেমের দিকে
তার ভিতরে, 

আরো ভিতরে হামাগুড়ি দেয় একপ্রকারের কচিলজ্জা
সে লজ্জাটুকু পেঙ্গুইনেরও নেই


সন্ধ্যা নামার আগে কুড়িয়ে নিই
নিমতা ফুলের বাকি রূপচাঁদের টুকরোগুলো

29 Feb 2016

মিডিয়ানির্ভর মানবজাতির মুখ


রোজ নিজেকে দেখতে পাই । দেখতে হয় এমন কোনো নিয়ম নেই । খালি দেখা পাই প্রতিনিয়ত । এই দুনিয়ায় ছোটোবড়ো সাইজের যেকোনো আয়নার পাশ কাটিয়ে যাবার মুহূর্তে ঘাড়সমেত চোখমুখ কেমন একটা যাদুবলে ঘুরে যায় সেই আয়নার দিকে । নিছক বললেও কম বলা হয় । ঘাড় ঘুরে নিজের মুখ একঝলকে দেখে ফেলার পেছনে শুধু সৎ কেন, বদ্-ব্যাখ্যাও নেই । 

আয়না আছে বলে নিজের মুখ দেখতে পাই, না নিজের মুখ দেখার জন্য আয়না লাগে - কোনটা ঠিক ? তেমনি আমি ঠিক বুঝতে পারি না - মিডিয়া আছে বলে রোজ দেখতে পাই রাহুল গান্ধী, স্মৃতি ইরানি, অর্ণব গোস্বামী, বিরাট কোহলি, কানহাইয়া কুমারদের মুখ নাকি ওদের মুখ দেখার জন্য (পড়ুন ওদের খবর জানবার জন্য) মিডিয়ার প্রয়োজন পড়ে । অথচ প্রতিনিয়ত দেখতে পাই এদের । এরা হয়ে উঠেছে দৈনন্দিনতার মুখপাত্র । এরা নাহয় জীবিত । কিন্তু মৃতব্যাক্তি ? কবে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে অথবা চলে যেতে হয়েছে স্বেচ্ছায় কিম্বা অন্যের ইচ্ছায়, তবুও এদের মুখ দেখতে পাই - রোহিত, নির্ভয়া, অরোরা এদের ছবি । এদের পারিবারিক ছবি । এদের ভিতরের অসুখের ছবি । এদের ভিতরের রক্তক্ষরণের ছবি ।

সত্যি জীবিত বা মৃত কোনোটাই শেষ কথা নয় । মুখছবি শেষ কথা যা নিজেকে রোজ দেখতে পাই সকালে ওঠবার পর আর রাতে শোবার আগে । মৃত্যু আর নিজের মুখদর্শনের মধ্যে কি আশ্চর্য মিল ! আয়না আর মিডিয়ার মধ্যে কি অদ্ভূত মিল !

মিডিয়াকে যত ধিক্ ধিক্, ততই মিডিয়ানির্ভর এই মানবজাতির মুখ ।

8 Feb 2016

মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই


পরশুরাম বলে গেছেন, "যারা ট্রাজেডি লেখে আর তা পড়তে খুব ভালোবাসে, তারা সব মরবিড, প্রচ্ছন্ন নিষ্ঠুর । মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই, তার উপর আবার মনগড়া-দুঃখের কাহিনী চাপাবে কেন ?" 

আমি এই উবাচ কয়েকবার পড়লাম । মাকে পড়ালাম । বাবাকে পড়ালাম । বৌকেও বাদ দিলাম না । ছেলেকেও পড়াবো পড়াবো করেও ছেড়ে দিলাম কারণ এখনো দুঃখবোধ তৈরী হয় নি যতই না কিত্ কিত্ করে কেঁদে ভাসাক । আরেকটু বড় হোক দুঃখের ঝোলাব্যাগ কাঁধে বয়ে নেবার মত ।

দুঃখের যখন অভাব নেই, তখন ধরে নিতে হবে এতো সেন্টিমেন্টাল হবার বিশেষ কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই । কেউ দিতে এলেও দূরপাল্লার কোনো ট্রেন ছুটে এসে থামবে না । কারণ সামনের দিকে সর্বদা সবুজ আলো জ্বলে উঠবেই । ওই সবুজ আলোর দিকে ছুটে পালাবে বহুলোক নিয়ে, গোটা একটা জগৎ । কেউ অন্যের দুঃখে বসে নেই । তাই দুঃখের কোনো ইউনিকনেস্ নেই । স্বকীয়তা নেই । স্বাতন্ত্র্য নেই । মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে মানুষ সুখ খোঁজে । আঁচড় কেটে রক্ত বের করে সুখের জ্বালা মেটায় । দেওয়ালে মাথা ঠুকে সুখের আলু গজায় । বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সুখী হয় । চোখের জলের অপর নাম সুখ । খানিকটা "জলের অপর নাম জীবন" গোছের । 

হিসেব কষলে হয়তো রেজাল্ট বেরোবে যে সুখের বড়ো অভাব । তাই সুখের কাহিনী কেউ লেখে না । লিখতেও চায় না সুখী মানুষেরা । নাহ্, ভুল বললাম । আসল কথাটা হচ্ছে সুখকে আমরা তাড়াতাড়ি ভুলে যাই বা মনে রাখি না । শৈশবকে সহজে মনে রাখতে পারি না ঠিক এই কারণে । এও একধরণের ন্যাচারাল নিষ্ঠুরতা । খালি মনে রাখতে পারি রঙীন রঙীন দুঃখ । সত্যিই তো ! কী বা দরকার ছিলো এতো রঙ নিয়ে দুঃখখেলার ?!

আমি এখন ভাবি সুখের নিজস্ব কোনো রঙ নেই । যদি একটুখানি সাদা সুখের সাথে একটুখানি কালো সুখ মিশিয়ে দেওয়া যায়, তবে মন্দ কিসের ?

25 Jan 2016

অ্যান্ অ্যাননিমাস্ আলস্য


সূর্যকে আগে কানামাছির বেশে দেখতে ভালো লাগতো না । আজকাল কেন জানি না মেঘের আগোছালো রুমালে চোখবাঁধা সূর্যের অসহায়তা দেখতে খু-উ-উ-ব ভাল্লাগছে ; আকাশে ভাসছে একটি বড়সড় কানামাছি । 

একদল পাখি উড়ে এসে টুপ্ করে ফেলে দিয়ে গেলো আমার অলটাইম ফেভারিট আলস্য ; আমার অগুনতি নিঃশ্বাস ত্যাগের সুখতীর্থ । 

আমার পাজামা এখনো বেশ ঠাণ্ডা । তার ভিতরে গুটিসুটি মেরে থাকা রোমশ পায়ের সম্পর্কে আমার তিলমাত্র উৎসাহ নেই । 

মোজাদুটো ক্রমে শুষে নিচ্ছে শেষ উষ্ণতাটুকু ; একাকী রক্তরেলের টার্মিনাল । আ ব্রিফ জার্নি অফ লোনলি ব্লাড, আ লস্ সো...

বৌয়ের নীচের ঠোঁটের কিছুটা ফেটে গেছে । ড্রাইনেসের অত্যাচার ; এ এক প্রত্যাখানের শিরশিরানি । কাল সন্ধ্যায় অঞ্জলী জুয়েলার্সের সামনে দেখেছিলাম একজনের লাল টকটকে লঙ্কাদুটো । তবুও বৌকে বলি নি ক্রিম লাগাতে কারণ আমার মতে একটু ন্যাচারাল থাকা ভালো । 

হ্যাজবান্ডের এমন অলসযুক্তি তার কচিকচি পাখনাদুটি মেলে উড়ুক । বেশিদূর যেতে পারবে না যদিও...
ভেসলিন, বোরোলীন, পন্ডস্ এদের চাহিদা অনেকদূর অবধি । গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সি পেরিয়ে কার মুখ দেখতে পাবো যার ঠোঁট নেই ?

বিবর্তনতত্ত্ব কি খাটে এমন অলসমুহূর্তে যেখানে একদল পাখির ঠোঁটে ঝুলছিলো আমার প্রিয় চিরকুট ; অ্যান্ অ্যাননিমাস্ আলস্য ।

18 Jan 2016

অক্সিজেনের শিশিটা হারিয়ে ফেলেছি


একে বলে চাঁদসাহিত্য ।
এরে কয় নদীসাহিত্য । 


সাহিত্যের ভূখণ্ড প্রায় পুরোটাই ঢেকে চেয়ার টেবিল বসানো আছে । চেয়ারে বসে ঢুলছে বিশাল বড়ো ন্যাড়ামাথার চাঁদ । টেবিলে খাতার পর খাতায় বয়ে চলছে বিমর্ষ নদী ।
নেকস্ট পাতায় মিশলেও নদীর সংজ্ঞা পাল্টায় না । চেয়ার ছেড়ে উঠলেও চাঁদের ব্যবহারিক বিস্তার কমে না । 

খালি চাঁদামো ।
খালি নদীপনা ।


আর ভাল্লাগে না, পদ্যকবি আমার !
আর পোষায় না, গদ্যলেখক আমার ! 


এবার ব্রেক দাও, হে সাহিত্য ! চাঁদকে গুঁড়িয়ে ফেলো চিরকালের মতো ! নদীকে নিংড়ে মেরে ফেলো সূর্পণখার মতো ! এখন থেকে নিঃচাঁদ লেখা চাই । নদীপ্রেম ও থাকবে না । 

শুনছো ? অক্সিজেনের শিশিটা হারিয়ে ফেলেছি যে..

ব্যক্তিগত ঘুমের আরেক নাম হলো জর্জ রেমি


আমার ব্যক্তিগত ঘুমের আরেক নাম হলো জর্জ রেমি । তাঁর আঁকা টিনটিন আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, কুট্টুস আমার গাল চাটছে, ক্যাপ্টেন হ্যাডক আমাকে জড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে, টমসন টম্পসন আমার পা দুটো ম্যাসাজ করে দিচ্ছে, প্রফেসর ক্যালকুলাস আমার মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক ইউটিউব সবকিছু আন্ইনস্টল করে দিচ্ছে ।

যেখানে আগুন ছিলো একসময় ধর্ম


লেপ ওল্টাতে বেরিয়ে এলো
এক চ্যাবড়া প্রগলভ ম্যাগমা
বিছানা থেকে নেমে ছুটে পালাচ্ছে
বন্যহরিণ, বাইসন, ম্যামথ - একের পর একে


বালিশের উপরে ঘাম জমে জমে সে হয়ে গেলো
আমার আত্মছবি
দেখতে কোনো এক গুহামানবের মতো - অনেকটাই মিল


বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজতে গেলাম
বন্ধ জানলার কাছে
অল্প একটু ফাঁক করতেই যে হাওয়া
ঢুকে পড়লো হু হু করে
বিশ্বাস করতে পারি নি তাকে - জাস্ট পারলাম না


ফিরে গেলাম
বহুছালীয় সভ্যতার একটা ছাল কেটেফুঁড়ে
যেখানে আগুন ছিলো একসময়
ধর্ম; তাকে ঘিরে ছিলো
অসীম ভয় ও অপার বিস্ময় - একসাথে প্রবলভাবে

নিজেকে লুকোবে কোথায়?


জিনিসপত্তর তোমার
যেমন আছে অনেক অনেক
লুকিয়ে রাখার জন্যে তেমনি
রয়েছে প্রচুর জায়গা
এখানে না হলেও ওখানে তো হবেই

কিন্তু
তুমি বড়ো সাইজের একটা কিন্তু
তুমি একটাই কিন্তু
নিজেকে লুকোবে কোথায়?
ভেবেছো কখনো ?

অনিশ্চয়তার বুকমাঝারে


অনিশ্চয়তা এমন এক সস্তা পাবলিক
যার জন্য সেভিংস্ অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স আজকাল
চেক করা-ও বোকামি ।


অথচ তুমি ছুটে চলছো
এমন ফুলস্পিডে
এমন জেদে
এমন তেজে
এমন হাস্যকর উপায়ে যা দেখলে
নতুন নতুন ব্যাঙ্ক
তার নিত্যনতুন শাখাপ্রশাখা গজিয়ে উঠবে । 


বাড়তে থাকবে ব্যাঙ্কদূষণ
বাড়বে বিশ্বাসকষ্ট;


এসো, বসো, একটু জিরিয়ে নাও
এমন শরবত খেয়ে নাও যার
তিনভাগ জল আর
একভাগ নিশ্চয়তা


দেখবে আর বুঝবে
কেমন একটা চারুকলা জেগে জেগে উঠছে
অনিশ্চয়তার বুকমাঝারে ।

4 Jan 2016

# ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৫ #


জয় গোস্বামী । তাঁর 'মায়ের সামনে স্নান করতে লজ্জা নেই' । এটি তাঁর স্বীকারোক্তি কিনা তা নিয়ে কারো কারো দ্বিমত থাকতেও পারে । অকপটচিত্তে বলা কথাটি শুনলে আজও অর্থাৎ টোয়েন্টি-ফিফটিনের লাস্ট ডে-তেও দাঁড়িয়ে অনেকের চোখ ব্রহ্মতালুতে উঠে যেতে বাধ্য । একটা কবিতাবইয়ের মলাটের গায়ে উল্লিখিত নামকরণের পেছনে অসার্থক-সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক । অথচ মাথাব্যাথা নেই প্রকাশকের । আনন্দ পাবলিশার্স । সিগনেট প্রেস । কারণ ততদিনে জয় গোস্বামীর খ্যাতি অম্বুজা সিমেন্টতুল্য । জয় গোস্বামী বলতে আজ বুঝি প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে আসা রবীন্দ্রদাড়িগোঁফভর্তি একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব । তফাৎ শুধু কালোসাদায় । 

আজ চারদিকে বিশেষ করে ক্লাবে, পাবে,নাইটক্লাবে, হোটেলে নিউ ইয়ার ইভের ধুমধাড়াক্কা । নতুন বছর বরণের নামে ইরোটিক নাচের উদ্দামাক্কা । চলতি বছরের শেষ কয়েকটা ঘন্টায় নিজেদের মনশরীরকে শেষবারের মতো চরমক্লান্তিতে সঁপে দেবার জোরজবরদস্তিক্কা । এইসময়ে এই কবিতাবইটা খুলতেই প্রথম কবিতা চোখে পড়লো । তার একাংশ তুলে দিলাম নিচে - 

"...জগৎ একটা হৃদপিণ্ড, রাতে তোমার হাতের ওপর এসে পড়ে এই জগৎ - দু'হাতে ধরে বসে থাকো তুমি, দ্যাখো কীরকম ধক্ ধক্ ধক্ ধক্ করে সারারাত, একদিন ভোর হবার ঠিক আগেই ওই জগৎ বা হৃদপিণ্ড নিঃশব্দে ফেটে যাবে, তার আগে বলো বলো বলে দাও ওরে বোকার মরণ নইলে পরে আর সময় থাকবে না...", 

কার বা কাদের উদ্দেশে লিখে গেছিলেন জয়দা জানা না থাকলেও ঠিক এই সময় বা বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে চমকে দিতে ওস্তাদ উপরের লাইনগুলো । বছর শেষ হতে চলছে । ভোরের আলো বাসিমুখের উপরে পড়ার আগে যা বলার সব বলে দিতে হবে, নাহলে কালের নিয়মে আরেকটা বছর ঘুরে আসবে পিঠে ঠ্যালা মারতে । এক কথায় আগে যেমন মরণ ছিলে, তেমনি মরণ হয়ে থাকবে যদি না মুখ ফুটে কিছু বলো বা কনফেস্ করো । 

আপাতবিচারে আমরা সকলেই কম-বেশি মরণ । সার্বজনীন মোদী থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদীদের নিয়ে শেষে আমরা-তোমরা-বাদী । কেউ স্বীকার করবে না কী কী করেছি বা করি নি আমরা, কার কার সাথে শুয়েছি বা শুই নি, কাকে বা কাদের উপরে বোমটোম মেরেছি বা মারতে ভুলে গেছি বা একটুর জন্য ফস্কে গেলো বলে মাথার চুলটুল ছিঁড়েছি, কাকে কাকে নির্ভয়া নাম্বার দুই তিন চার বানিয়েছি বা ক'জনকে ছেড়ে দিয়েছি বা অ্যাসিড ছোঁড়ার প্ল্যান বের করেছি কিন্তু পেপারে রঙীন ছবিসহ নাম বেরিয়ে যেতে পারে ভেবে কতবার সংযত হয়েছি, কোন কোন অকাজ করি নি বা করতে চাই নি সৎপথে, কী কী ভুল করেছি, কী কী অন্যায় করেছি, কী কী ছড়িয়ে দিয়েছি, সর্বোপরি কী কী ভালোমানুষী শপথ নিয়েছি বা ছেলেমানুষী বিপথে চলেছি সারা বছরজুড়ে । কেউ মানতে চাইবে না গোটা একটা বছরের হিসেব । কেউ দেখেও দেখবে না সেই হিসেবের বিশ্লেষণী গ্রাফলাইন । মরণ আমরা সকলে । তাই রোজ ভোরের আলো এসে লুকোচুরি খেলে আমাদের দু-মুখের মধ্যে । পয়লা জানুয়ারির ভোর ও ব্যাতিক্রম নয় ।

সময় নষ্ট হয় বলে প্রতিটা ভোর আসে । সময় থাকে না বলে আগের সারারাত কেটে যায় কামে-ঘামে-উদ্দামে-নির্দমে । সময় নেই বলে নতুন বছর আসে সমস্ত হিসেব আপসাইড ডাউন করে ফেলতে । জয় গোস্বামী কি এইভাবে বছরের পর বছর ৩১শে ডিসেম্বরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন ? তাতেও সন্দেহ আছে । কারণ আরেকটা কবিতায় তাঁর কথায় বনজঙ্গলের দিকে ছুটতে থাকা একটা কুকুরের "মুখে বলের মতো কামড়ে ধরা আমার প্রাণ । দে, দে, থাম্ থাম্ বলে ওর পিছনে ছুটছি আমি ।" 

ইতিহাস ছুটছে যার চেহারা এরকম - বছর ছোটে । তার পেছনে সময় ছোটে । তার পেছনে প্রাণ ছোটে । তার পেছনে মরণ ছোটে । তার পেছনে বছর ছোটে ।

খালি চাঁদামো, খালি নদীপনা


একে বলে চাঁদসাহিত্য ।
এরে কয় নদীসাহিত্য । 


সাহিত্যের ভূখণ্ড প্রায় পুরোটাই ঢেকে চেয়ার টেবিল বসানো আছে । চেয়ারে বসে ঢুলছে বিশাল বড়ো ন্যাড়ামাথার চাঁদ । টেবিলে খাতার পর খাতায় বয়ে চলছে বিমর্ষ নদী ।

নেকস্ট পাতায় মিশলেও নদীর সংজ্ঞা পাল্টায় না । চেয়ার ছেড়ে উঠলেও চাঁদের ব্যবহারিক বিস্তার কমে না । 

খালি চাঁদামো ।
খালি নদীপনা ।


আর ভাল্লাগে না, পদ্যকবি আমার !
আর পোষায় না, গদ্যলেখক আমার ! 


এবার ব্রেক দাও, হে সাহিত্য ! চাঁদকে গুঁড়িয়ে ফেলো চিরকালের মতো ! নদীকে নিংড়ে মেরে ফেলো সূর্পণখার মতো ! এখন থেকে নিঃচাঁদ লেখা চাই । নদীপ্রেম ও থাকবে না । 

শুনছো ? অক্সিজেনের শিশিটা হারিয়ে ফেলেছি যে...

জর্জ রেমি


আমার ব্যক্তিগত ঘুমের আরেক নাম হলো জর্জ রেমি । তাঁর আঁকা টিনটিন আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে, কুট্টুস আমার গাল চাটছে, ক্যাপ্টেন হ্যাডক আমাকে জড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে, টমসন টম্পসন আমার পা দুটো ম্যাসাজ করে দিচ্ছে, প্রফেসর ক্যালকুলাস আমার মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক ইউটিউব সবকিছু আন্ইনস্টল করে দিচ্ছে ।

মাছি ধরা


মাছি ধরা নিয়ে আজ পর্যন্ত পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় নি কোথাও । কোনো খবরের কাগজে দেখি না মাছি মারার অভাবনীয় কীর্তি নিয়ে হেডলাইন । গল্পোপন্যাসে প্রায় দেখি মাছি তাড়ানোর ক্লিশে পট । নিদেনপক্ষে ইন্ডোর গেমস্-এ এক ঘন্টায় সর্বাধিক মাছি খপ করে ধরে ফেলার মতো উইনিং চ্যালেঞ্জের জায়গা নেই । এ তো ভারী অদ্ভূত । বিশাল একটা অদ্ভূতের ঘোর নিয়ে বসে আছি । আমার ডানহাত এখন খুব টায়ার্ড । ওদিকে তিন ইঞ্চি দূরে একটা মাছি একটা পা তুলে নিজের মুখের ঘাম মুছছে । পালিয়ে পালিয়ে যা ঘাম ঝরেছে, না ? আ ট্রু স্পোর্টিং লাইফ যা দুনিয়ার অগোচরে চলে ।

তার সারা শরীরকে অনুবাদ করে ফেললাম


শেষ পর্যন্ত তার সারা শরীরকে অনুবাদ করে ফেললাম । মুণ্ডুটুকু বাদ দিয়েছি । খুবই জটিল ছিলো তার মুণ্ডুটা, বাকিটা সরল বলতে তার নগ্নশরীর । বারান্দায় কালো কার্পেট পেতে শুয়েছিলো সে । বারান্দার এক কোণে বসে কাজ করছিলাম । তার মুণ্ডুর একদম কাছে আমার ধূলোহীন পা । আমার পা দুটিতে ছিলো না কোনো জটিলতা, যা সব রয়েছে একমাত্র তার মুণ্ডুতে । 

তার ফর্সা শরীরের উপরে আড়াআড়ি করে আমার ছায়া পড়েছিলো । আমার ছায়ামুণ্ডু তার যোনির বাঁদিক ঘেঁষে চলে গেছিলো । সারারাত ধরে একটা ঝড় ছিলো আমাদের সাথে । সেই ঝড় অনুবাদের ফাঁকে ফাঁকে চিৎকার করে বলছিলো - "তোর মুণ্ডু!"

তার চিৎকারে আমি কাজ থামিয়ে একবার চেয়ে দেখি মেয়েটার জটিলমুণ্ড । একবার চেয়ে দেখি সেই গুরুত্বপূর্ণ প্যারা-টা মিস্ করে যাওয়া নিজমুণ্ডুছায়া । ঝড় দুই তিনবার হয়তো গলা একটু নামিয়ে বলতে চাইছিলো, "তোর পায়ে পড়ি এবার"। নিশ্চিত ছিলাম না যদিও ।

আমার পা দুটি ধীরেসুস্থে এগিয়ে যাচ্ছিলো মেয়েটার মুণ্ডুর দিকে । ঝড় তক্ষুনি তার কালো চুল উড়িয়ে দেয় । চুল একই জায়গায় থেকে উড়তে থাকে । দেখলে মনে হবে কালো কার্পেটের একপাশ থেকে যেন কালো নরম চাদর বিছিয়ে দেওয়া আছে । সেই চাদরের শেষ যেখানে, সেখানে আমার পা দুটি । কে কার পায়ে পড়লো ? সম্মান অসম্মানের ঝাপটা বুঝতে পারি নি । একনিষ্ঠ অনুবাদক তখনো আমি ।
তার গোটা শরীরের অনুবাদক আমি । ইংলিশ থেকে বাংলায় নয় । উল্টোটাও নয় । তার উন্নতবুক দুটিকে, তার সুগভীর নাভিকে, তার লোমহীন যোনিকে, তার মাখনভাব ঊরুদ্বয়কে, তার নিষ্পাপ পা দুটিকে অনুবাদ করেছিলাম এমন একটা ভাষায় ঠিক যেভাবে ঝড় শিখিয়ে দেয় একজনের শরীর ও মুণ্ডুর মধ্যিকারের বিভেদকরণ । 

এখন অনুবাদ-কম্মোর তেমন কোনো মাথামুণ্ডু নেই বলে তোমরা প্রতিবাদ করলে কিন্তু রাগ করবো । খাতাটা তবে ছিঁড়বো না ।

গুহামানবের মতো


লেপ ওল্টাতে বেরিয়ে এলো
এক চ্যাবড়া প্রগলভ ম্যাগমা
বিছানা থেকে নেমে ছুটে পালাচ্ছে
বন্যহরিণ, বাইসন, ম্যামথ - একের পর একে


বালিশের উপরে ঘাম জমে জমে সে হয়ে গেলো
আমার আত্মছবি
দেখতে কোনো এক গুহামানবের মতো - অনেকটাই মিল


বৈজ্ঞানিক যুক্তি খুঁজতে গেলাম
বন্ধ জানলার কাছে
অল্প একটু ফাঁক করতেই যে হাওয়া
ঢুকে পড়লো হু হু করে
বিশ্বাস করতে পারি নি তাকে - জাস্ট পারলাম না


ফিরে গেলাম
বহুছালীয় সভ্যতার একটা ছাল কেটেফুঁড়ে
যেখানে আগুন ছিলো একসময়
ধর্ম; তাকে ঘিরে ছিলো
অসীম ভয় ও অপার বিস্ময় - একসাথে প্রবলভাবে