30 Jun 2015

ও তুমি ঠোঁটবন্দিনী


উপরে আছে একটা ঠোঁট । তার ঠিক নিচেও আছে আরেকটা ঠোঁট । পাতলা নয়, পুরুষ্টুও নয় । মধ্যবিত্ত এরকম দুটো ঠোঁট একমনে দেখছি । দেখেই যাচ্ছি । দেখা যেন বন্ধ হতে চায় না । আয়না অবাকাহত হয় আমার এই আত্মোষ্ঠপ্রীতি দেখে । নানা পজিশনে লিপ-এক্সারসাইজ করতে করতে নকল করছি কত সেলেব্রিটিদের । একবার মেরিলিন মনরোর মত ঠোঁটদুটো হালকা ফাঁক করে, একবার ক্যামেরন ডিয়াজের মত নিচের ঠোঁটের আদ্ধেকটা কামড়ে ধরে, একবার সানি লিওনের মত ঠোঁটদুটোকে পাউট করে, একবার উত্তমকুমারের মত হাফমুন শেপড্ করে, একবার জিম ক্যারির মত ঠোঁটদুটোকে একসাথে চেপে ফ্লিপারের মত কাঁপিয়ে থুতু ছিটিয়ে আয়নার ওইজায়গাটুকু অস্বচ্ছ করে ফেলি । 

চুপিচুপি নানা ব্র্যান্ডের লিপস্টিকের দিকে তাকাই আড়চোখে । যদি লাগাই উপরের ঠোঁটজুড়ে, যদি দিই লিপলাইনার যাতে উপরিঠোঁটখানি অনেকটা চূড়াভাঙা এভারেস্ট-এভারেস্ট লাগে, যদি নিচের ঠোঁটভরে মেখে দিই, যদি লিপলাইনার দিয়ে নিচের ঠোঁটের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিই । কিন্তু কিছুতেই হাত নড়ে না । কোন দুঃখে ঠোঁট রাঙাবো যখন চোখ রাঙিয়ে দিতে পারি দরকারে বেদরকারে । শুধু ড্রেসিং টেবিলে রাখা গুচ্ছের লিপস্টিকগুলো ওইভাবে দাঁড় করে থাকে আর আয়নায় প্রস্ফুটিত আমার বিনালিপস্টিক ঠোঁটদুটো অনবরত অভিনয় করে যায় । 

অ্যাত্তো ঠোঁটপাগল যে আমি মাঝেমাঝে ভেবে পাই না আমার এই ঠোঁট আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের লিপস্টিক-সাফ-করে-মোছা ঠোঁটের মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?! না গড়নে, নাই বা আকারে-বিকারে ?! কোনো প্রশ্ন করে বিরক্ত করি না নিজেকে, উল্টে আয়নাকে বোঝাই - 'ও তুমি ঠোঁটবন্দিনী, আগে তো দেখেইছি' !

26 Jun 2015

ধুঁকোমান জীবনের লক্ষ্যবস্তু


বুঝতে আর বাকি নেই । জীবন-কুণ্ডলীতে কোনো লক্ষ্য রেখে চলতাম না । এখনো চলি না । বরং আমি নিজেই নিজে হয়ে উঠছি ধুঁকোমান জীবনের একটা নিমিত্ত লক্ষ্যবস্তু । তীরবিদ্ধ হয়ে আসছি যদিও হার্টকে বুলস্-আই বানানো অত সহজ নয় । যে মুহূর্তে হার্ট এফোঁড়-ওফোঁড় হবে, সেই মুহূর্তে বুঝে যাবো আমার লক্ষ্যের স্থিরতা । তাতে তীর ছোঁড়া থেমে যাবে । মেডেলের বদলে জীবন উপহার পাবে শুধু চাপা একটা শ্বাস যার দৈর্ঘ্য আমার আর জীবনের মধ্যিখানের দূরত্বটুকুর সমান ।

22 Jun 2015

ক্লিনসেভড্ হবার সুখ


কাঁচাপাকা ছাগদাড়ির আবডালে যে একটা নিষ্পাপ কচি চিবুক আছে সেটা ভুলে গেছিলাম । আজ খেয়াল করলাম চিবুকের গড়ন বেশ রাজপুত্তুর-রাজপুত্তুর । মাঝের হালকা খাঁজে রূপকথারা চুপটি করে বসে আছে । ক্লিনসেভড্ হবার সুখ মোটে-ই নিছক নয় ।

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ


সব মনে নেই । অত মনে রাখার বয়স ছিলো না । মনে আছে এটুকু যে বাবা-মার হাত ধরে একটা সিনেমাহলে গেছিলাম আর বিশাল বড় বড় জন্তুদের ছোটাছুটির বেশ কিছু আবছা সিন নিয়ে কেমন একটা ঘোর লাগার মধ্যে বাড়ি ফিরেছিলাম । সেই ছোটোবেলায় দেখা জুরাসিক পার্ক বাড়তে বাড়তে কবে যে ওয়ার্ল্ড হয়ে গেলো । এদিকে আমি বেশি বাড়তে পারি নি । টেনেটুনে বাড়ার পর পাঁচ ফুট সাতে আটকেই গেলাম । এমন আন-ইম্প্রেসিভ হাইট নিয়ে ওইসব সুপারডুপারপারাপার হাইটের প্রাগৈতিহাসিক জন্তুদের দেখতে গিয়ে নতুন কি যে পেলাম এখনো বুঝতেই পারিনি । 

নিশ্চয় থ্রি-ডি জমানায় দেখার সুযোগ পেলাম । বোতাম টিপে সিটকে অটোমেটেড বিছানা মত করিয়ে শুয়ে দেখার মজাও পেলাম ঠিক । চিজ্ পপকর্ন যেমন একটা করে খপ করে মুখে তুলে নিচ্ছিলাম, তেমনি একটা করে মানুষকে পপকর্ন পেয়ে মুখখানা অ্যাত্তোবড় হাঁ করে খপাখপ করে তুলে গিলছিলো জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের দানবিক মুখ্যচরিত্র । জেনারেলি হরর্ ফিল্মে যেকোনো ঘটনা ঘিরে গা শিরশির বা ঘিনঘিন করার পোস্ট-এফেক্টের যে বীভৎসতা ন্যূনতম হলেও দেখায়, এখানে তেমন নৃশংসতার বালাই নেই যা দেখলে চোখ বন্ধ করতে বা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । খাপটি মেরে বসে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে সামনে এসে পড়া, পালাতে গিয়ে ফের খপ্পরে পড়া, লম্বাটে দাঁতালো মুখওয়ালা ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসছে-পিছিয়ে আসছে এমনসব রুদ্ধশ্বাসদৃশ্য নানা অ্যাঙ্গেল থেকে রিপিট করা - সব মিলেমিশে বেশ জমজমাট অথচ কেমন-যেন-একটা-প্রত্যাশিত জার্নি । শেষের দিকে একে ওকে কামড়ে-আঁচড়ে-টেনে-হিঁচড়ে যা যুদ্ধ হলো তাতে মনে হলো মুভির নাম 'জুরাসিক ওয়ার্ল্ডকাপ' হলে অত্যুক্তি শোনাতো না । কাপটা মিসিং ছিলো শুধু । 

ইরফান খান ? বলতে খুব খারাপ লাগছে যে ভারত থেকে উড়ে আসা একজন উচ্চমানের প্রতিভাবান শিল্পীকে একরকম ফিনিশ করে দেওয়াটা আমাদের ভারতীয়গর্বের পক্ষে যথেষ্ট ছিলো না । আরো কিছু দেখানো যেতো ইরফানকে নিয়ে অথবা অমন করে ট্রাজিক হিরো না বানিয়ে শেষ অবধি বাকিদের সাথে রাখা যেতো কারণ ওনার অ্যাক্টিং কম্প্যুটারাইজড্ ডাইনোসরদের চেয়েও অনেকবেশি ন্যাচারাল এবং স্পন্টেনিয়াস বুদ্ধিদীপ্ত লাগছিলো । 

আ স্ট্যান্ডিং ওভেশন ফর ইউ ওনলি, ইরফান ।

কোষের কোনো দোষ নেই


কোষে কোষে ছেয়ে গেছে চারদিকে । নিত্যনতুন কোষ তৈরী হচ্ছে । সেই থেকে শুরু হয় আজবতাজ্জব সব অঘটনীয় ঘটনা । কিম্বা চলে ঘটনীয় অঘটনের বাহার । আদতে সবের মূলে রয়েছে কোটি কোটি কোষ ও তাদের হরেকরকম্বা ক্রিয়াপ্রক্রিয়া । গোড়ায় রয়েছে যত উদ্ভট কোষীয় প্ল্যান । আমরা হারতে হারতে জিতবো নাকি জিততে জিততে হারবো সব নিয়ন্ত্রণ করে একমাত্র জটজটিলতম কোষ স্বয়ং - ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রতম মানবিক কন্ট্রোলার । বল তেড়ে আসছে দেখেও ব্যাট তুলবে না ঠুকতে থাকবে সেটা ঠিক করে ব্যাটসম্যানের কোষবৃত্তীয় কার্যক্রিয়া । ছয় হাঁকবে না ডট্ বলের রিওয়ার্ড দেবে সেটা আঁক কষে দেয় কোষবাবাজী । নিশ্চিত আউট হবে কিনা সেটা ক্লিক করে দেয় ফিল্ডারের ইনভিশিবল্ বস্ শ্রীমান কোষ । ডার্কলুইসের তত্ত্ব শুরু হয়েছে কোটিশত কোটি কোষের সম্মিলিত প্রয়াসে যার কোপ পড়ে ২২ জনের উপরে । প্রত্যেকের কোষনিষাদ শোনা যায় মাঠের ঘাসে ঘাসে কান পাতলে । জয়সূচক কোষের দাম কেউ দেয় না আলাদা করে । হারসূচক কোষের নাম কেউ ডোবায় না আলাদা করে । 

বেচারা কোষের কোনো দোষ নেই । প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয় কোষ, সাথে কোষনির্ভর মানুষ এবং তার হারজিতনামা ।

15 Jun 2015

মোট ২০৬টা হাড়


জীবনবিজ্ঞানের দৌলতে আমাদের সবার জানা প্রাপ্তবয়স্কমানুষের দেহে মোট ২০৬টা হাড় । ক্লাসটিচার যখন বলে ২০৬টা হাড়, তখন আমরা সাথেসাথে নিজেদের ইউনিফর্মের আড়ালে যে ছালচামড়ামোড়া কাঁচাবয়সী শরীরের দিকে তাকাই আর একটু গা টিপে দেখি হাড়টাড় শক্ত অথচ আন্দাজে হাড়গোড় গুনে গুনে দেখা পাগলামির চুড়ান্ত নিদর্শন ভেবে মুচকি হাসি । বাড়িতে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যখন ফের একই সংখ্যা নিয়ে পড়া হয়, তখন ক'জন বা প্র্যাকটিকালি হাড় গোনার কথা ভাবি ?! আমাদের থিওরিটিক্যাল দৌড় ওইখানে শেষ যখন পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে ২০৬ লিখে স্কোর হিসেবে একের মধ্যে এক নিশ্চিত করে নিই । 

৩২টা দাঁত থাকে জানি বলে বা জানতে পারলে অনেকেই জিভের ডগা দিয়ে নিজে নিজের বিকশিতদন্ত ছুঁয়ে দেখেছি । ৩৬টা না ৩৩টা না ৩২টার কম পাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে । ঠিক ঠিক ৩২টা দাঁত বের করতে লাগামছাড়া জেদী হতেও দেখেছি অনেকের মধ্যে । সফল না ব্যর্থ হলো তা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না, বরং পাঠ্যবিষয়ানুসারে সত্যি সত্যি যে ৩২টা দাঁত হয়, সেই কৌতুহলের বশে গুনতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয় । কিন্তু দাঁত সংখ্যায় কম, সহজলভ্য, দৃশ্যমান,পাশাপাশি ইঁটের মত সাজানো থাকে বলে চট করে গোনা যায় । হাড়ের বেলা তা কোনোভাবে সম্ভব নয় একমাত্র জীবিত থাকা অবস্থায় । কিন্তু কঙ্কাল হাতের কাছে পেলে সেটা নিশ্চয়ই সম্ভব । রবিনসন স্ট্রিটকাণ্ডের প্রসঙ্গ এখানে আনার চেষ্টা করছি বইকি তবে যেকোনো সহজবোধ্য বিষয় হাতের কাছে পেলে তা নিয়ে লেগে পড়ার স্বাভাবিক কৌতুহল আর না-দেখা-কেবল-শোনা গোছের বিষয় খতিয়ে দেখার ইচ্ছা - এই দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাকটা একবার মনে করানোর ট্রাই করছি । 

মিউজিয়ামে দেখেছি সংরক্ষণে রাখা মানুষের আদিকঙ্কালকুল । আর্টস্ ফ্যাকাল্টিতে দেখেছি কঙ্কালকে সামনে দাঁড় করিয়ে তার ছবি ক্যানভাসে এঁকে দেওয়ার প্র্যাকটিস । ল্যাবে দেখেছি এককোণে রাখা কঙ্কালের উপস্থিতিতে অন্যান্য যাবতীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা । মুভিতে দেখেছি ভিস্যুয়াল এফেক্টসহ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে আসা কঙ্কাল নিয়ে হরেকরকম অদ্ভূতুড়ে স্টোরিলাইন । বইতে দেখেছি অলৌকিক গল্পের প্লটে কঙ্কালদের ধরে আনার লেখকদের বাধ্যবাধকতা । স্কেয়ারি হাউজে দেখেছি ঝুলে থাকা কঙ্কালের হঠাৎ করে হাড়হিম করা দাপাদাপি (চমকমিশ্রিত বিদকুটে দর্শনজনিত ভয়ও পেয়েছি) । মলে দেখেছি কঙ্কালের কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে পোজ মারা । এতকিছু সত্ত্বেও কঙ্কালে যে আদৌ ২০৬টা হাড় আছে, সেটা গুনে দেখেছি একবারও ? গোনার কথা মাথায় আনি ক'জন ? ২০৬ না তার কম না তার বেশি সেটা গুনতে যাওয়াকে আমরা কৌতুহলের মধ্যে ফেলবো ? নিছক ছেলেমানুষি বা "মাথাখারাপ নাকি? খেপেছিস?" মার্কা গাল পেড়ে খাওয়া অ্যাভয়েড করি বলে গুনি না ? উল্টে যে সত্যিই গোনে বা গুনতে যাওয়ার চেষ্টাটুকু করে তাকে সাইকো বলে গালি দিতে আমরা বেশিরভাগ অভ্যস্ত ।

বস্তুত সাইকো বা মানসিক বিকৃতির শিকার - এই তকমা পেয়ে আসা একজন শিক্ষিত মধ্যবয়সী গত ছয়মাস ধরে একটা মানুষের কঙ্কালকে পাশে শুইয়ে কাটিয়েছেন, খাইয়ে এসেছেন, কাপড় পরিয়ে এসেছেন পরিবারের সসদস্যজনিত সম্মানটুকু বজায় রেখে । উনি যা করেছেন, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে শুধু বদহজম নয়, শকথেরাপিস্টদেরও রীতিমত শক খাইয়ে দিতে ওস্তাদ । গুনে গুনে ছয়টা মাস মানে প্রায় ২৬ থেকে ৩০টা সপ্তাহের সময় ছিলো ওনার হাতে । আমার প্রশ্ন - উনি কি কঙ্কালের হাড়গুলো গুনে দেখেছেন ? ২০৬টা কিনা তার প্রমাণ দেখার জন্য একদিনও চেষ্টা করেছেন ? ছেলেমানুষি বা "মাথা খারাপ হয়েছে ? খেপেছিস ?" গোছের পাগলামিটুকু করেছেন ? খুব সম্ভবতঃ করেন নি, কারণ ওনার উদ্দেশ্য 'ভিন্নধর্মী' ছিলো ।

কিন্তু একজন স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক সেটা বুঝি তার একমাত্র 'উদ্দেশ্য' বা 'ধর্ম' দিয়ে নির্ধারিত হয় ? যদিই বা হয়, তাহলে আমরা এখনো 'ধর্ম'-এর ঊর্ধ্বে আসতে পারি নি, না ?

8 Jun 2015

সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের ভঙ্গিমা


শূন্যে মারা বল লুফে নেওয়ার সময়, তিনচারতলার বারান্দা থেকে ফেলা লেটারবক্সের চাবি লুফে নেওয়ার সময়, কেউ 'এই নে' বলে কিছু জিনিস ছুঁড়ে দিলে সেটা লুফে নেওয়ার সময় - হাতদুটো দক্ষ ফিল্ডারের মত সেটআপ করতে করতে একটুখানি পিছিয়ে জিনিসলব্ধ করা হয় । মুখে কিছু বলতে হয় না এইসময়ে । যে বল মারলো, যে চাবি দিলো, যে আগাম জানিয়ে জিনিসটা ছুঁড়ে দিলো - তার চোখমুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না । হাতদুটিবন্দী যাতে হয় তার জন্য মনোনিবেশ করতে হয় শুধু । জিনিসটার গতিমুখ, গতিবেগ, হালকা না ভারি, ধারালো না ভোঁতা সেই বুঝে হাতদুটি খুলে সেটআপ করতে হয় । কাজটা সফল হয় হাতদুটিকে অক্ষত রেখে জিনিসটা বন্দী করতে পারলে ।

এর উল্টোটা যদি করি মুখে কোনোরকম শব্দ না করে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখমুখের দিকে লক্ষ করে হাতদুটিকে হুবুহু ফিল্ডারের মত সেটআপ করে একটু এগিয়ে দেখানোর খিস্তিবাচক অর্থ অনেকে ধরতে পারে না । এই 'সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ'-এর যে একটা স্ল্যাং দিক আছে, সেটা বুঝতে না পারলেই বাধ্য হয়ে সেই শব্দটা জিভের ডগা থেকে ছিটকে বের করতে হয় আমাদের । ফিসফিসিয়ে বা সশব্দে । কিন্তু কেন এত অধৈর্য হয়ে পড়ি আমরা ? জাস্ট হাতদুটি তালপাতার খালি থালার মত করে এগিয়ে ব্যক্তিবিশেষের সামনে সার্ভ করা যথেষ্ট নয় ? ব-যুক্তপদ মুখ ফসকে বেরিয়ে থালায় পড়লেই তবে ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়, সেটা কিছুতেই চাই না । 

প্রাচ্যদেশীয় তথা বাঙলা খিস্তিবাচক সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের অন্তর্নিহিত মানে বুঝতে পূর্বপশ্চিমজুড়ে লোকের যতটা অসুবিধা, ঠিক ততটা বা ততোধিক সুবিধা ওই পাশ্চাত্য খিস্তিসূচক হাতের মুদ্রার মানে বুঝতে । খুব ছোট্টো অথচ কি সহজ ভঙ্গিমা এই ল্যাঙ্গোয়েজের ! একটা হাত (ডানপন্থী হোক বামপন্থী হোক) মুষ্টিপাকিয়ে পাঁচটা আঙুলের মধ্যে শুধু মধ্যমাকে সটান করে ছাড়ান দেওয়া । সারাবিশ্বে চলে এই অভূতপূর্ব সুন্দর সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের জনপ্রিয়তা । প্রাচ্যেও এই প্রথা সমান তুঙ্গে যা দেখলে অনায়াসে বুঝে যায় আমবাঙালি ।

শুঁকি বিশ্বাসঘাতকতার তীব্রতা


সুগন্ধি সাবানজলে ধোয়া হাত দিয়ে মেঘগুলো মুছে দিই । পরিষ্কার আকাশের বুকে নাক ঠেকিয়ে শুঁকি বিশ্বাসঘাতকতার তীব্রতা ।

অন্তঃস্বপ্ন


স্বপ্নে দেখলাম যে কাল সারারাত টানা ঘুমিয়েছি মাত্র । ঘুমের মধ্যে তেমন স্বপ্ন দেখি নি । অন্তঃস্বপ্ন না দেখাটা আমার দেখা সেরা একটা স্বপ্ন । এটা কোনো হাসির ব্যাপার নয় । 

স্বপ্নের ক্লান্তি হয় । স্বপ্নের বিরক্তি হয় । স্বপ্নের রাগানুরাগ হয় । স্বপ্নের অ্যাসিডিটি হয়, আবার নানা অসুখবিসুখও হয় । এতকিছুর পর স্বপ্নের মধ্যে আরেকটা স্বপ্ন কোত্থেকে এসে বাসা বাঁধলে সেই স্বপ্ন আর স্বপ্ন-ই থাকে না । মারণরোগের মত বংশবৃদ্ধি ঘটায় দ্বিতীয়টা । দিকে দিকে ছড়িয়ে যায় ভাইরাসের মত । প্রথম স্বপ্নটা মরে যায় রোগগ্রস্ত হয়ে । দ্বিতীয়টা শুধু ছটফটানি দেয়, ঘামের ঢেউ তুলতে তুলতে । তৃতীয় স্বপ্ন দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ালেই ঘুমটা ভাঙে আর দেখি তৃতীয়টা আসলে অন্য কারো স্পর্শ । চতুর্থ স্বপ্ন তখন আমায় ছুঁতে না পারার আফসোসে ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দেয় । তার দেখাদেখি টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বপ্নরা হতাশ হয়ে একে একে হিসিতে ভিড়ে যায় । তার মধ্যে যেগুলো আহাম্মক অথচ জেদী বলে টিকে থাকে সেগুলো ফ্ল্যাশের জলের তোড়ে হারিয়ে যায় । কিন্তু তাই বলে এতো স্বপ্নাস্বপ্নি আর পোষায় না । তার বদলে প্রথম স্বপ্ন একা একা একরাত নির্বিঘ্নে কাটাতে পারলেই বেস্টসেলার । 

সিরিয়াসলি মিন করছি ।