18 May 2015

তেমনি বদবৃষ্টির দরকার


খামখেয়ালকে পাশবালিশের মত করে প্রশ্রয় দিই হাতদুটি পেছনে রেখে পায়চারী করতে করতে । ঘাম ঝরে পড়ুক পাখা থেকে মেঝেতে । এর সাথে আরেকটু নির্লজ্জ বৃষ্টি একান্ত কাম্য যখন এই চরমদশায় লজ্জার কোনো বালাই নেই । ঘামের যেমন কোনো সৎ উদ্দেশ্য থাকে না, তেমনি বদবৃষ্টির দরকার যে অন্তর্বাসকেও অন্তরে অন্তরে বাসে

15 May 2015

মানুষের আরেকটা 'নিয়তি'


জন্ম আর মৃত্যু ছাড়াও মানুষের আরেকটা 'নিয়তি' আছে । সেটা হলো সৃষ্টি । সে সৃষ্টি সুকাজের হোক, অকাজের হোক, কুকাজের হোক, সৃষ্টি-ই সৃষ্টি । জন্মে আমরা আনন্দোৎসব পালন করি । মৃত্যুতে আমরা শোকাহত হয়ে চুপচাপ থাকি বা থাকার ভান করি । সৃষ্টিতে আমরা কিছু করি না ? আনন্দ, দুঃখ, রাগ, অনুরাগ, ঘৃণা, সন্দেহ, মাথায় হাত বুলিয়ে নেড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে পায়ে ইলেকট্রনিক করাত চালানো অবধি কতকিছু করে থাকি । সবটাই সৃষ্টিনির্ভর বলে সৃষ্টিসুখের পাশাপাশি কেউ যদি 'সৃষ্টিদুঃখ' ওয়েবম্যাগের সম্পাদনা করে, তাকে আটকানোর দায় কেউ নেবে না নিশ্চয়ই । আদরের নৌকার পেছনে যদি 'অনাদরের স্টিমার' ভাসতে দেখা যায়, কেউ ভ্রু কোঁচকাবেও না । 

সৃষ্টির নামে মানুষের জীবনব্যাপী নিয়তিকে কেন্দ্র করে আমরা যা যা প্রকাশ্যাড়ালে করি, সেগুলোকে বর্ণনা করা গেলেও বর্ণনাতীত হয়ে থাকে । কারণ সৃষ্টি মানুষকে আলাদা করে চেনায়, স্বাতন্ত্র্য দেয়, স্বীকৃতির শিরোপালড়াইয়ে নামায় যেখানে জন্ম বা মৃত্যু কোনোটাই এতো বড় ভূমিকা নিতে পারে না মানুষের জন্য । পেট থেকে পড়ে গেলেই সে বড় হয়ে যে অমুকত্ব লাভ করবে তা বোঝা দায় । প্রাণ ভুস্ করে চলে গেলেই নামী না অনামী দেখে আমরা নিজেরা অনেকসময় ঠিক করেও উঠতে পারি না কি করা উচিত ।

একমাত্র মানুষের সৃষ্টি আমাদের মানসিকতাকে বিভিন্নস্তরে মাল্টিটাস্কিং করে তুলতে পারে তাই একটা আকস্মিক মৃত্যুর ( যেমন 'কাছের মানুষ', 'অন্য বসন্ত'-এর লেখিকার মৃত্যু ) চেয়ে একটা বা ততোধিক সৃষ্টিরহস্য আসলে অনেক অনেক বেশি রহস্যজনক ।

4 May 2015

ঈর্ষা হয় কেবল


বাব্বাঃ ! পণ্ডিত হলেই পণ্ডিতিগিরি করতে হবে ?! 

পাশ্চাত্যের বাতাস নাক উঁচু করে টেনে শ্বাস নিতেন । মাত্র দু'বছরের জুনিয়রের একটা 'খুব ভালো' কাজ নিয়ে কাটাছেঁড়া করা থেকে পিছপা হন নি । সিনিয়র হলেন প্রয়াত মানিকদা, জুনিয়র হলেন জীবিত মৃণালদা । পরেরজনের সুপারহিট ছবি 'আকাশকুসুম' বেরোতে না বেরোতে-ই প্রথমজনের দাদাগিরি । শুধু তাই নয়, সিনেমার জ্ঞান নিয়ে গালভরা বিশ্লেষণ করার সাথে 'আকাশকুসুম'-এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেলেন । তার জবাবে 'আকাশকুসুম'-এর নির্মাতা স্বয়ং এবং গল্পকার আশিস বর্মন দুজন মিলে যা বোঝানোর তা বলে গেছেন । তাতেও থামে নি মানিকদার কড়া সমালোচনা । এই মসিযুদ্ধ এতদূর গড়াতে গড়াতে প্রায় ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যাচ্ছিলো । যেমন?

একজায়গায় মানিকদা 'আকাশকুসুম' নিয়ে সমালোচনা করে শেষে এই লাইনটা লিখেছেন - 'Contemporary moral : A crow-film is a crow-film is a crow-film.'

তার উত্তরে মৃণালদা লিখেছেন,
"In trying to derive a 'contemporary moral' Mr. Ray by adding three doubtful prefixes, has conveniently reconstructed a famous line which originally belonged to the French film director Jean Luc Goddard: 'A film is a film is a film'. In this connection it may be interesting to note that Mr. Goddard, unlike Mr. Ray prefers to remain a moral and will perhaps 'suffer' many human frailities including 'persistent lying' even in beds."


চণ্ডী মুখোপাধ্যায়ের বয়ানে উঠে আসা 'দ্য স্টেটসম্যান'পত্রিকায় ছাপা এদের দুজনের মধ্যে চিঠিচাপাটির এই বিতর্কিত যুদ্ধটা আজকের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জমানায় হয়তো অতটা বিস্ময়কর লাগে না । কিন্তু মানিকদার মত একজন, যিনি হাবেভাবে সংযত ভারতীয় তথা বিশ্ববরেণ্য বাঙালী ঋষি-টাইপ, কেতা-কায়দাহীন, যাবতীয় রমরমা ক্ষেত্রের অর্ধেকটা নিয়ে অনীহাভাব, যৌনসুড়সুড়িয়ে নয়, কান্নাপ্রবণ ক্ল্যাইমাক্স থেকে শত শত হাত দূরে থাকাপ্রিয়, তিনি কিনা তার নিজস্ব সংযমীভাব ভেঙে মৃণালদার বহুশ্রমজাত একটা চুড়ান্ত সাফল্য পাওয়া কাজ নিয়ে পড়লেন ? কাজের মূল থিমের টপিক্যালিটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নিজের পাণ্ডিত্য ফলানোর চুলকানি পেয়ে ? এ থেকে বোঝা গেলো বিশ্বজোড়া খ্যাতি নিয়ে থাকলেও আঁত নামক যে মনপিণ্ড থাকে তার আগ ও পর নিয়ে ভীষণ ইনসিকিয়রিটিতে ভুগতেন মানিকদা স্বয়ং ।

মানিকদা যখন এইধরণের ইগোইস্টিক ছিলেন, তখন রিল্যাক্স করে বলতে পারি যে আমারও ইগো আছে । সুন্দরভাবে সেজেগুজে আছে মনের অন্তরে । সমগোত্রীয় বা ভাইয়ের বয়সী কারো সাফল্য দেখলে আমার ইগোতে চুনকালি পড়ে যায় আপনাআপনি । কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্যে বা অন্য কারো সামনে সমালোচনা করিনা, ঈর্ষা হয় কেবল । অস্বীকার করবো না । 

চুপচাপ থেকে মনে মনে জ্বলি,
যতই না প্রকাশ্যে তারিফ করি ।।

বোরিং লাগছে


বোরিং লাগছে । বোরড্ হচ্ছি । এই বোরডম্ চাই নি । তবে আমার এই বোর-বোর ভাবটার জন্য কেউ দায়ী নয় । 

ন্যাচারালি বর্বর হতে যা যা উপকরণ লাগে, তার সবগুলো আমার রক্তনদীর মধ্যে বইতে বইতে দুধারে সরে গেছে । আর সেখানে পলিমাটির মত জমা পড়েছে । অনেকটা কোলেস্টেরল টাইপের । ঘরে রাখা চিভাস্ রিগাল, অ্যান্টিকিউটি ব্লু বা ওল্ড মঙ্ক কারো প্রতি টান অনুভব করছি না । মাকে শুধালাম, "আমার আজ ড্রিংক করতে ইচ্ছা করছে না, কেন বলো তো?", শুনে মায়ের সারা চোখেমুখে পাঁচশো না ছয়শো ওয়াট আলো জ্বলে উঠলো । মালবিদ্বেষী মা তো । আমার মত একজন মালের পক্ষে মাল খাওয়ার আকস্মিক নিঃস্পৃহতা মায়ের কাছে 'বখাটে একটা ছেলে না পড়ে-টড়েই মোটামাইনের বড় চাকরি পেয়ে গেলো' গোছের একটা অনাবিল সু-সু-সুখবর । অগত্যা মায়ের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নিতে হলো, কারণ মায়ের মুখের এমন উদ্ভট পাওয়ারের আলো দেখার মত চোখ তখনো ফোটে নি আমার । সময়টা ছিলো অসময়-ই ।

ব্যালকনির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও পা'দুটোকে টেনেটুনে নিতে হলো । পায়ের এই বোরিং-চরিত্র মাঝেমাঝে আমাকে একসাথে অবাক ও বিরক্ত করে দেয় । সে যাকগে । অন্ধকারের সামিল হলাম ব্যালকনিতে এসে । মনে পড়ে গেলো গতপরশুর রাতে দেখা মুভি 'দ্য বেস্ট অফার' । গল্পের মূলনায়ক একজন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ । শুরু থেকে পাহাড়সমান গ্র্যাভিটি নিয়ে চলতো । নিজের প্রৌঢ়কালের ৩৫ বছরব্যাপী সংগ্রহে রাখা দেশবিদেশের নামী-অনামী বহু চিত্রশিল্পীর আঁকা একেকজন নারীর ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা ছবিগুলো ছিলো তার একমাত্র অক্সিজেন । সুবিশাল প্রাসাদোপম বাড়িজুড়ে একা থাকতো আর অতিগোপনীয় সিকিয়রিটির কোড-নাম্বারচালিত একটা গোল হলঘরের সারা দেওয়ালে টাঙানো থাকতো সংগৃহীত সেই সমস্ত ছবি । সেক্রেটারি আর কিছু বন্ধুবান্ধব অবশ্যই আছে, কিন্তু তাদের কারো কাছে শেয়ার করতো না তার এই অক্সিজেনের প্রক্সি । গল্পের মাঝবরাবর থেকে যদিও অন্যদিকে মোড় নেয় । 

এদিকে বারান্দাবন্দী আমার মাত্র দু-তিনদিনের মধ্যে বোরিং লাগার বিষয়টা গল্পের ওই বৃদ্ধের তিরিশের উপর বছরগুলো একটানা একইভাবে কাটিয়ে ছবিগুলোর সামনে নিয়মিত নিজের মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার কাছে যারপরনাই তুচ্ছ । মাইক্রো লেভেলে গিয়ে সেই তুচ্ছতা ধরতে গেলে দেখা যায় তা নিজে উধাও । এমনটা হওয়া অপ্রত্যাশিত নয় বইকি । আকাশের দিকে মুখ তুললাম । দেখলাম একটা বড়সড় মেঘ পাতলা চাদরের মত চাঁদের মুখের সামনে দিয়ে ভেসে চলছে মৃদুগতিতে । পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে থেকেই এই একটা চাঁদ আকাশে পড়ে রয়েছে । একইভাবে । কাটতে-কাটতে এবং জুড়তে-জুড়তে । আমার গায়ের রোম সব খাঁড়া হয়ে গেলো ।

আচ্ছা, চাঁদের বুঝি বোরিং লাগে না ?

'কলিকাতা'য় নবকুমার


'কলিকাতা' কথাটি বলতে আটকাচ্ছে কেন ? শুরু থেকেই নবকুমারকে দিয়ে সমরেশ মজুমদার এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ।

চিৎপুর, বেলগাছিয়া, দর্জিপাড়ার সাথে যে একটা 'খারাপ'পাড়া আছে তার চেহারা কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে একটা মানসিকতার প্রশ্নোত্তর । পেটের দায়ে পড়ে মেয়েরা যে কাজ করে তার বাইরেও তাদের একটা স্বাভাবিক জীবন আছে । তাদের কষ্টযন্ত্রণাও ভদ্রপাড়ার মানুষদের মত । তাদের জীবনের অভিমুখ হয়তো একটাই কিম্বা বলা যেতে পারে চিহ্নহীন, বর্ণগন্ধহীন, মনশূন্য শরীর বেচে অলক্ষ্যে রোগব্যাধি বাঁধিয়ে নেওয়ার একটা উদ্দেশ্যহীন নিশানা । একটা মেয়ের যোনি শত শত শিশ্নের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পাশাপাশি মানুষের চিৎকার-আর্তনাদ, পুলিশি বর্বরতা, সামাজিক মোড়কের আড়ালে থাকা নিষ্ঠুর সত্যতা - সবই আমাদের চেনা শোনা এবং জানা ।

সমরেশবাবু নবকুমারের চরিত্রকে একজন স্ট্রাগলার বানিয়ে তার ভাগ্যে একটার পর একটা রাস্তা খুলে দিতে লাগলেন । এমন ভাগ্যবান চরিত্র তার গ্রাম্য-সারল্যচরিত্রকে ছাপিয়ে গেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । আমরা যারা পাঠক তারা কেউ এতখানি ভাগ্যবান হতেও পারি নি আমাদের ভদ্রসভ্যশোভনীয় জীবনের স্রোতে ভেসে যেতে যেতে, যেখানে নবকুমার তার বঙ্কিমীজালে আটকে পড়া কপালকুণ্ডলার মত অগুনতি নারীর সহজলভ্য যোগসূত্র সব উপেক্ষা করে সৎবান থেকে গেছে নিজের গুণে সেটা খুবই বিরল । খোদ কোলকাতায় থেকে 'কলিকাতা' স্পষ্ট উচ্চারণের মত । 

এমন ব্যতিক্রমী জীবন কার না চাই ? সবাই হয়তো চাই মনে মনে কিন্তু তা সম্ভব নয় । তাই শুধু বেঁচে থাকুক এই কলমের সাবলীলতায় । আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই 'কলিকাতা'য় ।

বনধের সাফল্য


জনগণের নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা এনে দেয় বনধের সাফল্য । আর বনধের ব্যর্থতা শুধু ওই ১২ ঘন্টায় ।