17 Aug 2015

পেটস্থ কথা


যে কথাটা বলবো ঠিক করেছিলাম সে এখনো পেটের ভিতরে । আঙুল টিপে দেখলাম পেটের নানা জায়গায় কোথাও কথার প্যাঁচ রয়েছে কিনা । কোথাও সেরকম কিছু নেই । নিশ্বাসবন্ধ করে ভুঁড়ি কমাতে কমাতে একসময় পাঁজরের সীমারেখা পেরিয়ে ভিতরের দিকে ঠেসে দিলাম পুরো পেটটাকে । তাও কথাটা কঁকিয়ে উঠলো না । কী করি ? কী করি ? নাভিকে ঘিরে থাকা পাতলা লোমজঙ্গলে আঙুলের বুলি কাটতে থাকলাম যেভাবে গর্ভবতী মায়েরা মাখনের মত মসৃণ ফোলাপেটে হাত বুলিয়ে আনমনা হয়ে থাকে । মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে শিশু মুখ লাল করে ওঁয়া-ওঁয়া কাঁদে । মায়ের পেট শিশুর প্রথম ও শেষ অন্তর্জাগতিক ক্লাসরুম কিনা । কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে ক্লাস থেকে বার করলে যেমন হয় । 

আমার ওই বলবো-বলবো কথাটা নিতান্ত যে সে নয় । আবার বের করাও মোটে সহজ নয় । একবার বের করলে আর ঢোকানো যাবে না । কথাটা কাঁদবে না ঠিক, তবে অন্যকে কাঁদাতে পারে বোধ হয় । আমি নিজেই কাউকে কাঁদাবার পাত্র নই, অথচ কত কেঁদে কেঁদে বুড়ো হচ্ছি । ভারী চিন্তায় পড়লাম পেটস্থ কথাটা নিয়ে । কেমন হবে কথাটা ? খিস্তি হবে না মিষ্টি হবে ? যদি খিস্তি হয়, তাহলে ভালো হয় । অনেক মিষ্টি কথাকে শাসন করে দিতে পারবে এককথায় । এই খিস্তিতান্ত্রিক সমাজে কে না চায় ?! আর যদি মিষ্টি হয় ? তাহলে হাজার চিন্তা তাকে ঠিকঠাক সেফটি দেওয়ার ব্যাপারে । একদিন একলা রাতে চলার পথে যদি সব খিস্তিরা মিলে সুযোগ পেয়ে মিষ্টিকে টেনে হিঁচড়ে...ওমা গো বাবা ! খুব ভয় লাগে ! অমনি কথাটি একদিন মিষ্টিবাদী হয়ে উঠবে ? কথার মিছিল বেরোবে যখন তখন ? অসম্ভব ! অসম্ভব টু আ গ্রেট এক্সটেন্ট !

এতো ভেবে কী লাভটা হচ্ছে ? এই কলিযুগে খিস্তি মিষ্টি সব সমান । একেকটা দেবশিশুকে জন্মের পর থেকেই ছোটোবড়ো পাপের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় অজান্তে, তেমনি এই না-বলা একটামাত্র কথার মধ্যে দেবত্ব ধরে রাখলে কেমন যেন দমবন্ধ লাগে । 

কাজেই বের করে ফেলা যাক কথাটিকে । কোনো কনসাল্টেশন ছাড়াই । তারপর যা হবার তাই হবে ।

3 Aug 2015

সবাই তোর মতো আর আমি সবার মতো


আমি তোর বাবা হলে তোর সাথে বসে একসাথে জুতো পালিশ করতাম,

আমি তোর মা হলে ইলিশভাজা টুকরো টুকরো করে তোর মুখে গুঁজে খাওয়াতাম,

আমি তোর দিদি হলে তোর ডান কানটি মলে দিয়ে বলতাম, "ন্যাকামো হচ্ছে!",

আমি তোর বোন হলে তোর বাঁ কানটি মলে দিয়ে বলতাম, "আমার কারেন্ট বয়ফ্রেণ্ডের মন তোর চেয়েও অনেক শক্ত!",

আমি তোর দাদা হলে তোর মাথার পিছনে চাঁটি মেরে তোর আঙুলের ফাঁকে 'বাহুবলী'র দুটো টিকিট ঠুসে দিতাম,

আমি তোর ভাই হলে মিলান কুন্ডেলা-কে একপাশে ঠেলে তোর কাছে ফ্লার্টিং টিপস্ নিতাম,

আমি তোর প্রেমিকা হলে তোর ডান হাত তুলে আমার বাঁ স্তনের উপরে চেপে রাখতাম,

আমি তোর খুব কাছের বন্ধু হলে বলতাম, "বস্, তুই আমাকে কীভাবে ভেঙে পড়তে হয় একটু শেখাবি ?" 

আমি আদতে তোর কেউই নই,
তাই হাসছি ঘেমো জাঙিয়া টেনে নামাতে নামাতে ।


সবাই তোর মতো
আর আমি সবার মতো, 


আলাদা শুধু আমাদের রাস্তায় এবং তার জায়গায় জায়গায় গর্তের সাইজে ।