26 Nov 2014

খামবন্ধ কমলালেবু


ফের কমলালেবু । ক্ষেত ছেড়ে আঁতে চড়ে বসেছে । ক্রেতার লম্বা লাইন ফাঁকি দিয়ে কবিতার এ-লাইনে ও-লাইনে নেমে পড়েছে । সারি না বেঁধে এদিক ওদিক করে । কেউ পিরামিডের মুডে নেই । সাথে একটু শীত-শীত মিশিয়ে । টক না মিষ্টি - মুখে না দিলেও বোঝা যায় । পুরনো অথচ বিখ্যাত গানের মত একটা চেনা-চেনা স্বাদ । যতবার কবিতা থেকে মাথা তুলি, ততবার বাকি সবার কাছে একটা করে খাম আসে । সব খামের মুখবন্ধের কাছে কমলার আঠালো দাগ । যখন খাম খোলে, তখন আমি একা চারতলার সিঁড়িতে পচাগন্ধ পাই । গন্ধের এমন পচামো আমার ভাগ্যে জোটে । সৌভাগ্যও বটে । বেলায় স্নান সেরে বসে থাকি ছাদের খোলা দরজার মুখে সিঁড়ির শেষ দুই ধাপে । বসার ধরণ কিছুটা 'দ'-এর মত । পিঠ ছেড়ে ছায়াটা আরো লম্বা হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে । কমলালেবুর দুর্মূল্য একটা সংকলন করতে । শুধু হাতে ধরা কমলালেবুটা ছায়ার মধ্যে ঠাণ্ডা হতে ঠাণ্ডাতর হয়ে যায় । এর একটাও কবিতা নেই বলে ?

একটু উঁচিয়ে ধরি । দুই তালু রোদ্দুরের কোলে খানিকটা উজ্জ্বল । গোল টিপ । কমলার টিপ কিনা সেটা জানার ইচ্ছা নেই । তেমন ইচ্ছাও নেই কমলা রঙে ডুব দেওয়ার । খোসা ছাড়ানো শুরু করি । যেভাবে প্রথমে সেফটি পিন খুলে দিতে হয় । ছাড়াতে গিয়ে দেখি সে খিল খিল করে হাসছে । হাসিটা কিন্তু চমৎকার । আমি তার দিকে তাকাই । সে যদি হয় কমলা, আমি তবে হই ক্যাবলা । ক্যাবলাপ্রিয় হাসিটা মাঝে মাঝে থামে । জানতে চায় খুলছি কেন । ক্যাবলার কোনো উত্তর হয় না । বেরিয়ে আসে পরনের কমলাভ সাদা ব্লাউজ । সুতো সব কেউ যেন আগে থেকে ফালাফালা করে রেখেছে । আমার পিঠের গরমভাব খানিকটা কেটে যায় । আবার হাসে সে । আমিও মাথা অল্প নাড়ি মুচকি হেসে । ততক্ষণে অর্ধেক খালি কিম্বা অর্ধেক পূর্ণ । হাসি একটু থামে এবার । সংকোচবোধ করে । মাঝে একবার হেঁচকি তোলে সে । হাল্কা রোদ্দুর ভিজে আরো কোমল হয় । কমলাও কোমলা হয় । খোসাছাড়াপর্ব চলে । কবিতা ভুলে ছায়াটা গুটিসুটি মেরে উঠে আসতে থাকে এক-দু'ধাপ করে । ছায়ারও লোভ হয় বুঝি ? ততক্ষণে বেরিয়ে আসে শায়া । সেটাও ছেঁড়া-ছেঁড়া । কমলাভ সাদা । মাঝের পেট বরাবর আঙুল বুলিয়ে দেখি কিছুক্ষণ । শেষ বিকেলের নিস্তেজ সূর্য । আমি ঘোরাই, সে ঘোরে । আলতো করে চেপে ধরি । সাথে সাথে দুটি খুলে যায় । ঠাণ্ডা বাতাস একবার সিঁড়িতে গড়াগড়ি খেয়ে ফিরে যায় । কমলায় ক্যাবলায় কাঁপন ধরে ।

হপ্তাখানেক আগে । নিচের ফ্ল্যাটের ধীমানকাকু বলেছিলো ভালো কমলালেবু পাওয়া যায় না আজকাল । সেই কাকুর মেয়ে পিঙ্কি এসেছে । আমার থেকে বছর তিনেকের বড় । আমার ঠোঁটে বিন্দু বিন্দু কমলা তার চোখ এড়ায় নি । তার একটা বাজে স্বভাব আছে । প্রশ্ন করা । তার বাবার কথাটির রেশ টেনে সে শুধায় - "কমলালেবু পেলি নাকি ?", আমি উত্তরে কিছু না বলে জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিই শুধু । পিঙ্কিদিদির চোখ দুটো গোল গোল হয় । চোখের মণিতে পাখির বাচ্চা । কমলাহীন ঠোঁটদুটি তার । গলা শুকিয়ে গেছে তার বোধ হয় । জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট একবার চেটে নিলো । আরেকবার দেখলো আমার ঠোঁট । ঠোঁটের মধ্যে কমলালেবু খুঁজছে সে । মনে মনে হাসছি । প্রকাশ্যে নির্বোধ হয়ে দিদিকে দেখছি । তার মত চোখ দুটো গোল গোল করে । এমন দাপুটে দিদির সারা গা থেকে বেচারাভাব ফুটে বেরোচ্ছে । ঠিক যেমন কমলালেবু হয় । ওকে নিয়ে যাই ছাদের সিঁড়ির কাছে । সাদারঙের ডাবল ইউ-শেপড্ বাল্ব জ্বালাই । সিঁড়িতে তখনো কমলার ছাপ । মুছতে পারতাম, কিন্তু মুছি নি । কমলার গন্ধ উঠে যাবে তাই । কেননা সেই পচাগন্ধ আমার খুব প্রিয় । উষ্ণতা তবে আর নেই । পরের ছুটির অপেক্ষায় থাকে । দিদি ধমক দিলো, "একা খেয়ে ফেললি ? আমাকে ডাকলি না কেন ?"

আমি কিছু জবাব দিই নি সেদিন । ভালো কমলা পাওয়া যায় না আজকাল । খামবন্ধ কমলালেবু কে চায় ? অন্য বই খুঁজি । 

No comments:

Post a Comment