26 Oct 2015

সময় খুঁজে পাবি না


- সময়, তোমার ব্যাপার স্যাপার দেখছি আলাদা ।

- মানে ? কিসে আলাদা আমি ?

- লোকে তোমায় সম্মান করে সেটা বোঝো না ।

- না তো ।

- বাহ্ রে শালা ! লোকে বলে তুমি নাকি নিজে গিয়ে সব ঠিক করে দাও । কথায় কথায় তোমার নাম মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করে, 'সময় সব ঠিক করে দেবে' ।

- দূর ব্যাটা ! আজকাল লোকের অত সময় নেই আমার নাম মনে রাখার । যখন বলে, 'আমার সময় খুব কম' কিম্বা 'আমার একদম সময় নেই রে', তখন বুঝে উঠতে পারি না যে জ্বলন্ত কয়লা হয়ে পুড়ছি না ছাই হয়ে উঠছি । শুধু ভিতরে ভিতরে অসম্ভব কষ্টে মরি ।

- হুম । সে তো ঠিক । একে বলে সময়ের দুঃসময় । কেউ আর তোমার সাথে থাকতে চায় না, কারণ তোমাকে শুধু ২৪ ঘন্টায় বেঁধে রাখা হয় না । কোটি কোটি আলোকবর্ষতেও তোমার নাম পাল্টায় না ।

- আমার নাম পাল্টাবে বা কেন ?! নাম স্থিতিশীল হলেও গতি একমুখী এবং একই হারে প্রগতিশীল । যদিও মাঝে মাঝে স্লো হই বা ফাস্ট ও হই পাঁচ-দশমিনিটে লোকের লাইফস্টাইলের কথা মাথায় রেখে । 

- ঠিক ! তাই বলে তো আমি ঘড়িতে তোমাকে পনেরো মিনিট এগিয়ে রেখেছি । দেখছো না তোমাকে কত ভালোবাসি যে সামনের দিকে এগিয়ে রেখেছি । আই লাভ ইউ, সময় !

- ভালোবাসার নিকুচি করেছে ! আজকাল দেশেবিদেশে আমার নাড়িভুঁড়ি সব বের করে কীসব টেকনোলজি দিয়ে বিদঘুটে একটা যন্ত্র বানিয়ে বসছে । কী বলে তাকে যেন ?

- টাইম মেশিন ?

- ইয়েস ইয়েস । ওই ভূতুড়ে কাণ্ড চলছে আমায় ক্লোনিং করে আর উল্টোদিকে ছুটছে লোকজন । সাদাকালো স্মৃতি, সেপিয়া অ্যালবাম,মোনোক্রমের রমরমা একটু চেখে দেখতে অ্যাত্তো বাড়াবাড়ি করার মানে বুঝি না । সত্যিই বুঝছি না, ভাই !

- আরে ! এটা তো মজা । এরে কয় খ্যাতির বিড়ম্বনা । আমি হলে এরকম একটা টাইম মেশিন পেলে চড়বো-ই চড়বো । কিন্তু পাই কোথায় ? হাম গরীব আদমি হ্যাঁয় ।

- ঝাট জ্বালাস না তো । লাখ লাখ কামাচ্ছিস । আমার ইউনিট বছরহিসেব ধরলে দশটা মাইলস্টোন কমপ্লিট হলে তুই শালা কোটিপতি হবি রে । সবাইকে না হলেও আমাকে তো ভুলে বসবি নির্ঘাত ।

- কখনোই না । তোমাকে কি ভুলতে পারি আমি ? পনেরো মিনিট এগিয়ে রাখা কি চাড্ডিখানি কথা ? তাছাড়া ওইরকম একটা টাইম মেশিন পেলে তোমার অমন সুন্দর মুখখানা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাবো । বলো যাবে তো ?

- না, যাবো না । আমার কাজ শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা । বাকিসব আমাকে ফলো করে প্রতি সেকেণ্ডে । পৃথিবীর ঘূর্ণনকালের সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উল্টোপথে হেঁটে বিশ্বকে কনফিউজড করে দিতে চাই না ।

- আরে ব্যাকএন্ডে চলবে তোমার সরি মানে তোমার ক্লোনের মোটর । আর তুমি রিয়েল থাকবে যেমনটি আছো আর ফ্রন্টএন্ডে চলতে থাকবে । কেউ কিছু করবে না । অযথা চাপ নিও না এসব নিয়ে । টেকনোলজির পক্ষে সবই সম্ভব ।

- থাক ! তুমি তোমার টাইমমেশিন নিয়ে কেটে পড়তে পারো । আমাকে আমার মতই চলতে দে । 

- কি মুশকিল ?! একটুও দেখতে ইচ্ছে করে না তোমার শৈশবকাল ? তোমার আবিষ্কারক কে সেটা আমরা কেউ জানি না, অনেকে হয়তো নানাভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছে তোমাকে নিয়ে সে বিজ্ঞানে হোক, ধর্মে হোক বা দর্শনের হাত ধরে হোক । কিন্তু নিজের ক্ষেত্র নিয়ে সেই বির্বতনের ইতিহাসে চোখ রাখতে কৌতুহল হয় না তোমার ? সময়, তুমি এত অনাগ্রহী নিজের দেশের বাড়িঘর নিয়ে ?

- স্টপ ইট ননসেন্স ! এভাবে আমাকে নস্ট্যালজিয়াতে জড়াবি না । আমার নিজের বড় একটা সম্পদ হলো নস্টালজিয়া । তাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে একদম পছন্দ নয় আমার । ওকে যত্ন করে ভাঁজ করে বুকপকেটে রেখে চলি । বুকপকেটের দিকে তাকাই না ভুলেও । শুধু চলি আর চলি । 

- তোমাকে নিয়ে আর পারি না । তোমার জেদের কাছে হার মানতে হচ্ছে । অথচ চারপাশে দেখি টাইমমেশিন নিয়ে লোকের ম্যানিয়া । আর তোমার তাতে ভ্রুক্ষেপ ও নেই । বেশ তো । চললাম আমি ।

- যা । তবে ঘড়ির ব্যাটারি চেঞ্জ করতে ভুলিস না । নাহলে আমাকে আর পাবি না ।

- দেখা যাবে । সময় পেলে চেঞ্জ করবো ।

- আগে চেঞ্জ কর । চেঞ্জ না করলে আমাকে থুড়ি সময় খুঁজ পাবি না । 

- বস্ ! আমার সময় হবে কিনা জানি না ।

- হা হা হা । রাগ করলি ? আচ্ছা বুঝলাম । আমার কিন্তু আয়-উপায় নেই । চলি আমি । শুধু চলি আর চলি ।

12 Oct 2015

'আইস এজ'


সবে হাই ফেভার থেকে সেরে উঠেছে । এখনো বেশ দুর্বল । দুর্বলতার সামনে দিয়ে হেঁটে চলছে দুই অ-বন্ধু । ম্যানফ্রেড ও সিডনি । গুরুগাম্ভীর্যবাহী ম্যানফ্রেড তথা ম্যানিকে ফলো করতে করতে একসময়ে জিজ্ঞেস করলো সিড - "হোয়াটস্ ইওর প্রবলেম?", জবাবে ম্যানি একবিন্দুও না থেমে সোজাসুজি জানালো - "ইউ আর মাই প্রবলেম ।" বরফমাঠের উদ্দেশ্যহীনতা, শুকনো গাছগাছড়ার একাকীত্ব, ঝোড়োহাওয়ায় পাতার সহজে ছিঁড়ে যাওয়ার করুণত্ব, হারিয়ে যাওয়া একটি ফুটফুটে শিশুর অভিভাবকতা ঘিরে শত শত 'প্রবলেম' নিয়ে অ্যানিমেশন মুভি 'আইস এজ' । একেকটা প্রবলেমের সাথে জুড়ে থাকে এক বা একাধিক ফানি মোমেন্টগুচ্ছ । যেন মজাদার মুহূর্ত ছাড়াই প্রবলেমগুলো ঠিকঠাক ডিফাইন করা যায় না ।

ওষুধক্লান্ত দুর্বলতার সাথে জোটে খিলখিল হাসির দ্যুতি । অনেকটা এইরকম দ্যুতিময় আলো দেখেছিলাম সদ্যখোলা ফ্লাইওভারের দুধার ঘেঁষে । যদিও যাই নি ওদিকে । কারণ কেসটা প্রবলেমেটিক । সাতমাথার ক্রসিঙে সংকটময় অবস্থার খবর পড়লাম গতকাল আর আজ দুদিন পরপর । কাল থেকে নাকি শুরু হয়ে যাবে পাড়ায় পাড়ায় পূজো যা শুনে অনেক উদ্যোক্তার ভ্রু কুঁচকে যায়, "এতো দেখছি মহাঝামেলা" । আদেশ দিদির ছাড়া আর কারুর নয় । তার কাজ কেবল প্রবলেমবাজি করা । মাঝে মাঝে আপনমনে হেসে যাই এই ভেবে যে সুনীলের যুক্তিসিদ্ধ কর্ণপ্রীতির চেয়ে প্রকটিত হয়ে ওঠে কর্ণচরিত্র নিয়ে পাঠকসমাজের দু'পক্ষের মধ্যে 'আপনার সমস্যাটা ঠিক কোথায়' রেষারেষি । ফ্লাইওভার পেরিয়ে পার্কসার্কাস মোড়ে নামতে না নামতে দুই পক্ষ থেকে বেড়ে সাত পক্ষের গোলমাল শুরু হয়ে যায় । 

সর্বনাশ হয়েছে । ধোনি নাকি আর আগের মত খেলতে পারছে না । ভাবছি গোটাভারতের প্রতিনিধি হয়ে সিড্ যদি এগিয়ে ধোনিকে জিজ্ঞেস করে বসে - "হোয়াটস্ ইওর প্রবলেম?", তবে তার উত্তরে ধোনি কি সত্যিই সত্যিই একদিন ম্যানির মত সেই ম্যামথ টাইপের ছোবল মারতে পারবে যা দেখলে জনস্রোত আবার আগের মত সাতপক্ষ থেকে দুইপক্ষ থেকে একপক্ষে নেমে স্বাভাবিক ছন্দে চলতে শুরু করবে ? 

'আইস এজ'কে দুভাগে আলাদা করলে দাঁড়ায় আইস অর্থাৎ বরফ যার মানে ঠাণ্ডা কুল এবং এজ অর্থাৎ বয়স যা শুধু ক্রমবর্ধমান । ধোনি নিশ্চয়ই মুভিটা দেখেনি যা দুর্বলশরীর নিয়ে আমার ছেলে তিন-তিনবার দেখে ফেলেছে । এতে নিজের বা অন্য কার কোথায় কী প্রবলেম হবে বা হচ্ছে তাতে ছেলের ভারী বয়ে গেছে ।