31 Dec 2014

প্রি আর পোস্ট


২০১৫ [বুকডন দিতে দিতে] : আচ্ছা প্রিদা, আমার খুব টেনশন হচ্ছে !

২০১৪ [মরা ব্যাঙের মত চিৎ হয়ে] : কেন রে পোস্ট ? কিসের টেনশন আবার তোর ? আরো কটা বুকডন দে তো দেখি । 

২০১৫ : ধুৎ ! তোমার এই হাল দেখে আমার কেমন একটা ইয়ে লাগছে । বুকে গুরগুর করছে, পেট ধড়ফড় করছে, মাথাটা ঝিঁঝিঁ করছে, পা দুটো ভন ভন...

২০১৪ [তড়াক করে উঠে বসে] : বেশি বুকডন দিয়ে ফেলেছিস নাকি ? এবার একটু পজ্ দে ।

২০১৫ [বুকডন থামিয়ে] : আর পারছি না দাদা ! কি যে হবে আমার ? এক বছর ধরে তোমার উপরে যা ঝুড়োঝাপ্টা গেলো, তাতে তুমি পুরোচ্যাপ্টা হয়ে আছো । আমি হয়তো এক মাসের বেশি টানতে পারবো না । 

২০১৪ [পোস্টের কাছে গিয়ে বসে] : ইসস কি সুন্দর চেহারাখানা বানিয়েছিস ! সারা ক্যালেন্ডারজুড়ে ঝলমল করছে । চারটে কোয়ার্টারের প্রতিটা একদম মাপে মাপে আছে দেখছি । পুরো সেক্সি মাল তো ! এ অবস্থায় ভয় পেলে চলবে কি ভাই ? 

২০১৫ [বিনয়ী সেজে] : প্রিদা ভুলে যেও না যে তোমার চেহারাটাও এই বছরের শুরুতে অবিকল আমার মতই ছিলো । আর এখন দেখছি শুষ্ক কাঠি বানিয়েছো । দেখলে মনে হয় মৃগীরুগী

২০১৪ [পোস্টের কাঁধে হাত রেখে] : হা হা হা, আর বলিস না ! আসলে ওই অমুকের জীবনটা ভারী গোলমেলে । তবুও কিছু দাগ কাটতে পেরেছে আমার গায়ে । সেগুলো মনে রাখার মত । নো ডাউট !

২০১৫ [কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্রি-এর হাত সরিয়ে] : সরি ! অমুকের জন্যে স্টার্ট করলে আমার গাঁড় নিমিষে ফেটে চৌচির হয়ে যাবে । তাই আমি আজ দুপুরে 'Year for whom (Kolkata, WB, India, South Asia)' রেজিস্ট্রেশন ফর্ম থেকে বালটার নাম কেটে অন্য একজনের নাম দিয়ে রেখেছিলাম । এই দেখো সেই ফর্মটা...

২০১৪ [ফর্মে একবার চোখ বুলিয়ে পোস্টের মাথার পেছনে চাঁটি মেরে] : আলফাল বলে ন্যাকাস না । তুই দেখছি অমুককে ছেড়ে কামুককে ধরলি ! অমুকের দোষটা কি ? ওই যে তমুক আছে না সে বা কি করেছে যে তাকেও মনে পড়ে না ? বা শামুক ? এদের সকলকে ছেড়ে শেষে কামুক ? তোকে কে গ্যারান্টি দিলো যে কামুকের লাইফটা তোর সারা গা মোটা মোটা দাগে ভরিয়ে দেবে ? নাকি তুই চাইছিস প্রতি কোয়ার্টারে সে এমন টাকা কামুক, এমন সুখে কামুক, এমন চূড়ান্ত সাকসেস কা মুখ যে তোর এই চেহারাখানি বছরের শেষে ফুলে ফেঁপে থাকুক ? ননসেন্সের একশেষ !

২০১৫ [নিজের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে] : আমি কিন্তু ওকে নিয়ে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর । কারণ তার সেই ২০১৪ বছরটার সাথে আজকের সকালে আলাপ হয়েছিলো । উফফ কি যে চাকচিক্য চেহারা দেখলাম ওই বর্ষদার আজকের এই শেষদিনেও । সারা গা থেকে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য দাগা-প্রদাগা । প্রতিটা দাগ একটা করে সাকসেস-স্টোরি দিয়ে বেঁধে রাখা । আড্ডাছলে তার মুখ থেকে কত-কি-গল্প শুনলাম ! আহা সব স্বপ্নের মত ! ভোলা যায় না সেই সব ।

২০১৪ [হতবাকের ভান করে] : তাই ?

২০১৫ [ট্রিপল উত্তেজিত হয়ে] : ইয়েস প্রিদা ! আর জানো সেই বর্ষদা আমাকে তার সেই রেজিস্টার্ড কামুকের নাম নিতে বললো অমুক-তমুক-শামুক বাদ দিয়ে । তাহলে আমি একটা প্রকাণ্ড দাগাছ হয়ে যাবো বছরের শেষে । কি বলো দাদা ?

২০১৪ [চিন্তিত মুখ করে] : হুঁ ! ইন্টারেস্টিং ! কিন্তু পোস্ট...

২০১৫ [তিতিবিরক্ত হয়ে] : কিন্তু কি ? আমি বলছি...

২০১৪ [মুচকি হেসে পোস্টকে থামিয়ে] : আমি জানি তুই কি বলবি ? কিন্তু আমি একজন প্রয়াত বর্ষদাদার কাছে শুনেছিলাম আমার এই রেজিস্টার্ড অমুকের কথা । সেই বর্ষদাদার রেজিস্ট্রি হয়েছিলো ৩ বছর আগে । আর বছরের শেষেও ওই দাদাকে কিন্তু বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছিলো । তবে তোর বড়লোকি চালবাজ বর্ষদার মত ভাগ্যবান না হলেও বেশ ভদ্রস্থ স্টেটে ছিল । এমনকি তোর এই বর্তমান অবস্থার চেয়েও বহুগুণ বেটার । আই মিন ইট ! বিলিভ ইট অর নট !

২০১৫ [মাথা চুলকোতে চুলকোতে] : তাই নাকি ? শালা তাহলে তোমার এই অবস্থা কেন হল ?

২০১৪ [আঁতেল সেজে] : হিসেবনিকেশের শুধু বাপ-মা কেন, কেউ নেই । ভাগ্যের চাকা টিউবলেস হতে পারে, আবার নাও পারে । তোর এখনকার চেহারা মেইনটেন করার জন্যে যেমন কোনো ডায়েটচার্ট বানানো নেই, তেমনি দাগ কাটার পেন কেনার দরকার নাও পড়তে পারে । সব-ই তোর ওই কামুকের নিজস্বী থুড়ি সেলফি যার কোনো কনস্ট্যান্ট ইমপ্যাক্ট নেই । উঃ...

২০১৫ [চমকে গিয়ে] : কি হল দাদা তোমার ?

২০১৪ [ম্লান হেসে] : আবার কি হবে ? আমার আয়ু শেষ হতে আর কতক্ষণ ! জানিস তো ব্যাটা সব ! আমার বা তোর কারোর জন্ম নেই, শুধু ছাপমারা একটা নির্দিষ্ট সময়কাল আমরা । তবে আছে অকালমৃত্যু ও তার উৎসবপালন । একটু পরেই আমার ওই প্রিয় অমুক ড্রিংক করবে কয়েকজন বন্ধু মিলে । ওটাই আমাকে মেরে ফেলার সুন্দর পরিকল্পনা । ওই দ্যাখ দ্যাখ অমুকের হাতে গ্লাস । তা পোস্ট বল কি করছে তোর ওই কাম-উঃ...

২০১৫ [কাঁদো কাঁদো মুখ করে] : প্রিদা ! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ! তোমাকে এইভাবে চলে যেতে দেখে...

২০১৪ [পোস্টের কান আলতো চেপে ধরে টেনে] : তোর ভাণ্ডার এখন অনভিজ্ঞতায় টস্ টস্ করছে ! বছরের শেষে প্রচুর অভিজ্ঞতায় শুষে নিয়ে ভাণ্ডারজুড়ে একেবারে খাঁ খাঁ করে ছাড়বে । আয় বুকে আয়...

২০১৫ [প্রি-কে জড়িয়ে ধরে] : আমাকে আশির্বাদ করে যেও দাদা ! আমি যেন বছরের শেষ অবধি টিকে যেতে পারি কামুকের যেই হোক না কেন...একি একি শরীর খারাপ লাগছে ? এখনো কয়েক ঘন্টা বাকি আছে...

২০১৪ [পোস্টের কপালে চুমু খেয়ে] : এবার চলে যা পোস্ট ! উইশ ইউ অল দি বেস্ট !

২০১৫ [হাত নেড়ে] : গুড বাই প্রিদা !

#২০১৫ গলায় #Happy_New_Year ব্যাজ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো...

29 Dec 2014

হারামিভূত


সারা হলে আমি একা । সোফায় গা এলিয়ে কম্বলালিঙ্গনবদ্ধ ছিলুম । ঘড়িতে আড়াইটের রাত তখন ঝিমোচ্ছিলো । সামনের দিকের ঘরের দরজা পর্দাঢাকা । তার পাশের বাথরুমটা বন্ধ । তার পাশের রান্নাঘরটা খোলা কিন্তু এই হলের হ্যালোজেন বাল্বের আলোয় কিছুটা আধান্ধকার । 

মোবাইলে কুটকুটানি চলছিলো একমনে । এমন সময়ে মনে হলো কে যেন হন্ হন্ করে রান্নাঘরে গেলো । চমকে গিয়ে ওদিকে তাকাতেই বুঝলাম মনের ভুল ।

তাও কোথায় যেন খুঁতখুত করলো মনটা । প্রথমে ভাবছিলাম একবার উঠে গিয়ে রান্নাঘরের আলো জ্বালাবো, পরে নেতিবাচক হলাম । বুড়োবয়সে এসে ভয় পেয়ে গেলুম নাকি যে একটু যেচে দেখতে চেয়েও পারলুম না ? ভূতের ভয়ডর না থাকলেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি লাগছিলো । মনে হচ্ছিলো এবার বেডরুমে ঢুকে পড়া ভালো ।

তার আগে কনফার্মড্ হবার জন্য একবার ভালো করে চেয়ে নিলুম চারধারে মাথাটাকে ঘুরিয়ে । ৩৫৯ ডিগ্রি অবধি ঘোরার পর মনে দপ করে একটা বাল্ব জ্বলে উঠলো । ভয়ের বাল্ব । শুধু ৩৬০তম ডিগ্রিতে থাকা একটা না-দেখা ভূত বোধ হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে । বহুকষ্টে শেষতম ডিগ্রি অর্জন করে দেখলাম নাহ্ ফালতু ভয় পাচ্ছিলুম । 

আর থাকতে না পেরে গুটিসুটি মেরে যেই বেডরুমে ঢুকতে গেলুম তখনই মনে হল রান্নাঘরের আলো যেন জ্বলে উঠলো । থমকে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আলোটা জ্বালানো নেই, উল্টে হলের হ্যালোজেনের আলোর সদ্যোজাতসন্তান হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়েছে । খেয়াল করলাম তার ছন্নছাড়া গতিবিধি আর আমার ভীতিবিধির মধ্যে কোনো অমিল নেই ।

বিজ্ঞান নিজেই একটা হারামিভূত ।

আধটুকরো সম্মান


হানি হওয়ার পর যে আধটুকরো সম্মান বেঁচে থাকে, তাকে গরম ভেজা তোয়ালে জড়িয়ে রাখা হয় । বাকি খুইয়ে যাওয়াটা কত লোকে বরফঠাণ্ডা হাতে নিয়ে বয়ে বেড়ায় । সেই বেড়ানো চিরকালের হয় না । 

মৃতজ্ঞ যারা, তারা-ই নিজের বুকের পাঁজরে বরফের কুচি রাখে । বাকিরা এই কনকনে শীতেও ফ্রিজের ভিতরে খাবার খোঁজে । সেই না-পাওয়া খাবারের আসল নাম সম্মান ।

10 Dec 2014

স্পিডোমিটার


ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে লিখতে না বসে প্রায় বরফ-বরফ জলে চান সেরে ফ্রেশ হয়ে গাড়ি চালিয়ে সকালের কুয়াশার চাদর একটার পর একটা পটাপট ছিঁড়ে ফেলার মজা আলাদা । 

যদিও দুপুরে বসে অনুভূতি বলতে গিয়ে লিখে ফেললাম উপরিলিখিত লাইনটা । এক মিনিটের কম লাগলো লিখতে । মজার রেশ কাটে নি পুরোপুরি কারণ স্পিডোমিটার সেইসময়ে বলছিলো ১০৫-১১০ কিমি প্রতি ঘন্টা । 

সারা বিকেল জুড়ে মিনিটপ্রমাণ লাইনটা ঝিরিয়ে নেয় । সন্ধ্যা নামলে সেই স্পিড নেমে যায় বলে বেশ কিছু লাইন লোড করলাম । শরীর ভারী হয় । মনে কিন্তু অ্যালার্ম বেজে ওঠে । ট্রাফিক পুলিশদের ছায়াকে গাড়িচাপা দিয়ে ফেললাম নাকি ? এত কম স্পিডেও ? 

মাত্র এই কটা লাইন দিয়ে জেব্রা ক্রসিং তৈরী হয় কিনা নিশ্চিত নই । ততক্ষণে কুয়াশার রাতের কম্বল বেরিয়ে পড়েছে মোড়ে মোড়ে । স্পিডোমিটার রীতিমত বাকহত ।

গসিপ


বাসা নিয়ে অনেকে গসিপ করে ।
করুক গে, আমি চারঠোঁট মেপে গরম গরম সিপ করি 

নিশ্চিন্তে,
নিশ্চাপে ।
 
বাসো তাও ব'-এর বোধটুকু ছাড়া তোমার
কিছু-ই নেই, তাই আমি বার বার আসি
তোমাকে বোঝাতে । 


তোমাকে কিন্তু
বাসি তবে ভালো কিনা বিচার করি না । 


খাবারের উপরে প্রজাপতি বসলে আজকাল অবাক হই না তেমন ।

মাঝে টুক করে বারোটা বেজে যায় যখন
বাসার মধ্যে মানুষের ভালো আর মন্দ পায়চারি করে ।

একটামাত্র সুড়সুড়ি


যখন কপালের সুড়সুড়িদায়ক চুলগুলো
ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দিই
তখনই মনে হয়
ভাগ্যকে একজায়গায় বেঁধে রেখে লক্ষ মাইল দূর হেঁটেছি


যখন ঠাণ্ডার সুড়সুড়িতে পড়া নাক
দুই আঙুলে চেপে ধরে ঝাঁকাই
তখনই মনে হয়
বুকটা আসলে সমুদ্রবালি দিয়ে বানানো একটা ঘরবাড়ি


যখন চোখের কোণের অজানা সুড়সুড়িকে
তর্জনী দিয়ে ঘষে তুলে নিই
তখনই মনে হয়
জলের অভাব নেই, শুধু টাকার অভাবে আবডালে কাঁদি


যখন জামা খামচে ধরে শুকনো চামড়ার সুড়সুড়ির সাথে
যুদ্ধ বেধে দিই
তখনই মনে হয়
দুটো বা তিনটে হাড় শেষ কথা বলে না, শেষটা জীবিত কঙ্কাল


যখন প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে চুপিসারে সেরে নিই
সুড়সুড়ির কাজ
তখনই মনে হয়
সবার মত আমিও একজন ওয়েইং-মেশিন-নষ্ট মাপের তস্কর


যখন সুড়সুড়ি সুড়সুড়ির শত্রু হয়ে
খুদে বিড়ালের মত দাপিয়ে বেড়ায়
তখনই মনে হয়
পূর্বজন্মে হয়তো ছিলাম কোনো এক হিংস্র চারপেয়ে মানুষ


সংযত হলেও আমি কতটা অসহায় তা বুঝিয়ে দিতে ওস্তাদ
একটামাত্র সুড়সুড়ি ।

8 Dec 2014

ফাঁক করলো সে


ফাঁক করলো সে । চোখ বন্ধ করলেও পারি নি
মন সরিয়ে নিতে ।


একটা কাহিনী থেকে এলো প্রবাহিনী হয়ে ।
কোনো ষড়যন্ত্র নেই এর পেছনে,
ফাঁকটি তবু একটা নির্ভেজাল মিথ্যা ।


হাত পাতলে কখনো চলে আসে তালুতে
তালুটা সংকীর্ণমনের উপত্যকা, অনেকের কাছে যা
অচেনা ম্যাপ একটা ।


সাজানো সোচ্চার
রেখাগুলো কোনো কথা বলে নি
গত দুদিন ধরে, ছিলো শুধু ধারার কঠিন মুক্তিদানে
এই ধারা সেই ধারা কিনা
চোখ নিজে মানে না, কিন্তু মন ?


মানার জন্য-ই মনের দূর্বলতা করে দেয়
ফাঁকটাকে বড়,
আরো বড়, আরো ।


এর পাশাপাশি
পর্দার তলায় মণির ছটফটানি থামবে একদিন ।

সামান্য পুতুললোক


অন্ধকার ছুটছে আলো'কে পিছনে ফেলে
ব্ল্যাক টিকিটে ।


অন্ধকারের এমন ছুটন্ত অনৈতিকতা
জীবনে খুব একটা আসে না ।
রাস্তা পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে আর
আমি ? 


পুতুল ।
পুতুল ।
একজন সামান্য পুতুললোক যাকে দেখতে কেউ টিকিট কাটে না ।

1 Dec 2014

মিল একটাই


খোলা আকাশ । কানফাটা একটা শব্দ হলো । ইতিমধ্যে গুলি বেরিয়ে পড়েছে । একা একা । কিন্তু জানে না যে কেন বেরিয়ে পড়তে হয় তাকে । জানে না কোথায় যাবে সে । অসহায় হয়ে চারদিক চেয়ে সঙ্গী খোঁজে । জানে না কোথায় বা ঢুকবে । এও জানে না কতদূর গিয়ে শেষ হবে । তবুও একটা নির্দিষ্ট ছন্দময় অভিমুখে যায় এক অজানা লক্ষ্য নিয়ে । না-জানা একটা গন্তব্যস্থলে গিয়ে থামলো । সেখানে সটান করে লিখে ফেললো এক অনিবার্য মৃত্যু । এর সাক্ষী হয় ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাওয়া শত শত প্রাণ ।
বন্ধ ঘর । নিঃশব্দপ্রায় চাপা নিঃশ্বাস পড়লো । ইতিমধ্যে শুক্রাণু বেরিয়ে পড়েছে । একা নয়, একসাথে অনেকে মিলে । অবশ্যই জানে যে কেন বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের । জানে কোথায় যাবে তারা । লিডার হয়ে ওঠে এদের মধ্যে একজন । জানে কোথায় বা ঢুকবে সে । এও জানে কতদূর গিয়ে শেষ হবে । তবু এর অভিমুখ কেমন যেন সৃষ্টিছাড়া ছন্দহীন যদিও লক্ষ্য পূর্বপরিকল্পিত । ঠিকানাজানা গন্তব্যস্থলে গিয়ে পৌছালো । সেখানে না থেমে ধীরে সুস্থে লিখতে থাকলো এক নতুন জন্ম । এর সাক্ষী হয় ধুকপুক করা দুটিমাত্র প্রাণ ।
মিল একটাই । পরিবারের লোকজন আর আত্মীয়স্বজনদের জড়ো হওয়া যেখানে অমিল প্রচুর এবং প্রধানতঃ জন্মমৃত্যুর কারণজনিত ।

জামা উড়ছে


জামা উড়ছে, 
প্যান্টেরও ইচ্ছা খুব
যে উড়বে সে । 


কতটা যে উড়বে তা
চরিত্রনির্ভর ;


চরিত্র বুঝি এতটা জলভাত নাকি
কেবল-ই জলের মত
পাত্রনির্ভর ? 


পাত্রের তলা অবলম্বনবিহীন নয় বলে
উড়বে-উড়বে একটা অধঃপতন ।

27 Nov 2014

কত-কি-শালা


'শালা' শব্দটির দুটি ব্যবহারিক দিক আছে - একটা হল আভিধানিক অর্থানুসারে যেকোনো একটা বিল্ডিং বা হাউসিং-কে বোঝাই । যেমন - আয়ুধশালা, ওষধিশালা, কুম্ভশালা, গোশালা, অশ্বশালা, দোহশালা, পক্ষিশালা, বন্দিশালা, রন্ধনশালা, কামারশালা আর কত-কি-শালা ।

দুর্গন্ধময় রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশে আপামর জনসাধারণ তথা অতিথিসেবার জন্যেও বর্তমান অতিথিশালা । শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়ার জন্যে রয়েছে গ্রামীণ পাঠশালা । বিনোদনধর্মী আনুষ্ঠানিক শিল্পসংস্কৃতির নামে রয়েছে রঙ্গশালা । সাধারণ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমৃদ্ধির উদ্দেশে সদাখোলা ঐতিহাসিক প্রদর্শ-শালা । 

অন্যদিকে বিশেষ গালি হিসেবে আলোচ্য শব্দটির বিলকুল মৌখিক ব্যবহার । শুধু একজনকে হাজার হাজার জনসমক্ষে বলতে কোনোদিন শোনে নি এরাজ্য । সেই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই সেটা বলা বাহুল্য, কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে - এই প্রশাসক নিজের মান বাঁচাতে যেহেতু রাজ্যের যত্তসব ভোল পাল্টাতে পিছপা নয়, সেহেতু এবারেও উইথড্র না করে আভিধানিক "যুক্তি" দিতে পারে নি কেন ?
"ওই শালাটার উপসর্গ (Prefix) কি যেন ছিল, কিছুতে মনে পড়ছে না !"

পাঠকপূজা


আজকাল বিখ্যাত পাঠক হওয়ার স্বপ্ন দেখি ।

শুধু পাঠক হয়ে বড় নাম করতে চাই । ইতিহাসে আমার নাম জ্বলবে পাঠক হিসেবে । তাবড় তাবড় কবি লেখক সবাই ঘাড় উঁচু করে আমার নাম স্মরণ করে পাঠকপূজা করবে এমন স্বপ্ন আজও দেখি ।

26 Nov 2014

খামবন্ধ কমলালেবু


ফের কমলালেবু । ক্ষেত ছেড়ে আঁতে চড়ে বসেছে । ক্রেতার লম্বা লাইন ফাঁকি দিয়ে কবিতার এ-লাইনে ও-লাইনে নেমে পড়েছে । সারি না বেঁধে এদিক ওদিক করে । কেউ পিরামিডের মুডে নেই । সাথে একটু শীত-শীত মিশিয়ে । টক না মিষ্টি - মুখে না দিলেও বোঝা যায় । পুরনো অথচ বিখ্যাত গানের মত একটা চেনা-চেনা স্বাদ । যতবার কবিতা থেকে মাথা তুলি, ততবার বাকি সবার কাছে একটা করে খাম আসে । সব খামের মুখবন্ধের কাছে কমলার আঠালো দাগ । যখন খাম খোলে, তখন আমি একা চারতলার সিঁড়িতে পচাগন্ধ পাই । গন্ধের এমন পচামো আমার ভাগ্যে জোটে । সৌভাগ্যও বটে । বেলায় স্নান সেরে বসে থাকি ছাদের খোলা দরজার মুখে সিঁড়ির শেষ দুই ধাপে । বসার ধরণ কিছুটা 'দ'-এর মত । পিঠ ছেড়ে ছায়াটা আরো লম্বা হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে । কমলালেবুর দুর্মূল্য একটা সংকলন করতে । শুধু হাতে ধরা কমলালেবুটা ছায়ার মধ্যে ঠাণ্ডা হতে ঠাণ্ডাতর হয়ে যায় । এর একটাও কবিতা নেই বলে ?

একটু উঁচিয়ে ধরি । দুই তালু রোদ্দুরের কোলে খানিকটা উজ্জ্বল । গোল টিপ । কমলার টিপ কিনা সেটা জানার ইচ্ছা নেই । তেমন ইচ্ছাও নেই কমলা রঙে ডুব দেওয়ার । খোসা ছাড়ানো শুরু করি । যেভাবে প্রথমে সেফটি পিন খুলে দিতে হয় । ছাড়াতে গিয়ে দেখি সে খিল খিল করে হাসছে । হাসিটা কিন্তু চমৎকার । আমি তার দিকে তাকাই । সে যদি হয় কমলা, আমি তবে হই ক্যাবলা । ক্যাবলাপ্রিয় হাসিটা মাঝে মাঝে থামে । জানতে চায় খুলছি কেন । ক্যাবলার কোনো উত্তর হয় না । বেরিয়ে আসে পরনের কমলাভ সাদা ব্লাউজ । সুতো সব কেউ যেন আগে থেকে ফালাফালা করে রেখেছে । আমার পিঠের গরমভাব খানিকটা কেটে যায় । আবার হাসে সে । আমিও মাথা অল্প নাড়ি মুচকি হেসে । ততক্ষণে অর্ধেক খালি কিম্বা অর্ধেক পূর্ণ । হাসি একটু থামে এবার । সংকোচবোধ করে । মাঝে একবার হেঁচকি তোলে সে । হাল্কা রোদ্দুর ভিজে আরো কোমল হয় । কমলাও কোমলা হয় । খোসাছাড়াপর্ব চলে । কবিতা ভুলে ছায়াটা গুটিসুটি মেরে উঠে আসতে থাকে এক-দু'ধাপ করে । ছায়ারও লোভ হয় বুঝি ? ততক্ষণে বেরিয়ে আসে শায়া । সেটাও ছেঁড়া-ছেঁড়া । কমলাভ সাদা । মাঝের পেট বরাবর আঙুল বুলিয়ে দেখি কিছুক্ষণ । শেষ বিকেলের নিস্তেজ সূর্য । আমি ঘোরাই, সে ঘোরে । আলতো করে চেপে ধরি । সাথে সাথে দুটি খুলে যায় । ঠাণ্ডা বাতাস একবার সিঁড়িতে গড়াগড়ি খেয়ে ফিরে যায় । কমলায় ক্যাবলায় কাঁপন ধরে ।

হপ্তাখানেক আগে । নিচের ফ্ল্যাটের ধীমানকাকু বলেছিলো ভালো কমলালেবু পাওয়া যায় না আজকাল । সেই কাকুর মেয়ে পিঙ্কি এসেছে । আমার থেকে বছর তিনেকের বড় । আমার ঠোঁটে বিন্দু বিন্দু কমলা তার চোখ এড়ায় নি । তার একটা বাজে স্বভাব আছে । প্রশ্ন করা । তার বাবার কথাটির রেশ টেনে সে শুধায় - "কমলালেবু পেলি নাকি ?", আমি উত্তরে কিছু না বলে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিই শুধু । পিঙ্কিদিদির চোখ দুটো গোল গোল হয় । চোখের মণিতে পাখির বাচ্চা । কমলাহীন ঠোঁটদুটি তার । গলা শুকিয়ে গেছে তার বোধ হয় । জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট একবার চেটে নিলো । আরেকবার দেখলো আমার ঠোঁট । ঠোঁটের মধ্যে কমলালেবু খুঁজছে সে । মনে মনে হাসছি । প্রকাশ্যে নির্বোধ হয়ে দিদিকে দেখছি । তার মত চোখ দুটো গোল গোল করে । এমন দাপুটে দিদির সারা গা থেকে বেচারাভাব ফুটে বেরোচ্ছে । ঠিক যেমন কমলালেবু হয় । ওকে নিয়ে যাই ছাদের সিঁড়ির কাছে । সাদারঙের ডাবল ইউ-শেপড্ বাল্ব জ্বালাই । সিঁড়িতে তখনো কমলার ছাপ । মুছতে পারতাম, কিন্তু মুছি নি । কমলার গন্ধ উঠে যাবে তাই । কেননা সেই পচাগন্ধ আমার খুব প্রিয় । উষ্ণতা তবে আর নেই । পরের ছুটির অপেক্ষায় থাকে । দিদি ধমক দিলো, "একা খেয়ে ফেললি ? আমাকে ডাকলি না কেন ?"

আমি কিছু জবাব দিই নি সেদিন । ভালো কমলা পাওয়া যায় না আজকাল । খামবন্ধ কমলালেবু কে চায় ? অন্য বই খুঁজি । 

24 Nov 2014

ঘুম আর স্নানের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক


নর আর নারীর মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক
গরম বাড়লে ক্ষীণতর হতে থাকে
ঠাণ্ডা বাড়লে গভীরতর হতে থাকে ।


ঘুম আর স্নানের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক
গরম বাড়লে গভীরতর হতে থাকে
ঠাণ্ডা বাড়লে ক্ষীণতর হতে থাকে ।

মোটা বিশ্বাস


বিশ্বাস-টা মুটিয়ে যেতে থাকে । দিনের পর দিন । অবশেষে এমন ওজন দাঁড়িয়েছে যে কাউকে এর ভার বহন করার দায়িত্ব দেওয়া অসম্ভব । 

একদিক থেকে ভালোই হয়েছে কারণ নাদুসনুদুস চেহারার মোটা বিশ্বাসটা এমন ভঙ্গুর যেকোনো কেউ হাত থেকে একবার ফেলে দিলেই চুরমার । বহুকাল ধরে জমিয়ে রাখা কোটি টাকার সমান এমন একটা সম্পদহারা হতে চাই না । 

এদিকে নিজের উপরেও চাপিয়ে নেওয়া প্রায় দুঃসহ লাগছে আজকাল । কতখানি জোর আছে আমার ? আমার পক্ষে কতদূর টানা সম্ভব এমন ভারী জিনিসটা ? টানতে টানতে নিজে অনেককিছু ভুলভাল কাজ করে ফেলতে পারি । অবস্থাটা তুঙ্গে গেলে একদিন লজ্জায় জিভ কেটে বিশ্বাসটা আমাকে না জানিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যেতেও পারে । 

আমার এই মোটা ভারী বিশ্বাসটা হেঁটে চলে যাচ্ছে একা একা । মাথা হেঁট করে । ভিড় রাস্তায় সবার সাথে ধাক্কা খেতে খেতে, এর ওর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে । বিশ্বাসের এরকম ভয়ঙ্কর মাতালদৃশ্য কল্পনা করলে খুব খারাপ লাগে । চিন্তা হয় খুব । ওকে এভাবে হাতছাড়া করতে চাই না ।
এখন বিশ্বাসটার ডায়েটিং খুব দরকার । তাকে অন্ততঃ আত্মবিনাশের সাথে যুদ্ধে নামার উপযুক্ত করে তুলতে হবে । তবে না আমার হয়ে যুদ্ধ করতে পারবে । তার যুদ্ধরত অবস্থায় আমি নিশ্চিন্তমনে আমার রুটিনমাফিক কাজ চালাতে পারবো । সাথে অফুরান ল্যাদ ।

দেখা যাক ! একি ? বিশ্বাসটা কোথায় গেলো যে ? হারিয়ে ফেলিয়েছি নাকি ?

21 Nov 2014

উঠে দেখি সে অনেক আগে উঠে পড়েছে


উঠে দেখি সে অনেক আগে উঠে পড়েছে
রোজ এরকম হয়, একইসময়ে । শুধু আজ
সে ওঠে নি ।


উঠবে কিনা জানতে চাইবো ওর কাছে
নাকি নিজের ওঠাকে
সেলিব্রেট করবো চুপিসারে ?


কিভাবে করবো ?
এখানে শুধু আমি একা আর ওকেও চিনি না
তেমন, ওর না উঠে পড়া আরো অচেনা ঠেকে
আলাপ করি নি, তাই আজ বুঝি
এলো সেই সুযোগটা ? 

ওর না-ওঠার জন্যে ?

একমাত্র ওর রোজ একইসময়ে উঠে পড়া
অনেক দাম রাখে, লাখ টাকা দামের একটা সুন্দর ঘড়ির চেয়েও ।
কিন্তু আজ ? 


ঘড়ি দেখি নিজের হাতের কব্জিতে । আর বুঝলাম
কাঁটাটা কেন এমন স্থির হয়ে বিঁধে-ই রয়ে গেছে ।


তুলবো কি এবার ?

20 Nov 2014

একা একা ঘুরছে ঘুমারী


এতো এতো আলো খেলছে একসাথে
চোখের পাতায় দোলনা পেয়ে চেপে বসে
দোলে আর দোলায় ।

মণিদুটো শান্তস্বভাব প্রকৃতির,
একটু দূরে গিয়ে অন্ধকারের বেঞ্চিতে বসতে চাইছে ।

পার্কে একা একা ঘুরছে ঘুমারী ।
মণিদুটো ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু 
সময় হয়নি এখনো ।

19 Nov 2014

তাতেও হচ্'ছে না, স্যার্ ।


ছোট ছিলাম তখন । ইন্টারনেট যুগ আসতে বছর কয়েক বাকি । বাবার কাছে পড়ছিলাম । কিন্তু পড়ায় বিশেষ মন ছিলো না আমার । বার বার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যেত বিগ বি স্টারার মুভিটা শুরু হতে আর কতক্ষণ । বাবা ধমক দিতো । মায়ের কাছে বলতো,

"ছেলে একদম পড়'ছে না..."

প্রায় দু'দশক পেরিয়ে আজ । আমার ছেলে আমার কাছে পড়ছিলো । নেকস্ট নাম্বার, বিটউইন নাম্বারস্ । পেনসিল ধরে যখন টেনে টেনে নাম্বার বসাতে যায়, সেই ফাঁকে হাতে ধরা মোবাইলের স্ক্রিনে আমার চোখ চলে যায় । এরকম বার বার হতে দেখে ছেলে গুম মেরে বসে । আমার বৌকে বলে,

"বাবা একদম পড়াচ্'ছে না..."

স্যার্ ! যুগ পাল্টায় । সময় পাল্টায় । শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টায় । 'পড়া'কে তখনকার মত 'নো' জানিয়ে দিলেও আজকাল সেই 'পড়ানো'র দায় পড়েছে আমার উপরে । 

তাতেও হচ্'ছে না, স্যার্ ।

কমপ্লিট্ ফ্রাস্টুলেস্


কমপ্লিট্ ফ্রাস্টুলেস্ বলে
কেউ নেই এই সুন্দর ভুবনে,
কেউ বা থাকলে
সে এখনো হামাগুড়ি দিচ্ছে নিজ জীবনে

17 Nov 2014

'মেঘ না চাইতে জল'


প্রাত্যাহিক রুটিনে এমন কিছু কিছু জিনিস ঘটিয়া থাকে যাহা 'মেঘ না চাইতে জল'-এর ন্যায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নহে ।

যেমন, কার্যালয় সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক শৌচাগারে শান্তশিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী মূত্র ত্যাগকালীন অটোফ্লাশার অকস্মাৎ তাহার ক্রিয়াসম্পাদন শুরু করিল ফোয়ারার বেগে, এমতাবস্থায় কতখানি অস্বস্তিতে পড়িয়া থাকিতে হয় ইহা বর্ণনাতীত ।

তার কোনো পিঠ নেই যার মন একটা ঠিকানাহীন


যাবতীয় কয়েনের দু'পিঠ থাকে । তবুও আমরা টস্ করি - মাথা নাড়া বন্ধ করবে না ল্যাজ নাড়া বন্ধ করবে - এই অপেক্ষায় ।

সুমনকে সেই কয়েনের কু-পিঠের সাথে ঠেকিয়ে টস্ করে ফেলে দিলো তসলিমা । কয়েনটা মাটিতে ঠকাস করে পড়ে গড়াতে থাকে, গড়াতে থাকে, গড়াতে থাকে ।

তার কোনো পিঠ নেই যার মন একটা ঠিকানাহীন ।

বুকখোলা জামায়


জামাটা হয়তো পারে নি
রবার-পেন্সিলের নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে ।
বুক অনেকখানি যত্ন পেয়েছে ।


তার জামাখোলা বুক দেখে যতটা ভালো লাগছে,
বুকখোলা জামায় তাকে দেখতে ততটা ভালো লাগছে না ।

বন্ধু-কিন্তু ভাব


বন্ধু-বন্ধু ভাবসম্পর্ক বেশিদিন টেকে না । কিন্তু-কিন্তু ভাবসম্পর্ক চিরকাল চলে । দুইরকম ভাবের মুখগুলো ঘুরেফিরে আসে । সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারের লাইনে একটা মুখ হঠাৎ চেনা মনে হলে বা রাস্তার জ্যামে আটকে পড়ে থাকা ঠিক পাশের গাড়িতে বসা বহুকাল আগেকার চেনা মুখের সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হলে কোন ভাবটা আগে জেগে উঠবে সেটা বলা মুশকিল, যদিও সম্পর্কটা যে একধরণের বন্ধু-কিন্তু হয়ে একপা এগিয়ে তিনপা পিছিয়ে যাবে সেটা হয়তো সবাই জানে । তবে একপায়ের বন্ধু তিনপায়ের কিন্তুর চেয়েও দুর্বলমনের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক সেটা বোধ হয় অনেকে বুঝতে চায় না ।

দুদিন আগে এক সন্ধ্যায় হঠাৎ এরকম একজনকে দেখলাম । জাগতিক চোখাচোখি যাকে বলে । "একজন" শব্দটা আমার কাছে শুধু একজনের সংজ্ঞার্থ যার ব্যাখ্যা "চেনামুখ" দিয়ে করা যায় অনায়াসে । "বন্ধু" শব্দটা তাকে দেখে একবারও উচ্চারিত হতে পারে নি আমার চেতনায় অবচেতনায়, একবারও পুনর্লিখিত হতে পারে নি আমার বিবেকে আবেগে, একবারও পরিবাহিত হতে পারে নি আমার অস্থিকোষে প্রকোষ্ঠে । সেও সম্ভবতঃ আমাকে চিনতে পেরেছিলো আর আমিও তার জ্ঞানে বিজ্ঞাপনে "বন্ধু"র বদলে "একজন" হয়ে ছিলুম চেনামুখের সাঁটা পুরোনো স্টিকার নিয়ে । এসময় চারপাশেরটা ভীষণ অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী করে যেখানে দুটো "একজন" তফাতে থেকে আকর্ষণে বিকর্ষণে আটকে যায় । সাথে চেনামুখের স্টিকারটা ধ্রুবকের মত কাজ করে । আশ্চর্যভাবে ট্রিক করে "একজন"-দুটির মাঝে ব্যালান্স রেখে ।

তার মুখ দেখে আমার স্মৃতিপুকুরে ভেসে ওঠা মরামাছের মত লাগছিলো । ভদ্রতার ছিপটা তুলে সেই পুকুরে ফেলা দূরের কথা, সৌজন্যতার খাবারের টুকরো ছিপের মুখে গেঁথেও দিই নি । শুধু মরামাছটা বারে বারে উঠে এসে ভাসছিলো আমাকে তার নীরব দর্শক বানিয়ে । যেন ষাটের দশকের কয়েক সেকেণ্ডের ক্লিপের ঝলকানি । আমি একটু ম্লান হাসি দিলাম নিজের অজান্তে । নিজের ভুলে । নিজের অসতর্কতাবশত ।

এ হাসিটা বোধ হয় পুরোনো ধুলোবালিমাখা একটা পাপের ইনোসেন্ট ক্ষমাপ্রার্থনাটুকু ছিলো । তবুও একপায়ের বন্ধু-সুলভ হাসি থেকে আলাদা করা যায় না । হাসির সূক্ষ্মতম তফাৎটা ধরতে পারাটা বোধ হয় এ মুহূর্তের একটা বড় গেম । 

আমি এতটা অনভিজ্ঞ নই বলে তার তিনপায়ের কিন্তুটা আশাই করেছিলাম । এবং হয়েছিলো তাই । তাও সবকিছুই অসহনীয় লাগতে শুরু করলো । বন্ধু-বন্ধু, কিন্তু-কিন্তু আর বন্ধু-কিন্তু মিলে একটা অসম্ভব অচালনীয় অজাতশত্রু হয়ে আমাকে কয়েকশো পা হেঁটে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করছিলো । এরকম "একজন"কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটা আমার মত "একজন"-এর পক্ষে কতটা দুঃসাধ্য ছিলো সেটা হয়তো এখনো খোঁচা মারে আমাকে । যদিও পেরেছিলুম কারণ আমি চেনামুখের স্টিকারটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলুম । ধ্রুবকটার ভারসাম্য সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন করার তাগিদে ।

যেতে পারবো বলেই 'কিন্তু কেন যাবো' বলাটা সাজে না


কবি হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
সন্ন্যাসী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বোকা হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বুদ্ধিজীবী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
সৎ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বদ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
নাস্তিক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
মুসলিম হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
খুনী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
হিরো হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বড়লোক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
ভিখারি হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
গম্ভীর হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
ছেলেমানুষ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
শামুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
কামুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ? 


এককথায়
অমুক-তমুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?


তবে জন্ম যেহেতু একবারে হয়েছে, সেহেতু শেষপর্যন্ত ঠিকঠাক পরলোকে যেতে পারবো বলেই 'কিন্তু কেন যাবো' বলাটা সাজে না এই শক্তিহীন অধমের ।

13 Nov 2014

তোমার অবহেলা কতটা পুরোনো


এখন বুঝি ।
তোমার অবহেলা কতটা পুরোনো হয়ে গেছে ।
বোধ হয় আমার ঘরে রাখা বহুপুরোনো ডায়েরীটার চেয়েও অনেকবেশি পুরোনো ।

মোবাইল ছুঁড়ে ফেলা


মোবাইল ছুঁড়ে ফেলা আর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলার মধ্যে কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই । 

আজ অবধি ছুঁড়ি নি কিন্তু ছুঁড়তে গেলে নিজের হাত একটু তুলতে হয়, তারপর কাঁধ থেকে ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার বদলে হাতটা নিজের মনসুদ্ধু গোটাশরীরটাকে উপড়ে ফেলে দেয় সেটা আঁচ করতে আর কতটুকু ।

11 Nov 2014

আমরা পরিবর্তিত, সরকার অপরিবর্তিত


আমরা মানুষ ।
কেউ নিজেদের পাল্টাই না ।
পাল্টাই না ইচ্ছা করে ।
পাল্টাই না অন্যদের পরামর্শ নিয়ে ।
পাল্টাই না নিজেদের অস্থিমজ্জা থেকে শুরু করে রক্তমাংসচামড়া ।
অন্ততঃ পাল্টাই না নিজেদের পরিবর্তনকে ।
এই মানবিক পরিবর্তনটা নিজে থেকে পাল্টা জবাব দেয় সমাজের মুখে ।
পাল্টা ব্যবস্থা নেয় টাকার হিসেবনিকেশ বুঝে । পাল্টা হামলা করে আচারব্যবহারের বিরূদ্ধে ।
পাল্টা প্রশ্ন করে শিল্পসংস্কৃতির হাল নিয়ে ।
পাল্টা অভিযোগ আনে স্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকতাকে অস্বাভাবিক মনে করে ।
পাল্টার নামে এই পাল্টে যাওয়াটা আসলে একটা বিরাট পরিবর্তন যা আমরা উল্টে দিতে পারি না ।
অথচ উল্টোপাল্টা কিছু করি না ।
তাই নিজেদের না পাল্টালেও আমরা সকলেই পরিবর্তিত ।

এই সরকার নিজেকে পাল্টায় ।
পাল্টায় জোর করে ।
পাল্টায় অন্যদের রাস্তায় নেমে ।
পাল্টায় নিজের মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে কসমেটিক মেকআপ কিট ।
অন্ততঃ পাল্টায় নিজের পরিবর্তনকে ।
এই সরকারী পরিবর্তনটা নিজে থেকে পাল্টা জবাব দিতে পারে না সমাজব্যবস্থার নামে ।
পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে না বিশ্ব অর্থনীতির রোডম্যাপ দেখে ।
পাল্টা হামলা করতে পারে না উগ্র ধর্মপ্রাণদের ।
পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে না শিল্পসংস্কৃতির অপসংস্কৃতির কারণসহ ।
পাল্টা আইন তৈরী করতে পারে না অস্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে বা স্বাভাবিকতাকে অস্বাভাবিক তকমা করে ।
পাল্টার নামে এই পাল্টে দিতে না পারা আসলে একটা বিরাট পরিবর্তন যা সরকার নিজে উল্টে দিতে পারে বার বার ।
তাই সবকিছুই উল্টোপাল্টা করে দেয় ।
অথচ নিজেকে পাল্টালেও সরকার আসলেই রয়ে যায় অপরিবর্তিত । 

10 Nov 2014

স্বপ্ন বড্ড বেশি তেলতেলে


বহুকাল আগেকার পুরোনো কিছু স্বপ্ন দেখতে চাই, কেননা এখনকার সব স্বপ্ন বড্ড বেশি তেলতেলে ।

সব দুঃসাহসকে সৎ সাহস বলা যায় না


সব দুঃসাহসকে সৎ সাহস বলা যায় না, কিছু কিছু সৎসাহসী দুঃসাহস-ও দেখাতে পারে ঠিক জায়গায় ।

কথার পিঠে কথা


যেকোনো একটা কথা তার ঠিক আগের কথাটার চেয়ে বরাবরই কমজোরি হয় । পিঠচুলকানির আবহে কথার পিঠে কথা চলতেই থাকে ।

বন্ধনাক


সকালটা শুরু হয়েছে একটা বন্ধনাক দিয়ে । ঠাণ্ডাভাব কেমন যেন একটা দুর্বোধ্য । গতকাল রাতটা ছিলো একটু খুল্লামখুল্লা । খানিকটা মুক্তপ্রদ । তাই নাকে এখন নন্-ফিকশন শুধু । জিভের বদলে আলজিভ নড়ছে সমানে । ঠোঁটচাপা সকাল একটা রোববারের লাইন হয়ে মাঠ পেরোতে চাইছে । 

স্নান করলে মরণপারদ একবারটির জন্য মুখ তুলে তাকাবে জেনেও দুপুরটাকে আগে ঠেলে দিই সেই মাঠের দিকে । সেই লাইনটা ভাঙাবার মতলবে । সবার অলক্ষ্যে ।

6 Nov 2014

চুমুবাদ

এবার ওরা নামলো 'কচি' ঘটনার প্রতিবাদে । কারা ? কোচিতে 'কিছু একটা' হয়েছে তার বিরূদ্ধে পথে নেমে 'কিছু একটা' করলো খোদ কলকাতার 'কোচি'কাঁচারা । এর দৌলতে ফের শিরোনামে । সাথে তাদের 'কিছু একটা'-এর কুচি কুচি ছবি । সকালে ঘুমচোখে এইসব ছবি দেখলে অনেকের ঘুমটুম নষ্ট । বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশ ধিক্কার জানাচ্ছে, কেউ কেউ চোখেমুখে অপার বিস্ময় জাগিয়ে অনেক কষ্টে বলছে - "আমাদের সমাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে"

'কিছু একটা' অবশ্যই একটা কিছু এমন যা হিন্দুধর্মী আর জৈনধর্মী মানুষদের হাতে তৈরী খাজুরাহো মন্দিরের স্থাপত্যকাল থেকে হাজার হাজার বছর পেরিয়ে আসার পর একটা অতিবিরল ঘটনা যা প্রথমে কোচিতে হলো, সেটা ফলো করলো কলকাতা । কিন্তু প্রাচীন আর্যযুগের হিন্দুরাজাদের আমলে যা হতো, তা নিয়ে কারোর মাথাব্যাথা ছিলো না, এমনকি ছিলো না এখনকার মত উন্নততর অত্যাধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বা আন্তর্জালিক যোগাযোগ ব্যবস্থা । মিডিয়া-ফিডিয়া বা জার্নালিজমের ধারণাও ছিলো এদের স্বপ্নের বাইরে । অথচ কামদেবের ( হিন্দু পুরাণের মতে প্রেমের দেবতা ) মত রক্তমাংসের মানুষ সব রাজাপ্রজাদের মধ্যে বাস করতো যেটা বলাবাহুল্য । রাজার সাথে রানীর, রাজার সাথে দাসীর, প্রজার সাথে রানীর, প্রজার সাথে দাসীর রতিক্রিয়ার বর্ণনার রমরমা আমরা পাই বেদ থেকে শুরু করে অনেক প্রাচীনগ্রন্থে । এগুলোর অনৈসর্গিকতা আর অনৈতিহাসিকতা বাদ দিলে প্রেমযৌনতা নিয়ে যা বাকিটুকু থাকে তার ঐতিহাসিকতার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেই না । কিন্তু আর্যযুগ বা তারও আগে প্রাচীন বৈদিকযুগের ঋষিমুনিদের চিন্তাধারা আর এখনকার বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাধারার মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখতে পাই । কিসের ? 

সমাজের আধুনিকতা মানুষের হাত ধরে এসেছে, বিজ্ঞান আর ধর্ম দুটির সমণ্বয়ে মানবজাতির প্রগতিশীলতা নিয়ে মানুষের ভূমিকা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে । 'বিগ ব্যাং' তত্ব নিয়ে বিশ্বসৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যুক্তিবাদী স্বয়ং পোপ ফ্রান্সিসের কথা অনেকেই নিশ্চয় জানে । সময় যত গড়াবে, মানুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে আমূল পরিবর্তনের চমক তত আরো বেশি করে পেয়ে বসবে আমাদের দুর্বলসত্তাকে, এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়, বলা যেতে পারে সবার মনে খোঁচা মারে এখনো - "এই আধুনিকতাকে পুঁজি করে আমরা কি আদৌ আধুনিকমনস্ক হতে পেরেছি? এই আধুনিকমনস্ক হওয়া আর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া একই নয় জেনেও আমরা কি এই স্থূলপার্থক্যটা সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারছি ?" উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক প্রাচীনযুগের হারেমপ্রথা, সমাজ তথা ভারতে আধুনিকতার ছিঁটেফোঁটা ছিলো না তখনকার রাজা-মহারাজা, বাদশাহ-নবাবদের রাজত্বে অথচ এই প্রথা চালু করে গেছেন দেশের নানা প্রান্তে প্রাসাদের ভিতরে-বাইরে । এই 'অবৈধতা' বা 'পুরুষের বহুগামিতা' গোপনে নয়, বরং চোখের সামনেই প্রকাশ্যে চলতো । ওদের এই ব্যবস্থাকে 'আধুনিকরণ' বলে আখ্যান দেওয়া যেতে পারে তৎকালীন সমাজের পক্ষে । অর্থাৎ এই নয় যে তৎকালীন এরূপ সমাজব্যবস্থা সারা দেশে বিপ্লব আনতে পারে নি বা সাড়া ফেলে নি, নিশ্চয়ই ফেলেছে । উত্তরভারতের একরাজ্যের রাজাদের যা কিছু নতুন জেনে বা দেখে ( সব জেনেশুনে বা দেখেশুনে ) উৎসাহিত বা অনুপ্রেরিত হয়ে মধ্যভারতের অন্য রাজ্যের রাজা সেই একই পন্থা অবলম্বন করে আসতেন আর সেই সূত্রে গড়ে তুলতেন নিজেদের রাজ্যসীমানায় নিজস্ব হারেম । এটাকে কিন্তু প্রতিবাদ বলে না, এটাকে প্রতিযোগিতা বলে না, এটাকে সংঘাত বলে না, এটাকে বলে 'আধুনিকরণের ব্যবস্থা' যা নিজেদের স্বার্থের জন্য ভিন্ন আর কিছু নয় । কিছুটা দেখনদারিও বলা যেতে পারে । 

আর এখন ? সোনাগাছির মত হাতে গোনা কয়েকটা রেড এরিয়াভুক্ত বেশ্যাদের ঠিকানা ছাড়া আর কোথাও তেমন উল্লেখ থাকে না । তাও অন্তঃপুরীয় অর্থাৎ লুকিয়ে লুকিয়ে যাওয়া-আসা চলে আর কি । এককথায় নিষিদ্ধ । অথচ বাজারী বলে সবাই একবাক্যে মেনে নেয় । নাহ, এখানে আমি ভালোবাসা বা প্রেমজাতীয় প্রবৃত্তি নিয়ে বলছি না, বলছি সমাজের 'আধুনিকতা' নিয়ে মানুষের দ্বিধাবোধ যা মানুষকে দ্বিচারিতার মুখোশ পরতে সাহায্য করে । আরে বাবা ! কোচিতে এক দম্পতির প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার প্রতিবাদে পুলিশিবাদী, পাল্টা প্রতিবাদে কলকাতায় এমন চুমুবাদ ! এসব চুমুবাদীদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই কারণ এরা যা পারে বা যা ভালো মনে করে তাই করে, কিন্তু তা বলে "ওরা যা করেছে, বেশ করেছে" বলতে পারবো না । বলার মত যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছি না বা সৎকারণ অন্ততঃ দেখতে পাচ্ছি না । তবে এটা ঠিক আমি তিরিশের কোঠায় এসে বলছি কিন্তু আমি তেমন সেকেলেরও নই । কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পেছনে একটা চুমুবাদের যুক্তি কোনোমতে যুক্তি হয়ে উঠতে পারে না । চুমু একটা ভাবপ্রকাশ । একটা স্পর্শকাতর প্রবৃত্তির জাগরণ । ভিতরের ইমোক্ষরণের বহিঃপ্রকাশ । স্কুলবয়সে থাকতে থাকতে অনেকে চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকে । কিম্বা পাড়াতুতো চুমু নিয়ে স্বীকারোক্তি পেশ করা লোকের অভাব নেই । কিন্তু তাই বলে চুমু নামের একটা আবেগপ্রকাশকে অস্ত্র বানিয়ে প্রতিবাদ করা কেন ? 

"চলো চুমু খাই" বলে একে ওকে জাপটে ধরে গালে গালে ঘষে, এর ওর ঠোঁটে ঠোঁটে ঘষে সরব হচ্ছে, তাও রাস্তায়, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আবহে, শত শত লোকের চোখের সামনে, উর্দিধারী পুলিশের সামনে এবং খোদ থানার সামনে । অমনি দুঃসাহস পেলো কোত্থেকে এরা ? দুঃসাহস একদিনে হয় না তো বলে জানি । নাকি প্রতিবাদের নামে নিজেদের সাধ মেটালো ? কিম্বা চুমুবাদে প্রতিবাদ সম্পন্ন করা হয়ে গেলো ? এই চুমুবাদকে সমাজের আধুনিকরণ বলে ? সামান্য কয়েকঘন্টার ঘটনার নিরিখে একে "এগিয়ে যাওয়া সমাজ"-এর দৃশ্যায়ন বলে ? বঙ্গপ্রশাসকের দল থেকে শুরু করে বিভিন্নস্তরজীবীরা এই ঘটনাকে সমর্থন করতে পারে নি, কেউ কেউ করলেও পুরোপুরি মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করছে । এর কারণ আমরা আধুনিকমনস্ক হয়েও প্রাপ্তবয়স্কতার ধারণা নিয়ে একরকম দফারফা করে ফেলেছি । একে পরিণত মনের পরিচয় বলতে আপত্তি করা অস্বাভাবিক নয় । এর চেয়ে ঘরবাড়ি থাকতে বা সত্যিকারের ভালোবাসা থাকতে নিজেদের স্বার্থে চুমুর আবশ্যিকতা অনেক বেশি পরিণত । এমনকি হারেমপ্রথার মত প্রাচীনকালের 'আধুনিকতা'-এর আস্ফালনের চেয়েও অনেক বেশি সুরক্ষিত আর সুস্থ থাকে মানবিকতা এই আদরচুমুতে আর চারদেওয়ালের মধ্যে ভালোবাসার জনের সাথে লিপ্ত প্রেমযৌনতার ব্যবহারিক সততা সত্যিকারের প্রাপ্তবয়স্ক মনের পরিচায়ক ।

তবে সবাই একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে যারা আজ প্রকাশ্যে চুমুবাদী হয়েছে, আজ থেকে দশটা বছর বাদে এরা নীরবতা পালন করবে যেকোনো 'কচি'-জাতীয় ঘটনার স্বপক্ষে, অন্ততঃ এদের কেউ ততদিনে সেলেব্রিটি হলে বা প্রশাসনিক দলে যোগদান করলে বা সবার-মুখে-নাম-উচ্চারিত হলে অন্য কথা । তখন মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে স্নব্ সেজে দু-এক লাইনের ভাষণ ঝাড়বে আর ফুড়ুৎ করে কেটে পড়বে । বাকিরা চুপ হয়ে থাকবে । শেষে বলতে বাধ্য হলাম যে আজকালকার ছাত্রছাত্রীরা পাশ্চাত্য অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকটাই বেগরবাই করে ফেলছে নিজেদের চারপাশকে । যখন তখন আস্ফালন করছে যার কোনো মাথামুণ্ডু নেই, পুরো বালখিল্য দেখনদারি । এদের বুঝতে হবে কোনো বিশ্বাস বা ব্যবস্থা বা রীতিনীতি একদিনে তৈরী হয় না । এর জন্য দরকার একটা সঠিক আর সুপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা যেটা নিজেদের স্বার্থে না হলেও সমাজের স্বার্থে করতে হবে । 'অবৈধতা' নামের জিনিসটা এখনো নিষিদ্ধ ধর্মনির্বিশেষে সারাদুনিয়া, যা বৈধ নয় তাকে নিয়ে ছিনিমিনি করা একান্ত বোকামি বা স্বীয়-পশ্চাতে-লাথ-মারার মত পাকামো ছাড়া আর কিছু নয় । অভিজিতের পদত্যাগের দাবি কতদূর গড়াতে পারলো এরা কেউ জানে ? নাকি জেনেও ভুলে গিয়ে নেক্সট চ্যাপ্টারে লাফ মারছে ? 

এর চেয়ে খবরে 'কোচি'কাঁচাদের চুমুবাদী ছবি একঝলক দেখে ফিক করে হেসে মাথা নেড়ে ওদের চুমু-কে বাদ দেওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই ।

5 Nov 2014

খলনায়কের সিঁড়ি


বেশিরভাগ খলনায়ক নায়কের চেয়ে বেশী আকর্ষণীয় হয় । গল্পের মায়াজালে হোক, বাস্তবের কাঁটাতারে হোক । এর ব্যতিক্রম আমি । কাঁটাতারে জড়িয়ে শুধু খাই-দাই-ঘুমাই-চুমাই-ফের ঝিমাই ।

ফাঁক পেলে কাঁটাতার বাঁ হাতে চেপে ধরে মায়াজালের দিকে ডান হাত বাড়াই, "কবে যে আমাকে নেবে ?" রক্ত নীরবে হামাগুড়ি দেয় গল্পমুখী সিঁড়ি বেয়ে । ওখান থেকে যদি অভ্যর্থনার কোনো এসএমএস পাই । এই আশায় আরো শক্ত করে চেপে ধরি কাঁটাতার ।

ভুল বুঝতে পেরে হাত গুটিয়ে নিই, কারণ এই সিঁড়ি শুধু নায়কদের জন্যে বাঁধা রেড কার্পেট । বাধ্য হয়ে খুঁজি অন্য সিঁড়ি । খলনায়কের সিঁড়ি ।

4 Nov 2014

মন শুধু ধ্যানমগ্ন থাকে


মন শুধু ধ্যানমগ্ন থাকে, যখন হাত-পা চারধারে ছড়িয়ে ল্যাদীভূত থাকে । নিজেকে হিমালয়স্থ সন্ন্যাসী টন্ন্যাসী লাগে এসময় ।

আমার এই ধ্যানভঙ্গাধিকার পেয়েছে একমাত্র উত্তরাধিকারী । তাকে কোনোরকম বাধা দেওয়া যায় না সে নাছোড়বান্দা বলে । অবশ্যই নিয়ে আসে প্লাস্টিকের দু'তিনটে ফল যা ভোগ করতে হয় আমাকে । তবে জাগলিং করে বুঝিয়ে দিই যে ভোগ্যবস্তু দারুণ উপভোগ্য হয়েছে । 

সে অবুঝ বলে খুশিমনে আমার এই সামান্য ধ্যানবৎ ল্যাদাখে শান্তি বজায় রেখে কেটে পড়ে, যা ভারত-পাকিস্তানের হাঁফধরা দৈনন্দিনতার ফাঁকে একমুঠো অক্সিজেন

3 Nov 2014

বড় না হয়ে বুড়ো


আমি বড় না হয়ে বুড়ো হতে পেরেছি । এতে বেজায় খুশি আমি ও আমার শিশু অবতার ।

মুখোশ


পর্দা সরে গেলেও ফোকাসটা কখনো মুখোশ থেকে সরে না । শেষ পর্দার আড়ালে নগ্নত্বের চরম সত্যতা থাকলেও সেই সত্যতার আড়ালে থাকে একটা করে অজানা মুখোশ । 

আজকাল মুখোশ-খুলে-আসলটা-বের-করে-নেওয়া গোছের তর্কে আমরা যত মুখ খুলি, তার চেয়ে বেশি করে নতুন নতুন মুখোশ নিজেরাই অজান্তে পরে ফেলি ।

Bathtub and Purgatory


I feel only existing purgatorial place is a bathtub with foamed hot water. We, humans with venial sins or mortal sins can immerse ourselves into bathtub for long hours. Each hour will assume a set of unknown years or endless decades. Ultimately we come out with refreshment in both our mind and body. 

Why can we not define this as purification of our inner dirt, outer dust? Isn't it enough? Is rehabilitation another name of purgation? Will repetition of free some speech filled with rubbish and nonsense theories work for wiping sins off? 

Well, according to ancient mythologies, purgatory comes into picture only after death, which is still under our imaginary belief. But it's always better to use bathtub as many times as we can being alive, unfortunately with no painful action, in contrary to that story-telling-limited 'scary house'.

30 Oct 2014

দাদার মাথা গরম


কলকাতা আটলিকোর ঝাক্কাস প্লেয়ার ফিকরুর দুই ম্যাচের ব্যান প্রসঙ্গে টিমের মালিক উবাচ - "ফিক্রু, বাবা মাথা গরম করো না"

গ্যাঁওওও !

মনে পড়ে যায় লঙ্কাপুরী রাসেলের সাথে ঝালঝাল কথার বিনিময় । মনে পড়ে যায় ব্রিটিশ বোদ্ধা ফ্লিনটফের উদ্দেশে জামা খুলে রোমহর্ষক হেলিকপ্টার বানানোর দৃশ্য । আরো অনেক কিছু প্রচার-না-পাওয়া-বাঙালিসুলভ-ইমোশন-নিয়ন্ত্রণহীনতার লাইভ কাস্টিং ।

দাদা, তুমি বাঙালি আমিও বাঙালি । তুমি সেন্টিমেন্টাল, আমিও সেন্টিমেন্টাল । তবে এক কাঠির কম । তুমি একটুতেই উত্তেজিত হয়ে যাও, আমিও একটুতেই উত্তেজিত হয়ে যাই । তবে দু'কাঠির কম । সর্বোপরি তুমি একজন সেলেব্রিটি, আমি একজন ছাপোষা কর্মচারী । মাঝের ব্যবধান শতলক্ষকোটি কাঠিসমান হলেও তোমার মধ্যে যে কাঠিটা জ্বলে, আমার মধ্যে সেই কাঠিটা জ্বলে । এই জ্বলে ওঠার জাতকে আমরা চিনি বাঙালি বলে । এই জ্বলে ওঠার রোগ বাঙালিসমাজের পরাকাষ্ঠা বলে সুখ্যাত । রোগনিরাময়ের ওষুধ আমাদের হাতে নেই, থাকলেও আছে শুধু নিজের-মাথায়-জল-ঢেলে-দাও টাইপের হাল্কা ধমক । এই ধমক খেয়ে আমরা কখনো চুপ থাকি, কখনো বা কপালের শিরা মৃদু মৃদু ফুঁসে ওঠে নির্বিবাদে । এতে আমাদের রোগটা সারে না, বরং রোগের ও-কার বিরাট আকার ধারণ করে যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো মুহূর্তে ।

আমি বাড়িতে বা অফিসে রাগ দেখাই (অবশ্যই রাগের কারণ থাকে) । দুর্ভাগ্যবশতঃ মিডিয়ার অভাবে আমার ভিতরের রাগের ভয়াবহতা অনেকের কাছে অজানা । অথচ মিডিয়ার দৌলতে তুমি রাগের মাপকাঠিতে আমাকে বা আমার মত অনেককে ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছো, বাড়িতে বা নিকটাত্মীয়সমক্ষে কি যে করো আমরা জানতে পারি না তবু আমার পরিবারের মত তুমিও নিশ্চয় পরিবারের একজন সদস্য । এতকিছু হওয়া সত্ত্বেও মিডিয়ার সামনে বেচারা ফিক্রুর মাথা-গরম-করার প্রসঙ্গ টেনেছো ?!

ফিক্রুবাবু হোক বা পিকলুসাহেব হোক কে মাথা গরম করলো তা নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনো কারণ দেখি না । অন্যের মোটা মাথা নিয়ে নিজের মাথা রোগা করার কোনো যুক্তি দেখি না । অন্যদেশের লোকের মাথাসৃষ্ট সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে নিজের খ্যাতনামা স্বাভাবিক রাগ বা উত্তেজনাকে বাইপাস করার চেষ্টা করতে মাথার দিব্যি কেউ তো দেয় নি ?! নিজের টিমের প্রত্যেক সদস্যের একটা করে মাথা আছে, একেকটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মত । একেকটা পাগলা কুকুরের মত । কিম্বা সোয়ারেজোনুগামী ফুটবলার কেউ থাকতেও পারে তোমাদের টিমে ! জাস্ট ! জাস্ট ! জাস্ট মাথা গরম করে ফেলেছে খেলতে খেলতে তাও সেটা মাঠের ভিতরে যেটা তুমি অনেকবার দেখিয়ে এসেছো তোমার ক্রিকেটজীবনে ।

তার চেয়ে নিজেকে আগে বোঝাও দাদা । আমিও নিজেকে বোঝাই যেমন । না পারলে অন্যদের গরম মাথা নিয়ে নিজে ভাট না মেরে ওদের মাথা ভালো করে আরামসে গরম করতে দাও, যেমন আমি চুপচাপ নোট করে রাখি অন্যদের মাথাগরমজনিত নানাকীর্তি আর ফলভোগ । শেষে নিজের সাথে মেলাবার চেষ্টা করি ।

 অবশ্যই সময় পেলে ।

মন আনতে চিন্তা ফুরোয়


আমার । 

লেখাপড়ার এত অভাব যে মন আনতে চিন্তা ফুরোয় । 

সামনের দিক থেকে হেঁটে আসা ভিক্ষুককে দেখলে মাথানিচু করে ফেলি । তাকে আমার দেওয়ার কিছু না থাকলেও সে আমাকে অনেককিছু দেওয়ার দাবী রাখে । কারণ, জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় সে আমার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী । তার কাছে আমি তাই হাত পাতি ।

ভিক্ষুকের । 

টাকাপয়সার এত অভাব যে নুন আনতে পান্তা ফুরোবার আগেই আমার সমস্ত মনকে পরিপূর্ণতা দেয় তার মুখের চিন্তার অসংখ্য বলিরেখা দিয়ে । 

একটা রেখার শুরুতে যা, শেষে তার একেবারে অন্যরকম । এরকম অসমরেখাভর্তি মুখ আমার লেখায় শুদ্ধতা আনবে আশা করি । আমার পড়ায় ঋদ্ধতা আনবে মনে করি । 

কিন্তু আমার আশা আগাগোড়া বৃথা যাবে তাকে যদি একপয়সাও না দিই । লিখতে পারার অর্থ বুঝি এভাবে একপয়সা করে বাড়ে ? নাকি মানুষের স্বার্থপরতা শেষকথা ?

27 Oct 2014

বারান্দায়


বারান্দা নিয়ে অনেকে লিখেছে । বারান্দায় পড়ন্ত বিকেলের আলো নিয়ে অনেকে মুগ্ধতা জানিয়ে গেছে । বারান্দায় বসে নীচের রাস্তায় রিক্সাগাড়ি বা মানুষদের চলাফেরা দেখে বাস্তবিক যান্ত্রিকতার চোটে মনভার করার সিনিয়ার সিটিজেন যেমন আছে, সামনের দূরের জঙ্গলের গভীরতা বা কাছের সমুদ্রের বিশালতা মেপে মনকে উদাস করার একাকিত্বপ্রিয় লোক তেমনি আছে । বারান্দায় থেকে উপরের দিনের আকাশে মেঘ থাকা-না থাকা নিয়ে বা রাতের আকাশে তারার সংখ্যার সাথে পাল্লা রেখে গুচ্ছলাইনসহ মনজানাকে অজানা করে দেওয়া সব মানুষেরই কমবেশি আছে । 

বারান্দায় কাক বসলে তাকে তাড়িয়ে বা পায়রা এলে তার জন্য চাল ছড়িয়ে দিয়ে অনেকে পক্ষীসমাজ নিয়ে বকবক করে । চওড়া বারান্দার বড়লোকি বা গোল বারান্দার সাহেবিয়ানা নিয়ে কম সাহিত্যচর্চা হয় নি । বারান্দায় থেকে ভিতরের কোলাহলের সাথে নিজের বিচ্ছিন্নতা নিয়ে দীর্ঘযুদ্ধের পর শান্তিলাভের মত ইতিহাস রচনা এখনো চলে । শহরে বারান্দাহীন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে চায় এমন পাগল খুঁজে পাওয়া যায় না । গ্রামের বাড়ির উঠোন বারান্দার গ্রামীণ ভার্সান । বারান্দাকে স্টোররুম বানায় না সবচে' বড় মাপের অলস মানুষেরাও । এমনকি গরীবলোকের লজ্জাগুলোর মধ্যে বারান্দাহীনতা অন্যতম । 

রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে অকারণে বারান্দার শিল্পসংস্কৃতি নিয়ে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে বাড়বাড়ন্ত ব্যাপারে কারোর দ্বিমত না থাকলেও আজকাল আমি একটু উদ্ভটজাতের বিরোধিতা করে ফেলি । আমি যখন বারান্দায় যাই, তখন গোটা বহির্জগত চিড়িয়াখানার টিকিট কাটতে ভুলে যায় । আমি হয়ে যাই বারান্দাবন্দী একজন দর্শনীয় বস্তুমাত্র । হয়ে যাই খাঁচাবন্দী একটা টিয়াপাখির মত । হয়ে যাই অ্যাকোরিয়ামবন্দী ছোট্টছোট্ট মাছের মত । হয়ে যাই জামাপ্যান্ট পরা সুন্দর একটি গরিলা । হয়ে যাই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একজন যোগ্য প্রতিযোগী । 

এসময়ে সমস্ত মন কিন্তুকিন্তুমুখর হয়ে ওঠে । খুব ইচ্ছা করে ভাস্কর চক্রবর্তীর সেই জনপ্রিয় কাঠবিড়ালি হয়ে অপরিচিত অথচ অবাধ্য দর্শকের দিকে ছুটে যাই । সাথে অবশ্যই কোনো বাদাম থাকবে না, থাকবে এই স্থির বারান্দা যাকে শিশুবয়স থেকে ভালোবেসে এসেও এখন দর্শকের হাতে দিয়ে তাকে বিদায় করে দিতে চাই । 

সমস্যাটা হচ্ছে কাঠবিড়ালি যেমন আসে না, উল্টে বাদাম খেয়ে পেটুকেপনা করে, তেমনি আমাকে এই বারান্দায় এসে আজীবন দর্শনশাস্ত্রের টপিক হয়ে থাকতে হবে । যা একটা লাইভ আর্টস্ ওয়ার্কশপের নগ্ন জলজ্যান্ত মডেল হওয়ার চেয়েও বড় অস্বস্তিকর ।

21 Oct 2014

কাগজ আর আগুন


কাগজটা সাদা । কালো অভিমানের জায়গা খুব কম । তার বেশিরভাগ শরীরী । বাকিটা অশরীরী সংকেতময় । তাকে সাদা রঙ ভেবে আমরা অনেকে ভুল করি । কারণ, ঠিকের কোনো মন নেই, ভুলের কোনো শরীর নেই । কাগজটা তাই ছিঁড়ে ফেলা সহজ । খুবই সহজ ।

কিন্তু ? আমরা কি সহজ ? খুবই সহজ ? নাহলে দেশলাইবাক্স খুঁজতাম না । বার বার কাঠি ঘষতাম না বা এতগুলো নষ্ট করতাম না যতক্ষণ না আগুন আগুনের মতই হচ্ছে । সেই আগুনের মধ্যে একটা টান আছে । আমরা কেউ সহজ নই বলে আগুনকে ভালোবাসি । পোকাদের মত ভালোবাসি । 

কাগজটা নিয়ে আগুনের কাছে ধরলে হাতটা বেশি কষ্ট পায় । সেই কষ্ট বাড়তে বাড়তে দুই আঙুলের ডগায় এসে থামে । নতুন সম্পর্কের সূচনা হয় মাটিতে পড়ার পর থেকেই । ধোঁয়া । পোড়া । লালচে হলুদ । কালচে ছাইভস্ম । এগুলো খুব সম্ভবতঃ অস্থায়িত্ব চিনিয়ে দেয় ।

সবই জটিলতার সামিল হয় যেখানে সম্পর্ক একটা সহজ ফর্মুলার মত কাজ করতে চায় শুধু ।

15 Oct 2014

মেঘরাজ্য

অশান্তির পশ্চিমবাংলার মাথার উপরে শান্তিপূর্ণ এক অবর্ণনীয় মেঘরাজ্য ।

হাতে মলিন হয়ে যাওয়া খসখসে অস্কারমূর্তি । তার গায়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঘষতে ঘষতে নীললোহিত মানিকবাবুর সামনে আক্ষেপ করছে, "এ জীবনে কিছু করতে পারলাম না মানিকদা", আর মুখ থেকে ভকভক করে গন্ধ ঝাড়ছে । গন্ধ বেরোলে একরকম, গন্ধ ঝাড়লে আরেকরকম । সেন্টিমেন্টস্ ঠিকঠাক চেপে রাখতে পারলে শুধু গন্ধ বেরোবে, নচেৎ বিলকুল ঝাড় খেতে হবে । এটা হয়তো নীললোহিত বোঝে না, কিন্তু মানিকবাবু জানে বলে দশহাত দূরে বসে আছে আর নীলের প্রলাপ শোনার ভান করে আছে । ফাঁকে ফাঁকে ঘড়ি দেখছে । চারদিকে একবার চেয়ে দেখে মুখে পাইপ ধরলো ।

"কি দাদা, কার জন্য অপেক্ষা করছো ?", আট নম্বর পেগ মারলো ঢুলুঢুলু নীলু ।

"শরদিন্দুদা এখনো আসছে না যে । চিন্তা হচ্ছে", টানটান হয়ে বসলো মানিকবাবু ।

"সেকি ? তার আসার কথা নাকি ?", নয় নম্বর পেগ নেবে কিনা ধন্দে পড়ে নীলু । 

"তোকে তো বলেছিলাম । এর মধ্যে ভুলে গেলি শালা ?", বিরক্তির সুর তুলে উঠে আড়মোরা ভাঙ্গে ছয়ফুটী ।

- আরে এই দিব্যি আছি, আবার এর মধ্যে তাকে টানার কারণটা কি বুঝলাম না ! 

- আছে কারণ । এই রাজ্যে আর ল্যাদ মারা যাচ্ছে না, এবার কিছু একটায় লেগে পড়ার দরকার । তুই আগে দেখ 'খাগড়াখড়ের রহস্য' বা 'মঙ্গলকোট রহস্য' নিয়ে জমিয়ে লিখতে পারিস কিনা ! 'মিশর রহস্য'টা যা দিয়েছিস নীলু ! তোকে স্যালুট...

- ধুর বাল ! কাকাবাবু ওইসব পছন্দ করে না । সন্তু তো বাচ্চা তার পক্ষে এইসব জঙ্গিবাজদের ঝামেলায় না জড়ালেই ভালো ।

- তাহলে 'সন্তু কোথায়, কাকাবাবু কোথায়' এই গল্পের মত করে লিখে ফ্যাল 'পুলিশ কোথায়, সি.আই.ডি. কোথায়' !

- ইয়ার্কি হচ্ছে ? কাকাবাবুকে ছাড়ো ! সন্তুকে ছাড়ো !

- ভাই নীলু, এই মেঘের রাজ্যে বসে চারপাশের ঘটনা তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না বা শুনছি না । সবই স্বর্গীয় ব্যাপার । খবরের কাগজের কোনো আলাই-বালাই নেই এরাজ্যে । নতুন করে লেখার মত কিছু নেই । অভিজ্ঞতা চাই । এখানে শালা শুধু শান্তির ফোয়ারা । টোটাল বোরিং লাইফ লাইক হেল !! আচ্ছা কেমন হয় যদি লিখিস 'দিদি হেরে গেলেন ?', আমি সিওর তুই বোমা ফাটিয়ে দিবি এটা লিখে, যেমন সেদিন ফাটালি 'কাকাবাবু হেরে গেলেন?' লিখে...

- ওহো রক্ষে করো দাদা ! দিদিকে ছাড়ো ! আর আমাকেও ছাড়ো ! বর্ধমান নিয়ে বর্তমানের গাঁড় মারাতে এসো না ! আর এই সুন্দর মেঘরাজ্যে বসে বোমা ফাটানোর শখ নেই !

"কেন নীলু ? দিদি পয়লা নাম্বার খচ্চর !!! আর ওকে ছাড়তে বলছিস ? এত বড় স্পর্ধা হলো তোর কোত্থেকে ? জানিস তখনকার আই.পি.এস. অফিসার নজরুল ইসলামের 'মুসলমানদের কি করণীয়' বইয়ের বিক্রি পুরো বন্ধ করে দিলো, ইসলামকে অপদস্থ করতেও দ্বিতীয়বার ভাবে নি । এমন আকাটমূর্খের কাজ করতে দেখি নি আর কোনো মুখমন্ত্রীকে আমি যতদিন ছিলাম ওই সবুজ মর্ত্যে বিরানব্বই সাল অবধি",
বলে মানিকবাবু মুখ বাড়িয়ে একঝলক দেখে নিলো মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা কয়েক হাজার ফুট নিচের সবুজাভ দৃশ্য । মায়াবী দৃশ্য । চাপের নস্টালজিক কেস ! উফফ !


"পড়ে গেলুম, পড়ে গেলুম", বলতে বলতে কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে নীলু নীচে একটু ঝুঁকে দেখে নিলো তার প্রিয় "সবুজ দ্বীপ", কিন্তু সেই দ্বীপের অকালকুষ্মাণ্ড ফিমেল "রাজা"র দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্যতা দেখে প্রথমে তার চোখমুখ উল্টে গেলো, পরক্ষণে গল গল করে বমি করে ফেললো । মেঘে মেঘে বমিতে ছেয়ে গেলো ।

- ওরে হারামচোদা ! তোর হলো টা কি ?

- কিছু হয়নি গো দাদা ! শরীরখারাপ লাগছিলো তাই । তা 'চো' কেন ? 'জা' বলতে আটকাচ্ছে কেন তোমার ? যাইহোক আসলে দিদির সাথে আমার সখ্যতা ভালোই ছিলো আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার মুহূর্ত অবধি । আজকাল মেয়েটার মাল্টিডাইমেনশনাল ফাজলামি দেখে আর সহ্য করা গেলো না । অথচ বাম জমানায় ফাজলামির ধরণ এক বা দ্বিমাত্রিক ছিলো, তার বেশি করে নি ।

- তোর মুণ্ডু ! অনেক ছড়িয়েছিলো বামপন্থীর নেতারাও । তোর ওই ইয়েটার কি নাম ? নসলিমা না কি যেন ? বাংলাদেশী মাগীটা !!

- ইটস্ তস্ ! নট নস্ ! আর খবরদার আমার সামনে মেয়েটার নাম উচ্চারণ করবে না ! প্লীঈঈঈঈজ !

- ওক্কে স্যার ! গট ইট ! জানিস নিশ্চয় তার একটা বই 'দ্বিখণ্ডিত' ব্যান করে দিয়েছিলো খোদ কমিউনিস্ট বুদ্ধদেব । সেও একটা রামবুদ্ধু ! ওই বুদ্ধদেব থুড়ি বুদ্ধুজীবীর একবারও মনে হলো না যে একজন লেখক বা লেখিকার বাকস্বাধীনতা একটা শৈল্পিক বিপ্লব আনতে পারে । চিত্রনাট্যে হোক, সিনেমায় হোক বা সাধারণ মানুষের জীবনে হোক যা দেখে গণতন্ত্র একটা আলটিমেট স্টেজে এসে পৌছাতে পারে । কিছু আপত্তিকর তথ্য থাকলেই কোর্ট তো আছে তাকে আইনত নিষিদ্ধ করার জন্য । তা না করে নিজেরা ব্যান্ করে দিলো সিপিএম পার্টি । হতচ্ছাড়ার দল সব ! কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া তো দূরের কথা । কিসের সিক্যুলারিজম্ হলো ? কোথাকার সাম্যতত্ব এটা ? তুই বল !

- থাক না ! এই ভালো আছি এখানে এসে । একই সিক্যুলার গর্ভ থেকে প্রসূত হিন্দু-মুসলিম নিয়ে সেই কবে থেকে চলছে । চলবে । কিন্তু তার সাথে আমার বা তোমার বইয়ের কোনো রক্তসম্পর্ক নেই । অন্য টপিকে এসো । ভালো কথা, তুমি তো একখানা বই লিখতে পারো । তোমার ফেলুদার সিরিজের প্রচুর ভক্ত মরে গিয়ে এখানে এসে গায়ে হাওয়া দিচ্ছে আর বোরড হচ্ছে । কয়েকখানা জমিয়ে লিখে দাও না তাদের জন্য ।

- মন্দ বলিস নি, ভাই ! দেখি কি লিখি ? ভাবছি 'বোমার কেল্লা' লিখলে কেমন হয় ? হা হা হা !

- প্লীজ বি সিরিয়াস মানিকদা ! বোমা দিয়ে কেল্লা কেউ বানায় ? ওভাবে বোমা ফেললেই কেল্লা ফতে হবে তার কোনো মানে নেই ! সোনা দিয়ে বানানো তবুও ঠিক ছিল...

- তা ঠিক ! মেঘের নীচে দেখ যখন তখন বোমা ফাটছে ! বাজি ফাটাচ্ছে না হামলাবাজি চলছে কোনটা ? সেটা এই গগনভেদী বোর-রাজ্যে বসে বোঝা বড় দায় ! তবে এটা ঠিক যে বোমাটোমা নিয়ে ফেলুদা এত দৌড়ঝাঁপের সামিল হতে চাইবে না । জটায়ুকে বার বার বোমাতঙ্কে মুচ্ছোচরিত্র বানিয়ে তোলা ভীষণ মিনিংলেস । তোপসে একা একা কি করবে ? জমবে না বোমাবাজি নিয়ে লিখলে ।

- বোমাচরিত তো লিখতে পারো ! অন্যরকমের হবে দাদা । এইসব ফেলুদা ছাড়ো !

"মাফ করবি আমায় ! তার জন্যে সতীনাথদা আছে । কিন্তু জানি না ওর মেঘের ঠিকানা, খোঁজ করে মিট করবো একদিন । তা আর কি কি অপশন আছে ? আয় এদিকে, আমার পাশে বস", বলে সেন্টমাখা রুমাল বের করে নাকে চেপে ধরলো মানিকবাবু ।

নীলুর অবস্থা এক্কেরে নট নড়ন-চড়ন ! অতিকষ্টে নিজেকে টেনেটুনে মেঘের বুকে আঁচড় কাটতে কাটতে তার প্রিয় মানিকদার কাছে গিয়ে বসলো । 

"হোয়াট অ্যাবাউট 'ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের যীশু' যদিও 'টিনটরেটোর যীশু' থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে", একটানা বলে নাকে আবার রুমালচাপা দিলো মানিকবাবু । 

কথাটা শুনে নীলুর মুখ পুরো গুহা । "আহা কি দুর্গন্ধ আকাশে বাতাসে", বেসুরে গাইতে গাইতে কিছু পরী এলোপাথারি পাক খেতে থাকে, বাকি পরীরা মেঘের তলায় গিয়ে গা-ঢাকা দেয় । এদের কেউই নীরা নয় সেটা বুঝতে পেরে মুখ বন্ধ করে নীলু কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিলো ।
- কি বললে দাদা ? কাইন্ডলি রিপিট !

- বস্ ! জানিস তো আল্লাহ আর যীশু একই । ফান্ডামেন্টালি । কনসেপচুয়ালি ! সব ধর্মের মূলে রয়েছে একজন মাত্র । ভারতের মত সিক্যুলার দেশও এক্সেপশনাল নয় । কিন্তু সমস্যাটা ধর্মপ্রাণ উগ্রপন্থীদের নিয়ে । নিজেদের আল্লাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে আর বাকি ধর্মানুরাগীদের খালি জুতোপেটা করেও শান্তি পায় না, রেপ করেও ঠাণ্ডা হয় না, উল্টে যেখানে সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে । তাই ফেলুদাকে যদি ট্যাকটিক্যালি ধর্মপ্রচারক করা যায়, তাহলে সবাইকে একই করে দেবে । আফটার দ্যাট নো মোর গোয়েন্দাগিরি ! আর গোয়েন্দা পোষাচ্ছে না রে নীলু । সত্যি বলছি !

- ফেলুদা ধর্মপ্রচার করতে যাবে আর শেষে গুলি খেয়ে মরবে ? বোঝো কাণ্ড ! একটা আইডিয়া দিই ?

- শুট !

- তোমার ওই 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে'-এর শেপে 'যত কাণ্ড পশ্চিমবাংলাতে' লেখা হোক যখন সেই কবেকার কংগ্রেস শাসনে, বাম জমানায়, তৃণমূলের পচা শিকড়ে পশ্চিমবাংলাতে একটার পর একটা...'

- 'সাবাশ ভাইয়া ! এ তো পারফেক্ট অপশন দিলি ! এটা ভাবি নি...'

অমনি বাজখাঁই গলা এলো, "কিরে বেটা তোরা ? করছিস কি ? নীলু তো পুরো হেগে গেছে দেখছি ! হা হা হা ! সেকি বে ? মানিক তোর নাকে ওটা কি...হা হা হা ! হচ্ছে টা কি ভাইসব?"

আমুদে লোকটির আগমনে দুজনে খাঁড়া । মানিকবাবু স্টিল স্ট্যাচু । নীললোহিত নড়বড়ে স্ট্যাচু । যেন এখুনি পড়ে গিয়ে খান খান হয়ে যাবে । সম্বিৎ ফিরতেই হাত বাড়িয়ে দিলো মানিকবাবু, "শরদিন্দু স্যার এলেন ! এতক্ষণে ?"

- আর বলিস না মানিক । রাস্তায় যা মেঘের জ্যাম ছিলো । এত মেঘ যাচ্ছিলো রাস্তায় রাস্তায় । বোধ হয় ডিপ্রেশন হচ্ছে কারুর ! কি রে নীলু ? তোকে দেখে মনে হচ্ছে ফুলটু ডিপ্রেসড ! তোর জন্যে মেঘজ্যামে আটকে গেছিলাম । খুলে বল কি ব্যাপার ?

নীলু তার আলুথালু চেহারায় হাসির ঢেউ খেলিয়ে বললো, "ওই আর কি ? আমি এত ছোটবড় গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ কবিতা কিশোরসাহিত্য রহস্যগল্প লিখে মরলাম, বাট নো ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশন ফর মি । অথচ মানিকদা অস্কার পেয়ে বিশ্বনামা হয়েছে"

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো শরদিন্দুবাবু । "আমি শালা কিছুই পেলাম না তো ! তাও দিব্যি আছি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে । আর তুই নাকে কেঁদে ভাসিয়ে দিলি নিজেকে ! সাধে কি বলি বাল তোকে ! গ্রো আপ ম্যান ! চিয়ার্স ! দে আমায় কয়েকটা মেরে দিই যা বাকি আছে", বলে উশখুশ করে বসে পড়লো দুজনের সামনে ।

- দাদা, আমরা কিছু বই লিখবো ভাবছি স্বর্গবাসীদের জন্য । কিন্তু সেরকম অভিজ্ঞতা নেই এখানে আসার পর, তাই আমাদের আগেকার সৃষ্টিসব নাড়াচাড়া করছি যদি কিছু আইডিয়া পাওয়া যায়...

"বাহ্ ! অতি উত্তম ! আমি তো শালা এরকম ভাবি নি তোদের আসার আগে ! তো কি ভাবছিস বল শুনি", নরম তুলতুলে একটুকরো মেঘে আয়েশ করে নিলো প্রবীণতম ব্যক্তিটি ।

- ওই যে পশ্চিমবাংলায় যা যা হয়ে আসছে সব একসাথে লিপিবদ্ধ করবো ভাবছি দাদা । প্লাস সাথে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মিশিয়ে বা বিষিয়ে । সেখানে ফেলুদার শৈশবকাল থেকে বার্ধক্যকাল অবধি বাংলার রাজনৈতিক হালচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করাবো । এসবের পেছনে যত রহস্যের জট সবকটাই একেকটা খুলে ফেলে দেবে ফেলুদা ছোটবেলা থেকে । যা কেন্দ্রীয় সংস্থা এন.আই.এ. কেও তাক লাগিয়ে দেবে । 

"ওরে বাবা রে ! অসম্ভব ! অসম্ভব ! আ ভেরি পজিবলি ইম্পজিবল স্টেপ !", বোলতা মারার ভঙ্গিতে বললো শরদিন্দুবাবু ।

"একটা পেয়াঁজের খোসা খুলতে থাকবি, শেষে দেখবি কিছুই নেই ! ধুর ওভাবে হয় নাকি মানিকসোনা ?! নীলু তো 'সেই সময়', 'প্রথম আলো' আর 'পূর্ব-পশ্চিম' এই তিনটে মহাগ্রন্থ লিখে ফেলেছে বেঁচে থাকতে থাকতে । কত লোকের পেট ফুলেছে ওই তিনটে খেয়ে । নাহ ! মানিক তুই অন্যকিছু একটা ভাব !"

মানিকবাবু চুপ । নীলু প্রায় অচেতন সাথে তার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক খেলছে বার বার ।

আঠেরো শতকের প্রভাবশালী লেখক উপরে চোখ তুলে আপন মনে ভাষণ দিতে থাকে,
"আর ফেলুদা বেচারাকে টানছিস কেন এই মার্কেটে ? ও কি পারবে এতকিছু করতে যা ওই ন্যাশনাল গোয়েন্দা গ্রুপটা এখনো টানছে । অবশ্যই ভালোই এগোচ্ছে যেভাবে একটার পর একটা সূত্র ধরে তদন্ত করছে, দেখা যাক শেষ অবধি কি দাঁড়ায় !"


"আর একদিকে বাংলার পুলিশ বা সি.আই.ডি. যা দেখিয়ে গেলো তাদের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে । অন্যদিকে এন.আই.এ.-এর মত একটা ফ্রেন্ডলি টিমের উপরে ভরসা রাখা গেলেও শেষপর্যন্ত পেরে উঠবে কিনা সন্দেহ আছে । তার কারণ নোংরা রাজনীতির উর্দ্ধে কেউ যেতে পারে নি কেউ এখন অবধি । এরাও শেষে চাপে পড়ে ফেল মারবে কিনা আমার আশঙ্কা । সি.বি.আই. তো এখনো চালিয়ে যাচ্ছে সারদাকাণ্ড নিয়ে । কিভাবে যে কাজ করছে এরাই ভালো জানে । সেই ভেবে লাভ নেই আমাদের । বাদ দে"

"দ্যাখ্ রহস্যসন্ধান করতে গেলে রাজনীতির ফাঁদে পা না ফেলা ভালো, এতে লাভ হবে না বই ক্ষতিটা বেশি হবে । আর ওই দিদিকে আমি দেখি নি শালা ! যত নষ্টের গোড়ায় ওই পুঁচকে মেয়েটা । অপেক্ষায় আছি কবে এখানে আসে, এলে উচিৎ শিক্ষা দেবো আমরা । এর বেশি বলতে গেলে আমার রুচিতে বাধছে"

"ভাই, এমন কিছু লেখ তোরা যেটা ইতিহাসের মত লম্বা লম্বা যেন না হয় । রহস্যের গন্ধ পেলে ঝাঁপিয়ে পড়লে হবে না । ধৈর্য ধরে, মাইন্ড ফ্রেশ রেখে, ছক কষে, সূত্র মিলিয়ে একেক করে এগোতে হবে । থাকবে না অন্য কারোর হস্তক্ষেপ । চলবে নিজের বুদ্ধিতে আর বিশ্লেষণী ক্ষমতায় । কোনো সংস্থার সাহায্যের প্রয়োজন নেই । শুধু একজন হাবাটাবা লোককে দিয়ে হালকাফুলকা কিছু কাজ চালিয়ে নেওয়া যথেষ্ট । নিজেকে গোয়েন্দা ভেবে বুক ফুলিয়ে বা যার তার নাকে আইডেন্টিটি কার্ড ঠেকিয়ে আল্টিমেটলি নিজের পায়ে কুড়ুল মারা যাবে না"

"অবশ্যই কোনো পলিটিক্যাল বা টিপিক্যাল কমিক রোল রাখা যাবে না, ফালতু বকর বকর করে মাথার ঘিলুর সব পোকাকে মেরে ফেলে এরা । শুধু শুধু হাসির খোরাক বানিয়ে চিন্তা করার সময় নষ্ট করে দেয় । কোনো চক্রান্তের গন্ধ পেলে সেখানে নিজেকে জড়িয়ে ফেললে হবে না । দূরে থেকে নিজের প্ল্যানে অনড় থাকবে । অচেনা কেউ তেল মারতে এলে বুঝে সুঝে নিজের যুক্তি দিয়ে কিম্বা ডিপ্লোমাটিক্যালি এড়িয়ে যাবে । কেউ বাধা দিতে এলে জানাবে নিজের শখের কথা । জীবিকা নয় । নেশা নয় । পিওর প্যাশন নিয়ে এগিয়ে যাবে..."

"হুম !", মানিকবাবু মুখের পাইপ অনেকটা টানলো । একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে সে বললো, "সত্যান্বেষী !!!"

ঘুমের মধ্যে নীলুর ঠোঁট নড়ে উঠলো, "সত্যান্বেষী !!!"

"ইয়েস ! আ কমপ্লিট আনবায়াসড ক্যারেক্টার । চাইলে আমি আবার লিখতে বসবো । তোদের জ্ঞান দিতে দিতে মনে হলো এবার কিছু একটা লিখি । তাই ওটাই লিখবো, তবে নতুন করে লিখবো উইথ সেম টাইটেল । সত্যান্বেষী ।", গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে বললো আশাবাদী বন্দ্যোপাধ্যায় সাহেব ।

14 Oct 2014

কিছুক্ষণ বিরতি রাখলাম


নিজেকে সামনের দিকে ঠ্যালা মারলাম । কিছুক্ষণ বিরতি রাখলাম । পেছন থেকে নিজেকে ফের টেনে তুললাম । 

ওই স্বল্পবিরতিটা যদি শাস্ত্রানুমোদিত বিরাট কিছু ইতিহাস তৈরী করতে পারে, তাহলে সেই ইতিহাসের সাক্ষী আমিও হতে পারবো । দুর্ভাগ্যবশতঃ কোনো শাস্ত্রে এমন বিধি নেই । 

তবুও বিরতি রেখেছিলাম কারণ নিজের মহামূর্খামিকে ভালোবেসে ফেলেছি ।

A list of credible decisions made by Modi (Collected)


Modi Government has taken some credible decisions recently. These steps are certainly a Game changer for India in coming years.

1. Defence Ministry approved fast-track road building along the disputed border with China.

2. New 50 posts will be established in strategic position of Indo-China Border.

3. $2 billion extension to the Karwar Naval base in the southern state of Karnataka.The base is intended to take the load off Mumbai port, used by the navy and civilian ships.

4. Approved a Radar station in the Andaman and Nicobar islands in the Bay of Bengal to keep an eye on China's evil designs.

5. Radars and telecommunications projects within 100 km (62 miles) of the 4,000-km (2,500-mile) border with China, large parts of which are disputed, will be put on an automatic approval list.

6. Govt. Approved a long-stalled proposal to raise the height of the Narmada dam to 138.73 metres (455 feet), from 121.92 metres (400 feet), so more water will be available for drinking, irrigation and power generation.

7. In a significant development, the Modi government has decided to make X-Ray, MRI and CT scans free of cost for the poor at government hospitals.

8. The Government plans to plant 200 crore trees along the entire 1 lakh km National Highways network across the country to employ jobless youth. A similar scheme could be implemented under MNREGA (Mahatma Gandhi National Rural Employment Gurantee Act) along the village and district roads and state highways. That has the potential to employ 30 lakh youth.

9. Moving ahead with its plans of creating a "broadband highway" across the country, the inter-ministerial telecom commission approved a revised strategy for kickstarting the ambitious National Optical Fibre Network (NOFN) that plans to provide broadband connectivity to 2.5 lakh gram panchayats through nearly 6 lakh km of optic fibre by March, 2017.
Gazetted Officers........ Bye - Bye....
Govt may drop Attestation for
documents by gazetted
officers ( Stamps Walo Aapke Din Gaye)

You may no longer need a Gazetted officer or a
magistrate to attest
documents sought by
Govt. Departments.

Prime Minister Narendra Modi has asked his bureaucrats to
repeal all laws and rules which come in the way of effective Governance. In a meeting with secretaries on Wednesday, the PM
suggested government
departments should adopt the system of self-attestation of
certificates, photographs and marksheets, instead of asking for Attested Documents or filing
of affidavits. He also told
officials all Government application forms should be made short and
simple by doing away with unnecessary fields.

“The prime minister said self attestation should be enough because
it is a hassle for the common man to get it attested from Gazetted officers. Anyway, the original documents are
required to be produced at the final selection... (Courtesy BS)..


10. Mr. Modi has passed an epic resolution:
Only Scientist and Technical associate will participate and attend the Scientist Conferences in India and Abroad....No Minister or Bureaucrat is allowed as a part of this delegations
This is land mark decision as almost 50% participants were non technical Ministers and their cronies....who did not understand a thing on the subject.....they just uses to enjoy travel and hospitality at Govt expense

For last 67 years nobody had time n inclination to change this as there was no vision in their heads right from Nehru to Sonia ....they have systematically changed the rules to serve their own dynastic purpose and looted the country

Bravo Modi

13 Oct 2014

স্বপ্নে নিজেকে বসাতে পারি না


স্বপ্নে নিজেকে বসাতে পারি না । স্বপ্নের পরিসর উপহাসের পাত্রের তুলনায় কম, তাতে হিমালয়ের চূড়া থেকে জল ঢাললেও ঘুমের দাগ ওঠে না । লেপ্টে থাকে বছরখানেক আগেকার গু-এর মত । হাত বাড়ালেই শত্রু ।

নিজেই নিজের খড়্গ বের করি । তার উদ্দেশে নিক্ষেপ করামাত্র সত্তা দুদিকেই ছিটকে যায় । একই সত্তার দ্বৈতবাদে চমকে যায় রক্তকণিকা । অজস্রতা তার স্বভাববিরূদ্ধ ।

হত্যাকারীর গু পরিষ্কার করতে কেউ চায় না । কিন্তু স্বপ্নে নিজেকে বসাতে না পারায় আমার কর্তব্য তাকে মুছে দেওয়া । কিভাবে করবো তা ঠিক করে আমার আর স্বপ্নের মধ্যপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সময়ের বিচক্ষণতা । 

চোখ বন্ধ রাখি । ঘৃণাবশতঃ ঘুমের দাগটা ধীরে ধীরে উঠবে । এখানে মৃত্যুর প্রসঙ্গ আনা একটা ইহলৌকিক বৃথা ।

কেন কেন করে


প্রায়শ কেন । গালফোলানো ক্যানো । চোখজ্বালানো ক্যান্ । মুখখোলা দেখতে পেলে মারমুখো আছড়ে পড়ে কেন কেন করে । ঠোঁটচাপা থাকলে চারদিক থেকে হাত বের করে ক্যানো ক্যানো করে । বুকখানা একটা কবরখানা যেখানে কেন-রা ঘুরে বেড়ায় । কেউ বুক খুলতে চায় না বা দেয় না আপনজনদের ছাড়া । পাঁজরের একটা হাড় থেকে আরেক হাড়ে লাফিয়ে বেড়ায় কেন-রা । সে এক বিরামহীন লাফ । একটা লাফ ব্যর্থ হলেই বুক চেঁচিয়ে ওঠে ক্যান্ ক্যান্ করে । অদ্ভূতুড়ে সিরিজের চেয়েও উঁচুজাতের । সবকটি কেন । 

প্রশ্নের আগে পরে কেন থাকে না । প্রশ্নের সাথে হাত মেলায় সময়ের দুঃসময়ে আর অসময়ের সুসময়ে । বহুবার প্রশ্নাতীত হয়ে যায় । এদের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই । দুপেয়ে বোহেমিয়ানরা কেন কেন করে না বোধ হয় । এই কেন-রা নিরাকারবাদী তাই প্রশ্নাকার ধারণ করে আর কেন কেন করে শাসন করে । মরামানুষের পিছু ছাড়ে না এরা । আত্মার সাথেও ঘুরে বেড়ায় তাই বিজ্ঞানীরাও কেন কেন করে । ধার্মিকরাও পাল্টাজবাবে কেন কেন মারে । বোমা মারে কেন কেন করে । খুন করে কেন কেন করে । উত্তরবিরোধী কেন-রা হাতজোড়ে বিজোড় হয়ে যায় । সবকটি কেন । 

এত কেন বা কেন ? কেন প্রয়োজন পড়ে বার বার ? তর্কপ্রিয় বলে ? এরা ভাঙে তবুও মচকায় না ? রক্তচোষা সবকটিই কেন জীবনভর একটা উদ্দেশ্যহীন চালিকাশক্তির মত কাজ করে যায় । যুক্তিবাদী কারণগুলো ও বাক্যহারা হয়ে আছে এইসব কেন-এর নির্মম দাপটে ।

6 Oct 2014

ন্যাচারাল এনার্জির দাম


একমাত্র ঘড়ি কড়া হুকুম দেয় পুজোর আনন্দ শর্টকাটে সেরে ফেলার । যত হাই তুলি, তত অনুভব করি ভিড় বাড়ছে । নিজেকে ঠেলতে গিয়ে টের পাই ভিড় ঠ্যালার বয়সটা বিছানার তলায় লুকিয়ে কাতরাচ্ছে । 

ঘড়ির লাগে না গ্লুকোন-ডি । লাগে না ভিটামিন-সি । নেই হেপাটাইটিস-বি । লাগে শুধু ব্যাটারি-ডাবল্-এ । তার এনার্জির সামনে মুখ ব্যাজার করে পড়ে আছে কিছু নতুন জামাকাপড় । এদিকে অ্যালবাম দেখে ফেসবুকীয় এনার্জি ঘুঁটে ঘুঁটে খাই ।

দুই মাসের সন্ধিক্ষণে পাওয়া স্যালারির অংক দেখেও ঘড়ি থামবে না । বরং এবারের আনন্দটা সন্ধিক্ষণে সীমিত । দুদিনের মোমবাতিতে ফুঁ দিতে বাকি আছে । তা সত্ত্বেও জামা ছাড়তে হবে, সাথে পিছনের পকেটে পুরতেই হবে কঙ্কালসার পার্স ।

ন্যাচারাল এনার্জির একটুও দাম নেই বুঝি ? ঘড়ি দাঁত বের করে আছে । পুরো গেঁজেল হাসি ।

জাস্ট বি উইথ জয়া


পঞ্চমী খেল খতম । ষষ্ঠী আক্কেল গুড়ুম । সপ্তমী সুপার খালাস । অষ্টমী পুরো সাবাড় । নবমী রিটায়ার্ড হার্ট । দশমী ট্র্যাজিক এন্ড । কোনোটা ভালো করেই উপভোগ করা গেলো না । কিছু নামকরা প্যান্ডেলের সামনে বিশাল লম্বা লাইন দেখে কলেজে ভর্তির ফর্ম জমা দেওয়ার লাইন ভেবে মাঝেমধ্যে গুলিয়ে ফেলেছি । আলোর ঝলকানিতে গায়ের ঘাম পুজোর জামার থেকেও বেশি এক্সপেন্সিভ মনে হয়েছিলো । আমার আতরমাখা রুমালের বাকি গন্ধটুকু বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম । আর কিছু নয় ।
তবে সারা বছরে শুধু পুজোর রাতগুলো রেপলেস হয় বলে রাস্তায় রাস্তায় স্বল্প বা স্বচ্ছবসনার ঢল । কি জিওমার্কা আত্মবিশ্বাস শরীরের উন্মুক্ত জায়গায় জায়গায় ! কি বাহাত্মক প্রবল ব্যক্তিত্ব স্বচ্ছতায় স্পষ্টতায় ! ঢাকবার ব্যস্ততাটুকুও হাওয়ায় হাওয়ায় খেলে বেড়াচ্ছিলো ! কেন যে এদের সবচে' সুন্দর দেখায় এই গভীর নৈশকালে ? আড়ষ্টতা বা নিরাপত্তাজনিত উৎকন্ঠা বুঝি এদের সৌন্দর্যহীনতা ?
আসলে রেপিস্টরাও ফ্যামিলি নিয়ে বেরোয় । বন্ধুবান্ধব মিলে মণ্ডপে মণ্ডপে যায় । এই মাত্র কটা দিন ওদের ছুটি । অন্ততঃ রেপের ছুটি । কাল বা পরশু থেকে আবার শুরু করবে এরা । খবরের কাগজ পড়তে ভালোবাসি । দুনিয়ার খাসখবর সব পড়া যায় না, অথচ রেপের নিউজ পড়া হয়ে যায় । কেন জানি না রেপিস্টরা বোধ হয় খবরের কাগজের একেকটা পাতায় ওৎ পেতে বসে থাকে ।
নারীসমাজের এই মুক্তমনার নাম রাখলাম 'জয়া' যেভাবে হোক আমার স্বীকার করতে বাধো বাধো ঠেকে না যে শরীরের বাঁধুনির জয়জয়কার । আমার চোখে দেখা স্বাধীনচেতা নারীশ্বরমূর্তিদের । শুধু পুজোর রাতে দেখে আত্মতুষ্ট হতে চাই না, সারা বছর ধরে এই স্বাধীনতার গ্ল্যামার দেখতে চাই রাস্তায় রাস্তায় ।
হে রাজ্য প্রশাসকগণ, বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাবো না কাউকে আজ । জাস্ট বি উইথ জয়া ! শুধু আজ নয়, প্রতিদিন ।
এগেইন প্লিজ্, জাস্ট বি উইথ জয়া । এভিরি উম্যান ক্যান বি জয়া অন হার ওন সেল্ফ !

দুটো ব্যাঙ (Movie Review)


আজ মাত্র দুটো ব্যাঙ দেখতে পাবার আশায় গেছিলুম লবণহ্রদের সিসিতে । গিয়ে দেখি প্রচুর ব্যাঙ লাফালাফি করলো, দাপাদাপি করলো । ফেনোমেনালি অ্যাকটিভ সবকটাই । হৃত্বিক নিজেও একটা হেব্বিদিব্বি ব্যাঙ । ভেবেছিলুম তার কিছু ব্যাঙাচিনাচ দেখতে পাবো যা আগে কোনোদিন দেখি নি । নাহ্ সব কেলোব্যাঙের নাচ । মাথাটাকে পেছনে ঠেলে বুকের ছাতি ফুলিয়ে ঢেউ খেলিয়ে যে নাচ দেখালো সেটা দেখে মনে পড়ে গ্যালো আমি ক্লাস ইলেভেনে স্কুলে, কলেজের ফার্স্ট-সেকেণ্ড ইয়ারে বহুবার দেখাতাম আমার তখনকার ফ্যাব্ হিরোয়িক ড্যান্সিং স্টেপ করে । এখন হৃত্বিকের এই পুরোদস্তুর ওল্ড স্টেপটা আর তেমন সাড়া দিতে পারে নি, বাকি স্টেপগুলোও না । পুরো হতাশ হলাম । সাথে রিনার প্রেমের একটা পুসিক্যাট । সারা গল্পজুড়ে তার চুড়ান্ত ন্যাকামি । হয়তো ন্যাকাবোকা রোলের জন্য ওই আদুরে বিড়ালকে ভাবা হয়েছে ।
ড্যানিকে নতুন চেহারায় দেখলাম । শুরুতে আর শেষে এত সুন্দর্শনীয় পার্ট দেখিয়ে গেলো মাঝে দেড়ঘন্টা তার অনুপস্থিতি একটা মিসিংফুল । নাঃ 'নি' না ।
ও হ্যাঁ, কমেডি রোলে বেশ কিউট লেগেছে নবাগত ছেলেকে । বোধ হয় ভবিষ্যতে আরো হাসাবে যেটুকু দরকার এই হাসিশূন্য রুটিনে ।
সাবটাইটেল ছাড়াই অমুকের ব্যাঙাকশনপ্লে, তমুকের ব্যাঙেক্সপ্রেশন দেখতে দেখতে স্টোরিলাইন যাটুকু বুঝলাম তাতে রিভেঞ্জের যুগান্তকারী একঘেঁয়েমির স্ট্যাম্প । এই স্ট্যাম্পিং ব্যাপারটা এখনকার ল্যাদলেদে জীবনে মিনিংলেস । ইউজলেস । আজকাল কে কার প্রতিশোধ নিতে এত রক্ত ঝরায় ? এত ব্যাঙাচিনাচ কেন ? পরিণতির বয়সে এসে বাক্সের পর বাক্স ব্যাঙের প্রয়োজন পড়লো কেন ? এফ.আই.আর করে মানুষজন যে পরিমাণে ল্যাদখোরের আইডেন্টিটি নিয়ে বসে আছে, সেখানে এসব দেখলে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
তবে একটা সত্যি কথা বলি । হৃত্বিকের মাসকুলিন বডি দেখে পুসিক্যাটের যেরকম রি-অ্যাকশান হয়েছিলো, আমার মত একজন বয়স্কমানুষের হুবুহু একই রি-অ্যাকশান হয়েছিলো অন্ধকারের সিটে বসে । আর হ্যাঁ, পাশে বসা হৃত্বিক-লুক-ভক্তিনী পত্নীর রি-অ্যাকশান দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি ওই সময়ে ।

25 Sept 2014

অহংকারশূন্য হয় না


তোমার অহংবোধের গম্য হয় না আমার, তাই তোমার অহংকার রেসে নাম দিই না । আর জীবনটাই অহংকারশূন্য হয় না বলে আমি এখনো পিছিয়ে পড়ি । স্বেচ্ছায় ।

যদি কখনো দেখতে পাও যে আমি এগিয়ে যাচ্ছি, তাহলে ধরে নেবে যে তোমার অহংবুদ্ধি অনেক কমে গেছে । এবং সেটা দুজনের পক্ষে স্বাস্থ্যকর ।