17 Nov 2014

বন্ধু-কিন্তু ভাব


বন্ধু-বন্ধু ভাবসম্পর্ক বেশিদিন টেকে না । কিন্তু-কিন্তু ভাবসম্পর্ক চিরকাল চলে । দুইরকম ভাবের মুখগুলো ঘুরেফিরে আসে । সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারের লাইনে একটা মুখ হঠাৎ চেনা মনে হলে বা রাস্তার জ্যামে আটকে পড়ে থাকা ঠিক পাশের গাড়িতে বসা বহুকাল আগেকার চেনা মুখের সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হলে কোন ভাবটা আগে জেগে উঠবে সেটা বলা মুশকিল, যদিও সম্পর্কটা যে একধরণের বন্ধু-কিন্তু হয়ে একপা এগিয়ে তিনপা পিছিয়ে যাবে সেটা হয়তো সবাই জানে । তবে একপায়ের বন্ধু তিনপায়ের কিন্তুর চেয়েও দুর্বলমনের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক সেটা বোধ হয় অনেকে বুঝতে চায় না ।

দুদিন আগে এক সন্ধ্যায় হঠাৎ এরকম একজনকে দেখলাম । জাগতিক চোখাচোখি যাকে বলে । "একজন" শব্দটা আমার কাছে শুধু একজনের সংজ্ঞার্থ যার ব্যাখ্যা "চেনামুখ" দিয়ে করা যায় অনায়াসে । "বন্ধু" শব্দটা তাকে দেখে একবারও উচ্চারিত হতে পারে নি আমার চেতনায় অবচেতনায়, একবারও পুনর্লিখিত হতে পারে নি আমার বিবেকে আবেগে, একবারও পরিবাহিত হতে পারে নি আমার অস্থিকোষে প্রকোষ্ঠে । সেও সম্ভবতঃ আমাকে চিনতে পেরেছিলো আর আমিও তার জ্ঞানে বিজ্ঞাপনে "বন্ধু"র বদলে "একজন" হয়ে ছিলুম চেনামুখের সাঁটা পুরোনো স্টিকার নিয়ে । এসময় চারপাশেরটা ভীষণ অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী করে যেখানে দুটো "একজন" তফাতে থেকে আকর্ষণে বিকর্ষণে আটকে যায় । সাথে চেনামুখের স্টিকারটা ধ্রুবকের মত কাজ করে । আশ্চর্যভাবে ট্রিক করে "একজন"-দুটির মাঝে ব্যালান্স রেখে ।

তার মুখ দেখে আমার স্মৃতিপুকুরে ভেসে ওঠা মরামাছের মত লাগছিলো । ভদ্রতার ছিপটা তুলে সেই পুকুরে ফেলা দূরের কথা, সৌজন্যতার খাবারের টুকরো ছিপের মুখে গেঁথেও দিই নি । শুধু মরামাছটা বারে বারে উঠে এসে ভাসছিলো আমাকে তার নীরব দর্শক বানিয়ে । যেন ষাটের দশকের কয়েক সেকেণ্ডের ক্লিপের ঝলকানি । আমি একটু ম্লান হাসি দিলাম নিজের অজান্তে । নিজের ভুলে । নিজের অসতর্কতাবশত ।

এ হাসিটা বোধ হয় পুরোনো ধুলোবালিমাখা একটা পাপের ইনোসেন্ট ক্ষমাপ্রার্থনাটুকু ছিলো । তবুও একপায়ের বন্ধু-সুলভ হাসি থেকে আলাদা করা যায় না । হাসির সূক্ষ্মতম তফাৎটা ধরতে পারাটা বোধ হয় এ মুহূর্তের একটা বড় গেম । 

আমি এতটা অনভিজ্ঞ নই বলে তার তিনপায়ের কিন্তুটা আশাই করেছিলাম । এবং হয়েছিলো তাই । তাও সবকিছুই অসহনীয় লাগতে শুরু করলো । বন্ধু-বন্ধু, কিন্তু-কিন্তু আর বন্ধু-কিন্তু মিলে একটা অসম্ভব অচালনীয় অজাতশত্রু হয়ে আমাকে কয়েকশো পা হেঁটে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করছিলো । এরকম "একজন"কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটা আমার মত "একজন"-এর পক্ষে কতটা দুঃসাধ্য ছিলো সেটা হয়তো এখনো খোঁচা মারে আমাকে । যদিও পেরেছিলুম কারণ আমি চেনামুখের স্টিকারটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলুম । ধ্রুবকটার ভারসাম্য সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন করার তাগিদে ।

No comments:

Post a Comment