25 Sept 2014

অহংকারশূন্য হয় না


তোমার অহংবোধের গম্য হয় না আমার, তাই তোমার অহংকার রেসে নাম দিই না । আর জীবনটাই অহংকারশূন্য হয় না বলে আমি এখনো পিছিয়ে পড়ি । স্বেচ্ছায় ।

যদি কখনো দেখতে পাও যে আমি এগিয়ে যাচ্ছি, তাহলে ধরে নেবে যে তোমার অহংবুদ্ধি অনেক কমে গেছে । এবং সেটা দুজনের পক্ষে স্বাস্থ্যকর ।

সহজ চিন্তার রহস্য


অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো কাজটা । শুধু 'ঝুঁকিপূর্ণ' বললে খালাস করতে চাই না, আকাশ বা মাটির দিকে না তাকিয়ে কাজটার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই অন্তত একবার । এটাকে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা আমার মত সাধারণ একজন মানুষের উচ্ছ্বসিত ভিক্ষা বলতে পারো । একটা শিক্ষাভিক্ষা । এই শিক্ষা যাবতীয় শিক্ষা নয়, একটা সুপরিকল্পিত শিল্পের সংস্পর্শে আসার শিক্ষা । আভিজাত্যহীনতায় মোড়া একটা পরিকল্পনা যেটাকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখেছিলো বা তির্যক মন্তব্য করেছিলো কিভাবে একটা চূড়ান্ত সাফল্য এনে দেয়, তার সুশিক্ষা । এই ধরণের শিক্ষার ভিক্ষা পেলে বা শিক্ষালাভ হলে আমার মত লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর লাভ । এমন বিরল শিক্ষালাভ আদৌ সম্ভব কিনা ভাবছি, কারণ এটাই বিজ্ঞানের অন্তঃপুরের রহস্য । 

কেন বলছি সেটা পরে আসছি । তার আগে আমিও সবার মত খুব গর্বিত এবং মঙ্গলযানের কক্ষপথীয় সাফল্যের পেছনে যে টিম কাজ করেছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য রইলো আন্তরিক অভিনন্দন । চন্দ্রযানের পর এরকম আরো সাফল্য এসে আমাদের তথা গোটা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করুক । যাইহোক, আসল কথায় আসি এবার । মহাকাশ ও তার প্রতিবেশীর শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান বুঝে আঁক কষে প্ল্যান করা চাট্টিখানি কথা নয় । আবার এইরকম একটা প্ল্যান বা কয়েকটা সাব-প্ল্যান একত্রিত করে কাজে লাগালেই যে সফল হবে তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই । এই ব্যর্থতা বিজ্ঞানের ইতিহাস ঘাঁটলে প্রচুর পাওয়া যাবে, এমনকি চিন বা জাপানও ব্যর্থ হয়েছে মঙ্গলযান উৎক্ষেপণে । এখানে কিন্তু খোদ ভারতের ইসরো টিম সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো প্রথম চেষ্টাতেই । গত ৫ই নভেম্বর থেকে ২৪শে সেপ্টেম্বর - ৩২২ দিনের যাত্রা শেষপর্যন্ত সবার মন জয় করে । এর কিছুদিন আগেও নাসার মত বিশ্বখ্যাত সংস্থা তাদের মাভেন (MAVEN) মঙ্গলাভিযানে সফল হয়েছে যদিও তুলনায় আরো কম সময়ের মধ্যে । কিন্তু এখানে সময়ের মাপটা বড় কথা নয়, সাফল্য শেষ কথা ।  

৩২২ দিন । ৩২২ দিন লাগলো মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে পৌছাতে । অথচ চারপাশে দেখি আমরা ঘন্টায় ঘন্টায়, দিনে দিনে, মাসে মাসে কতকিছু হারিয়ে ফেলি, কতকিছুর মুখোমুখি হই, কত বাধাপ্রাপ্ত হই । মাস ঘুরতে না ঘুরতে জলের কল খারাপ হয়ে যায়, টিউবলাইট পাল্টাতে হয় বা শর্ট-সার্কিট হয়ে যায় । এক ঝোড়ো হাওয়ায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ার মত ঘটনা আর নতুন নয় । আবার বাইরের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে কতবার রিকশা-অটো-বাসের সাথে ধাক্কা খেতে হয়, বা হঠাৎ করে ইঞ্জিন বসে যাওয়া, চাকায় ফুটো হয়ে যাওয়াও একেকটা মাথাব্যথা । দৈনন্দিনতার এমন ঝুটঝামেলার ছবির নানা রং দেখতে আমরা অভ্যস্ত । মাটির বুকে বা মাটি থেকে বড়জোর কয়েকশো কিলোমিটারের দূরত্বের মধ্যে অনেককিছু বিপত্তি ঘটে যায় সেটা বলাই বাহুল্য । আর এই পৃথিবীর সৃষ্টি তো একদিনে হয় নি, লেগেছে কোটি কোটি কোটি কোটি... থাক বলে লাভ নেই । বরং বাইবেলের সুত্র ধরে চোখদুটো শিরোধার্য করে অবিশ্বাসের সুরে বলি - পৃথিবীতে আলো, বাতাস, সর্বশেষে প্রাণের সৃষ্টি করতে স্বয়ং 'ঈশ্বর'-এর সময় লেগেছে মাত্র '৬ দিন' । এর পেছনে এখনো কোনো সুগঠিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই বা থাকলেও কেউ আজও একমত হতে পারে নি । যাইহোক, তারপর তো ধীরে ধীরে তৈরী হয় মানবসভ্যতা, মানুষের হাত ধরে আসে বিজ্ঞান । সেই বিজ্ঞানের জোরে একেকটা রহস্যের জট খুলতে থাকে, নতুন নতুনআবিষ্কার করে, আরো আরো দিশার আলো এনে দেয় । এভাবে একদিন শুরু হয় মহাকাশবিজ্ঞান । ব্ল্যাকহোল বা হিগস বোসন কণার মত কালজয়ী আবিষ্কার আমাদের অনেকের জানা । আবার সেগুলো নিয়ে প্রচুর তর্কবিতর্কও রয়েছে যেহেতু বিজ্ঞান নিজেই একটা রহস্য । 

বিজ্ঞান রহস্যের জট খুলতে যেমন ওস্তাদ, তেমনি পিছপা হয় না নতুন নতুন রহস্য তুলে সামনে হাজির করতে । যেমন ধরা যাক, আমাদের মঙ্গলযান । খরচ পড়েছিলো মাত্র ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার । আর সবচে' বিতর্কিত বস্তু হলো এর অটোনমি (Autonomy) যা একটা ইলেক্ট্রনিক ব্রেন । সেটা পৃথিবীর পরিমণ্ডলের বাইরে, মাধ্যাকর্ষণ বা কক্ষপথ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে মঙ্গলযানের সমস্ত কলকব্জা প্রায় ৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখে । অনিয়ন্ত্রিত শূন্যতার উপর নিয়ন্ত্রণ । আর এই নিয়ন্ত্রকের মধ্যে রয়েছে মাত্র ১৫ কিলোগ্রামের একটা বৈজ্ঞানিক যন্ত্র যা কয়েকটা বিশেষ যন্ত্রপাতির সমষ্টিমাত্র । সেটা বিভিন্ন প্যারামিটারের কাজ করে যেমন অবস্থান নির্ধারণ, তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ, গতিবিধির উপর নজর, দিকনির্দেশ পাল্টানো, রঙিন ছবি তোলা, পৃথিবীতে বার্তা দেওয়া ইত্যাদি জরুরী সব কাজ । এটা নিয়ে অনেকে ভ্রু কুঁচকে গেছিলো, এর কার্যক্ষমতা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলো । তোলাটাই স্বাভাবিক, কারণ পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য তো লাগবে অনেক অনেক জটিল, শক্তিশালী ও সুনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রবিশেষ যা শেষপর্যায় অবধি প্রায় নিঁখুতভাবে কাজ করতে পারবে । তাই ইসরো টিমের দায়িত্বে থাকা মম্ (Mars Orbiter Mission) তথা মঙ্গলযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সুব্বা অরুনানের তত্বাবধানে থাকা প্রজেক্ট টিম কাজটা অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে । অরুনানবাবুর কথায় এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে "complex mathematics and simple thinking", যা অন্যান্য দেশের মঙ্গলাভিযানের কাহিনী থেকে আলাদা করে দেয় । একটা সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তাভাবনার মূলস্রোত যেভাবে এগোতে পারে পৃথিবীর মায়া কাটানোর পর থেকে শুরু করে মহাকাশের সমস্তরকমের বাধাবিপত্তির সম্ভাবনা মাথায় রেখে, সেটা একটা বিরাট কীর্তি বললে কম বলা হবে । আর ভাগ্যও সহায়তা করেছে এটা বলতে বাধা নেই আমার, কারণ মহাকাশের মত একটা নিবিড় অসীম শূন্যতার মধ্যে যে কতকিছু থাকে সেটা অজানা, হিসেবের বাইরে । সেটা জানতে তো বছরের পর বছর উপগ্রহ পাঠাচ্ছে নাসাসহ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা । আকাশের তলায় এই পার্থিব ছবির সাথে কোনো মিল নেই মহাকাশের অপার্থিব ছবির । এ ছবি একদম নিকষ কালো, রয়ে আছে অজস্র নানা সাইজের গ্রহ-উপগহ-নক্ষত্রের আনাগোনা । এমন ছবির বুকে পড়ে বেহিসেবী আচঁড় কাটা । কখন কবে কোথায় কিভাবে কোনমুহূর্তে কি এমন ঘটতে পারে তার কোনোটাই আমাদের হাতে নেই, বিজ্ঞানের হাতে নেই, সর্বোপরি আমাদের গর্বের ইসরোর নেই । তো কি করেছে ওরা ? কি এমন করেছে যা এতকিছুর সম্ভাবনার মধ্যে দিয়ে গেলো ? এত কম বাজেটে কি করে যে প্রোজেক্টটা খেল খতম করে দেখাতে পারলো ? 

এইগুলো আসলে রহস্য । রহস্যের মাথায় রয়েছে জটিল অঙ্ক যা মহাকাশের মত লিমিটলেস বস্তুর সাথে মোকাবিলা করার জন্যে অত্যাবশ্যক । এটা ছাড়া দুরত্ব, সময়, তাপমাত্রা, দুই গ্রহের গ্রাভিটির তারতম্য এবং অন্যান্য ডিপেন্ডেন্সির ফর্মূলা বের করা সম্ভব নয় । সাথে রইলো "simple thinking"-এর মত এক আশ্চর্য ক্ষমতা । একটা সহজ চিন্তা মানে কতটা সহজ হতে পারে সেটা একটু খতিয়ে দেখা হোক । মম-এর অরুনান এর আগে চন্দ্রযানের সাথে যুক্ত ছিলেন আর সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন । তাই মঙ্গলযানের ক্ষেত্রেও প্রায় একই কাঠামো লেগেছিলো পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে শূন্যে নিক্ষেপ করার জন্য । কিন্তু এর আগে কোনোদিন ৩৫০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহের সাথে যোগাযোগ করে নি বা এব্যাপারে একরকম অনভিজ্ঞ বলা যেতে পারে । অনভিজ্ঞতার মত একটা ঝুঁকি নিয়ে এত বড় চ্যালেঞ্জ নিতে গেলে যে 'সহজ চিন্তা' লাগে, একটা কমন সেন্স চাই বা একটা সাধারণ ভাবনা যার মধ্যে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে । সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়া । ধরা যাক গাড়ির কথা একটা গাড়ি তৈরী করার জন্য ইঞ্জিন শেষ কথা নয়, এর সাথে রয়েছে রাস্তার অবস্থা বুঝে চলা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নানারকম সেফটি এন্ড সিকিউরিটির মত নতুন নতুন ডিজাইন । প্রতিটা ডিজাইনের পেছনে রয়েছে অনেক চিন্তাভাবনা । শেষপর্যন্ত গাড়িটা বাজারে নামে । আমরা কিনি নিজেদের সুবিধার্থে আর নানা সমস্যায় পড়ে কমপ্লেইন করি । এটা তো হওয়ার কথা । গাড়ির মধ্যে মানুষ থাকে । মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে গাড়ি । হয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে, নাহয় নিয়ন্ত্রণে থাকতে থাকতে কিছু যন্ত্র বিকল হয়ে যায় অনেকসময় । এর পেছনে থাকে আবার প্রচুর খরচা । এসব আকছার হয় বলে আমরা যথেষ্ট সচেতন, তাই নানা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি গাড়ি কেনার আগে । অর্থাৎ একটা গাড়ির সংস্থা থেকে শুরু করে একজন কাস্টমার হাজারো চিন্তা করে ।

আর ওদিকে মঙ্গলযানের মত একটা 'অসম্ভব' কাজটা সম্পন্ন করতে কোনো জলজ্যান্ত মানুষকে পাঠাতে হয় নি, পাঠানো হয়েছে একটা উপগ্রহ মাত্র যার নিয়ন্ত্রণের ভার পড়ে শুধু অটোনমাস সিস্টেমের উপরে । যার প্রাণ নেই, যার রক্ত নেই, ফুসফুস নেই, মলমূত্র ত্যাগ করার মত জৈবিক ক্রিয়াশীল নয় । আদ্যোপান্ত একটা নির্জীব বস্তু যার মধ্যে আগে থেকেই পরিকল্পনামাফিক 'কৃত্রিম প্রাণ' সঞ্চারণ করে রেখে গেছে টিম । এবং সেই প্রাণ হাতে করে বস্তুটি শুরু করে তার কালজয়ী যাত্রা । পৃথিবীতে রয়ে যায় উদ্বিগ্ন মানুষ, ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া বিজ্ঞানীরা, ঘুমটুম ভুলে যাওয়া বার্তাগ্রহণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা । নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা উপগ্রহ চলতে থাকে মিনিটে, ঘন্টায়, দিনে, সপ্তাহে, মাসে আর একটার পর একটা ধাপ পেরিয়ে যেতে থাকে বিনা বাধায় । শেষে বাজিমাত করে ফেলে । অনেকে নিশ্চয়ই বলবে যেকোনো কিছু একটা ঘটে যেতে পারতো মহাকাশে যেমন একটা গ্রহ হঠাৎ তার কক্ষপথ ছিঁড়ে ছিটকে বেরিয়ে দিকশূন্য হয়ে ছুটতে থাকলো আর তার পথে পড়লো আমাদের মঙ্গলযানটি । ব্যাস । কাজ ভণ্ডুল । তা তো হয় নি কপাল ভালো বলে । আর বাকি থাকলো ৩২২ দিনের মত একটা সময়ব্যাপী নির্বিঘ্ন ঘটনা । শুধু যাওয়া আর যাওয়া । অটো-রিকশা-বাসের ধাক্কার সম্ভাবনা নেই ধরে নিয়ে চলা । একরকম শূন্যতায় ভর করে স্বনিয়ন্ত্রিত অভিযান । এটার জন্য লেগেছিলো স্রেফ 'সহজ চিন্তা' ?! হতেই পারে । উপগ্রহের কার্যক্ষম যন্ত্রপাতিবিশেষ সিম্পল নয়, এদের কাজের প্রকৃতি অকৃত্রিম নয়, কিন্তু এইসব সম্ভব হয়েছে একমাত্র 'সহজ চিন্তা'-এর ফলে । আ ট্রুলি এমেজিং রেজাল্ট ফ্রম আ ভেরি সিম্পল অ্যাপ্রোচ । যত সহজ চিন্তা, তত সফল কাজ । এটা একটা বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে আমার সবার মনে । আমরা চেষ্টা করবো কতটা সহজে কঠিন কঠিন কাজ করে ফেলতে পারা । নিজের সাধারণ মেধাকে পুঁজি করে দৈনন্দিনতার জটিলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারা । 

এর পাশাপাশি জটিলতার মোকাবিলার নামে সহজপন্থাকে অবলম্বন করার মধ্যে রহস্য লুকিয়ে থাকুক । 

19 Sept 2014

পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট



বুধবার ( ১৭ই সেপ্টেম্বর ) সকালের দিকে কাজের ফাঁকে ফেসবুকে কিছু ক্লিপ দেখছিলাম । প্রথমে মনে হল স্টুডেন্টদের ধরে ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে শুইয়ে, জামার কলার বা হাতা ধরে টেনে গণ্ডগোলের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো । তার মধ্যে একটা মেয়ে সম্ভবতঃ ছাত্রী ছুটে এসে মাটিতে শুয়ে পড়ে থাকা আহত (সত্যি আহত কিনা সন্দেহ আছে বললে অনেকের রোষের কারণ হতে পারি আমি । ফুটবল খেলতে খেলতে ইয়োলো বা রেড কার্ড যাতে দেখাতে বাধ্য হয় সেইভাবে রেফারিকে বোকা বানানোর ধান্দায় থাকে, ঠিক সেরকম লাগলো আর কি?!) একজনকে সম্ভবতঃ ছাত্রকে বেশ আচ্ছা করে নিজের স্মার্টনেস দেখানোর তালে জড়িয়ে ধরেছিলো, কোথাও লাগলো কিনা পেটে বুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেখছিলো আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো । এটা বেশ কয়েক মিনিট ধরে দেখাচ্ছিলো । অবশেষে দুজনের চোখে পড়লো যে ক্যামেরার চোখ ওদের দিকে তাক করা, তাই ছাত্রটা বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো হয়তো এই ভেবে যে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে । যাকগে এত ফালতু বকে ফেললাম যদিও এই অংশটা যে বেশ ভালোই ড্রামাটিক হয়েছে সেটা বলতে দ্বিধা নেই আমার ।


কিন্তু বাকি যা দেখলাম সেটি হলো অল্পালোকে সাদা বা ব্রাউন ইউনিফর্ম আর মাথায় শক্তপোক্ত ওল্টানো কাপ পরা লোকের বিশৃঙ্খল দল ( জাস্ট পুলিশের লোক বলতে কষ্ট হচ্ছে ), কিছু স্বাস্থ্যবান লোক, কিছু গাঁট্টাগোট্টা, কিছু ছোকরা চেহারার ছেলের মধ্যে । কিছু উদ্ধত মেয়েদের উপস্থিতির ইতিউতি । গোটা ব্যাপারটা দেখে বোঝার উপায় ছিলো যে শুরুটা কোথায় বা কিভাবে যদিও তথ্যসুত্রে আমরা জানি আর ধরে নিয়েছি কজ্ আর এফেক্ট । কিন্তু এটা ইতিহাসে বা সঠিকভাবে বলতে গেলে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের পাতায় প্রথম চ্যাপটার না হলেও , আমার চার বছরব্যাপী (২০০১-০৫) এই কলেজজীবনেও এ ধরণের পুলিশি হাঙ্গামা ঘটে নি । তাই স্বাভাবিকভাবে সবার মাথাচাড়া দিয়ে একটা বড় খবর হয়ে গেলো । চারদিকে শেয়ারিং চলতে থাকলো মূলতঃ ফেসবুকে । সবাই কমবেশি প্রতিবাদে সামিল হলো । আমরা যারা ল্যাদখোর ( ইনক্লুডিং মি ), তারাও যা পারছি তাই লিখে পোস্ট করছি । সাথে #HokKolorob-এর লম্বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিছিল । যেটা রাস্তায় নামার বাকি ছিলো তখনো । 

যাইহোক এই প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকছিলো । হবে না বা কেন । এটা দিদির আমল বলে কথা । দিদিগিরির Nth সিজন্ বলে কথা । পরিবর্তনের আমূল পরিবর্তন বলে কথা । শেষে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে ফেসবুকে ফের অন করে একসময়ে জানতে পারি তিরিশের উপর ছাত্র হসপিটালাইজড্, চল্লিশের উপর অ্যারেস্টেড্ । ব্যাপারটা যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পেলাম একটা ক্লিপ যেখানে দেখতে পেলাম একজনকে ধরে যারপরনাই লেভেলের মারধর করছে গুন্ডাকয়েক মিলে । বোঝো কাণ্ড ! উপাচার্যের নাবালকোচিত প্ল্যানমাফিক পুলিশিকাণ্ডের এই অংশটা আমার সমস্ত ক্লান্তশরীরকে আরো কাহিল করে দেয় । নিজের চোখে এমন বেধড়ক পেটানোর চরম পর্যায় আগে দেখেছি কিনা ঠিক বলতে পারবো না । শুধু অসহায় হয়ে স্বীকার করতে পারি এরকম দৃশ্য দেখতে আমি অনভ্যস্ত । কি হচ্ছে এটা ? কেন এমন নির্মম মার ? স্কুলের বাচ্চাকে মারা অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষিকার কীর্তিমানের একেকটা মূর্তি জোট করলে যা দাঁড়ায় তার চেয়েও অনেকগুণ ভয়ানক । ইতিহাস যেন নিজেও লজ্জিত হবে কিনা তা নিয়ে রীতিমত বিব্রত । আমি খুব লজ্জিতবোধ করছি এই নোংরা রাজনীতি নিয়ে, এই রাজ্যসরকার নিয়ে, তার উপর এই অচেনা যাদবপুর নিয়ে যেখানে আমার জীবনের চারটে মূল্যবান বছর কেটেছে ।

ধিক্কার জানালাম ক্লান্ত মনশরীর নিয়ে । কাকে ? কাউকে না, শুধু সময়কে । সময়টা দ্রুত বদলে যাচ্ছে অথচ পরিবর্তনের সময়জ্ঞান বলে বিন্দুমাত্র নেই । সত্যি নেই, ভাই ।  

কিন্তু উপাচার্য ? নাহ, এর মত একজন নাবালকের প্রতি ধিক্কার জানানোর সময় বের করতে ইচ্ছা নেই আমার । আর কটা দিন একে একে মোমবাতির মত ফুঁ দিয়ে নেভালেই পুজোর হইহল্লা । বাঁশক্লান্ত রুটিন থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত বাঁশের রমরমার সাথে জয়েন করার অপেক্ষা শুধু । সেই অপেক্ষায় ব্যস্ত বাংলার বুক বর্শাটা উড়ে এসে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিলো । বর্শাটা শ্রীবাঁড়াদণ্ডহীন সেই উপাচার্য-কাম-নরাধমের হাত থেকে ছোঁড়া । যেখানে আজকের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের "এই অধম" বলতে ভালোবাসে, সেখানে এই নরাধমের উত্তম থাকার এহেন নাবালকসুলভ অস্ত্রধারণ কিছুতেই সমর্ধনযোগ্য নয় । 

হাজার হোক, সুরক্ষিত ঘেরাটোপে থেকেও নিরস্ত্র ছাত্রদের হাতে প্রাণ সংশয়ের অতিনাটকীয়তার দৌলতে সরকারের পক্ষ থেকে সেরা নাট্যকারের পুরষ্কার দেওয়া হোক । বিরোধীদল, প্রাক্তন উপাচার্যরা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বা আপামর জনসাধারণ ওর পদত্যাগের দাবী করুক বা যাই দাবী করুক, নিদেনপক্ষে প্রাইমেরি স্কুলের টিচার হওয়ার যোগ্যতার একটিও চুল দেখতে পাচ্ছি না আমি । মানবতাবোধ পুরো ন্যাড়া, বরং যে কোনো পুজোসংখ্যার জন্যে আসুরিক চরিত্র হিসেবে একটিমাত্র পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট । নাহলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে দেখবো অসুরবধের শিল্প, তার সাথে ম্যাচ করে কল্পনা করবো দাঁত-খিঁচিয়ে-ওঠা অভিজিৎবাবুর বিভিন্ন কার্টুনভঙ্গিমা

18 Sept 2014

হাওয়া (পদ্য নয় গদ্য, হালকা মেজাজে ) by Sushabhan Banerjee


হাওয়া টা দেখতে কেমন? গন্ধ কেমন ছিল??
জানিনা।
হয়ত বুধিজীবি রা পারবে বলতে, আমি পারবনা কারণ আমি মাধমিকে ভাবসম্প্রসারণ করিনি ।

তাও সংক্ষেপে বল্লে গন্ধটা বোধয় শিউলি(ফুল),পান্ডেলের নতুন কাপড়, চাদার বিল, নতুন জামা, হাফ ইঅর্লি পরীক্ষা এই সব মেশানো কিছু একটা। আর দেখতে অনেকটা কুয়াশা কুয়াশা মতন।
সেপ্টেম্বর মাস মানেই হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা । খুব মনে পরে স্কুলে রুটিন টা থাকত বিশ্বকর্মা পুজো টাকে মাঝে রেখে দু দিন ছুটি দিয়ে অঙ্ক পরীক্ষা (অনুয়ালে বিশ্বকর্মার বদলে দোল). এই অঙ্ক পরীক্ষার চক্করে মা আমায় কোথাও রান্না পুজোয় বাসী রান্না খেতে যেতে দিতনা. যা খেতে হবে রাত্রি বেলা। তো এই রান্না পূজোর সন্ধেটা আমাদের কাছে বেস একটা ছোট উত্সব ছিল ( যাকে এখন আমরা গেট টুগেদার বলি আরকি ) সন্ধে বেলা সবাই ঠাম্মার কাছে। মূল আকর্ষণ টা থাকত চালতা, নারকেল ভাজা আর ইলিশ মাছের ডিম, আর নতুন জামা। পুজোর যার যা দেওয়া পাওয়া বাকি থাকত পিসি দের, জেঠুর সব জামা গুলো একবার করে পরে সাইজ রং সব চেক করে নিযে রাত করে বাড়ি। মনে মনে একটাই জিনিস, পরশু অঙ্ক তারপর ইতিহাস, মহালয়া চলে এল. তারপর তো, কর্ম শিখা র মৌখিক। ব্যাস মুক্তি।
রান্না পুজোর পরের দিন আবার বিশ্বকর্মা পুজো। সকালে কয়েকটা প্রশ্নমালা রিভাইস দিয়েই , বাবার দোকানে প্রসাদ আনতে যাওয়ার তারা। বাস অঙ্ক পরীক্ষা। দেখতে দেখতে ইতিহাস। এখন মহালয়া টাও আমাদের কাছে ভিসন অভায়লাবল , তখন একবার মিস করে গেলে এক বছর বসে থাকো. ভোর থেকে উঠে তাই রেডিও, তারপর tv তে... প্রতি বছর একই জিনিস তবু অদ্ভূত একটা উত্সাহ, উদ্দীপনা. তারপর কর্মশিক্ষা, মৌখিক। মৌখিক এর দিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরাটাও ছিল অন্য আমেজ। সব পান্ডেল গুলো কে একবার করে ঘুরে নেওয়া, কোথাও ঠাকুর ঢুকলো কিনা। কোনো থিম নেই, সোজা সাপ্টা বাসের পান্ডেল আরো জানতাম সামনের পাচ দিন ওই গুলই দেখতে হবে তবু কি যে দেখতে যেতাম কে জানে? কি একটা গন্ধ ছাড়ত ফাকা পান্ডেল টায়.
এবার আরবে ফিরি। আজ অফিসে বলল একজন হঠাত, কাল থেকে পুজো শুরু কারণ কাল নাকি বিশ্বকর্মা পুজো. জানতাম ও না, মনেও পরেনি। কাল আমাদের দোকানে পুজো হবে আগের মতো। এর পরেও মনে পরে নি যে আজ রাতেই রান্না পুজো টাও হত। wall এ একটা পোস্ট দেখে সেটা মনে পড়ল হঠাত রান্না পুজোর সন্ধে গুলোর কথা। একই রকমের মেনু অন্য কারো বাড়িতে হয়েছে। দাদু বছর পাচেক হলো চলে গেছে । গত বছর ঠাম্মাও। রান্না পুজোটা বন্ধ। আমি নিজেই বাসী রান্না গরম করে খেয়ে নিয়েছি, নারকেল টা পাওয়া যায়. ইলিশের ডিম বা চালতা খুজলে deport করে দেবে for sure .
বাইরে এখনো ৪৫ ডিগ্রী থাকে, আমি যে হওয়ার কথা বলছি, সেই হওয়া এ দেশে এসে পৌছায় নি কখনো, আশাও দেখছিনা। মহালয়া টাও শোনা হবেনা, ফাঁকা পান্ডেল দেখতে যাবার এখনো কোনো প্ল্যান নেই. গেলেও ফাঁকা পান্ডেল এ সেই গন্ধ আর পাবনা সেটাও জানি। পুজোয় ফিরে ছোট বলার সাথে এবারের পুজোর একটা তুলনা মূলক আলোচনা করবো সময় হলে.
এখন আমায় আর আগের মত কেউ জামা কিনে দেয়না , টাকা দিয়ে দেয়, কবে কিনব জানিনা। চতুর্থী পঞ্চমী করে হবে বোধয়, সবাই trial দিয়ে যেগুলো ফেলে রেখে গাছে সেগুলো তুলে আনব.. তবে আমি আসার আগে পূজোর ভ্রমন সংখ্যা টা কিনে হাফ পরে এসেছি। ফিরে পুরো দেশ আর অর্ধেক ভ্রমন টা গিলবো।

17 Sept 2014

নেহাত মন্দ** নই


আমি মানুষ হিসেবে নেহাত মন্দ** নই ।

**Terms & Conditions to be agreed by you.

15 Sept 2014

জেগে থাকাও একধরণের গভীর নিদ্রা


জেগে থাকাও একধরণের গভীর নিদ্রা

খোলা বগলের গতিবেগ


খোলা বগলের গতিবেগ আলোর চেয়েও বেশি ।

ফোঁটা ফোঁটা করে ফুটে ওঠা


ফোঁটা ফোঁটা করে ফুটে ওঠা । আজকের নয় । রোজকারের নয় । বৃষ্টির ফোঁটাচিহ্নিত সকালও নয় । এ একটি অন্যকাল ।

হাতমুখ ভিজতে থাকে । যত মোছে, তত ভেজে । রুমালের ব্যবহারিক অর্থ শুধু পকেটেই লিপিবদ্ধ ।
"কাছে এসো" আজকাল যোনিমুখ দেখে । একরকম সান্ত্বনার মাধ্যম । আয়না কাঁদতে পারে না শুধু পারে কান্না আঁকতে, যেভাবে শিল্পীরা খোঁজে । 

অনেকগুলো ফোঁটা । যেকোনো একটা আলাদা করা আইনত অপরাধ । এর শাস্তি প্রত্যেকটা ফোঁটার চেয়েও ভয়ানক । 

"দূর হও" এসময়ে শ্রুতিমধুর লাগে । বলতে মরা চামড়াও কাঁপে না ।

বাঁশ


বাঁশক্লান্ত রুটিনে একমাত্র আনন্দময় ব্রেকিং ফ্রি-পাস্ দেয় প্যান্ডেলের বাঁশ । বাঁশের ভিড় নিয়ন্ত্রণ । আলোকমণ্ডপের বাঁশ । জ্যামের বাঁশ । বাঁশের ধাক্কামাক্কা । বিরিয়ানির বাঁশ । অম্বলের বাঁশ । ঘামের বাঁশ । বাঁশের দুর্গন্ধী একপা-দুপা । বুকেপাছাতে ঘেঁষাঘেঁষির বাঁশ । বাঁশের ঝারিমারা । সার্কেলের বাঁশ । বাঁশের স্কোয়ার । ওয়ার্ড্রোব ম্যালফাংশনের বাঁশ । 

বাঁশ আসতে আর মাত্র দু'সপ্তাহ ।

10 Sept 2014

নেলকাটার

  
নিজের পায়ের নখগুলো হঠাৎ চোখে পড়লো । নাহ্ কথাটা খুব ভুল বলে নি সে । সেদিন । প্রায় তেরো-চোদ্দো বছরের পুরোনো কথাটা । সত্যি ! ভাঙা, এবড়ো-খেবড়ো, বহুদিন না-কাটা নামগন্ধহীন এমন দশখানা বড় বড় নখ দেখলে কোনো মেয়ে কিছুতে নিজের যোগ্যতার আওতায় আনতে সাহস পাবে না ! নির্ভেজাল, মসৃণ, সযত্নে কাটা ঝকঝকে নখযুক্ত পা যেসব পুরুষমানুষের তারা কি নির্ভরযোগ্য হয় ? নাকি উল্টো বোধের অগম্য হলো আমার ? সমাজবিজ্ঞানের খাতাকলমে আমি একজন হতভাগা হ্যান্ডিকেপ্ড বলে ? সেদিন কিন্তু চ্যাটবক্সে তাকে প্রোপোজ করার সময়ে আমি আমার পায়ের ছবি পাঠাই নি । তাও ? আমার সদ্যপাক ধরা সযত্নে ট্রিমিং করা প্রিয় ছাগলদাড়িতে হাত বোলাতে লাগলাম, যা অচেনা বা দূরাত্মীয়দের কাছে ফিলোজফিক্যাল শো-অফ হলেও আমার দিক থেকে কিঞ্চিন্মাত্র বৈরাগ্য । পরক্ষণে চোখ বুজলাম ।  

সেদিনের আমি । উইন্ডোজ এক্সপি রিলিজড্ হয় নি । কিবোর্ডে আঙুল চালিয়ে টাইপ করেছিলাম তার উদ্দেশে আমার কয়েক লাইনের পোলাপাইন ইশক্ । সাথে পাণিপ্রার্থনার একটি সরলমনা লাইন । অবশেষে চাপলাম সবচেয়ে বড় বোতামে প্রত্যুত্তরের আশায় অমনি দু'অক্ষরের ছোট্ট একটা অ্যান্টি-ইশক্ মেসেজ এলো তার পক্ষ থেকে - "ইশ্ !!!", ক-এ কথা নেই, ক-এ কওয়া নেই, ক-এ কারণ ছাড়াই । তার মিনিটখানেক বাদে "আমি তোমার পায়ের নখের যোগ্য নই" বলে এক লাইনের মেসেজ দিলো সে । আমায় উলঙ্গ অবস্থায় দেখা তো দূরের কথা, উলঙ্গ পা বা পায়ের নখ অবধি দেখেও নি সে । তবু আমার পায়ের নখের যোগ্য না হবার তার দাবীর ভিতরে প্রত্যাখানের একটা যে কূটকচালী খোঁচা ছিলো সেটা বুঝতে নেলকাটার-ও লাগে নি আমার । এভাবে পাণিপ্রার্থী হতে গিয়ে কাটা পাণিফল হয়ে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা যতটা তেতো, তার চেয়েও হেব্বিদিব্বি তেতো লেগেছিলো নিজের অযোগ্যতার কথা ভাবতে গিয়ে ।

ইয়াহু মেসেঞ্জারের চ্যাটবক্সটা তখনো হার্টবিটের মত দুটো কালারের মধ্যে সুইং করছিলো । একবার সাদা, একবার হলুদ । "কি হলো ???", "আছো ???", "কোথায় তুমি ???" - গাদাগুচ্ছের মেসেজ । ফাঁকে ফাঁকে গোটা বক্স কাঁপানোর BUZZ একদৃষ্টিতে দেখছিলাম । সাড়া দিই নি । কেন বা দিতাম ? ভাট ! সে মানুক যে আমি ছিলাম তার রক্তমাংসের একজন প্রেমিক । সে বুঝুক যে তার মস্তিষ্কের কর্টেক্সে কিলবিল করতো ডোপামিন, অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিন ইত্যাদিকার বিতিকিচ্ছিরি হরমোন যেগুলো তাকে "দোদুল্যমানা ললিতলবঙ্গলতার লাবণ্যলীলা"র একজন তুখোড় নায়িকা বানিয়েছিলো । আমার চোখ ফেটে প্রায় জল আসার উপক্রম । শেষে মনিটর অফ্ করলাম । এর আগে আমি কতজনের কাছে দাদা, দাদাই, দাদাসোনা বা দাদাঘেঁষা যত্তসব আলফাল উপাধিলব্ধ হয়েছিলাম । খালি মনে হতো কন্ডোমের মত একধরণের মানসিক সুরক্ষা থাকে এই দাদাহ্লাদী প্রেমের মধ্যে । টু বি অনেস্ট, আমার জীবনের প্রথম প্রেম সোজা গিয়ে পড়ে গেছিলো দাদামাখা ডোবায় । দাদা নং ১. সিজনে এমন চূড়ান্ত সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে আমার জন্মগত বধিরতা কতটা দায়ী সেটা কোনোদিন কেটে ছিঁড়ে দেখি নি । শুধু সেই মেয়েটার কথাটা আমার বুকে এক মোক্ষম ঘা দিয়েছিলো । 

ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে যাওয়া বুকের একবাটি পাউডার সারা মুখে মেখে একদিন গেছিলাম কলেজের লাইব্রেরিতে । একটা স্টাডিরুমে ঢুকে একটা ফাঁকা টেবিল পেয়ে থম মেরে বসে পড়েছিলাম । এক হাত দূরে টেবিলের উপরে রাখা কয়েকটা বইয়ের মধ্যে একটাতে চোখ আটকে গেছিলো । কভার জুড়ে একটা পেখম তোলা ময়ূরের রঙিন ছবি । টাইটেলে ইংলিশ হরফে মোটা মোটা করে লেখা - 'দ্য হ্যান্ডিকেপ প্রিন্সিপল্' । বাবাঃ ! একে ময়ূরের ছবি, তার উপর এরকম একটা সায়েন্টিফিক টাইটেল ! প্রথম প্রথম একটু ইতস্থত করলেও নিজে একজন প্রতিবন্ধী বলে বইটা হাতে নিয়ে পাতা ওল্টাচ্ছিলাম । হঠাৎ একটা লাইনে আটকে গেছিলাম - "The tail is a handicap. A beautiful handicap, but nonetheless, a handicap, a characteristic that in no way other than beauty aids the peacock" ! ল্যাও ঠ্যালা ! ময়ূরের চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা পেখম তার নাকি এমন একটা আলংকারিক বৈশিষ্ট্য যা বিরাট একটা দৈহিক সমস্যা । এটা নিয়ে জোরে দৌড়াতে পারে না । সহজে ধরা পড়ে যায় লোভী বা শিকারীদের খপ্পরে । আত্মরক্ষার্থে আদ্যোপান্ত ইউজলেস্ । অত্যন্ত বিপজ্জনক একটা বাধা । আসলে এটা নাকি তাদের সঙ্গিনী নির্বাচনের জন্যে একটা অস্ত্র । রঙবেরঙের উজ্জ্বল দীর্ঘ পেখম তুলে এরা ময়ূরীদের আকর্ষণ করে । দ্য ওনলি ওয়ান ওয়ে অফ সেক্সুয়াল সিলেকশন । প্রকৃতির নিয়ম কিনা এটা । ময়ূরীদের চোখে একেকটা ময়ূর একেকটা জর্জ ক্লুনি বা জনি ডেপ বা রিচার্ড গিয়ার বা সোম সরকার !!! আজ্ঞে !!! ফিল্মস্টারদের সাথে নিজের নাম উচ্চারণ করতে কার না ভালো লাগে ! 

সেই সুত্রে বধিরতাও বিরাট একটা সমস্যা । ফোনে হেসেখেলে ফ্লার্ট করা তো দূরের কথা, ফোনে গলার স্বর শোনা অসম্ভব । অচেনা কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে নিজে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও পাছে কথা বুঝতে না পারে এই ভেবে গলন্ত মোমবাতির মত মাথাটা মৃদুমৃদু নাড়িয়ে চুপচাপ ঘামতে থাকি । অবশ্যই প্রচলিত মুখ-হাঁ না করে চোখদুটোর মাপযন্ত্র চালু করে মেয়েদের সুডোল-খাঁদা নির্বিশেষে বুকদুটি দেখতে থাকি যা আমার প্রাণাধিক প্রিয় । এর নেক্সট্ ধাপে এগিয়ে যাওয়ার নন্-ভার্চুয়াল ক্ষমতা নেইযখন তখন ধরা পড়ে যাই শ্রীশ্রীব্যঙ্গবিদ্রুপকারীদের পাল্লায় । সামাজিক নিয়ম কিনা এটা । ঠিক ওই হ্যান্ডসাম ময়ূরের মত হেল্পলেস, আবার উল্টোটাও । অমন চাকচিক্য বর্ণাঢ্য সৌন্দর্যে ভরপুর ষাট-পয়ষট্টি ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পেখম আমার নেই যে নেচে কুঁদে ময়ূরীদের থুড়ি মেয়েদের অনায়াসে পটিয়ে ফেলবো, বরং বধিরতার মত দৈর্ঘ্যপ্রস্থহীন নিরাকার অস্ত্র নিয়ে আমি বেঢপ মাল ! দুজনের প্রতিবন্ধকতা, অথচ সঙ্গিনী নির্বাচনের ব্যাপারে পুরো সুমেরু-কুমেরু । ফ্রাস্টের চোটে গবেষণামূলক বইটা সজোরে বন্ধ করেছিলাম । স্টাডিরুমের 'কিপ সাইলেন্স'-এর কড়াকড়ি আবহাওয়াতে ঝিম মেরে থাকা উপস্থিত সকলে চমকে গিয়ে এদিকে তাকিয়েছিলো । পেরেমছেঁড়া একাকী দ্বিপদ গাধার মনে বিঁধে গেছিলো জোড়া জোড়া ট্যারাপেরেক । 


কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধঘরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম । পুরো ন্যাংটো হয়ে । চোখে অবশ্যই ছিলো শুধু চশমা, নাহলে নিজের রূপ দেখবো ক্যামনে ?! এপারের ক্ষতবিক্ষত মন নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ শরীরের প্রতিবিম্ব ওপারে দেখায় । প্রতিবিম্বটা কিন্তু সম্পূর্ণ অক্ষত । নিঁখুত । জিমকৃত সুঠাম । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম যে কোথায় ক্ষতস্থান ? কোথায় বা কিসের খুঁত ? প্রতিবিম্বটাও কী বাস্তবিক ক্ষতস্থান দখল করে আছে ? এপারে আমি বুঝি আস্ত একটা পরিত্যক্ত আবর্জনা, ওপারে তার নিঁখুত প্রতিফলন । মাথাভর্তি উস্কোখুস্কো চুল, দুটি সবল হাত, দুটি সবল পা, হালকা রোমশ বুক, ফ্যাট-হীন ফ্ল্যাট পেট আর তলপেটের নিচে সমস্ত মানসম্মানের ঝুলন্ত ধারক । এমন সম্পূর্ণ নিখুঁত প্রতিচ্ছায়াকে দেখতে দেখতে শুধাই, "আমি কালা বলে সে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না ?" 

প্রতিচ্ছায়াটা যেন নড়েচড়ে বসে, "বোধ হয় তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সে নিশ্চিত নয় তাই রিস্ক নিতে চায় নি !"

আমি : "আমার ভবিষ্যৎ তো আমি জানবোই । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি এখন । আর কটা বছর বাদে ক্যাম্পাসে ভালো চাকরি পাবোই পাবো"

প্রতিচ্ছায়া : "পাবি নিশ্চয়ই । কিন্তু তুই তো একজন প্রতিবন্ধী । বোধ হয় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তোকে নিজের হাজব্যান্ড হিসেবে ভাবতে রাজি নয়"

আমি : "তাহলে মেয়েটার পায়ের নখ না দেখেও বলতে হয় যে আমি তার যোগ্য নই, শুধু তার কেন, এ দুনিয়ার কারোর যোগ্য নই"

প্রতিচ্ছায়া : "ধুর পাগল একটা ! তোর মত ব্রাইট ছেলে আর কটা আছে ? কেউ একজন তোকে শুধু ভালোবাসবে না, জীবনসাথীও করে নেবে । আর ওই কালো মেয়েটাকে তুই ডিজার্ভ করিস না, পুরো গেঁজেল মেয়ে কিনা সে"

আমি : "নাহ মানতে পারলাম না । গোলপার্কের সিসিডিতে তিন-চারবার একসাথে খেয়েছিলাম । লেকে বসেছিলাম পাশাপাশি । আমার কাঁধে তার মাথা রেখেছিলো । তার হাতে আমার হাত রেখেছিলাম কিম্বা তার হাত আমার হাতে । চোখদুটো বড় বড় করে দেখতো আমার দিকে । ওর চোখেমুখে কোনো সিম্প্যাথির ছাপটুকু দেখতে পেতাম না বা চেষ্টাও করতাম না । প্রেমের পাপড়ি তার চোখে ফুটে আসতো, শ্যামবর্ণা গালে তার হালকা আভাস পড়তো । প্রেমের ব্যকরণের নির্ভূল বর্ণ সব খুঁজে পেতাম ওর সমস্ত অভিব্যক্তিতে । আমার অর্ধবোধ্য ভাষায় কথা শুনতো মন দিয়ে । মাঝে মাঝে দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশতঃ ইশারায় কথা বলতাম । সে সব কথা বুঝতো কিনা জানতে একটুও ইচ্ছা করতো না আমার । শুধু ওর সঙ্গলাভে সুখ খুঁজে পেতাম । যখন নিজে থেকে কথা বলতে যেতো তখন খুব টানটান হয়ে বসতো যেন আমি তার বাধ্য ছাত্র । খুব যত্ন করে থেমে থেমে কথা বলতো, কখনো বুঝতে না পারলে আমার হাতের তালুতে তার সরু সরু নরম আঙুল দিয়ে একেকটি অক্ষর এঁকে দিতো, কখনো বা ব্যাগ থেকে খাতা বের করে তার উপরে পেন দিয়ে তার বলা কথাগুলো লিখে দেখাতো"

প্রতিচ্ছায়া : "পিওর গান্ডু তুই একটা । এটাই স্বাভাবিক । এতে তোর অক্ষমতার কিছু নেই"      

আমি : "বস্ ! প্রেম কি সব ? আমার মতো একজন বালের ডেফকে কেউ বিয়ে..."

প্রতিচ্ছায়া : "চোপ ! মহাভারত পড়িস নি কি ? ধৃতরাষ্ট্রকে চিনিস তো ? কমপ্লিটলি ব্লাইন্ড, তার বউ ওকে ভালোবাসতো, নিজের চোখদুটি কালো কাপড় দিয়ে বন্ধ করে ছিলো শেষজীবন অবধি আর একশো একখানা ছানাপোনা হয়েছে । ভাব ! রামায়ণের অন্ধমুনির কথা তো জানিস ? তারও..."  
   
আমি : "আহ ! জানবো না কেন ? কিন্তু অন্ধদের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলিস না । বাল্মীকি বা ব্যাসদেব বধিরতাসম্পন্ন চরিত্র একটাও প্রডিউস করেছে ? শুধু অন্ধ বা পায়ে খোঁড়া বা দশটা মুণ্ডুওয়ালা নিয়ে বাঘা বাঘা কপচালো । অন্ততঃ একটা প্রধান বধিরচরিত্র ভাবতে পারতেন, নাকি সেরকম কেউ একজনকে ঢোকালে গোটা মহাভারত অশুদ্ধ হবে ? শ্রবণহীনতা নিয়ে বুঝি কোনো গল্প হয় না? প্রেমযৌনতা বলে কিছু হয় না ? হোয়াট ননসেন্স !"

প্রতিচ্ছায়া : "হুম ! কি করবো বল তো ? পুরাণেও নেই, কোরানেও নেই, বাইবেলেও নেই । থাকলেও শুধু বলা আছে যীশুখ্রিষ্ট নাকি একজন বোবাকালা লোকের কপালে হাত দিয়ে তার শ্রবণশক্তি আর বাকশক্তি ফিরিয়ে এনে দেয়..." 

আমি : "হা হা হা ওইসব গাঁজাগুরি গল্প রাখ ! যতদুর জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চেক রিপাবলিকের মত প্রগতিশীল দেশের কিছু অনামী লেখক বধিরতা ও তার কিছু চরিত্রসৃষ্টি করে গেছেন । সেগুলো তো হ্যারি পটার গোছের পপুলার নয় যে এখানকার মেয়েরা পড়ার জন্য ঝাঁপ দেবে ? এরাজ্যে ডেফনেস নিয়ে সিংহভাগের কল্পনার কোনো অ আ ক খ নেই । ধারণার বিন্দুমাত্র নেই একজন ডেফ কিভাবে লাইফ লিড করে । কোনো স্রেফ চোখ বন্ধ করলে বোঝা যায় অন্ধত্বের ভয়াবহতা, হাত-পা ভাঙলে বোঝা যায় পঙ্গুত্বের সীমাবদ্ধতা, কিন্তু বধিরতার ব্যাপারে প্রাকটিক্যাল সেন্স তৈরী হয় না যতক্ষণ না কেউ নিজে তার জন্মগত বা দুর্ঘটনায় পড়ে শিকার হচ্ছে । এটা কি হাতের মোয়া ? বরং মোয়া-ভারতের মত কাব্যিক ছক্কাপাঞ্জার যত বহর দিক, বাঃ-বেলের মত যত ভাঁওতাবাজ হোক, গোটা কাহিনীজুড়ে বধিরতার জিরো ফিগার !"

প্রতিচ্ছায়া : "ঠাণ্ডা হো । মানছি । এও জানি যে একদিন সন্ধ্যায় কলেজের 'সাংস্কৃৎ' ফেস্টে ওকে নিয়ে গেছিলি । তুমুল নাচ করেছিলি একসাথে । হে হে হে ! ফেরার পথে তোরা দুজনে হাত ধরাধরি করে ৮বি স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে থানা অবধি হেঁটেছিলি । রাত নটা বা সাড়ে নটা হবে বোধ হয় । অন্ধকারাচ্ছন্ন ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাঝপথে সে তোকে থামিয়েছিলো । তোর গালে টুক করে চুমু খেলো । তুইও শালা পাল্টাচুমু দিতে গিয়ে ওর কালো মুখখানা দুইহাতে বন্দী করে ওর ঠোঁটদুটিতে তোর ঠোঁটদুটি চেপেছিলি । ঠোঁটপর্ব চলতে চলতে তোর ডান হাতটা নেমে গেছিলো ওর বুকের কাছে । সেও একটা হারামির বাচ্চা বলে সামলাতে না পেরে আরো জাপটে ধরেছিলো তোকে । ওর জামার তলায় বেয়াদপের মত হাত ঢুকিয়ে শরীরের প্রাইভেট অঙ্গে..."

আমি : "মনে করাস না প্লীজ ! আবেগে ওইসব তো ঘটে থাকে, বেকার নুন ছিটিয়ে লাভ নেই"

প্রতিচ্ছায়া : "আলবাত মনে করাবো ! শালা উজবুক ! আবেগের নিকুচি করেছে ! যা করেছিলিস তোরা সব নিছক সুড়সুড়িতে । এই সুড়সুড়ির কোনো গাছপাথর নেই..."

আমি চুপ করে থাকি এসময়ে । প্রতিবিম্বও চুপ । মনটা ভীষণ খুঁতখুঁত করে এইসময় । মেয়েটা যদি আমায় এই ন্যাংটো অবস্থায় একটু বেশি সময় নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পেতো মাথা থেকে পা অবধি যেভাবে আমি প্রতিবিম্বকে দেখছি তাহলে আদৌ কী বধিরতা ধামাচাপা পড়ে থাকতো ? বাঞ্চোওওওৎ !! এই মেয়েটা !! আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটা কিনা শেষে চ্যাটে বলে আমার পায়ের নখের যোগ্য নয় ! সারা প্রতিবিম্ব থর থর করে কেঁপে ওঠে । ঘেমে যায় । প্রতিবিম্ব থেকে চোখ সরিয়ে চারদিকে উদভ্রান্ত হয়ে চেয়ে থাকি । মনে হল ঘরের চারটে দেওয়াল আমার স্বমেহনের মুগ্ধতায় যেন একে একে টুপি খুলে নতজানু হয়ে কুর্ণিশ জানাচ্ছে একমাত্র এই পুরুষালি দাম্ভিক অস্ত্রকে । এই চারখানা দেওয়াল বোঝে না যে ভিতরের তলানিতে ঠেকে যাওয়া মুষড়ে যাওয়া কষ্ট মাস্টারবেট করেও দূর করা যায় না ।

কে যেন আমার গায়ের জামা ধরে কয়েকবার টান মারলো । চমকে গিয়ে চোখ খুলে দেখি আমার চার বছরের ছেলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে । বেশ খানিকক্ষণ চেয়ে দেখলাম এই খুদে প্রজন্মের দিকে । হয়তো আর কটা বছর বাদে এর প্রথম ইশক্ কুলকুল করবে কো-এড ইশকুলে যা এসেছিলো আমার বুড়োধাড়ি কলেজলাইফে । এ হয়তো ইশকুলের গণ্ডি পেরোবার আগেই জীবনের প্রথম চুমু খাবে তার প্রথম মেয়েবন্ধুর ঠোঁটে যেটা আমি স্বপ্নে আঁকড়ে ধরে পার করেছিলাম স্কুললাইফের তিনটে বড় পরীক্ষা । হয়তো মেয়েরা একে দাদা-দাদা না করে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে লাভস্টোরি বুনবে যেখানে আমার দাদা নং ১ হওয়ার সাকসেস্ স্টোরি একদম বেমানান । হয়তো হিয়ারিং নর্ম্যাল বলে এর প্রথম প্রোপোজাল নিঃশর্তে গৃহীত হবে একজন যোগ্যতম নারীর কাছে যেখানে সেই পায়ের নখের অযোগ্য মেয়েটা ছাড়াও বেশ কয়েকজনের প্রেমজ মিথ্যাফাঁদে পড়ে আমার মনের হাড়গোড় ভেঙ্গেছিলো, আবার অতিকষ্টে জোড়া লাগিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, এমনকি লাস্ট লেডি থুড়ি আমার স্ত্রীকে পেতেও যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো । 

উত্তরসুরির ভবিষ্যৎ ভাবতে ভাবতে আমার চোখ সোজা গিয়ে পড়লো তার পায়ের নখের উপরে । আঁতকে উঠলাম, "অ্যাই ! নখগুলো সব বড় হয়ে গেছে ! স্কুলম্যামের বকা খেয়ে বসবি নাকি ? যা শিগগির নেলকাটার নিয়ে আয় তো আমি কেটে দিচ্ছি", চটপটে ছেলেটি এক দৌড় দিলো নেলকাটার আনতে যা দিয়ে পায়ের নখ কেটে নিজেকে একজন যোগ্যতম পুত্র বলে পরিচয় দিতে চায় । হয়তো...