29 Nov 2013

Elomelo #11


চশমা খুলি যখন 
আনন্দে ঝাপসা 
দুঃখে ঝাপসা
ঝাপসা দুনিয়া অনুমতি চায় আরো ঝাপসা হওয়ার 

Elomelo #10


লোডশেডিং হলে
তন্নতন্ন করে খুঁজি ছায়া আর নিজের মধ্যে মিল-অমিল

হঠাৎ আবিষ্কার করি ছায়ার চিবুকে গজিয়ে উঠছে ছাগলদাঁড়ি  
অল্প অল্প করে  

28 Nov 2013

Elomelo #9


ঘুমের এই নরম তুলতুলে বুক দুটি আমায় ভীষণ টানে
রোজ রাতে, মনে হয় এক ছুট দি সবকিছু ঠেলে
একজন পূর্ণাঙ্গ নগ্ন নারীও পারে না আমায় টানতে
চিরকুমারীত্ব বহন করে একমাত্র মৃত্যুই

বক্তব্য #1


কাল সকালে অফিসমুখী গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম । সায়েন্স সিটির কাছে ট্রাফিকজ্যামে কুড়িমিনিট যাবৎ আটকে ছিলাম আর অভ্যাসবশত আমার চোখ চলে যায় ডানপাশের রাস্তা যার উপর দিয়ে গাড়িগুলো চলে উল্টোমুখে । হঠাৎ দেখলাম উল্টোমুখী রাস্তাটার ওইধারে একজনকে ঘিরে জনাকয়েক লোক দাঁড়িয়ে আছে আর লোকটি ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করছিল, ঘন ঘন মাথা নাড়ছিল, সাথে হাতদুটি সমান তালে নাড়িয়ে যাচ্ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল লোকটা রীতিমত বেশ অসহায় এবং ব্যক্তিটি একজন যে বধির ওনার এইরূপ আচরণ থেকে আমার অনুমান করতে একমিনিটও লাগে নি । ওনাকে ঘিরে ধরা দুই-তিনজনকে দেখলাম মাঝে মাঝে পেটে হাত রেখে হাসতে হাসতে এর ওর গায়ে পড়ছিল।
ততক্ষণে গ্রীন সিগন্যালে গাড়ি চলতে শুরু করলো আর আমি কি ভেবে গাড়িটা চালিয়ে ক্রসিং অবধি গিয়ে ইউ-টার্ন নিয়ে সেই ঘটনাস্থলে গেলাম।

নিজেকে একজন বধির বলে পরিচয় দিলাম আর ওনাকে গাড়িতে তুলে নিলাম। যা বোঝার সব বুঝে নিলাম ( ঠিক কি হয়েছিল ওইসময়ে সেটা বলার প্রয়োজনবোধ করলাম না এখানে ), ওনাকে বাড়ির কাছে পৌঁছে দিয়ে এলাম। বিদায় জানানোর মুহূর্তে ভদ্রলোকটি যেভাবে অশেষ কৃতজ্ঞতা দেখালেন যে হয়ত আগামী বেশ অনেক বছর আমার মনে একটা বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে।

তবে গোটা ঘটনার নিরিখে কেবল একটা ছোট ঘটনাবিশেষ অন্তত আমার মনে খোঁচা মেরে দেয় - দুর্বোধ্য ভাষায় বলার চেষ্টা বা হাত নেড়ে কথা বলার মধ্যে যে একটা সূক্ষ্ম বিভাজনরেখা থাকে যা আমাদের মত বধিরদের আলাদা করে রাখে। এই marginalize করার ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। শুধু আমার জীবনে হওয়া কিছু বিশেষ ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়।

যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে না/চেনেন না তাদের বলি যে আমি একজন শ্রুতি-প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বধির । জন্মবধির । অতঃএব আমার ৩১ বছরের এই জীবনে বেশ কয়েকবার marginalization এর লক্ষ্যবস্তু হয়ে আসছি সেটা নিশ্চয় আলাদা করে বলার দরকার হবে না কারণ এটাই আজকের দুনিয়াতেও, আজকের যুগেও, আজকের প্রজম্নেও বহাল তবিয়তে চলছে ।

একটা ঘটনা বলি যেখানে আমার আর আমার স্কুলের খুব কাছের বন্ধুর মধ্যে নিম্নলিখিত কথোপকথন ছিল -

বন্ধু - "এই সোম , কি রে ? কি খবর ?" (চোখ নাচিয়ে , ডান হাত উল্টে বার দুয়েক নাড়িয়ে )

আমি - "ভালই আছি রে রাম (নাম পরিবর্তিত ) , তুই ?"

বন্ধু - "বেশ আছি । আচ্ছা কাল তোর ছোটো পিসির সাথে দেখা হলো । .. দাঁড়া হিসি করে আসি , খুব পেয়েছে .." (তর্জনী তুলে আকাশের দিকে উঁচিয়ে 'কাল' বুঝিয়ে পিসি আর হিসি একসাথে এত দ্রুত গতিতে বলে ফেলেছিল , শেষে কড়ে আঙুল তুললো )

আমি (পুরো হতভম্ব হয়ে ) - "কি বললি পিসি হিসি করেছে ?"

বন্ধু (আমার উচ্চারণ এমনিতে অত স্পষ্ট নয়, তাই কি বুঝলো কে জানে) মাথা কোনরকমে উপরে নিচে নাড়িয়ে হন হন করে হেঁটে চলে গেল ।

পাশের একজন বন্ধু আমাদের কথোপকথন সব শুনেছিল কান পেতে আর বাকি কয়েকজনকে ডেকে ঘোষণা করে দিল - 
"সোমের পিসি হিসি করেছে ।" 
ব্যস্ শুরু হয়ে গেল আমাকে নিয়ে চরম পর্যায়ের খিল্লি । পরে রাম ক্লাসে ঢুকে সব শুনে হেসে লুটোপুটি । তখনি ব্যাপারটা মিটমাট করিয়ে নেয় - পুরোটাই নাকি আমার বোঝার সমস্যাজনিত কেলেঙ্কারি সেটা বলে ।
প্রসঙ্গত ওই বন্ধুকে কোনো দোষ দেওয়া যায় না কারণ পেচ্ছাপ পেলে লোকে চারপাশের জগত বইয়ের মত উল্টে চাপা দেয় নিজেরটাকে ক্ষনিকের জন্যে উন্মুক্ত করে । এমনকি পার্কে বসে প্রেম করতে করতে একবার চমৎকার হিসি পেলে তো লোকে আর প্রেমের প-এর র-ফলা খুঁজে পায় না যা অতি জাগতিক । আর বাকি যারা খিল্লি করেছিল তাদের তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই , বসে বসে হাতের নখ খুঁটছিল , খাতায় আঁকিবুঁকি আঁকছিল । ভালো কিছু সিনেমা বা অ্যাকশন-থ্রিলার সিন না দেখলে ওদের সারাটা দিন যেন মাটি । যে কান পেতে সব শুনেছিল তার সবাইকে খোঁচা মারার মারার বদঅভ্যাস ছিল এখন জানি না বদলে গেছে কিনা ।

গোটা ব্যাপারটার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে পারি যে আমরা মানুষ যতদিন না রেললাইন থেকে ট্রেন সরে যাওয়ার মত বা রাস্তায় চলা একটা মেয়ের শাড়ির আঁচল হঠাৎ বুক থেকে নেমে যাওয়ার মত আচমকা ঘটনা দেখছি বা খবর শুনছি ততদিন আমরা নিজেদের খোলের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকি, আর যে মুহূর্তে অমুক ঘটবে সেই মুহূর্তে নিছক "শরীর আর মন চর্চা" করার জন্যে লেগে পড়ি । উপরন্তু লক্ষ্যবস্তু যদি প্রতি ২০-৫০ জনের থেকে সামান্য ( এমনকি অতি সামান্য ) আলাদা হয় তাহলে কে আর আটকাবে । এই "শরীর আর মন" চর্চার আরেক নাম marginalization যার মধ্যে কোনো sick-mindedness নেই , আছে শুধু সাময়িক আগুনের ফুলকি । এই মাপকাঠিতে বন্ধুত্বের কোনো সংজ্ঞা হয় না কারণ চর্চা থামলেই সবকিছু আবার আগের মত ।

কিন্তু বন্ধুমহলের বাইরে অচেনামহলে একই ঘটনা ঘটলে marginalization এর হৃদয়হীনতার দরজা খুলে যায় এবং নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা এবং শারীরিক নির্যাতন - একের পর এক প্রবিষ্ট হয় ।

এই ক্ষেত্রে আমরা অনেকসময় ভাবি বা প্রশ্ন করি - এই marginalization এর নির্লজ্জ দিক থামাতে পারি কি ? 
তার আগে একটা ব্যাপার বলে রাখি সেটা হল আমরা নিজেরা যেমন marginalization এর শিকার হই, তেমন মেতে উঠি অন্য কারোর হলে । সুতরাং এইরকম দুমুখো হয়ে আমরা যদি marginalization এর মুণ্ডুপাত করতে যাই সেটা আগাগোড়া বৃথা যাবে, আবার একটা মুণ্ডু কাটা পড়লেও নতুন আরেকটা মুণ্ডু গজিয়ে উঠবে, সেটা বলাই বাহুল্য । এটা চিরকাল চলবে । এমন কি আমরা কেউ marginalization-শূন্য দুনিয়া কল্পনা করি না , দুঃস্বপ্নেও না । কারণ marginalization একধরনের ছোয়াঁচে যা একতরফা কখনও হয় না । ঠিক একপ্রকার দেওয়া-নেওয়া । আমি করলে/হলে সেও করবে/হবে ।

আর হৃদয়হীনতার যে কথাটা আসছে সেটা marginalization এর অন্তিম পর্যায় । মাস দুয়েক আগে তো আমরা সবাই খবর পেলাম জনৈক ভদ্রলোক হুইলচেয়ারে বসে শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করতে গিয়েই নিজে শিকার হলেন । কি লাভ হল ? তাই আমার অন্তত মনে হয় নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা না করে চুপচাপ মুখ  বুজে মেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ । শিকার হতে হতে শিকার করতে যাওয়ার একটা স্বাভাবিক রীতি চালু হয়ে আছে আমাদের সবার মধ্যে, এর কোনো হেরফের হবে না । এবং এটা বন্ধুদের মধ্যে করা/হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ । 

27 Nov 2013

Elomelo #8


পৃথিবী পুড়ে যায় তিন চুমুক খেলে
দু'চুমুকে নেমে আসে শোকের ছায়া

জীবন, তুমি কি হবে আমার এক চুমুকের মুহূর্ত ?

Elomelo #7


এক ঝাঁকুনিতে
ছিটকে বেরিয়ে যায় সব অর্থ
আঁকড়ে ধরে থাকে
শুধু ব্যর্থ

25 Nov 2013

|| কিরকম ব্যবহার ? || - তারাপদ রায়



একজন কবির কাছে আরেকজন কবি
কিরকম ব্যবহার আশা করে ?
কিরকম ব্যবহার ?
সকলের ইতিহাসবোধ নেই , ঘরে ঘরে আলেকজান্ডার
খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
কিন্তু ঘরে ঘরে শুধু কবি ,
একজন কবির সঙ্গে আরেকজন কবির
কম বেশি দু-এক ফুটের ব্যবধান ,
একটা বাড়ির মধ্যে ,
একটা গাড়ির মধ্যে ,
একটা টেবিল ঘিরে ,
একটা মাইক জুড়ে ,
দলে দলে কবি ,
যেরকম পঙ্গপাল , দেয়ালির অন্ধ শ্যামাপোকা।
তবুও কবির কাছে কবি
একজন নিরীহ কবির কাছে
একজন মারকুটে কবি ,
একজন বকবক কবির কাছে
একজন দুপচাপ কবি
একজন মাতাল কবির কাছে
একজন গঙ্গাজল কবি
কিরকম ব্যবহার আশা করে ,
কিরকম ব্যবহার , আলেকজান্ডার ?

Elomelo #6


সময় পেরিয়ে গেছে
বোকা প্রেমের সঠিক ব্যকরণ খোঁজার

আধবিন্দু রক্তে "উঁ"-এর রাজত্ব
"আহ্" নামের প্রেমব্যঞ্জক শব্দের জয়জয়কার

Elomelo #5


বন্ধজানালার ভুলফাঁকে চোখ
শহীদ হয়ে যায় সমস্ত লজ্জা পরের পর
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুতো

সম্পূর্ণতার আত্মসমর্পণ কেবল সেই অসাবধানী ছূঁচের আগায়

22 Nov 2013

Elomelo #4


পাকাচুলে উপচে পড়া আয়না
আড়াল থেকে উঁকি মারে বহু পরিচিত সূর্য
প্রতি দেড়মিনিটে 
আচমকা ভেঙে চুরমার বাঁকাহাসির বেআইনী ঝিলিকে

21 Nov 2013

Elomelo #3


সমুদ্রের গন্ধ শুঁকি
রূপ দেখি প্রকৃতির
পাই নারীর রহস্যময় স্পর্শ
সর্বভূক আমার উপাধি

পেয়েছি নিঃশব্দের অধিকার শুধু

19 Nov 2013

Elomelo #2

দু'ঠোঁট চেপে বসে আছে অনেকগুলো কথা
খুনী জিভ
সামনে গভীর খাদ

একবার ঠ্যালা মারলেই অভিধানের লজ্জা

3 Nov 2013

Elomelo #1


আমাকে তুবড়ির উপরে বসিয়ে দাও বা রকেটের সাথে বেঁধে দাও , আর পারছি না