19 Sept 2014

পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট



বুধবার ( ১৭ই সেপ্টেম্বর ) সকালের দিকে কাজের ফাঁকে ফেসবুকে কিছু ক্লিপ দেখছিলাম । প্রথমে মনে হল স্টুডেন্টদের ধরে ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে শুইয়ে, জামার কলার বা হাতা ধরে টেনে গণ্ডগোলের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো । তার মধ্যে একটা মেয়ে সম্ভবতঃ ছাত্রী ছুটে এসে মাটিতে শুয়ে পড়ে থাকা আহত (সত্যি আহত কিনা সন্দেহ আছে বললে অনেকের রোষের কারণ হতে পারি আমি । ফুটবল খেলতে খেলতে ইয়োলো বা রেড কার্ড যাতে দেখাতে বাধ্য হয় সেইভাবে রেফারিকে বোকা বানানোর ধান্দায় থাকে, ঠিক সেরকম লাগলো আর কি?!) একজনকে সম্ভবতঃ ছাত্রকে বেশ আচ্ছা করে নিজের স্মার্টনেস দেখানোর তালে জড়িয়ে ধরেছিলো, কোথাও লাগলো কিনা পেটে বুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেখছিলো আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো । এটা বেশ কয়েক মিনিট ধরে দেখাচ্ছিলো । অবশেষে দুজনের চোখে পড়লো যে ক্যামেরার চোখ ওদের দিকে তাক করা, তাই ছাত্রটা বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো হয়তো এই ভেবে যে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে । যাকগে এত ফালতু বকে ফেললাম যদিও এই অংশটা যে বেশ ভালোই ড্রামাটিক হয়েছে সেটা বলতে দ্বিধা নেই আমার ।


কিন্তু বাকি যা দেখলাম সেটি হলো অল্পালোকে সাদা বা ব্রাউন ইউনিফর্ম আর মাথায় শক্তপোক্ত ওল্টানো কাপ পরা লোকের বিশৃঙ্খল দল ( জাস্ট পুলিশের লোক বলতে কষ্ট হচ্ছে ), কিছু স্বাস্থ্যবান লোক, কিছু গাঁট্টাগোট্টা, কিছু ছোকরা চেহারার ছেলের মধ্যে । কিছু উদ্ধত মেয়েদের উপস্থিতির ইতিউতি । গোটা ব্যাপারটা দেখে বোঝার উপায় ছিলো যে শুরুটা কোথায় বা কিভাবে যদিও তথ্যসুত্রে আমরা জানি আর ধরে নিয়েছি কজ্ আর এফেক্ট । কিন্তু এটা ইতিহাসে বা সঠিকভাবে বলতে গেলে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের পাতায় প্রথম চ্যাপটার না হলেও , আমার চার বছরব্যাপী (২০০১-০৫) এই কলেজজীবনেও এ ধরণের পুলিশি হাঙ্গামা ঘটে নি । তাই স্বাভাবিকভাবে সবার মাথাচাড়া দিয়ে একটা বড় খবর হয়ে গেলো । চারদিকে শেয়ারিং চলতে থাকলো মূলতঃ ফেসবুকে । সবাই কমবেশি প্রতিবাদে সামিল হলো । আমরা যারা ল্যাদখোর ( ইনক্লুডিং মি ), তারাও যা পারছি তাই লিখে পোস্ট করছি । সাথে #HokKolorob-এর লম্বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিছিল । যেটা রাস্তায় নামার বাকি ছিলো তখনো । 

যাইহোক এই প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকছিলো । হবে না বা কেন । এটা দিদির আমল বলে কথা । দিদিগিরির Nth সিজন্ বলে কথা । পরিবর্তনের আমূল পরিবর্তন বলে কথা । শেষে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে ফেসবুকে ফের অন করে একসময়ে জানতে পারি তিরিশের উপর ছাত্র হসপিটালাইজড্, চল্লিশের উপর অ্যারেস্টেড্ । ব্যাপারটা যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পেলাম একটা ক্লিপ যেখানে দেখতে পেলাম একজনকে ধরে যারপরনাই লেভেলের মারধর করছে গুন্ডাকয়েক মিলে । বোঝো কাণ্ড ! উপাচার্যের নাবালকোচিত প্ল্যানমাফিক পুলিশিকাণ্ডের এই অংশটা আমার সমস্ত ক্লান্তশরীরকে আরো কাহিল করে দেয় । নিজের চোখে এমন বেধড়ক পেটানোর চরম পর্যায় আগে দেখেছি কিনা ঠিক বলতে পারবো না । শুধু অসহায় হয়ে স্বীকার করতে পারি এরকম দৃশ্য দেখতে আমি অনভ্যস্ত । কি হচ্ছে এটা ? কেন এমন নির্মম মার ? স্কুলের বাচ্চাকে মারা অভিযুক্ত শিক্ষক বা শিক্ষিকার কীর্তিমানের একেকটা মূর্তি জোট করলে যা দাঁড়ায় তার চেয়েও অনেকগুণ ভয়ানক । ইতিহাস যেন নিজেও লজ্জিত হবে কিনা তা নিয়ে রীতিমত বিব্রত । আমি খুব লজ্জিতবোধ করছি এই নোংরা রাজনীতি নিয়ে, এই রাজ্যসরকার নিয়ে, তার উপর এই অচেনা যাদবপুর নিয়ে যেখানে আমার জীবনের চারটে মূল্যবান বছর কেটেছে ।

ধিক্কার জানালাম ক্লান্ত মনশরীর নিয়ে । কাকে ? কাউকে না, শুধু সময়কে । সময়টা দ্রুত বদলে যাচ্ছে অথচ পরিবর্তনের সময়জ্ঞান বলে বিন্দুমাত্র নেই । সত্যি নেই, ভাই ।  

কিন্তু উপাচার্য ? নাহ, এর মত একজন নাবালকের প্রতি ধিক্কার জানানোর সময় বের করতে ইচ্ছা নেই আমার । আর কটা দিন একে একে মোমবাতির মত ফুঁ দিয়ে নেভালেই পুজোর হইহল্লা । বাঁশক্লান্ত রুটিন থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত বাঁশের রমরমার সাথে জয়েন করার অপেক্ষা শুধু । সেই অপেক্ষায় ব্যস্ত বাংলার বুক বর্শাটা উড়ে এসে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিলো । বর্শাটা শ্রীবাঁড়াদণ্ডহীন সেই উপাচার্য-কাম-নরাধমের হাত থেকে ছোঁড়া । যেখানে আজকের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের "এই অধম" বলতে ভালোবাসে, সেখানে এই নরাধমের উত্তম থাকার এহেন নাবালকসুলভ অস্ত্রধারণ কিছুতেই সমর্ধনযোগ্য নয় । 

হাজার হোক, সুরক্ষিত ঘেরাটোপে থেকেও নিরস্ত্র ছাত্রদের হাতে প্রাণ সংশয়ের অতিনাটকীয়তার দৌলতে সরকারের পক্ষ থেকে সেরা নাট্যকারের পুরষ্কার দেওয়া হোক । বিরোধীদল, প্রাক্তন উপাচার্যরা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বা আপামর জনসাধারণ ওর পদত্যাগের দাবী করুক বা যাই দাবী করুক, নিদেনপক্ষে প্রাইমেরি স্কুলের টিচার হওয়ার যোগ্যতার একটিও চুল দেখতে পাচ্ছি না আমি । মানবতাবোধ পুরো ন্যাড়া, বরং যে কোনো পুজোসংখ্যার জন্যে আসুরিক চরিত্র হিসেবে একটিমাত্র পারফেক্ট ক্যান্ডিডেট । নাহলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে দেখবো অসুরবধের শিল্প, তার সাথে ম্যাচ করে কল্পনা করবো দাঁত-খিঁচিয়ে-ওঠা অভিজিৎবাবুর বিভিন্ন কার্টুনভঙ্গিমা

No comments:

Post a Comment