26 Jul 2016

শুভ বৃষ্টিসকাল


শুভ বৃষ্টিসকাল । ছাতা ভিজে যায় বলেই মাথা ভিজে যায় নি । ছাতার তলা দিয়ে বৃষ্টিজলের নির্লজ্জ অবাধলভ্য যাওয়া আসা আছে বলেই গেঞ্জির অনেকটা ভিজে গেছে । হাফ বারমুডার পুরোটা ভিজে গেছে । বাকি উন্মুক্ত পা দুটো জুড়ে লোম ভিজে জড়িয়ে জড়িয়ে পুরো আবস্ট্রাক্ট আর্ট হয়ে গেছে ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । কেউ নিজের ইচ্ছায় জীবনঝাঁপ দেয় বৃষ্টিতে । কেউ সর্দিকাশির ভয়ে নিজের শরীর ও মাথাকে বাঁচিয়ে রাখে যথাসম্ভব । আমি আর শৈলেয়ী দ্বিতীয়দলে । দুজনের হাঁচি একইসাথে একইসময়ে হয় বলে দুটো ছাতা বের করে ছাদে গেছিলাম । একটা রঙীন ছাতা, অন্যটা কালো ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । সকালের আলো বেশ খানিকটা নিভিয়ে পার্থিব অপার্থিব সবকিছুকে ভিজিয়ে দেওয়ার অনুরোধ বা আদেশ কেউ কাউকে দেয় না । হঠাৎ করে হয়ে যায় । নিজেকে ঢেকে রাখতে রাখতে ভিজে যাই আমরা সকলে । ঘরবন্দী যারা, তারাও ভিজে যায় ছবি দেখতে দেখতে । যারা অন্ধ, তারাও ভিজে যায় শব্দ শুনতে শুনতে । যারা অন্ধ আর বধির, তারাও ভিজে যায় অনুভব করতে করতে ।

শুভ বৃষ্টিসকাল । অফিস টাইমে বৃষ্টিসকালের ভিতরে বৃষ্টি থাকে না, সকালও থাকে না । ছুটি আর বৃষ্টিসকালের মধ্যে সম্পর্ক 'ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ড্রাইভ'-এর মতো একধরণের পাগলামি । কত মানুষ এভাবে চাপা পড়ে বা দুর্ঘটনায় মরে যায় কেউ না চাইলেও । এই পাগলসম্পর্কের কোনো প্রেডিকশন থাকে না বলেই আমরা ভিজতে পারি চাইলে, বা না চাইলেও । 

শুভ বৃষ্টিসকাল । এই মুহূর্তে এই ভেজা শহরে কতজন কটা লাইন লিখে ফেলেছে বা লিখে যাচ্ছে এখনো? এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা নামের কোনো নিষ্ঠুরপ্রকৃতি দেখা যায় না । কোনো স্বীকৃতিপত্র দাবী করে না এমন মুহূর্ত । যারা লেখে বা লিখতে ভালোবাসে, তাদের অনেকের হাতে উঠে আসে সকাল, মনে ঢুকে যায় বৃষ্টি, এতকিছুর মধ্যে দু'এক কলম দেখতে দেখতে হয়ে ওঠে একটা সুন্দর বৃষ্টিসকাল ।

18 Jul 2016

যখন ওদের চোখে আমার নার্ভাসনেস্ ধরা পড়বে



যে আমাকে সাহসী বলে পিঠ চাপড়ায়, তাকেই সবথেকে ভয় পাই । একদিন না একদিন আমার সম্মানকে তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলে দেবেই যখন ওদের চোখে আমার নার্ভাসনেস্ ধরা পড়বে ।

ছড়িয়ে দিতো আমার সমস্ত গুপ্তকাহিনী



নদীর ধারে কখনোই দশমিনিটের বেশি বসি নি, তাই আমার অতীত এখনো নদী জানে না । নইলে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতো আমার সমস্ত গুপ্তকাহিনী ।

লাগে শুধু ইশারার পর ইশারা



গাছতলায় যেতে খুব ভালো লাগে কারণ ওখানে আমার মতই আরো অনেকে যায় জীবনের একটামাত্র অক্ষমতার যজ্ঞপালন করতে । এতে আগুন-ঘি লাগে না, লাগে শুধু ইশারার পর ইশারা ।


জনপ্রিয়তার আরেকটা ডাকনাম



জনপ্রিয়তার আরেকটা ডাকনাম হলো ভেজ্ ফ্রায়েড রাইস ও চিলি চিকেনের কম্বিনেশন । পেটে চলে ফাইনাল খেলার টানটান উত্তেজনা ।


আমি কি সত্যিই ভদ্রলোক



সন্দেহ হয় আমি কি সত্যিই ভদ্রলোক ? ভালোমানুষ হওয়ার চেয়ে ভদ্রলোকি চাল দেখানোর ট্রেণ্ড আমার হরমোনে হরমোনে ঢুকে গেছে ।


হুমায়ূন বলতে বুঝি শুধু আহমেদ-কে



হুমায়ূন বলতে বুঝি শুধু আহমেদ-কে । আজও কোথাও যাবার না থাকলে তাঁর কাছে যাই কাউকে আগাম না জানিয়ে । 



11 Jul 2016

স্বপ্নজাল


ঘুমোতে ভালোবাসলেও অপ্রকৃতিস্থ স্বপ্ন দেখার ভয়ে আজকাল ঘুম কম হয় । অনেকে কিন্তু স্বপ্নজাল বুনতে ভালোবাসে জেগে থাকতে থাকতে । তাদের সেইসব জাল আমি দেখতে পাই না । আমার চেনা একজনের স্বপ্নজাল বোনার অভ্যাস রীতিমত নেশাপ্রবণ । তার চোখদুটো আধবোজা থাকে । বাকি খোলাটুকু জায়গাজুড়ে শুধু আকাশ আর সমুদ্রজল । একটা তারা খসে পড়লেই বা একটা ডলফিন লাফিয়ে উঠলেই যাকে পায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । চুমু খাওয়ার সময়ে তার চোখদুটো সম্পূর্ণ খোলা ও নিষ্প্রভ থাকে ।

দশ মাস গায়ের চামড়াটামড়া খুলে থাকি


জানো ? আমি দশ মাস গায়ের চামড়াটামড়া খুলে থাকি । বাকি দু'মাস তোমরা ছুটিতে বা মনে মনে কোথায় যে বেড়াতে চলে যাও । তোমাদের গায়ের চামড়ার সাথে তখন আরো অনেককিছু লেপ্টে থাকে । নিজেদের চামড়ার শিহরণ একবারও ছুঁতে পারো না । আমার চামড়ার দাম বুঝবে কী করে, শুনি ? ছাড়ো এইসব । দেখো, দেখো, আমার চামড়ায় কি সুন্দর পৃথিবী আঁকা হচ্ছে আর তাতে অগুনতি প্রাণ হাসছে । কেউ দয়া করে এই অজানা নতুন শিল্পীকে বিরক্ত করবে না । বরং এডগার অ্যালান পো-এর রোমহর্ষক কাহিনীসব পড়ো । বেশি করে পড়বে । অনেক বেশি করে, তবে চামড়ার গতি হবে । বুঝলে সখা ?

মুখস্থবিদ্যা


বইয়ের প্রথম পাতা কয়েকবার পড়ার পর স্বামী বিবেকানন্দের ছবির দিকে অবাক হয়ে দেখি । আবার পড়ি সেই পাতাটা । একই লেখা । একই বিষয় । একই কথামালা । একই শব্দমালা । আবার চোখ চলে যায় স্বামীজির আত্মবিশ্বাসী চোখদুটিতে । ফের পাতাটায় চোখ বুলিয়ে নিই । কিছুতেই মনে রাখতে পারি না । শেষে মেনে নিতে বাধ্য হই যে গোটা গোটা আস্ত বই নিয়ে মুখস্থবিদ্যা রবিঠাকুরের মাত্র চার লাইনের 'সজ্ঞান আত্মবিসর্জন'-এর সমকক্ষ ।


7 Jul 2016

ব্রেন-ওয়াশ


এ জন্মে ব্রেন ইতিমধ্যে হাজারো শিটস্-এ ভর্তি আছে । 
পুরো ওয়াশ করতে সারা জীবন লেগে যাবে ।

পরজন্ম বলে যদি সত্যি ফত্যি কিছু থাকে,
নিশ্চিন্তে টেররিস্ট্ হবো ।


রবিন শর্মার একটা উক্তি এ জন্মের জন্য রেখে দিলাম - 
'Don't live the same year 75 times and call it a life.'

শুধু ৭২ এর বদলে ৭৫ হলে কী আর মন্দ হবে ?!

4 Jul 2016

অ্যান্টি-ডারউইন সংস্কৃতি


লৌহযুগ বা সিন্ধু সভ্যতার মত একসময়কার প্রভাবশালীত্ব যেমন শেষ হয়ে গেছিলো, তেমন চিরতরে হারিয়ে যাবে ওবামা-যুগ, ইইউ-যুগ, এনএসজি-যুগ থেকে শুরু করে সুব্রহ্মণম-যুগ, কেজরী-যুগ, গান্ধী-যুগ, মোদী-যুগ, মা-মাটি-মানুষের যুগ । একসাথে নয় । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন মত ও বিভিন্ন কারণ নিয়ে, নিজ নিজ জায়গায় বসে থেকে হাজিরা দিয়ে দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে । এইসব যুগের দাপট আমাদের বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অজান্তে একদিন না একদিন থেমে যাবে । তাদের জায়গা দখল করে বসবে নতুন নতুন কি-যে-হবে-জানিনা-যুগ সব ।

এই ক্রমাগত পাল্টে যাওয়ার মাঝ দিয়ে একটিমাত্র ধারা একইভাবে চলছে । একই দিকে, একই লক্ষ্যে, একই মতে, একই কারণে, একই স্টাইলে ছেয়ে যাচ্ছে চারদিকে । স্থানকালপাত্রে একই নয় । এ ধারার নাম সন্ত্রাসবাদ । এই যুগের সারা অভিধান ঘেঁটেঘুঁটে দেখলেও পাওয়া যায় না 'সমাপ্তি' কিম্বা 'বিবর্তন' । 

প্রকৃতির খামখেয়ালি স্বভাব, তাবড় তাবড় শিল্পীর নানা সৃষ্টিদান, আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্সের ওভারস্মার্টনেস, আই.ও.টি. বিপ্লব - সবকিছুই একমাত্র একমুখী সন্ত্রাসবাদের কাছেও যেন বড্ড বেমানান । 

সন্ত্রাসবাদীদের এমন ঠ্যাঁটামি নিয়ে শুধু ভয় কেন, বিস্ময় ও শ্রদ্ধায় ডুবে আছি ।

এদের ঘেন্না করতেও ভুলে গেছি । কেবল মুগ্ধ হয়ে দেখছি এদের সরল প্রবাহধারা । কি সুন্দর এবং সহজ এদের অ্যান্টি-ডারউইন সংস্কৃতি, তাই না ?

গুটিসুটি মেরে আছে অজস্র বুনোহাঁস


সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি বেডরুমে কেউ আলো জ্বালিয়ে রেখে গেছে । দরজা দিয়ে যদি দেখি অন্য রুম বেশ অন্ধকারপ্রায় । উল্টোদিকে জানালার কাঁচে বৃষ্টির সাজানো ছাঁট যদি দেখি । ঘড়িতে সকাল দশটা-কে সন্ধ্যামণির মত যদি দেখায় । তাহলে...

তাহলে ধরে নেবো বর্ষাতি পরে আছে শহরারণ্য । তার ভিতরে গুটিসুটি মেরে আছে অজস্র বুনোহাঁস । তারা এক্ষুণি সাঁতারে ডুব দিতে চায় না ।