27 Nov 2014

কত-কি-শালা


'শালা' শব্দটির দুটি ব্যবহারিক দিক আছে - একটা হল আভিধানিক অর্থানুসারে যেকোনো একটা বিল্ডিং বা হাউসিং-কে বোঝাই । যেমন - আয়ুধশালা, ওষধিশালা, কুম্ভশালা, গোশালা, অশ্বশালা, দোহশালা, পক্ষিশালা, বন্দিশালা, রন্ধনশালা, কামারশালা আর কত-কি-শালা ।

দুর্গন্ধময় রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশে আপামর জনসাধারণ তথা অতিথিসেবার জন্যেও বর্তমান অতিথিশালা । শিক্ষার আলো পৌছে দেওয়ার জন্যে রয়েছে গ্রামীণ পাঠশালা । বিনোদনধর্মী আনুষ্ঠানিক শিল্পসংস্কৃতির নামে রয়েছে রঙ্গশালা । সাধারণ মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমৃদ্ধির উদ্দেশে সদাখোলা ঐতিহাসিক প্রদর্শ-শালা । 

অন্যদিকে বিশেষ গালি হিসেবে আলোচ্য শব্দটির বিলকুল মৌখিক ব্যবহার । শুধু একজনকে হাজার হাজার জনসমক্ষে বলতে কোনোদিন শোনে নি এরাজ্য । সেই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই সেটা বলা বাহুল্য, কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে - এই প্রশাসক নিজের মান বাঁচাতে যেহেতু রাজ্যের যত্তসব ভোল পাল্টাতে পিছপা নয়, সেহেতু এবারেও উইথড্র না করে আভিধানিক "যুক্তি" দিতে পারে নি কেন ?
"ওই শালাটার উপসর্গ (Prefix) কি যেন ছিল, কিছুতে মনে পড়ছে না !"

পাঠকপূজা


আজকাল বিখ্যাত পাঠক হওয়ার স্বপ্ন দেখি ।

শুধু পাঠক হয়ে বড় নাম করতে চাই । ইতিহাসে আমার নাম জ্বলবে পাঠক হিসেবে । তাবড় তাবড় কবি লেখক সবাই ঘাড় উঁচু করে আমার নাম স্মরণ করে পাঠকপূজা করবে এমন স্বপ্ন আজও দেখি ।

26 Nov 2014

খামবন্ধ কমলালেবু


ফের কমলালেবু । ক্ষেত ছেড়ে আঁতে চড়ে বসেছে । ক্রেতার লম্বা লাইন ফাঁকি দিয়ে কবিতার এ-লাইনে ও-লাইনে নেমে পড়েছে । সারি না বেঁধে এদিক ওদিক করে । কেউ পিরামিডের মুডে নেই । সাথে একটু শীত-শীত মিশিয়ে । টক না মিষ্টি - মুখে না দিলেও বোঝা যায় । পুরনো অথচ বিখ্যাত গানের মত একটা চেনা-চেনা স্বাদ । যতবার কবিতা থেকে মাথা তুলি, ততবার বাকি সবার কাছে একটা করে খাম আসে । সব খামের মুখবন্ধের কাছে কমলার আঠালো দাগ । যখন খাম খোলে, তখন আমি একা চারতলার সিঁড়িতে পচাগন্ধ পাই । গন্ধের এমন পচামো আমার ভাগ্যে জোটে । সৌভাগ্যও বটে । বেলায় স্নান সেরে বসে থাকি ছাদের খোলা দরজার মুখে সিঁড়ির শেষ দুই ধাপে । বসার ধরণ কিছুটা 'দ'-এর মত । পিঠ ছেড়ে ছায়াটা আরো লম্বা হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে । কমলালেবুর দুর্মূল্য একটা সংকলন করতে । শুধু হাতে ধরা কমলালেবুটা ছায়ার মধ্যে ঠাণ্ডা হতে ঠাণ্ডাতর হয়ে যায় । এর একটাও কবিতা নেই বলে ?

একটু উঁচিয়ে ধরি । দুই তালু রোদ্দুরের কোলে খানিকটা উজ্জ্বল । গোল টিপ । কমলার টিপ কিনা সেটা জানার ইচ্ছা নেই । তেমন ইচ্ছাও নেই কমলা রঙে ডুব দেওয়ার । খোসা ছাড়ানো শুরু করি । যেভাবে প্রথমে সেফটি পিন খুলে দিতে হয় । ছাড়াতে গিয়ে দেখি সে খিল খিল করে হাসছে । হাসিটা কিন্তু চমৎকার । আমি তার দিকে তাকাই । সে যদি হয় কমলা, আমি তবে হই ক্যাবলা । ক্যাবলাপ্রিয় হাসিটা মাঝে মাঝে থামে । জানতে চায় খুলছি কেন । ক্যাবলার কোনো উত্তর হয় না । বেরিয়ে আসে পরনের কমলাভ সাদা ব্লাউজ । সুতো সব কেউ যেন আগে থেকে ফালাফালা করে রেখেছে । আমার পিঠের গরমভাব খানিকটা কেটে যায় । আবার হাসে সে । আমিও মাথা অল্প নাড়ি মুচকি হেসে । ততক্ষণে অর্ধেক খালি কিম্বা অর্ধেক পূর্ণ । হাসি একটু থামে এবার । সংকোচবোধ করে । মাঝে একবার হেঁচকি তোলে সে । হাল্কা রোদ্দুর ভিজে আরো কোমল হয় । কমলাও কোমলা হয় । খোসাছাড়াপর্ব চলে । কবিতা ভুলে ছায়াটা গুটিসুটি মেরে উঠে আসতে থাকে এক-দু'ধাপ করে । ছায়ারও লোভ হয় বুঝি ? ততক্ষণে বেরিয়ে আসে শায়া । সেটাও ছেঁড়া-ছেঁড়া । কমলাভ সাদা । মাঝের পেট বরাবর আঙুল বুলিয়ে দেখি কিছুক্ষণ । শেষ বিকেলের নিস্তেজ সূর্য । আমি ঘোরাই, সে ঘোরে । আলতো করে চেপে ধরি । সাথে সাথে দুটি খুলে যায় । ঠাণ্ডা বাতাস একবার সিঁড়িতে গড়াগড়ি খেয়ে ফিরে যায় । কমলায় ক্যাবলায় কাঁপন ধরে ।

হপ্তাখানেক আগে । নিচের ফ্ল্যাটের ধীমানকাকু বলেছিলো ভালো কমলালেবু পাওয়া যায় না আজকাল । সেই কাকুর মেয়ে পিঙ্কি এসেছে । আমার থেকে বছর তিনেকের বড় । আমার ঠোঁটে বিন্দু বিন্দু কমলা তার চোখ এড়ায় নি । তার একটা বাজে স্বভাব আছে । প্রশ্ন করা । তার বাবার কথাটির রেশ টেনে সে শুধায় - "কমলালেবু পেলি নাকি ?", আমি উত্তরে কিছু না বলে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিই শুধু । পিঙ্কিদিদির চোখ দুটো গোল গোল হয় । চোখের মণিতে পাখির বাচ্চা । কমলাহীন ঠোঁটদুটি তার । গলা শুকিয়ে গেছে তার বোধ হয় । জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট একবার চেটে নিলো । আরেকবার দেখলো আমার ঠোঁট । ঠোঁটের মধ্যে কমলালেবু খুঁজছে সে । মনে মনে হাসছি । প্রকাশ্যে নির্বোধ হয়ে দিদিকে দেখছি । তার মত চোখ দুটো গোল গোল করে । এমন দাপুটে দিদির সারা গা থেকে বেচারাভাব ফুটে বেরোচ্ছে । ঠিক যেমন কমলালেবু হয় । ওকে নিয়ে যাই ছাদের সিঁড়ির কাছে । সাদারঙের ডাবল ইউ-শেপড্ বাল্ব জ্বালাই । সিঁড়িতে তখনো কমলার ছাপ । মুছতে পারতাম, কিন্তু মুছি নি । কমলার গন্ধ উঠে যাবে তাই । কেননা সেই পচাগন্ধ আমার খুব প্রিয় । উষ্ণতা তবে আর নেই । পরের ছুটির অপেক্ষায় থাকে । দিদি ধমক দিলো, "একা খেয়ে ফেললি ? আমাকে ডাকলি না কেন ?"

আমি কিছু জবাব দিই নি সেদিন । ভালো কমলা পাওয়া যায় না আজকাল । খামবন্ধ কমলালেবু কে চায় ? অন্য বই খুঁজি । 

24 Nov 2014

ঘুম আর স্নানের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক


নর আর নারীর মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক
গরম বাড়লে ক্ষীণতর হতে থাকে
ঠাণ্ডা বাড়লে গভীরতর হতে থাকে ।


ঘুম আর স্নানের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক
গরম বাড়লে গভীরতর হতে থাকে
ঠাণ্ডা বাড়লে ক্ষীণতর হতে থাকে ।

মোটা বিশ্বাস


বিশ্বাস-টা মুটিয়ে যেতে থাকে । দিনের পর দিন । অবশেষে এমন ওজন দাঁড়িয়েছে যে কাউকে এর ভার বহন করার দায়িত্ব দেওয়া অসম্ভব । 

একদিক থেকে ভালোই হয়েছে কারণ নাদুসনুদুস চেহারার মোটা বিশ্বাসটা এমন ভঙ্গুর যেকোনো কেউ হাত থেকে একবার ফেলে দিলেই চুরমার । বহুকাল ধরে জমিয়ে রাখা কোটি টাকার সমান এমন একটা সম্পদহারা হতে চাই না । 

এদিকে নিজের উপরেও চাপিয়ে নেওয়া প্রায় দুঃসহ লাগছে আজকাল । কতখানি জোর আছে আমার ? আমার পক্ষে কতদূর টানা সম্ভব এমন ভারী জিনিসটা ? টানতে টানতে নিজে অনেককিছু ভুলভাল কাজ করে ফেলতে পারি । অবস্থাটা তুঙ্গে গেলে একদিন লজ্জায় জিভ কেটে বিশ্বাসটা আমাকে না জানিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যেতেও পারে । 

আমার এই মোটা ভারী বিশ্বাসটা হেঁটে চলে যাচ্ছে একা একা । মাথা হেঁট করে । ভিড় রাস্তায় সবার সাথে ধাক্কা খেতে খেতে, এর ওর গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে । বিশ্বাসের এরকম ভয়ঙ্কর মাতালদৃশ্য কল্পনা করলে খুব খারাপ লাগে । চিন্তা হয় খুব । ওকে এভাবে হাতছাড়া করতে চাই না ।
এখন বিশ্বাসটার ডায়েটিং খুব দরকার । তাকে অন্ততঃ আত্মবিনাশের সাথে যুদ্ধে নামার উপযুক্ত করে তুলতে হবে । তবে না আমার হয়ে যুদ্ধ করতে পারবে । তার যুদ্ধরত অবস্থায় আমি নিশ্চিন্তমনে আমার রুটিনমাফিক কাজ চালাতে পারবো । সাথে অফুরান ল্যাদ ।

দেখা যাক ! একি ? বিশ্বাসটা কোথায় গেলো যে ? হারিয়ে ফেলিয়েছি নাকি ?

21 Nov 2014

উঠে দেখি সে অনেক আগে উঠে পড়েছে


উঠে দেখি সে অনেক আগে উঠে পড়েছে
রোজ এরকম হয়, একইসময়ে । শুধু আজ
সে ওঠে নি ।


উঠবে কিনা জানতে চাইবো ওর কাছে
নাকি নিজের ওঠাকে
সেলিব্রেট করবো চুপিসারে ?


কিভাবে করবো ?
এখানে শুধু আমি একা আর ওকেও চিনি না
তেমন, ওর না উঠে পড়া আরো অচেনা ঠেকে
আলাপ করি নি, তাই আজ বুঝি
এলো সেই সুযোগটা ? 

ওর না-ওঠার জন্যে ?

একমাত্র ওর রোজ একইসময়ে উঠে পড়া
অনেক দাম রাখে, লাখ টাকা দামের একটা সুন্দর ঘড়ির চেয়েও ।
কিন্তু আজ ? 


ঘড়ি দেখি নিজের হাতের কব্জিতে । আর বুঝলাম
কাঁটাটা কেন এমন স্থির হয়ে বিঁধে-ই রয়ে গেছে ।


তুলবো কি এবার ?

20 Nov 2014

একা একা ঘুরছে ঘুমারী


এতো এতো আলো খেলছে একসাথে
চোখের পাতায় দোলনা পেয়ে চেপে বসে
দোলে আর দোলায় ।

মণিদুটো শান্তস্বভাব প্রকৃতির,
একটু দূরে গিয়ে অন্ধকারের বেঞ্চিতে বসতে চাইছে ।

পার্কে একা একা ঘুরছে ঘুমারী ।
মণিদুটো ব্যস্ত হয়ে পড়ে, কিন্তু 
সময় হয়নি এখনো ।

19 Nov 2014

তাতেও হচ্'ছে না, স্যার্ ।


ছোট ছিলাম তখন । ইন্টারনেট যুগ আসতে বছর কয়েক বাকি । বাবার কাছে পড়ছিলাম । কিন্তু পড়ায় বিশেষ মন ছিলো না আমার । বার বার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যেত বিগ বি স্টারার মুভিটা শুরু হতে আর কতক্ষণ । বাবা ধমক দিতো । মায়ের কাছে বলতো,

"ছেলে একদম পড়'ছে না..."

প্রায় দু'দশক পেরিয়ে আজ । আমার ছেলে আমার কাছে পড়ছিলো । নেকস্ট নাম্বার, বিটউইন নাম্বারস্ । পেনসিল ধরে যখন টেনে টেনে নাম্বার বসাতে যায়, সেই ফাঁকে হাতে ধরা মোবাইলের স্ক্রিনে আমার চোখ চলে যায় । এরকম বার বার হতে দেখে ছেলে গুম মেরে বসে । আমার বৌকে বলে,

"বাবা একদম পড়াচ্'ছে না..."

স্যার্ ! যুগ পাল্টায় । সময় পাল্টায় । শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টায় । 'পড়া'কে তখনকার মত 'নো' জানিয়ে দিলেও আজকাল সেই 'পড়ানো'র দায় পড়েছে আমার উপরে । 

তাতেও হচ্'ছে না, স্যার্ ।

কমপ্লিট্ ফ্রাস্টুলেস্


কমপ্লিট্ ফ্রাস্টুলেস্ বলে
কেউ নেই এই সুন্দর ভুবনে,
কেউ বা থাকলে
সে এখনো হামাগুড়ি দিচ্ছে নিজ জীবনে

17 Nov 2014

'মেঘ না চাইতে জল'


প্রাত্যাহিক রুটিনে এমন কিছু কিছু জিনিস ঘটিয়া থাকে যাহা 'মেঘ না চাইতে জল'-এর ন্যায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নহে ।

যেমন, কার্যালয় সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক শৌচাগারে শান্তশিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী মূত্র ত্যাগকালীন অটোফ্লাশার অকস্মাৎ তাহার ক্রিয়াসম্পাদন শুরু করিল ফোয়ারার বেগে, এমতাবস্থায় কতখানি অস্বস্তিতে পড়িয়া থাকিতে হয় ইহা বর্ণনাতীত ।

তার কোনো পিঠ নেই যার মন একটা ঠিকানাহীন


যাবতীয় কয়েনের দু'পিঠ থাকে । তবুও আমরা টস্ করি - মাথা নাড়া বন্ধ করবে না ল্যাজ নাড়া বন্ধ করবে - এই অপেক্ষায় ।

সুমনকে সেই কয়েনের কু-পিঠের সাথে ঠেকিয়ে টস্ করে ফেলে দিলো তসলিমা । কয়েনটা মাটিতে ঠকাস করে পড়ে গড়াতে থাকে, গড়াতে থাকে, গড়াতে থাকে ।

তার কোনো পিঠ নেই যার মন একটা ঠিকানাহীন ।

বুকখোলা জামায়


জামাটা হয়তো পারে নি
রবার-পেন্সিলের নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে ।
বুক অনেকখানি যত্ন পেয়েছে ।


তার জামাখোলা বুক দেখে যতটা ভালো লাগছে,
বুকখোলা জামায় তাকে দেখতে ততটা ভালো লাগছে না ।

বন্ধু-কিন্তু ভাব


বন্ধু-বন্ধু ভাবসম্পর্ক বেশিদিন টেকে না । কিন্তু-কিন্তু ভাবসম্পর্ক চিরকাল চলে । দুইরকম ভাবের মুখগুলো ঘুরেফিরে আসে । সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারের লাইনে একটা মুখ হঠাৎ চেনা মনে হলে বা রাস্তার জ্যামে আটকে পড়ে থাকা ঠিক পাশের গাড়িতে বসা বহুকাল আগেকার চেনা মুখের সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হলে কোন ভাবটা আগে জেগে উঠবে সেটা বলা মুশকিল, যদিও সম্পর্কটা যে একধরণের বন্ধু-কিন্তু হয়ে একপা এগিয়ে তিনপা পিছিয়ে যাবে সেটা হয়তো সবাই জানে । তবে একপায়ের বন্ধু তিনপায়ের কিন্তুর চেয়েও দুর্বলমনের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক সেটা বোধ হয় অনেকে বুঝতে চায় না ।

দুদিন আগে এক সন্ধ্যায় হঠাৎ এরকম একজনকে দেখলাম । জাগতিক চোখাচোখি যাকে বলে । "একজন" শব্দটা আমার কাছে শুধু একজনের সংজ্ঞার্থ যার ব্যাখ্যা "চেনামুখ" দিয়ে করা যায় অনায়াসে । "বন্ধু" শব্দটা তাকে দেখে একবারও উচ্চারিত হতে পারে নি আমার চেতনায় অবচেতনায়, একবারও পুনর্লিখিত হতে পারে নি আমার বিবেকে আবেগে, একবারও পরিবাহিত হতে পারে নি আমার অস্থিকোষে প্রকোষ্ঠে । সেও সম্ভবতঃ আমাকে চিনতে পেরেছিলো আর আমিও তার জ্ঞানে বিজ্ঞাপনে "বন্ধু"র বদলে "একজন" হয়ে ছিলুম চেনামুখের সাঁটা পুরোনো স্টিকার নিয়ে । এসময় চারপাশেরটা ভীষণ অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরী করে যেখানে দুটো "একজন" তফাতে থেকে আকর্ষণে বিকর্ষণে আটকে যায় । সাথে চেনামুখের স্টিকারটা ধ্রুবকের মত কাজ করে । আশ্চর্যভাবে ট্রিক করে "একজন"-দুটির মাঝে ব্যালান্স রেখে ।

তার মুখ দেখে আমার স্মৃতিপুকুরে ভেসে ওঠা মরামাছের মত লাগছিলো । ভদ্রতার ছিপটা তুলে সেই পুকুরে ফেলা দূরের কথা, সৌজন্যতার খাবারের টুকরো ছিপের মুখে গেঁথেও দিই নি । শুধু মরামাছটা বারে বারে উঠে এসে ভাসছিলো আমাকে তার নীরব দর্শক বানিয়ে । যেন ষাটের দশকের কয়েক সেকেণ্ডের ক্লিপের ঝলকানি । আমি একটু ম্লান হাসি দিলাম নিজের অজান্তে । নিজের ভুলে । নিজের অসতর্কতাবশত ।

এ হাসিটা বোধ হয় পুরোনো ধুলোবালিমাখা একটা পাপের ইনোসেন্ট ক্ষমাপ্রার্থনাটুকু ছিলো । তবুও একপায়ের বন্ধু-সুলভ হাসি থেকে আলাদা করা যায় না । হাসির সূক্ষ্মতম তফাৎটা ধরতে পারাটা বোধ হয় এ মুহূর্তের একটা বড় গেম । 

আমি এতটা অনভিজ্ঞ নই বলে তার তিনপায়ের কিন্তুটা আশাই করেছিলাম । এবং হয়েছিলো তাই । তাও সবকিছুই অসহনীয় লাগতে শুরু করলো । বন্ধু-বন্ধু, কিন্তু-কিন্তু আর বন্ধু-কিন্তু মিলে একটা অসম্ভব অচালনীয় অজাতশত্রু হয়ে আমাকে কয়েকশো পা হেঁটে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করছিলো । এরকম "একজন"কে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটা আমার মত "একজন"-এর পক্ষে কতটা দুঃসাধ্য ছিলো সেটা হয়তো এখনো খোঁচা মারে আমাকে । যদিও পেরেছিলুম কারণ আমি চেনামুখের স্টিকারটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলুম । ধ্রুবকটার ভারসাম্য সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন করার তাগিদে ।

যেতে পারবো বলেই 'কিন্তু কেন যাবো' বলাটা সাজে না


কবি হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
সন্ন্যাসী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বোকা হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বুদ্ধিজীবী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
সৎ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বদ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
নাস্তিক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
মুসলিম হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
খুনী হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
হিরো হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
বড়লোক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
ভিখারি হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
গম্ভীর হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
ছেলেমানুষ হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
শামুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?
কামুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ? 


এককথায়
অমুক-তমুক হতে পারি, কিন্তু কেন হবো ?


তবে জন্ম যেহেতু একবারে হয়েছে, সেহেতু শেষপর্যন্ত ঠিকঠাক পরলোকে যেতে পারবো বলেই 'কিন্তু কেন যাবো' বলাটা সাজে না এই শক্তিহীন অধমের ।

13 Nov 2014

তোমার অবহেলা কতটা পুরোনো


এখন বুঝি ।
তোমার অবহেলা কতটা পুরোনো হয়ে গেছে ।
বোধ হয় আমার ঘরে রাখা বহুপুরোনো ডায়েরীটার চেয়েও অনেকবেশি পুরোনো ।

মোবাইল ছুঁড়ে ফেলা


মোবাইল ছুঁড়ে ফেলা আর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলার মধ্যে কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই । 

আজ অবধি ছুঁড়ি নি কিন্তু ছুঁড়তে গেলে নিজের হাত একটু তুলতে হয়, তারপর কাঁধ থেকে ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার বদলে হাতটা নিজের মনসুদ্ধু গোটাশরীরটাকে উপড়ে ফেলে দেয় সেটা আঁচ করতে আর কতটুকু ।

11 Nov 2014

আমরা পরিবর্তিত, সরকার অপরিবর্তিত


আমরা মানুষ ।
কেউ নিজেদের পাল্টাই না ।
পাল্টাই না ইচ্ছা করে ।
পাল্টাই না অন্যদের পরামর্শ নিয়ে ।
পাল্টাই না নিজেদের অস্থিমজ্জা থেকে শুরু করে রক্তমাংসচামড়া ।
অন্ততঃ পাল্টাই না নিজেদের পরিবর্তনকে ।
এই মানবিক পরিবর্তনটা নিজে থেকে পাল্টা জবাব দেয় সমাজের মুখে ।
পাল্টা ব্যবস্থা নেয় টাকার হিসেবনিকেশ বুঝে । পাল্টা হামলা করে আচারব্যবহারের বিরূদ্ধে ।
পাল্টা প্রশ্ন করে শিল্পসংস্কৃতির হাল নিয়ে ।
পাল্টা অভিযোগ আনে স্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকতাকে অস্বাভাবিক মনে করে ।
পাল্টার নামে এই পাল্টে যাওয়াটা আসলে একটা বিরাট পরিবর্তন যা আমরা উল্টে দিতে পারি না ।
অথচ উল্টোপাল্টা কিছু করি না ।
তাই নিজেদের না পাল্টালেও আমরা সকলেই পরিবর্তিত ।

এই সরকার নিজেকে পাল্টায় ।
পাল্টায় জোর করে ।
পাল্টায় অন্যদের রাস্তায় নেমে ।
পাল্টায় নিজের মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে কসমেটিক মেকআপ কিট ।
অন্ততঃ পাল্টায় নিজের পরিবর্তনকে ।
এই সরকারী পরিবর্তনটা নিজে থেকে পাল্টা জবাব দিতে পারে না সমাজব্যবস্থার নামে ।
পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে না বিশ্ব অর্থনীতির রোডম্যাপ দেখে ।
পাল্টা হামলা করতে পারে না উগ্র ধর্মপ্রাণদের ।
পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে না শিল্পসংস্কৃতির অপসংস্কৃতির কারণসহ ।
পাল্টা আইন তৈরী করতে পারে না অস্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে বা স্বাভাবিকতাকে অস্বাভাবিক তকমা করে ।
পাল্টার নামে এই পাল্টে দিতে না পারা আসলে একটা বিরাট পরিবর্তন যা সরকার নিজে উল্টে দিতে পারে বার বার ।
তাই সবকিছুই উল্টোপাল্টা করে দেয় ।
অথচ নিজেকে পাল্টালেও সরকার আসলেই রয়ে যায় অপরিবর্তিত । 

10 Nov 2014

স্বপ্ন বড্ড বেশি তেলতেলে


বহুকাল আগেকার পুরোনো কিছু স্বপ্ন দেখতে চাই, কেননা এখনকার সব স্বপ্ন বড্ড বেশি তেলতেলে ।

সব দুঃসাহসকে সৎ সাহস বলা যায় না


সব দুঃসাহসকে সৎ সাহস বলা যায় না, কিছু কিছু সৎসাহসী দুঃসাহস-ও দেখাতে পারে ঠিক জায়গায় ।

কথার পিঠে কথা


যেকোনো একটা কথা তার ঠিক আগের কথাটার চেয়ে বরাবরই কমজোরি হয় । পিঠচুলকানির আবহে কথার পিঠে কথা চলতেই থাকে ।

বন্ধনাক


সকালটা শুরু হয়েছে একটা বন্ধনাক দিয়ে । ঠাণ্ডাভাব কেমন যেন একটা দুর্বোধ্য । গতকাল রাতটা ছিলো একটু খুল্লামখুল্লা । খানিকটা মুক্তপ্রদ । তাই নাকে এখন নন্-ফিকশন শুধু । জিভের বদলে আলজিভ নড়ছে সমানে । ঠোঁটচাপা সকাল একটা রোববারের লাইন হয়ে মাঠ পেরোতে চাইছে । 

স্নান করলে মরণপারদ একবারটির জন্য মুখ তুলে তাকাবে জেনেও দুপুরটাকে আগে ঠেলে দিই সেই মাঠের দিকে । সেই লাইনটা ভাঙাবার মতলবে । সবার অলক্ষ্যে ।

6 Nov 2014

চুমুবাদ

এবার ওরা নামলো 'কচি' ঘটনার প্রতিবাদে । কারা ? কোচিতে 'কিছু একটা' হয়েছে তার বিরূদ্ধে পথে নেমে 'কিছু একটা' করলো খোদ কলকাতার 'কোচি'কাঁচারা । এর দৌলতে ফের শিরোনামে । সাথে তাদের 'কিছু একটা'-এর কুচি কুচি ছবি । সকালে ঘুমচোখে এইসব ছবি দেখলে অনেকের ঘুমটুম নষ্ট । বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশ ধিক্কার জানাচ্ছে, কেউ কেউ চোখেমুখে অপার বিস্ময় জাগিয়ে অনেক কষ্টে বলছে - "আমাদের সমাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে"

'কিছু একটা' অবশ্যই একটা কিছু এমন যা হিন্দুধর্মী আর জৈনধর্মী মানুষদের হাতে তৈরী খাজুরাহো মন্দিরের স্থাপত্যকাল থেকে হাজার হাজার বছর পেরিয়ে আসার পর একটা অতিবিরল ঘটনা যা প্রথমে কোচিতে হলো, সেটা ফলো করলো কলকাতা । কিন্তু প্রাচীন আর্যযুগের হিন্দুরাজাদের আমলে যা হতো, তা নিয়ে কারোর মাথাব্যাথা ছিলো না, এমনকি ছিলো না এখনকার মত উন্নততর অত্যাধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বা আন্তর্জালিক যোগাযোগ ব্যবস্থা । মিডিয়া-ফিডিয়া বা জার্নালিজমের ধারণাও ছিলো এদের স্বপ্নের বাইরে । অথচ কামদেবের ( হিন্দু পুরাণের মতে প্রেমের দেবতা ) মত রক্তমাংসের মানুষ সব রাজাপ্রজাদের মধ্যে বাস করতো যেটা বলাবাহুল্য । রাজার সাথে রানীর, রাজার সাথে দাসীর, প্রজার সাথে রানীর, প্রজার সাথে দাসীর রতিক্রিয়ার বর্ণনার রমরমা আমরা পাই বেদ থেকে শুরু করে অনেক প্রাচীনগ্রন্থে । এগুলোর অনৈসর্গিকতা আর অনৈতিহাসিকতা বাদ দিলে প্রেমযৌনতা নিয়ে যা বাকিটুকু থাকে তার ঐতিহাসিকতার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেই না । কিন্তু আর্যযুগ বা তারও আগে প্রাচীন বৈদিকযুগের ঋষিমুনিদের চিন্তাধারা আর এখনকার বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাধারার মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখতে পাই । কিসের ? 

সমাজের আধুনিকতা মানুষের হাত ধরে এসেছে, বিজ্ঞান আর ধর্ম দুটির সমণ্বয়ে মানবজাতির প্রগতিশীলতা নিয়ে মানুষের ভূমিকা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে । 'বিগ ব্যাং' তত্ব নিয়ে বিশ্বসৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যুক্তিবাদী স্বয়ং পোপ ফ্রান্সিসের কথা অনেকেই নিশ্চয় জানে । সময় যত গড়াবে, মানুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে আমূল পরিবর্তনের চমক তত আরো বেশি করে পেয়ে বসবে আমাদের দুর্বলসত্তাকে, এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায়, বলা যেতে পারে সবার মনে খোঁচা মারে এখনো - "এই আধুনিকতাকে পুঁজি করে আমরা কি আদৌ আধুনিকমনস্ক হতে পেরেছি? এই আধুনিকমনস্ক হওয়া আর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া একই নয় জেনেও আমরা কি এই স্থূলপার্থক্যটা সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারছি ?" উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক প্রাচীনযুগের হারেমপ্রথা, সমাজ তথা ভারতে আধুনিকতার ছিঁটেফোঁটা ছিলো না তখনকার রাজা-মহারাজা, বাদশাহ-নবাবদের রাজত্বে অথচ এই প্রথা চালু করে গেছেন দেশের নানা প্রান্তে প্রাসাদের ভিতরে-বাইরে । এই 'অবৈধতা' বা 'পুরুষের বহুগামিতা' গোপনে নয়, বরং চোখের সামনেই প্রকাশ্যে চলতো । ওদের এই ব্যবস্থাকে 'আধুনিকরণ' বলে আখ্যান দেওয়া যেতে পারে তৎকালীন সমাজের পক্ষে । অর্থাৎ এই নয় যে তৎকালীন এরূপ সমাজব্যবস্থা সারা দেশে বিপ্লব আনতে পারে নি বা সাড়া ফেলে নি, নিশ্চয়ই ফেলেছে । উত্তরভারতের একরাজ্যের রাজাদের যা কিছু নতুন জেনে বা দেখে ( সব জেনেশুনে বা দেখেশুনে ) উৎসাহিত বা অনুপ্রেরিত হয়ে মধ্যভারতের অন্য রাজ্যের রাজা সেই একই পন্থা অবলম্বন করে আসতেন আর সেই সূত্রে গড়ে তুলতেন নিজেদের রাজ্যসীমানায় নিজস্ব হারেম । এটাকে কিন্তু প্রতিবাদ বলে না, এটাকে প্রতিযোগিতা বলে না, এটাকে সংঘাত বলে না, এটাকে বলে 'আধুনিকরণের ব্যবস্থা' যা নিজেদের স্বার্থের জন্য ভিন্ন আর কিছু নয় । কিছুটা দেখনদারিও বলা যেতে পারে । 

আর এখন ? সোনাগাছির মত হাতে গোনা কয়েকটা রেড এরিয়াভুক্ত বেশ্যাদের ঠিকানা ছাড়া আর কোথাও তেমন উল্লেখ থাকে না । তাও অন্তঃপুরীয় অর্থাৎ লুকিয়ে লুকিয়ে যাওয়া-আসা চলে আর কি । এককথায় নিষিদ্ধ । অথচ বাজারী বলে সবাই একবাক্যে মেনে নেয় । নাহ, এখানে আমি ভালোবাসা বা প্রেমজাতীয় প্রবৃত্তি নিয়ে বলছি না, বলছি সমাজের 'আধুনিকতা' নিয়ে মানুষের দ্বিধাবোধ যা মানুষকে দ্বিচারিতার মুখোশ পরতে সাহায্য করে । আরে বাবা ! কোচিতে এক দম্পতির প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার প্রতিবাদে পুলিশিবাদী, পাল্টা প্রতিবাদে কলকাতায় এমন চুমুবাদ ! এসব চুমুবাদীদের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই কারণ এরা যা পারে বা যা ভালো মনে করে তাই করে, কিন্তু তা বলে "ওরা যা করেছে, বেশ করেছে" বলতে পারবো না । বলার মত যুক্তিও খুঁজে পাচ্ছি না বা সৎকারণ অন্ততঃ দেখতে পাচ্ছি না । তবে এটা ঠিক আমি তিরিশের কোঠায় এসে বলছি কিন্তু আমি তেমন সেকেলেরও নই । কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পেছনে একটা চুমুবাদের যুক্তি কোনোমতে যুক্তি হয়ে উঠতে পারে না । চুমু একটা ভাবপ্রকাশ । একটা স্পর্শকাতর প্রবৃত্তির জাগরণ । ভিতরের ইমোক্ষরণের বহিঃপ্রকাশ । স্কুলবয়সে থাকতে থাকতে অনেকে চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকে । কিম্বা পাড়াতুতো চুমু নিয়ে স্বীকারোক্তি পেশ করা লোকের অভাব নেই । কিন্তু তাই বলে চুমু নামের একটা আবেগপ্রকাশকে অস্ত্র বানিয়ে প্রতিবাদ করা কেন ? 

"চলো চুমু খাই" বলে একে ওকে জাপটে ধরে গালে গালে ঘষে, এর ওর ঠোঁটে ঠোঁটে ঘষে সরব হচ্ছে, তাও রাস্তায়, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আবহে, শত শত লোকের চোখের সামনে, উর্দিধারী পুলিশের সামনে এবং খোদ থানার সামনে । অমনি দুঃসাহস পেলো কোত্থেকে এরা ? দুঃসাহস একদিনে হয় না তো বলে জানি । নাকি প্রতিবাদের নামে নিজেদের সাধ মেটালো ? কিম্বা চুমুবাদে প্রতিবাদ সম্পন্ন করা হয়ে গেলো ? এই চুমুবাদকে সমাজের আধুনিকরণ বলে ? সামান্য কয়েকঘন্টার ঘটনার নিরিখে একে "এগিয়ে যাওয়া সমাজ"-এর দৃশ্যায়ন বলে ? বঙ্গপ্রশাসকের দল থেকে শুরু করে বিভিন্নস্তরজীবীরা এই ঘটনাকে সমর্থন করতে পারে নি, কেউ কেউ করলেও পুরোপুরি মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করছে । এর কারণ আমরা আধুনিকমনস্ক হয়েও প্রাপ্তবয়স্কতার ধারণা নিয়ে একরকম দফারফা করে ফেলেছি । একে পরিণত মনের পরিচয় বলতে আপত্তি করা অস্বাভাবিক নয় । এর চেয়ে ঘরবাড়ি থাকতে বা সত্যিকারের ভালোবাসা থাকতে নিজেদের স্বার্থে চুমুর আবশ্যিকতা অনেক বেশি পরিণত । এমনকি হারেমপ্রথার মত প্রাচীনকালের 'আধুনিকতা'-এর আস্ফালনের চেয়েও অনেক বেশি সুরক্ষিত আর সুস্থ থাকে মানবিকতা এই আদরচুমুতে আর চারদেওয়ালের মধ্যে ভালোবাসার জনের সাথে লিপ্ত প্রেমযৌনতার ব্যবহারিক সততা সত্যিকারের প্রাপ্তবয়স্ক মনের পরিচায়ক ।

তবে সবাই একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে যারা আজ প্রকাশ্যে চুমুবাদী হয়েছে, আজ থেকে দশটা বছর বাদে এরা নীরবতা পালন করবে যেকোনো 'কচি'-জাতীয় ঘটনার স্বপক্ষে, অন্ততঃ এদের কেউ ততদিনে সেলেব্রিটি হলে বা প্রশাসনিক দলে যোগদান করলে বা সবার-মুখে-নাম-উচ্চারিত হলে অন্য কথা । তখন মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে স্নব্ সেজে দু-এক লাইনের ভাষণ ঝাড়বে আর ফুড়ুৎ করে কেটে পড়বে । বাকিরা চুপ হয়ে থাকবে । শেষে বলতে বাধ্য হলাম যে আজকালকার ছাত্রছাত্রীরা পাশ্চাত্য অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকটাই বেগরবাই করে ফেলছে নিজেদের চারপাশকে । যখন তখন আস্ফালন করছে যার কোনো মাথামুণ্ডু নেই, পুরো বালখিল্য দেখনদারি । এদের বুঝতে হবে কোনো বিশ্বাস বা ব্যবস্থা বা রীতিনীতি একদিনে তৈরী হয় না । এর জন্য দরকার একটা সঠিক আর সুপরিকল্পিত চিন্তাভাবনা যেটা নিজেদের স্বার্থে না হলেও সমাজের স্বার্থে করতে হবে । 'অবৈধতা' নামের জিনিসটা এখনো নিষিদ্ধ ধর্মনির্বিশেষে সারাদুনিয়া, যা বৈধ নয় তাকে নিয়ে ছিনিমিনি করা একান্ত বোকামি বা স্বীয়-পশ্চাতে-লাথ-মারার মত পাকামো ছাড়া আর কিছু নয় । অভিজিতের পদত্যাগের দাবি কতদূর গড়াতে পারলো এরা কেউ জানে ? নাকি জেনেও ভুলে গিয়ে নেক্সট চ্যাপ্টারে লাফ মারছে ? 

এর চেয়ে খবরে 'কোচি'কাঁচাদের চুমুবাদী ছবি একঝলক দেখে ফিক করে হেসে মাথা নেড়ে ওদের চুমু-কে বাদ দেওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই ।

5 Nov 2014

খলনায়কের সিঁড়ি


বেশিরভাগ খলনায়ক নায়কের চেয়ে বেশী আকর্ষণীয় হয় । গল্পের মায়াজালে হোক, বাস্তবের কাঁটাতারে হোক । এর ব্যতিক্রম আমি । কাঁটাতারে জড়িয়ে শুধু খাই-দাই-ঘুমাই-চুমাই-ফের ঝিমাই ।

ফাঁক পেলে কাঁটাতার বাঁ হাতে চেপে ধরে মায়াজালের দিকে ডান হাত বাড়াই, "কবে যে আমাকে নেবে ?" রক্ত নীরবে হামাগুড়ি দেয় গল্পমুখী সিঁড়ি বেয়ে । ওখান থেকে যদি অভ্যর্থনার কোনো এসএমএস পাই । এই আশায় আরো শক্ত করে চেপে ধরি কাঁটাতার ।

ভুল বুঝতে পেরে হাত গুটিয়ে নিই, কারণ এই সিঁড়ি শুধু নায়কদের জন্যে বাঁধা রেড কার্পেট । বাধ্য হয়ে খুঁজি অন্য সিঁড়ি । খলনায়কের সিঁড়ি ।

4 Nov 2014

মন শুধু ধ্যানমগ্ন থাকে


মন শুধু ধ্যানমগ্ন থাকে, যখন হাত-পা চারধারে ছড়িয়ে ল্যাদীভূত থাকে । নিজেকে হিমালয়স্থ সন্ন্যাসী টন্ন্যাসী লাগে এসময় ।

আমার এই ধ্যানভঙ্গাধিকার পেয়েছে একমাত্র উত্তরাধিকারী । তাকে কোনোরকম বাধা দেওয়া যায় না সে নাছোড়বান্দা বলে । অবশ্যই নিয়ে আসে প্লাস্টিকের দু'তিনটে ফল যা ভোগ করতে হয় আমাকে । তবে জাগলিং করে বুঝিয়ে দিই যে ভোগ্যবস্তু দারুণ উপভোগ্য হয়েছে । 

সে অবুঝ বলে খুশিমনে আমার এই সামান্য ধ্যানবৎ ল্যাদাখে শান্তি বজায় রেখে কেটে পড়ে, যা ভারত-পাকিস্তানের হাঁফধরা দৈনন্দিনতার ফাঁকে একমুঠো অক্সিজেন

3 Nov 2014

বড় না হয়ে বুড়ো


আমি বড় না হয়ে বুড়ো হতে পেরেছি । এতে বেজায় খুশি আমি ও আমার শিশু অবতার ।

মুখোশ


পর্দা সরে গেলেও ফোকাসটা কখনো মুখোশ থেকে সরে না । শেষ পর্দার আড়ালে নগ্নত্বের চরম সত্যতা থাকলেও সেই সত্যতার আড়ালে থাকে একটা করে অজানা মুখোশ । 

আজকাল মুখোশ-খুলে-আসলটা-বের-করে-নেওয়া গোছের তর্কে আমরা যত মুখ খুলি, তার চেয়ে বেশি করে নতুন নতুন মুখোশ নিজেরাই অজান্তে পরে ফেলি ।

Bathtub and Purgatory


I feel only existing purgatorial place is a bathtub with foamed hot water. We, humans with venial sins or mortal sins can immerse ourselves into bathtub for long hours. Each hour will assume a set of unknown years or endless decades. Ultimately we come out with refreshment in both our mind and body. 

Why can we not define this as purification of our inner dirt, outer dust? Isn't it enough? Is rehabilitation another name of purgation? Will repetition of free some speech filled with rubbish and nonsense theories work for wiping sins off? 

Well, according to ancient mythologies, purgatory comes into picture only after death, which is still under our imaginary belief. But it's always better to use bathtub as many times as we can being alive, unfortunately with no painful action, in contrary to that story-telling-limited 'scary house'.