30 Jun 2014

কাকের বুকে কেউ বেজে দিলো


তার লম্বা লম্বা পা ফেলার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায় সময় । মুগ্ধতার চোটে তার হাত শিথিল হয়ে যায় । তিনটে কাঁটা ছিটকে পড়ে রবিবারের রাস্তায় ।

কাকের বুকে কেউ বেজে দিলো নিশ্চয়তার কাঠি দিয়ে । একটিমাত্র ডানা । আর কোনো চিন্তা নেই তার এখন ।

বহুপুরোনো টিউবলাইট


আকাশজুড়ে জ্বলতে জ্বলতে নিভছে । ঠিক যেন বহুপুরোনো টিউবলাইট । নতুন কেনার পালা ।

কোন দোকানে পাওয়া যাবে নতুন আকাশের মডেল যা কখনো নিভবে না?

27 Jun 2014

মিথ্যা বলা


ভাট বকার আগে আমি নিজেকে একজন মিথ্যুক বলে পরিচয় দিতে চাই কিনা সেটা বলা খুব মুস্কিল । তবে এখন যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি , বেঁচে আছি , টিকে আছি এবং খাচ্ছি-দাচ্ছি-ঘুমোচ্ছি-আবার উঠছি, তার পেছনে চারপাশের লোকের মিথ্যা শুনে পচে গলে নিজে-ই মিথ্যা বলার কায়দা রপ্ত করার অবদান প্রচুর । এর জন্যে কেউ না হলেও নিজে নিজেকে সাম্মানিক পুরষ্কার দিই । ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা বলে নিজের দুই পা কে সচল করে অগ্রসর করাটা-ই সেই স্বঘোষিত পুরষ্কার ।
শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলেন। তিনি আরো বলেন মিথ্যা বলা সহজ কাজ নয়, সত্য বলার চেয়ে এতে ৩০ ভাগ সময় বেশি লাগে। - See more at: http://www.bengalinews24.com/it-and-technology/2013/06/01/5983#sthash.rGTh3a3w.dpuf

প্রসঙ্গতঃ মিথ্যা বলার অধিকার সবার-ই আছে এমন বিশ্বাস করি আমি । সবসময় সত্যি কেন বলবো ? শুধু সত্যের মধ্যে আমরা ধর্ম খুঁজতে যাবো বা কেন ? মিথ্যার মধ্যে কি কোনো ধর্ম থাকতে পারে না ? কোনো শিল্প কি নেই ? কিন্তু আমরা আমাদের জীবনকে নিজেদের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে আসি নাকি ভাসিয়ে দিতে আসি কিনা এইসব পরের কথা । অনেক অনেক অনেক পরে আসছে এইসব । কারণ জীবন শুরুতে তৈরী হয় না আমাদের হাতে , তৈরী হয় পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিকের হাত ধরে । তারপরে-ই সেটা নিয়ে টানাটানি করি নিজেদের অস্তিত্ব খোঁজার তাগিদে । নিজেদের আইডেন্টিটি ক্রিয়েট করার সুপ্ত তাড়নায় । নিজেদের সুখকে স্থায়িত্বদান করার লোভে । এই কুম্ভীপাকে সিদ্ধ হতে গিয়ে আমরা কতবার মিথ্যার ছাতা খুলে নিজেদের মাথা বাঁচিয়ে আসছি । এখনো । মার্ক টোয়েন-ও বলে গেছেন - "যদি সত্যি কথা বলো, তাহলে কিছু মনে রাখার দরকার নেই ।" - আহা ভারী খাঁটি কথা এবং যুক্তিসঙ্গত-ই বটে । তবে উক্তিটি 'মিথ্যা বলা'র প্রেক্ষিতে দেখতে গিয়ে দেখা যায় আমাদের কিনা অনেক প্ল্যান সেট করতে হয় , অংক কষতে হয় , মনে রাখার মত অনেককিছু ভাবতে-ও হয় যার জন্যে সময়জ্ঞানের প্রয়োজন আছে ।  আলবাৎ আছে বস । আর যদি তাই থাকে সেটা-ই পরিশ্রমের । লক্ষ লক্ষ নিউরোনের মধ্যে বাহিত হয় স্নায়বিক শ্রম এবং রয়েছে তার উপরে বুদ্ধিদীপ্ত সুনিয়ন্ত্রণ । এই অসম্ভব কাজ সম্ভব করে দেখাতে পারে যারা, তাদের কাছে নতজানু হয়ে যাই আমি । মিথ্যা বলার পেছনে যুক্তি বা অযুক্তি , কারণ বা অকারণ কোনোটা-ই আমার কাছে ম্যাটার করে না । অন্যদিকে সত্যি কথা বলার মানে কিছু প্ল্যান নেই , নেই কোনো মাথা ঘাটাবার কাজ কিম্বা নামতা মুখস্থ করার মত কোনো ফর্মুলা নেই । কাজে এর কোনো দাম নেই । একেবারে অ-পদার্থ একটি ।

নিচে একটি উদাহরণ দিই ( এটি আমার নিজের বানানো তাও চেনা গণ্ডির সাথে ১০০% মিল দ্রষ্টব্য ) :-

***

- "ইউ শাট আপ্ ! ইউ লায়ার !"
- "যাঃ কলা ! আমি কি মিথ্যা বললাম শুনি ?"
- "প্লিজ্ স্টপ ইট । আমার সহ্য হয় না মিথ্যা , নিতে পারি না মিথ্যা । তুই এতো মিথ্যুক যে কল্পনা করা যায় না !!!"

কলেজ-ফেরতা পিঙ্কি নিজের বাড়ির মাত্র ১ কিমি দূরে তার বয়ফ্রেন্ড-কাম-'মিথ্যাবাদী'র সামনে ঘন্টা তিনেক ধরে সমস্ত ঘৃণা ওগরাতে লাগলো, শেষে পায়ে হেঁটে মাত্র ১৫ মিনিটে বাড়ি ফিরলো । ফিরে মায়ের মুখে পড়লো । মায়ের উদ্বিগ্ন প্রশ্ন - "কি হলো এতো দেরী কেন ?" তার জবাবে মেয়েটির মিথ্যাতুর উক্তি - "আরে বাস পাচ্ছিলাম না তিন ঘন্টা ধরে । কি করি বলো মা ?" তাতে মায়ের সন্দেহের একটা দানা ফট্ করে ফুটলো , বাকি দানাগুলো তখনো স্তিমিত । তাই কিছু না বলে মা চলে গেলো বেডরুমে ।

বেডরুমে তখন মেয়েটির বাবা মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে ঠোঁটের কোণে মাঝে মাঝে হাসি এনে এক ভার্চুয়াল-কাম-বান্ধবীর সাথে এস.এম.এস. করছিলো । খেয়াল ছিলো না কখন যে পাশে এসে বসেছিলো তার ২৪ বছরের বিবাহবন্ধনীভূত স্ত্রী ।

- "এই শুনছো ?"
- "হু"
- "পিঙ্কি যে অনেক দেরী করে বাড়ি ফিরলো সেটা একবারও মনে হলো না তোমার ?"
- "কারোর প্রেমে-টেমে থেমে গেলে তো ঘেমে যাবে সাত-তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে গিয়ে !!"
- "কি যাতা বকছো তুমি ? সেই কখন থেকে কার সাথে কথা বলছো শুনি এদিকে তাকাও তো !"
- "আরে ! বলো বলো শুনছি তো । অফিসের কাজ নিয়ে জরুরী কথাবার্তা চলছে কালকের মিটিং আছে না ? তাই । কাল সকাল সকাল ভাত বেড়ে দিও ডার্লিং !"
- "বাজে কথা কম বলো । তোমার মুখ দেখে মোটে-ই তা মনে হয় না । এনিওয়ে জানো জিগ্যেস করলাম ওর আজকের দেরী হওয়ার কারণ, কিন্তু কিছু-ই বললো না যে ?!"
- "কিছু বলে নি মানে ? আমি তো ওর গলা শুনতে পেয়েছি কি যেন একটা বললো পাস না কি টাস নিয়ে ..."
- "ওহ আমি শুনি নি আসলে ব্যস্ত ছিলাম রান্নাঘর মোছার কাজে । দাঁড়াও আসছি ।" এই বলে বেডরুম থেকে বেরিয়ে গেলো মহিলাটি যে নিজে একজন যেমন মিথ্যাজর্জরিতা তেমন মিথ্যার্জিতা ।

***

উদাহরণটি তেমন কিছু নতুন না হলেও নিত্য-ই যা আমাদের চারপাশে দেখি , শুনি আর পড়ি । কিন্তু এর গোড়ায় এখনো ঝুলছে "মিথ্যা বলা মহাপাপ" । এই সর্বজনবিদিত ঝুলন্ত আলজিভ আসলে একটি সর্বসেরা মিথ যাকে আমরা 'অ্যা' 'অ্যা' করে আদ্ধেক সমর্থন করি পেছনে লুকিয়ে থেকে , আর বাকি আদ্ধেকটা-ই মিথ্যা । এই মিথ নিয়ে অ্যা-অ্যা করা আর মিথ্যা বলা কি এমন আলাদা ? একসাথে জুড়ে দিলে-ই তো বিন্দাস । একটি আস্ত খণ্ড মিথ্যা যার উপরে কাঁচি চালিয়ে কুচি কুচি করে কাটলে-ই বেরিয়ে পড়ে হাজারো মিথ্যারত্ন । সেই রত্নের লোভে পড়ে কিনা মানুষ ?! রত্নলাভ করলে-ই মিথ্যাবাদী ? যত্ন করে রত্ন সংগ্রহে রাখলেই মিথ্যুক ? আর কাঁচি চালানোর পরে পড়ে থাকে শুধু কি ছেঁড়া সত্যটুকু ? এতটা-ই মলিন , দীন , নিষ্প্রভ যে সত্যের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মানুষ ? সত্যের এই দীনতা বা মলিনতা আমরা কজন বা আঁকড়ে ধরে থাকি ? থাকতে-ও পারি না । আবর্জনায় ছুড়ে দিই , নর্দমায় ফেলে দিই । সত্য আজকাল বর্জ্যপদার্থ যা আমরা ত্যাগ করি প্রতিমুহূর্তে । একেকটা মুহূর্ত কখনো কখনো আশ্চর্যরকমের দীর্ঘতর হতে থাকে, কারণ সেগুলো কিনা ভীষণভাবে মিথ্যাসাপেক্ষ ?! 

এমনকি স্যার রবার্ট ফেল্ডম্যান তার বিখ্যাত বই 'The Liar in Your Life' -তে বলেছেন যে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ কথা বলার সময় প্রতি ১০ মিনিটে অন্তত একটি মিথ্যা কথা বলে । তিনি আরো বলেন - মিথ্যা বলা সহজ কাজ নয়, সত্য বলার চেয়ে এতে ৩০ ভাগ সময় বেশি লাগে । রাখলাম ওনার দীর্ঘ গবেষণার ফসল । তোমরা আমরা সকলে জানি বা না জানি অবশ্য-ই কিন্তু মানি । আর যারা মানে না বা মানতে চায় না , হয় তাদের ঘাড় শক্ত সাড়াশি দিয়ে ধরে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত, না হয় তাদের সেই 'মিথ্যা বলা মহাপাপ'-নামক এক অন্ধকারকুপের মধ্যে যাবজ্জীবন কাম্য । কিন্তু এখানে আমার মূলবক্তব্য মিথ্যাচার নিয়ে নয় , মিথ্যা বলার কারণজনিত আলোচনামূলক নয় এমনকি আদ্ধেক-গ্লাস-পূর্ণ-না-খালি মার্কা অর্ধসত্যমিথ্যা নিয়ে যুক্তিতর্কবিতর্কভিত্তিক নয় । এতে আমার মিথ্যা বা সত্যি বলা ছেঁড়া গেছে । বালছেঁড়ার চেয়েও বড়ো অযৌক্তিক । নিষ্প্রয়োজন । বরং আমার বক্তব্য মূলতঃ মিথ্যা বলাটা-কে আনুষ্ঠানিকভাবে সেলিব্রেট করা নিয়ে । মিথ্যা বলার মধ্যে যে এক শৈল্পিক সত্য লুকিয়ে তাকে সামাজিক সম্মান জানিয়ে আহ্বান জানানো-ই জরুরী । 

সুতরাং এসো আমরা পাল্টাই আমাদের নীতিবাক্য এবং সেটি হয়ে যাক *মিথ্যামেব জয়তে*

23 Jun 2014

সমাজ-পাদ


বেশ কতকগুলো ঘটছিলো একসাথে । সীমার মধ্যে অসীমতা পুরো ঠুসে দেওয়া । কুসুমকে ঢিসুম করে ঘুষি মারা । দেড় বাই আধ চারদেওয়ালিতে তুমুল ড্রিবলিং । শেষমেশ ভট্ ভট্ করে পাদলাম । বিকট শব্দে ।

মনে করার চেষ্টা করছিলাম কি এমন খেয়েছিলাম যে পেছনের সরুদ্বার দিয়ে অমনি ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়ে গেলো বেচারাটি । তার এই পালানোর ধরনধারণ খালিচোখে দেখা যায় না । আন্দাজ করতে পারি পলাতক একটি গৌণ নারীচরিত্র আর অনুভব করতে পারি তার শুধু ভয়ার্তনাদ যার চোটে পেছনের পর্দাটি একটু ফেটেও গেছে বোধ হয় ।

অনেক কষ্টে মানসচক্ষুদুটি মেলে দেখতে পেলাম এই ভিতু নিঃসরণকারিণীর ক্লিভেজে উঁকি মারছে কুসংস্কারাবিষ্ট ট্যাটু । কিন্তু কে শোনে? কে বা বোঝে এই দৈহিক সংস্করণবিবৃতি? স্রেফ কানফাটা শব্দে গোটা সমাজের ধড়মড়ানি কপালে জোটে ।

প্রাকৃতিকবাজ পড়লে এতটাও চমকায় না লোকে, শুধু আগেভাগে আলোর ঝলকানি পেয়ে দুইকান চেপে থাকে আর প্রাকৃতিক টানে সামাজিক অচেনা দূরত্ব ঘোচে । কিন্তু এই মানুষিকবাজ মাথার উপর থেকে পড়ার বদলে শুধু কোমরের নীচ থেকে পড়ে তাতেও কানদুটি ছাড় পায়, কিন্তু কমিশন পায় না কারু নাক । টিকালো নাক, ধাবড়ানো নাক, এমনকি নেই-নাক সব দুই আঙুলের চাপে চুপ মেরে যায় । সাথে তৈরী হয় সামাজিক অতিপরিচিত দূরত্ব ।

এই আত্মীয়তার খচখচানির মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য-ই সহানুভূতি দেখায় আর জিজ্ঞাসুদৃষ্টি ফেলে এই বিয়োগাত্মক ঘটনাধীন মানুষের উপরে । ঠিক যেন বিবাহবিচ্ছেদ হলো এক্ষুনি । কেন- সে- পালিয়ে -গেলো- আমাকে -ফেলে -মার্কা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়ে চুপচাপ চলে যাই । বাজার থেকে এয়ার ফ্রেশনার কিনতে যাবো নাকি একলা ফ্রেশ এয়ার খেতে যাবো সেটা হয়তো ঠিক করে এই সমাজবাদ । আক্ষরিকার্থে সমাজ-পাদ ।

"বাবা, খেলবে?"


"বাবা, খেলবে?"

দেখি আমার ঘর্মাক্ত ছেলে তার হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে তার একটা খেলনাগাড়ি ।

ওর হাসি মিলিয়ে দেওয়ার মত প্রতিভা নেই আমার, কিন্তু গরমের প্যাচপেচে প্রতিভাধর অাঠাঘাম আমাকে অ্যারেস্ট করে রেখেছে । হাতে পরিয়েছে আলস্যকড়া । দুই পা ইউজলেস্ ভিকট্রিয়াস ।

সে আবার বলে উঠলো - "বাবা, খেলবে?"

আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম । ঘাড় আরেকটু বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছিলাম আমার বাবা তথা ছেলের ঠাকুর্দাকে । দেখি সিলিং ফ্যান থেকে ছিটকে আসা আগুনে গোলাবর্ষণের সাথে মোকাবিলা করছে । আত্মরক্ষার্থে শুধু কানে মোবাইল ।

ছেলের তৃতীয় আবদার আছড়ে পড়লো ঘামবৃষ্টির তোড়ে ।

আমার জোড়া ভ্রুয়ের বাঁধ ভেঙে গেলো । বন্যায় ভেসে গেলো গাল-নাক-ঠোঁট-ছাগলদাড়ি । অসহায় ছাগল আমি এখন । ছাগলেরা যথাসাধ্য বাবা হতে পারে না বোধ হয় ।

ফের জমা পড়লো ছেলের চতুর্থ কিস্তি ।

আমার দৃষ্টি সোজা গিয়ে পড়লো দেওয়ালে ট্যাঙানো আমার ঠাকুর্দার মালাপরানো ছবির উপরে । ঘামহীন সুপুরুষ সুদর্শন । এই গরমে সবচে আরামে আছে আমার ঠাকুর্দা আর সে আমার ছেলের সাথে যেন খেলতে সদাপ্রস্তুত ।

আজকের পিতৃদিবস দাউ দাউ করে জ্বলা একটি হাসির পাত্র । তবে ঠাকুর্দাদিবস, দ্য কুল্ বস্ ।

বাকিদের ভারী বয়ে গেছে


সবেতে-ই আমার বয়ে যাওয়াটার ওজন ক্রমশঃ বাড়ছিলো । বাড়তে বাড়তে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে একটু থমকে গেলো ।

ভিতরের কাঁচা দগদগানি যেন মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠলো ফের । ব্যান্ডেজ খুলে তুলো সরিয়ে দেখলাম আমার বয়ে যাওয়ার ওজন তরতর করে নেমে যাচ্ছে । তারছেঁড়া লিফ্ট ।

লিফ্টের ছিঁড়ে যাওয়া সেই তারটি এখনো ঝুলছে । ভারহীন । তাতে-ই বাকিদের ভারী বয়ে গেছে ।

15 Jun 2014

'অসভ্য চোখ'-এর রিভিউ 2


সাবাড় করে ফেললাম সায়ন্তনী পূততুন্ডের একশো ছত্রিশ পাতার রহস্যোপন্যাস - 'অসভ্য চোখ' ।  শেষ করার পর আপনা থেকে মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো - 'সাবাশ!!!' 

একটু গুছিয়ে বলি - এই সাবাশাত্মক ঢেঁকুর তোলার আগে সুক্তো-তরকারি-ডাল-মাছ-ডিম-চাটনি-ইত্যাদিকার পদের প্লট ( প্লেট বললে হয়তো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ শোনায় ) আমাকে আদ্যোপান্ত ফালাফালা করে দিয়েছিলো । কিসে আবার ? হেলাফেলা ভাষায় । বাংলাসাহিত্যের আধুনিকতায় এটি অবশ্যই নবতম সংযোজন নয় । এর আগেও অনেকে বাংলাভাষার চিরাচরিত চামড়া কেটে ছিঁড়ে ভিতরের মাংস খুবলে নিয়ে সাদা হাড়গোড় পর্যন্ত দেখিয়ে গেছেন । ঠিক যেন বং কালচার-ভালচারদের ধুতি-শাড়ি খুলে নিয়ে শুধু ওয়ান-টু-পিস পরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কেটেকুটে পুরো ন্যাড়া-ট্যাঁরা করার জন্য বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় । ভাষার এই ট্যাক্স-ফ্রি অত্যাধুনিকতায় লেখক বা লেখিকা যতটা নিটোল , পাঠক-পাঠিকা ততটাই টোল ফেলে । 

আসলে আধুনিক জীবনযাপন যে পাল্টে গেছে, জীবনযাপনের যেসব ‘অনিয়ম’ বা 'নিয়মের ব্যতিক্রম' নজরে পড়ে, সেগুলো আমরা দেখি আর পড়ি কিন্তু বাপ-মায়ের নেড়ে দেওয়া কড়া কলকাঠির চাপে সামাজিক বা নৈতিক স্বীকৃতি দিই না বা দিতে পারি না , উল্টে ব্রাহ্মণধর্মী ভাষায় খালি ছ্যা ছ্যা করি । প্রসঙ্গতঃ মনে পড়ে যায় আমার ছেলেবেলার একটা ঘটনার কথা । ডিনার করছিলাম বাবা-মার সাথে । হঠাৎ মায়ের দিকে নির্বোধের মত প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলাম - "মা, গান্ডুর মানে কি?" শুনে বাবা বেশ গুছিয়ে বিশাল একটি বিষম খেলো , মায়ের চোখদুটো টেনিসবলের সাইজে অ্যাম্প্লিফ্যায়েড্ হলো । সাথে "অ্যাই চোওওপ্ , একদম চুউউপ" । কিছু বুঝে ওঠার আগে ওইপাশের ঘর থেকে হাজির ফাইটিং-দেহি ঠাকুরমা । আমার তখন বুঝতে আর বাকি থাকলো না যে ওই 'গান্ডু' শব্দটি নিষিদ্ধ যা শুধু বাংলা অভিধান কেন, যে সমাজে বা পরিবেশে বড় হই আমরা তার কোথাও লিপিবদ্ধ করার যোগ্য নয় । শুধু বন্ধুদের মধ্যে lip-বদ্ধ । 



যাইহোক, খিস্তির জোয়ারে সাঁতরে পার করে এসেছি স্কুল-কলেজ জীবন । 'অসভ্য চোখ'-এ লেখিকা শুধু ভাষায় ডিসটর্ট করে যান নি, গোটা রহস্যগল্প জুড়ে ন্যারেটিভে অতিবিপ্লবীয়ানা অবলম্বন করে এসেছেন যা কোনো ফ্যান্টাসিভোগী পরিচালক লুফে নিলে আশ্চর্যবোধ করবো না । তবে এখানে লাটুর মত মুখ্যচরিত্র সাধারণ মানবিকপ্রবৃত্তি যেমন - লোভ, ঘৃণা, প্রেম, রিপুর তাড়না, বাঁচার ইচ্ছা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি এমন সবকিছুর দ্বারা তাড়িত দৈনন্দিনতার কুম্ভীপাকে সিদ্ধ হচ্ছি আমরা তোমরা - সেই সবকটাকে চাপিয়ে গেছে একটি আলাদা ধাঁচের স্বতন্ত্র ও লক্ষ্যাভিমুখী চরিত্র হিসেবে । বাঙালির তথাকথিত সমাজে যেখানে নারীর চিন্তা-অনুভূতি-মতামতের গুরুত্ব অনেক ক্ষেত্রে খুবই কম বা নগণ্য, সেখানে লাটুর মত চরিত্র ভিতরের কাঁচা দগদগে ক্ষতস্থান যেন ব্যান্ডেজ-তুলো খুলে খুলে দেখিয়ে যাচ্ছে । এমন একটি নারীচরিত্র যার মা দীর্ঘকালের বেশ্যাবৃত্তি ছেড়ে মস্তানির দলবল নিয়ে জীবনযাপন করছে , যার চোখের সামনে নিজের বাবা খুন হয়ে যাওয়া, যার শারীরিক গঠন নারীমহলের কাছে ঈর্ষনীয় অথচ ম্যাচোগিরি করে সারা পাড়া জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর মত আন্-সেনসেরড্ ও আন্-এডিটেড্ জীবন । সাথে 'পেম' নিয়ে রিয়াল লাইফ গেমের শিকার হতে না হতে অবশেষে বিশুর মত অপেক্ষাকৃত নিষ্প্রভ চরিত্রের সাথে বিয়ের গাঁটছড়া বেঁধে আমাদের সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে । এমন একটার পর একটা মশলাপ্রদ ঘটনা আর কটা গল্পোন্যাসে পড়েছি ঠিক মনে নেই আমার । 

ভাষায় বিলকুল চকমকি আবির্ভাবের মাঝে এটা একমাত্র অনস্বীকার্য যে জীবনের আবর্জনারূপ পোকামাকড়-গু-মুতের মধ্যে থেকে দুই পায়ে ভর করে দাঁড়ানো মানুষ সেই আবর্জনা দিয়েই আক্রমণ করে একে ওকে । তার উপরে আমাদের সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে লেখিকা বলে গেছেন - "ফ্রাস্টুই ফ্রাস্টু চেনে" । ফ্রাস্টু খাওয়ার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাপারটিকে অবলীলাক্রমে উপস্থাপন করেছেন যা আধ নিমিষের মধ্যে আমাদের দলাপাকানো জীবন-কে লিফ্টে চড়িয়ে নিয়ে যায় স্কাই-লাইন বিল্ডিং-এর ছাদে যেখানে পায়চারী করে শুধু ফ্রাস্ট্রেশন । বেমক্কা-ধাক্কার হাক্কা নুডলস্ খেয়ে নিজে ছক্কা হয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো আমরা কেউ কি ভুলতে পারি ? ভুলতে চাই বা ভুলে-ও যাই হয়তো কিন্তু ফের কমন বেদনাদায়ক ফোস্কার মত ফিরে আসে । স্মৃতির উৎকট ভিড় ঠেলেঠুলে । কিন্তু লেখিকার হাত ধরে 'ফ্রাস্টু'-এর এমন ফ্রেশ আর ফ্রায়েড আগমন কি জমে থাকা ফ্রাস্টু ঝেড়ে ফেলার মত ক্ষণিক আনন্দের নাকি ফের ফ্রাস্টু খাওয়ার ভয় ভাগাভাগি করিয়ে নেওয়ার নাকি স্মৃতির সিঁড়ি ভেঙ্গে আছাড় খেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠার - এ বিষয়ে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে এখনও উপনীত হতে পারিনি । শুধু এটুকু বলতে পারি যে তোমাদের ফ্রাস্টু আমার অতিথি আর আমার ফ্রাস্টু তোমাদের এক গ্লাস নুন-চিনি-জলের ঠাণ্ডা শরবৎ । 

কিন্তু রোম্যান্সের রোমিওপনা , কৌতুকের কত্তাগিরি আর খিস্তির খাসখবর নিয়ে লেখিকা যেভাবে রহস্যগল্প দিয়ে অ্যাড্রিনালিনের দোদুল্যমান বন্ধব্যাগ এফোঁড়-ওফোঁড় করেছেন তাতে অভিনবত্বের দাবি রাখতে পারে নি বিন্দুমাত্র । এরকম ঝুড়ি ঝুড়ি নজির রয়েছে বা হলি-বলি-টলিউডীয় লেখা পড়ে নি এমন পাঠক কে বা আছে ?! তাই কিছুটা এন্টারটেনিং হলেও বেশ কয়েকবার হতাশার ধোঁয়ার রিং ছাড়াতে বাধ্য । নেই জীবনদর্পণের ছিটেফোঁটা , মানুষের স্বাধীন চিন্তাভাবনার উপরে সুপ্রভাব ফেলার মত গভীর আর দার্শনিক কথা নেই, আছে শুধু হাসির বুম-বুম-ব্যাং-বিস্ফোরক যার চোটে উড়ে যায় চেনা বর্ণপরিচয়ের চৌবাচ্চা । একজন স্নানরতা যুবতীর বাথরুমের জানালা দিয়ে উঁকি মারা সেই একজোড়া চোখের রহস্য নিয়ে ঘটনা দিব্যি হাসিয়ে কাঁদিয়ে নিয়ে গেছিলো অজস্র ছবির মধ্যে দিয়ে , এই বৈচিত্র্যময় প্লটের উপরে লেখিকার নিয়ন্ত্রণ সত্যি লক্ষণীয় এবং প্রশংসনীয় বটে । প্লাস্ শেষে অসভ্য চোখজোড়া যার তার আসল পরিচয় ফাঁস করে যা কিস্তিমাত করেছেন তাতে নতজানু না হয়ে উপায় নেই । এ যেন চমকের জাস্ট বাপ নয় এক্কেরে সাতপুরুষ । শুধু আশাতীত বললে কম বলা হবে, আশার পূর্বজন্মেও এই 'আশা' ছিলো না । এমন আচমকা অ্যাকশনের প্রতি আমার ঢেঁকুর-সুলভ অমন স্বয়ংক্রিয় রি-অ্যাকশনটুকু ।

10 Jun 2014

'অসভ্য চোখ'-এর রিভিউ


সাবাড় করে ফেললাম একটা গোটা উপন্যাস - 'অসভ্য চোখ' । লেখিকা সায়ন্তনী পূততুন্ড । বইটি শেষ করার পর আপনা থেকে মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো - 'সাবাশ!!!' 

একটু গুছিয়ে বলি - এই সাবাশাত্মক রহস্যোপন্যাসের কভারে চিত্রিত স্নানরতা একটি মেয়ের উন্মুক্ত 'ফসসা' পিঠ দেখে আমার চোখ অসভ্য হওয়ার আগে-ই আমার ডানহাতটি যেন 'অসভ্য' হয়ে এগিয়ে গেছিলো তার দিকে । সেখান থেকে শুরু করে শেষ পাতা অবধি নিজের চোখ একটানা অসভ্যতামি করে যাচ্ছিলো । এমন মাল্টি-ডাইমেনশনাল্ ঝকঝকে প্লটের প্লেট হাতে নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকতে হয়েছিলো এই পাঠককে । সাথে মুখ ফসকে বেরিয়ে আসা সেই স্বয়ংক্রিয় রি-অ্যাকশন । 

রসেবশে রহস্য - কিছুদিন বাদে বাদে বাথরুমের বা বেডরুমের জানালা দিয়ে দেখা একজোড়া 'অসভ্য চোখ' কার যে হতে পারে সেই নিয়ে রহস্য । কিন্তু তা বলে রহস্যের জট পাকিয়ে বা খোলার সাধারণ গল্প নয় । বরং এন্ড-টু-এন্ড একটা ইউনিক পিস যা শেষ অবধি টেনে নিয়ে যায় এবং শেষে এসে রহস্যের জট খুলে গেলেও রীতিমত বিস্ময়ের শক্ খাইয়ে ছাড়ে । সাথে 'পিকুল'-এর গোয়েন্দাগিরি নাকি হারানো-ভালোবাসা-ফিরে-পাওয়ার-ধান্দাগিরি - এ নিয়ে হাসির বুম-বুম-ব্যাং । 

এক্কেরে রসে ডুবিয়ে বশ মানিয়ে নেয় । 

ফ্রেশ ফ্রায়েড ফ্রাস্টু - লেখিকার ভাষায় "ফ্রাস্টুই ফ্রাস্টু চেনে" আধ নিমিষের মধ্যে পাঠকদের দলাপাকানো জীবন-কে লিফ্টে চড়িয়ে স্কাই-লাইন বিল্ডিং-এর ছাদে নিয়ে যায় যেখানে ফ্রাস্ট্রেশন খালি ধোঁয়া ছাড়ে । বেমক্কা-ধাক্কার হাক্কা নুডলস্ খেয়ে নিজে ছক্কা হয়ে যাওয়ার মুহূর্তগুলো আমরা কেউ কি ভুলতে পারি ? ভুলতে চাই বা ভুলে-ও যাই হয়তো কিন্তু ফের কমন বেদনাদায়ক ফোস্কার মত ফিরে আসে । স্মৃতির উৎকট ভিড় ঠেলেঠুলে । আলোচ্য উপন্যাসজুড়ে 'ফ্রাস্টু' এমন ফ্রেশ আর ফ্রাই করে লিখেছেন লেখিকা যে নিজেদের নিংড়ে নিয়ে পড়তে হয় । বার বার । এই নিংড়ে নেওয়াটা কষ্টদায়ক নয়, বরং জমে থাকা 'ফ্রাস্টু' ক্ষণিকের জন্যে ঝেড়ে ফেলার মত অসীম আনন্দদায়ক ।  

তোমাদের ফ্রাস্টু আমাদের অতিথি আর আমাদের ফ্রাস্টু তোমাদের এক গ্লাস নুনচিনির ঠাণ্ডা শরবত ।  

যৌগিক অঙ্কে যৌনতা - যৌনতা বলতে আমরা কেবল চরম উগ্রতা বুঝি ? যৌনতাড়নায় ক্ষিপ্রতা ? নাকি যৌনতৃপ্তির এলোমেলো উস্কানি ? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কথাটি প্রযোজ্য হলেও লেখিকার দৃষ্টিভঙ্গী 'যৌনতা' নামের এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে আরো স্বাভাবিক পরিবেশতুল্য করে পরিবেশন করেছে আমাদের সভ্যাসভ্য চোখের সামনে । এটি একটা জটিলতম অঙ্কের ফর্মুলা থেকে একটা সহজতম এবং সংক্ষিপ্ত অথচ সূক্ষ্মতম রাস্তা বের করা যা শুধু গণিতবিদ নিজে কেন আজকের কিংকর্তব্য-জ্ঞাত গণতন্ত্র-ও সাগ্রহে গ্রহণ করতে এক পায়ে খাড়া । নির্দ্বিধায় । বিনা যুক্তিতে । উপন্যাসটি তার যোগ্যতম অ্যাসেট । 

মেপে মেপে যৌগিক অঙ্কে বাজিমাত করা যৌনতৃপ্তিদায়ক গল্পচিত্রণ লুকিয়ে আছে যা আদ্যোপান্ত পাঠকনির্ভর । 

খিস্তির খাসখবর - আজও খিস্তির বাজার বেশ সরগরম । দৈনন্দিনতার এই বাজারের উপরে গভর্মেন্টের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই । মূলতঃ খিস্তি একটি নিরাকার ক্ষেপণাস্ত্র । মৌখিক হাতিয়ার লক্-লকে জিভের "এক ছোবলেই ছবি" আমি তুমি সব্বাই । এটা সাত-সত্যি যে যেখানে যাও না কেন , সেখানে দুই কান পাতার আগে-ই তা এফোঁড় ওফোঁড় । কি ? কান গরম ? সেটি আছে , তবে লেখিকার এই কলমের জোয়ার বেশ উপভোগ্য এবং সময়োপযোগী । কোথাও ভাঁটা পড়ে নি খিস্তির প্রতি কিস্তিমাতে , পড়ার কথা-ও নয় । 

বৃষ্টির খবর তো আমরা পাই বা না পাই , খিস্তির খাসখবর নিয়ে উপন্যাসটি সহাস্যে হাজির পাঠকদের সামনে । একশো পার্সেন্ট গ্যারান্টি ।

রোম্যান্সের রোমিওপনা - যুগ যুগ ধরে রোম্যান্স বয়ে চলছে । আহা ! অনায়াস । অবাধ । এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি । রোমিও-জুলিয়েট এর মত দু'জোড়া কাপল্ এই গল্পের মুখ্যচরিত্র । 'বিশু' ও 'লাটু' আর 'বাবন' ও 'লাটুর মা' - এদের মধ্যে "পেম" আমার মত রোম্যান্সভোগী পাঠকের কাছে বেশ টাটকা-ফাটকা । শুধু তাই নয় , এদের ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিন্নতা নিয়ে দুই বিপরীতধর্মী মানুষের মধ্যে যেভাবে রোম্যান্সের মোচড় দিয়ে লিখেছেন লেখিকা তাতে হেসেকেঁদে না পড়ে উপায় নেই । প্রেমিকদের রোমিওপনা একেক সময়ে তাক লাগিয়ে দেয় যা কিনা ব্যর্থপ্রেমিক-কাম-পাঠকদের জন্যে নতুন করে আবার প্রেম করার পন্থা নেওয়ার বাজি রাখে । জুলিয়েট-রাও সমানে সমানে টক্কর দিতে ওস্তাদ । অন্ টপ্ অফ্ অল্ দিস্ দেয়ার'স্ আ রিয়াল লাইফ গেম । 

ভাইসব, এই 'পেম'-গেম মিস করলে-ই শেম অন ইউ ! টোটালি !

কৌতুকের কত্তাগিরি - এই ফিল্ডে লেখিকাকে স্যালুট দিতে হবে তার মিডফিল্ডার স্কিলের দৌলতে । গোটা গল্প জুড়ে কৌতুকরস পরিপূর্ণতা পেয়েছে । স্বতঃস্ফূর্ত । দাপুটে । ঝুড়ি ঝুড়ি ফ্রি-কিক । তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত লেখায় কৌতুক যেন বার বার কর্তা সেজে সারাবাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । একহাতে ইংলিশ ভাষায় ইঞ্জিরিপনার ফুলঝুরি , অন্যহাতে শব্দভাষার সুনিয়ন্ত্রিত চয়নকাঠি । কথায় কথায় মারণাস্ত্র হয়ে ওঠা হাস্যবোমা এই উপন্যাসের আসল কাঁচামাল । 

এই টনিক বাড়ির গিন্নিদের মুড অ্যান্টি-ডুম করার জন্যে যথার্থ  চিচিংফাঁক ।

গ্রামীণ সারল্য - আলোচ্য প্লটটি "নবগ্রাম" বলে একটা গ্রাম নিয়ে তৈরী যেখানে চরিত্ররা একেকটা সারল্যের রূপ । গ্রামজুড়ে যে গল্প লিখেছেন লেখিকা সেখানে সরলতার বহুরূপীসত্তা যেন বার বার ফুটে আসছে । অন্ধকার হলে শহরে আলো জ্বলে ওঠে রাস্তাঘাটে ফুটপাথে, এমনকি কয়েকটা বেঁচে থাকা গাছের ডালপালায় । সব-ই কেমন একটা কৃত্রিম-ডিম লাগে । কিন্তু গ্রামের মধ্যে একটা সহজাত অন্ধকারকালীন হার্দ্য লুকিয়ে থাকে, সাথে গা ছমছম করা আমগাছ , ফাঁকামাঠের গরিমা - এগুলোর প্রাণস্পন্দন এই গল্প পড়তে পড়তে অনুভব করা যায় । সাথে চরিত্রদের সারল্য নানার্থে নানা-রঙে নানা-রসে নানাভাবে ঘুরে ফিরে আসে । 

শহুরে পাঠক-পাঠিকাদের কাছে একটি সুখপাঠ্য যা পড়লে গ্রামে-গঞ্জে বেড়ানোর টিকিট কাটা নিশ্চিত । 

সিলিং ফ্যান্-টাসি - যেমন মিস্ট্রি তেমনি ফ্যান্টাসি । পরস্পরের সমানুপাতিক । সুপার-ডুপার ফ্যান্টাসিক । জুতোর হিল রেললাইনে আটকে পড়ে আছে আর ট্রেন দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে, যখন প্রায় গায়ের উপরে ট্রেন ... তারপর ? - এইরকম টুকরোটাকরা অসম্ভবভাবাপন্ন ছবি নির্মাণ করেছেন লেখিকা বেছে বেছে যা পড়তে গিয়ে ফ্যান্টাসির ফাঁদে-ই পড়তে হয় । গল্পশেষে সেই ঘোর নিয়ে চিৎ হয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে চোখ রাখতে বাধ্য হবে । এমনকি যেকোনো ফ্যান্টাসিভোগী পরিচালক মাথার উপরে সিলিং ফ্যান চালিয়ে এই স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসে দেখতে পারেন সিনেমা বানাতে চাইলে । 

বক্স-অফিস হিট বাঁধা !

'বে'-এর ট্যাক্স


টাইট করে বেঁধে দেওয়ামাত্র বেঁকে গেলো, তবু প্রাণে বেঁচে গেলো । শুধু সাইজে হলো বেঁটে ।
'বে' এমনিতে-ই জুড়ে আছে জীবনের আনাচে আর মৃত্যুর কানাচে । চন্দ্রবিন্দুটা তার ট্যাঁকে ঝনাৎ করে পড়া একটি অপ্রতিরোধ্য ট্যাক্স ।

6 Jun 2014

মল


একদিকে প্রচণ্ড বেগে জৈবিক মল বেরিয়ে পড়ার উপক্রম, অন্যদিকে আবেগে কাব্যিক মল দোদুল্যমান ।

ম্যাজিশিয়ানের অবস্থান


তার আসার চেয়ে আমার চলে যাওয়া অনেকবেশি জাদুশক্তি নেয় । সেই জাদুতে কোনো কূটকৌশল নেই, কোন যে মায়াজালে আটকে থাকা ছোটো একটা চেতনঊষা তা উঠতে উঠতে একসময় ভুঁস করে মিলিয়ে যায় ।

সে হবে ম্যাজিকের দর্শক, আমি হব কেবল-ই লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু টিপ হবে ব্যর্থ যা ম্যাজিশিয়ানের সবচেয়ে বড় সাফল্য ।

তবে এখনো চেষ্টা চলছে ম্যাজিশিয়ানের অবস্থান স্থির করার । আসার আগে? চলে যাওয়ার আগে?

আর সেই প্রশ্নটা সাদা পায়রাটির পায়ে বাঁধা । নিরুত্তর কালো বাক্সবন্দী ।

আকাশপাতাল 'আজকাল'


আকাশ সাফ করলে-ই পাতালে ধূলো ঝরে পড়ে । পাতাল ঝেড়ে কেশে ওঠে, এই কাশিরোগের জীবাণু পরবর্তীকালের নোংরা রাজনীতি । ঊর্ধ্বগামী আজ, নিম্নগামী কাল ।

চিরাচরিত এই উভগামী নোংরাত্মক 'আজকাল' ভর করে আকাশপাতাল চলে ।

বহুআগে কিনা আকাশপাতাল ভর করে 'আজকাল' চলত । নাকি সর্বদা-ই নিকুচির চিত্রাঙ্কণ চলে, ভাবে ভাবে?!

আহাম্মকীয় চিন্তাবিদ


বেওকুফ-দের আজীবন সঙ্গত্যাগে একটা কিছু কঠিন শিকলবাঁধা অনুভব করলাম । আরেকবার বেশ সজোরে টানতে-ই একগুচ্ছ পালক লাট খেতে খেতে শেষতম দূরে গিয়ে পড়লো ।

কার সরু ফাঁদে কার মোটা ঠ্যাং পড়বে - এই আহাম্মকীয় চিন্তাবিদ যারা তারা হয়তো সেই হারিয়ে যাওয়া পালকগুলি তুলে দেখবে আর একে অন্যকে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্যে সদ্ব্যবহার করবে ।

তাদের সুবুদ্ধিযুক্ত সুবোধের দীর্ঘায়ু কামনাপারগ আমি । চেষ্টমান শুধু ।