31 Mar 2014

নন্-লাইকিফায়েড্


তোমরা কি আমার পাশে আছো? নাকি মোবাইলে যখন ঢুকি তখন দু এক করে পাশে এসে দাঁড়াও ? তাও ফিল করা যায় না তোমাদের ।

বাস্তবে কাউকে পাশে থাকতে বলি না,বলিও নি কখনো । কেউ পাশে থাকা তো দুরের কথা, ফিরেও তাকায় নি ।

অথচ মোবাইলে যখন ঢুকি তখন দুই বুড়োআঙুল মিলে পোস্ট দিই সুমনে কুমনে আনমনে আর মনের এককোণে ঘড়ির কাঁটা বিঁধিয়ে দেয় । তোমাদের পাশে থাকতে চাই, সাথে থাকাটুকু কামনা করি । মোবাইল ভাইব্রেট করলে তড়িঘড়ি করে দেখি কে কি করলো? কটা লাইক পড়লো গুনি...
এক দুই তিন চার, আর আসছে না যে মানে বাকিরা পাশে থাকতে চায় না ধরে নিই ।

আমার তিন বছরের ছেলে স্কুলে-বাড়িতে-শপিংমলে ওয়ান টু থ্রি গোনে আর চটকামি পায় ।

ওর চেয়েও আমি তো আরো বাচ্চা । আর তোমরা কেউ বুঝি বাচ্চা নও, বড় হয়ে গেছো নাকি বড় হওয়ার ভান করছো?

ভাট্!! ভাল্লাগে না । এখনো গুনি
পাঁচ
ছয়
সাত... এইসব দিয়ে অনুভব করি তোমাদের আনরিয়াল সান্নিধ্য যা বাস্তবে পাই না ।

দয়া করে বলো না যে তোমরা কেউ গোনো না । দোনোমোনো না করে স্বীকার করো যে ফেবুলাইকের পাশে নিউমেরিক্যাল চরিত্রগুলো তোমাদের চোখ এড়ায় না । হ্যাঁ, সাত সত্যি!!

আট নয় দশ!
হুম্! আরো বাঁড়া!

ঘরের এসি


ঘরের এসি সাহারাপ্রসূত ভারতীয় বোলিং লাইন আপের চেয়েও অতিদুর্বল । আউটসুইং আঃ উঃ টস করবে বলে উইংস্ মেলে ধরে, কিন্তু ঠাণ্ডামি করতে অপারগ । বলা যেতে পারে ভণ্ডামি করছে ।

স্পটফিক্সিং না বক্সিং? আসল মালের বক্সার কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে । তাও ভালো যে বর্তমান সানির এমএমএস ছেড়ে গোটাভারত এখন অতীত সানির রেকর্ডময় ওল্ড ক্লিপিংস্ নিয়ে ব্যস্ত । আমরা তো চাই এবারের আইপিএল শুদ্ধাচার করুক, কিন্তু ঘরের এসি? এসি ছাড়া আইপিএল?

এসিশূন্য আইপিএল তো চারদেওয়ালি ঘরোয়া বেটিং-এর নামান্তর । মাঠে সবাই ঘাম ঝরাবে, ঘরে আমরা ঘাম ঝরাবো?! বিনাশ্রমে?! ওরা কোটি কামাবে, আর আমরা হাজার খরচাবো? শুধু এই বিনয়কুমারন্যায় দুর্বল এসিকে সবল করাতে? আসল বিনয়কুমার তো স্রেফ বিনয়ের বিনিময়ে প্রচুর পায় । হায় ভগো-বানে ভাসিয়ে দেবে ঘরোয়া ঘাম!

যাইহোক ক্রিকেটীয় কোটিপতি মৌনঘামের দাম আর পত্নীর পরমপতির যৌনকামের দাম সমান হয়ে যাচ্ছে ঘরে ঘরে যেখানে এসি বেটিং করে ।

টাকার গন্ধে জাগো জাগো!
ঘেমো গন্ধে মরো মরো!

এবারে স্পটফিক্সিং হবে কিনা সেটা না ভেবে চলো আগে আমরা করি এই বস্তাপচা এসিফিক্সিং 

28 Mar 2014

ছেলেমানুষী


যদি একটা ছেলে মানুষ-ই হয় ঠিকঠাক , তাহলে সে ছেলেটি ছেলেমানুষী করবে । এতে আশ্চর্যের কিছু নেই । 

আর একটা মেয়ে যদি একটা ছেলে মানুষ-ই কিনা সেটা ভেবেচিন্তে নিজের যাবতীয় কাজকর্ম করে যায়, তাহলে সে মেয়েটিও ছেলেমানুষী করবে । এতে কারুর আশ্চর্যজনক মনে হলে আমি নিজে কিন্তু অত্যাশ্চর্যবোধ করবো-ই ।   

আসলে কিছু-ই না । নাক সিঁটকে গালিগালাজে নেই কাজ তো কই ভাজ ?! যত রাজ্যের ছেলেমানুষী করুক না কেন, ভিতরে ঠাঁই করে থাকা 'মানুষ' নামের ছাপমারা আঠালো জিনিসটা এক চুল-ও নড়বে না । 

তবুও ছেলেমানুষী করলে নির্দোষ এক ছেলেমানুষের ঘাড়ে বিনাদোষে আরেক ছেলেমানুষের রোষের নিঃশ্বাস পড়ে । বিনা নোটিশে । নিজের ঘাড়ে সেই একই দোষ চাপানোর দায় কেউ যদি এড়ানোর জন্যে গাম্ভীর্যের হাল ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে, তাহলে তাকে প্রকৃত অথচ অস্বাভাবিক ছেলেমানুষ না বলে আমি উপায়ান্ত দেখছি না ।

ব্যক্তিত্বকে শানপাথরে ঘষামাজার কোনো প্রয়োজন দেখছি না পাবলিকের সামনে, কারণ স্নানঘরে বা বন্ধঘরে বা একান্ত আড্ডায় মারাত্মক রকমের বালসুলভ কতকগুলো কাজ করা যায় । নিশ্চিন্তমনে । 

কাজে-ই, বালখিল্য আচরণ করে চলুক সবাই । সব্-বাই । 

25 Mar 2014

Elomelo #68


একটু আগে ছাগলদাড়ি ছাগলে খেয়েছে । থুতনির ঠিক সামনে সেই ছাগল এখন আস্ত একটা দাঁড়ি ।

24 Mar 2014

হারামজাদামি


ছটা বাজতে না বাজতে-ই জানালা ফুঁ দিলো । দলাপাকানো কাগজের মত গড়াগড়ি খেলাম এই মেঝে থেকে ওই মেঝে ।

কোন যে প্রেমিকা কালবৈশাখীর চেয়েও এমন হারামজাদামি করতে পারে তা সত্যি আমার জানা নেই । শুধু জানি 'হারা' কাকে বলে । একটু ফেক-টু 'মজা'ও বুঝি । আর বাকি রইলো 'দামি' প্রেম যা একঘন্টার কেবল ফুঁ ।

হারামজাদামির দাপটে পাক খাওয়া মনকে একটা প্রশ্ন করি - " হাফচামচের সন্ধ্যাবেলায় ডোজ একটু বেশি পড়ে গেলো নাকি? "

সেই ফুঁ বুঝি একটু থামলো । নিরুত্তর জানালা বন্ধ করে দিই । কিছুক্ষণের জন্যে ।

দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ - Abhirup Sen


দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ মিস্টার দত্ত...

- শব্দ
- মানে?... ‘সাউন্ড?
- হ্যাঁ ।এবারের প্রচ্ছদ কাহিনী হোক “শব্দ”- সুরজিৎ বলে
- বেশ। হোক।
কে কে লিখবেন তার একটা প্রাথমিক তালিকা তৈরী হয়। প্রায় আচমকাই ছেলেটির নাম মাথায় আসে। সোম সরকার।
-সুরজিৎ?
-হুঁ
- সোম সরকার কে লিখতে বললে কেমন হয়?
- কে সোম সরকার?
তাই তো। কে সোম সরকার?
যাই হোক। সোম কে প্রস্তাবটা পাঠাই। ও রাজি হয়ে যায়। হপ্তা খানেকের মধ্যেই এসে যায় ওঁর লেখা।
কে সোম সরকার? সোম লিখেছে
“জানতে পেরেছিলাম যে কোনো এক ই.এন.টি. স্পেশালিস্ট পরীক্ষা করে ঘোষণা করেছিলো - আমি বড় অপরাধী আর অপরাধ হলো শব্দকে খুন করেছিলাম সেই ভ্রূণ থাকাকালীন । এ যেন ভ্রুণহত্যার বদলে শব্দহত্যা । আমার ভ্রূণ তো তখন মেরে ফেললে ভালো হতো তাহলে পাহাড়প্রমাণ দোষের ভার এখনো যে বয়ে বেড়াচ্ছি সেটা অন্তত থাকতো না, কিন্তু শেষ অবধি তা হয় নি আর শেষে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে ছাড়লো ভদ্রলোকটি "

আমার বোধ বুদ্ধি নিয়ে ইদানিং অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। এমনকি একজন তো বেজায় চটে গিয়ে ‘হোয়্যাটস অ্যাপ’ বলেও গেলেন ‘ তোমার এই পত্রিকা বেশী দিন চলবে না। বেশ তো । যদি নাও চলে, সোমের এই লেখাটা থেকে যাবে। যতদিন বাংলা সাহিত্য থাকবে ঠিক তত দিন।

লেখাটার থেকে সামান্য অংশ তুলে দ্দিচ্ছি

“স্কুলের ক্লাসে কালো ব্ল্যাকবোর্ডে সাদা চক দিয়ে যেসব লেখা হয় সেগুলো দিয়ে আমার পড়া তৈরী হয় । স্কুলটিচারের মুখে আওড়ানো সব শব্দ আমার বধির কানের পর্দায় ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতো । খাতায় লিখে রাখতাম বোর্ডের গায়ে লেখা সীমিত শব্দগুলো আর চোখ মাঝে মাঝে বোর্ড থেকে সরে গিয়ে পড়তো দূরের পৃথিবীতে । আমার খাতায় লেখা শব্দগুলি যেন জীবন্ত হয়ে উঠতো , অবাক হয়ে দেখতাম শব্দরা সারি বেঁধে পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে যেতো । ঠিক যেন সৈনিকের মত । একেকরূপ একেকজনের । খাতা থেকে বেঞ্চিতে , বেঞ্চি থেকে বেঞ্চির পা বেয়ে মেঝেতে , মেঝের উপর দিয়ে হেঁটে দেওয়ালের পা , পায়ে উঠে দেওয়ালের গা বেয়ে জানালার কোলে উঠে পড়তো । শব্দসৈনিকের যে সারি কোলে প্রথম পড়তো সেই সারির মুখগুলো একেক করে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতো আমাকে আর হাত তুলে নাড়াতো । তারপর লাফ মেরে অদৃশ্য হয়ে যেতো এইভাবে একটার পর একটা শব্দের মালা । দূরের সেই পৃথিবীতে হয়তো এরা বিচরণ করে এই ভাবতে ভাবতে কখন আনমনা হয়ে যেতাম শেষে আমার কানের লতিতে পড়তো একটা রামটোকা । সম্বিৎ ফিরে ঘুরে দেখতাম রক্তবর্ণ চোখ পাকিয়ে স্কুলটিচারের ঠোঁটদুটি ক্রমাগত নাড়িয়ে যেতো । সাথে থু থু ছিটকে বেরিয়ে আমার মুখে গালে কপালে পড়তো । অনেক সহ্য করে তার দিকে তাকিয়ে হজম করতাম ওই অসহ্য ঠোঁটনাড়া । তার বকুনির কিছু বোধগম্য-ই হতো না আমার , শুধু বুঝতে পারতাম আমার ওই দূরের পৃথিবী আসলে সাদাকালো-ই”

শুনেছেন আগে কখনো? নৈঃশব্দের এরকম আণবিক বিস্ফোরণ?

দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ মিস্টার দত্ত। ফ্যাক্টস আর স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন।

একলামি


একলামি করলে একলা আর লাগে না । খাটটি এমনিতে একলামি করার জন্যে-ই তো আছে । আবার আলমারি খোলা থেকে ফ্রিজ বন্ধ করা সবই একলামির নামান্তর ।

সম্পূর্ণতার মধ্যে কিছু অসম পূর্ণতার বিকাশ পায় । কিন্তু একলামির মধ্যে অনেকখানি অপূর্ণ সমতা থাকে যা মানসিকতার কমপ্লিট ব্যালান্সশিটের মত কাজ করে ।

তাই মাঝে মাঝে একলা না ভেবে একলামি করে যাওয়া অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর ।

Elomelo #67


এক্ষণে নিভলো ওই বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার আলো । অন্ধকারের রাস্তা ধরে ছুটছে দুটি চাকা । পাঁই পাঁই করে ।

চাঁদপিৎজার একটুকরো মুখে পুরে নিয়েছে অন্ধকারের বৌ । খুব খিদে পেয়েছিলো তার ।

আবার জ্বলে উঠলো সেই চিলেকোঠার আলো । বোধ হয় ঘুমের ওষুধ পাইপ বেয়ে নিচে নেমে ফুটপাথে বিশ্রাম করছে ।

অনিদ্রার মজা আলাদা-ই । ছুটির মেজাজে কেটে যায় বাকি সারারাত ।

অফিসের বসের চোখ লাল । অন্ধকারের বৌয়ের চোখ লাল । আমার চোখদুটি ও নিশ্চয় লাল । ওই চিলেকোঠার আলো লাল ছিলো নাকি কালরাতে?

নীল কালি ছিলো না কিন্তু । সারাটা দিন ।

18 Mar 2014

নীলুদার লেখা


মাননীয় নীলাঞ্জন সাহা ,

প্রথমেই জানাই যে আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী আপনার শত আমন্ত্রণ সত্বেও এই সুন্দর পূর্ণিমা রাতে আপনার কাছে যেতে পারছি না বলে । আশা করি আপনার প্রেমিক-হৃদয় আমাকে ক্ষমা করবে। আসলে ,আজ আরেক জায়গায় যেতে হলো ,এদিকে শরীরটাও বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছে না। বয়েসের তো গাছ পাথর নেই , শরীরের আর কী দোষ ! এদিকে কাজের চাপ তো বেড়েই চলেছে !ছুটিরও ছুটি আছে , আমার নেই ! খুব ক্লান্ত লাগে ইদানিং ! শরীর না মন কোনটা বেশি ভারাক্রান্ত , বুঝি না ! এই একঘেয়ে অভিশপ্ত অমরতা আমাকে মাঝে মাঝে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে ! হয়তো গতজন্মের পাপ ! ভুল বললাম , আমার আবার গতজন্ম ,পরজন্ম কী !!! হা ! হা ! হা ! তবে , বড্ড পরনির্ভরশীল এই বেঁচে থাকা , বুঝলেন ! মানুষ হোক , কিম্বা কুকুর বেড়াল উদ্ভিদ , গ্রহ গ্রহান্তর জুড়ে প্রতিটি প্রাণের জন্মের সাথে সাথে পিতার মতো এ এক মহাভার আমাকে জিরোতে দিচ্ছে না ! আপনি একবার লিখেছিলেন না - মৃত্যু সহায় , বেঁচে আছি ! আমি যে কতো অসহায় তা যদি বুঝতেন ! আশা করি , ভুল বুঝবেন না। চিরকালীন চাঁদ আবারও উঠবে আকাশে। চেষ্টা করব এমন একটি রাতেই আপনার কাছে যাওয়ার। দেখা তো হবেই কিন্তু কবে সেটা জানালে সেদিনও হয়তো আর যাওয়া হবে না ! এটাই নিয়ম। আর নিজে থেকে সচেষ্ট হবেন না যেন দয়া করে ! মনে রাখবেন , আমি সহায় না হলে শুধু বাঁচা নয় , মরণও অসম্ভব। ভালো থাকুন।

ইতি ,
আপনার নিশ্চিত মৃত্যু।

দোল পূর্ণিমা ,রাত্রি ২ ঘটিকা
১৭ ই মার্চ , ২০১৪

Elomelo #66


এক্ষণে নিভলো ওই বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার আলো । অন্ধকারের রাস্তা ধরে ছুটছে দুটি চাকা । পাঁই পাঁই করে ।

চাঁদপিৎজার একটুকরো মুখে পুরে নিয়েছে অন্ধকারের বৌ । খুব খিদে পেয়েছিলো তার ।
আবার জ্বলে উঠলো সেই চিলেকোঠার আলো । বোধ হয় ঘুমের ওষুধ পাইপ বেয়ে নিচে নেমে ফুটপাথে বিশ্রাম করছে । 

অনিদ্রার মজা আলাদা-ই । ছুটির মেজাজে কেটে যায় বাকি সারারাত ।

অফিসের বসের চোখ লাল । অন্ধকারের বৌয়ের চোখ লাল । আমার চোখদুটি ও নিশ্চয় লাল । ওই চিলেকোঠার আলো লাল ছিলো নাকি কালরাতে? 

নীল কালি ছিলো না কিন্তু । সারাটা দিন ।

16 Mar 2014

ভবিষ্যতের আবীর


আবীর কপাল চাপড়ালো । নিজের মনে দুই বালতি ধিক্কার ঢেলে দিয়ে বললো -
"হোলি শিট্ ! দোল খেতে না গেলে-ই ভালো হতো, তাহলে আমার মনের হাত-পা ভাঙতো না । রঙ ডিসিশন্ ।"


ওদিক থেকে আবীরের কেলো বন্ধুরা সব দল বেঁধে তার কাছে ছুটে আসছে দেখে কাঁদোস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো সে -
"না আ আ আ... না প্লীজ , শুধু আবীর প্লীজ ! শুধু আবীর !"
সেই শুনে বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠলো -
"এক মাত্তো আবীর তো ও ও ও", সাথে সাথে আবীরকে অনাবীর করে দিলো রঙে-বেরঙে । ব্যাস । এখন আর চেনার জো নেই । কোনটা আসল আবীর ? রাস্তায় এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পয়সায় কেনা নষ্ট আবীর নাকি রাস্তার উপরে দাঁড়ানো একটু আগে-ই দোল বোলড্ হয়ে যাওয়া অনাবীর আবীর ?


কেউ তো জানে না আবীর কিনা একটু আগে পাণিপ্রার্থনা করতে গিয়ে কাটা পাণিফল হয়ে গেছিলো । কি করে বা জানবে ? কারণ সে নিজের যুদ্ধের ব্যর্থকাহিনী কারুর সাথে শেয়ার করে না । করতেও চায় না সে । যুদ্ধে হেরে গেলে যেমন নিজের ভাঙা মনকে সমস্ত শক্তি নিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যোদ্ধাবীর, ঠিক তেমনি আবীর । একান্ত আপনে । নিতান্ত গোপনে ।

সেই দোল খেতে-ই গিয়ে যেমন জিরোচ্যুত হলো তেমনি এই দোল খেলতে গিয়ে-ই হলো কেলোভূত সে । কিন্তু পরক্ষণে সে নিজে সামলে নিলো । একগাল হেসে সে সরে গেলো ওখান থেকে । কমপ্লেক্সের মধ্যে অনেকগুলো গ্রাউন্ডট্যাঙ্ক আছে তার মধ্যে একটার উপরে উঠে বসলো । কেন জানি না তার কোনোকিছুতে-ই ভালো লাগছে না । অদূরে তার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে খেলতে ব্যস্ত তখনো । চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই দলে রয়েছে পূর্ণিমা । আজকের দোলপূর্ণিমায় দোলের ভোল পাল্টে দেয় সেই পূর্ণিমা ।

আবীর ভাবতে-ই পারে নি যে পিচকিরির মত সবকিছু-ই প্ল্যানছকের বাইরে ছিটকে পড়ে যাবে একটি সামান্য প্রত্যাখানে । পূর্ণিমা সত্যি এরকম করতে পারে তার সাথে ? কি দোষ আবীরের ? দেখতে শুনতে সে মন্দ নয় । অঙ্কে পিএইচডি স্কলার সে এখন । কমপ্লেক্সে সে খুব জনপ্রিয় । প্রিয়জনদের চোখে হিরো সে । শুধু পূর্ণিমার চোখে হেরো সে ? হিরো থেকে হেরো ? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে এই হিহিহি-ব্যঞ্জক প্রেম থেকে হঠাৎ অজ্ঞাত হেহেহে-বোধক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পেছনে ? এই সব তার কাছে ঠেকে শব্দছকের মত এলোমেলো ধাঁধা । অথচ সুডোকু তার কাছে জলভাতের মত সোজাসাপ্টা । সুডোকু খেলার সব প্রতিযোগিতায় ট্রফিকাপ আবীরের জন্যে কুর্ণিশ জানাতে আগে থেকে-ই প্রস্তুত হয়ে থাকে ।

যাইহোক, ট্যাঙ্ক থেকে আবীর নামলো বাড়ি গিয়ে সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে । নিজের মনে যা রঙ লেগেছে সেটা সবার আগে-ই ধুয়ে ফেলতে হবে । হঠাৎ সে অনুভব করলো কে একজন হাত রাখলো তার পিঠে । সে ঘুরে দেখলো আরেকটা ভূত । তবে ভূতের মুখে হাসি দেখে তার চিনতে কষ্ট হলো না । তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই পেত্নী আর পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে সেই বিখ্যাত হিহিহি । বিস্মিত আবীর কিছুক্ষণের জন্য হলেও সংযত হয়ে আবার পেছনে ফিরে পা বাড়ায় । অমনি পূর্ণিমার গলা থেকে এক সুরেলা কন্ঠে ভেসে এলো -
"আবীর !!!"


আবীর থমকে দাঁড়ালো । কিন্তু ঘুরে দাঁড়ালো না । কেন ঘুরে দাঁড়াবে সে ? এমনকি তার নাম ধরে ডেকেছে কিনা তার মানতে কষ্ট হচ্ছে । হতে-ই পারে তাকে একটু আবীর দেবে । দোলের শুভেচ্ছায় যা হয় । তবুও সে নট নড়ন চড়ন । পূর্ণিমা যেন তার মাইন্ড রিড করলো । আবার সুর করে ডাকলো -
"আবীর তোকে-ই ডাকছি !!!"


আবীরের পা দুটি অবশ হতে থাকলো মুহূর্তে । এমনিতে-ই সে পুরো অনাবীর । হেরো যোদ্ধাবীর । কেলোভূতের বিচ্ছিরি রঙ ধরে যাওয়া মনে আসে অপ্রত্যাশিত ভিড় । বহুকষ্টে সে ঘুরে এসে দাঁড়ালো পূর্ণিমার সামনে । সে দেখলো পূর্ণিমার দুইহাত ভর্তি লাল আবীর । সে দেখেও নিশ্চুপ রইলো । মনে মনে ভাবলো -
"মাখাক গে । বাড়ি ফিরে স্নান করে সব..."


কিন্তু তাকে ভাবার সুযোগ না দিয়ে পূর্ণিমা দুইহাত ভরে তার সারা মুখে মাখিয়ে দিলো আবীরে আবীরে । আবীরের একটু গুঁড়োও মাটিতে পড়তে দিলো না পূর্ণিমা । দুইহাতে যেটুকু ছিলো সবটুকু-ই আবীরের সারামুখ জুড়ে । সাথে সাথে পূর্ণিমা মুখ নামিয়ে নিলো । আর তাকে রীতিমত চমকে দিয়ে বললো -
"করলাম তোমায় আমি বরণ, আবীর ! তবে আগে চাকরি পা..."


আবীরের মনে খেললো এক দমকা হাওয়া । সেই হাওয়ার সাথে একসাথে প্রচুর আবীর উড়ে গেলো জয়ী যোদ্ধাবীর হয়ে । সে আর অনাবীর নয় । এখন সে আসল আবীর যার সারামুখে জ্বলজ্বল করছে ভবিষ্যতের আবীর

11 Mar 2014

একমুঠো জলের জীবন


একমুঠো জল হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলো । 

প্রথমে অনেক দাপাদাপি করলো , কিন্তু পারলো না ।  জিভের গোড়ায় চোরাস্রোতের টানে তলিয়ে যেতে থাকলো । ক্রমশঃ । 

অনেক রাস্তা ঘুরে ঘুরে শেষে গিয়ে টুপ করে পড়লো মুত্রথলিতে । এদিক ওদিক তাকালো - কোথায় সে এখন ? চারদিক অন্ধকার । 

হাতড়ে হাতড়ে দেখলো জল । কিন্তু চারদিকে শুধু দেয়াল আর দেয়াল । দেখার মত বা ধরার মত কিছু পেলো । হাল ছেড়ে দিলো সে । অভাগা জল সে ।

কে যেন বোতাম টিপলো লিফটের ? অন্ধকারের মধ্যে কিছু দেখা যাচ্ছে না । অথচ লিফটটা একটু একটু করে উপরে উঠতে থাকলো । অবাক জল । ধড়মড় করে উঠে বসলো সে ।  মৃদু ঝাঁকুনি খেতে খেতে উঠছে লিফটটা তাকে নিয়ে ।

আস্তে আস্তে সে দেখতে পেলো মাথার উপরে একটা ক্ষীণ আলো ফুটে আসছে তার দিকে । আসলে তাকে যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আলোর দিকে সে বুঝতে পারছে না । খালি ভাবছে এবার মুক্তি পেতে চলছে সে । অমনি লিফটটা হাফ-ডিগবাজি খেলো । আর সে টাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে পড়লো সরু নলের মধ্যে । 

তীব্রবেগে পিছলে যেতে থাকলো নলের মধ্যে দিয়ে । দ্বিতীয়বারের অধঃপতন ।  

কমোডে শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলো অসংখ্য নোংরা জল । অমনি কোত্থেকে এসে ঝুপ করে পড়লো সেই অভাগা জল । কমোডে যেন ভূমিকম্প হলো । শুধু ঘুম নয় , কয়েকটি নোংরা জলের ঘাড় ভাঙলো , কারুর আবার হাত , কারুর বা পা । বাকিরা হতচকিয়ে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে গেলো । 

ফ্যাল ফ্যাল করে চারদিকে চেয়ে দেখলো বেচারা জলটা । এরা কারা ? কিসব নোংরা জামা পরে আছে সবাই । নিজের গা দেখে রীতিমত চমকে যায় সে - একি আমারও এই দুর্দশা ? তাকে মায়ায় পড়লো নোংরা জলেরা । ওরা এগিয়ে এলো তার কাছে । সান্ত্বনার ভাষা দেওয়ার নেই কারুর যে । 

এদের মধ্যে একজন যে বীর এবং বলবান সে নবাগত জলের পিঠে হাত রেখে বললো - সাবধানে থেকো । একটু পরে সুনামি হবে । প্রায়শ-ই হয় । 

সে মাথা কাত করে আচ্ছা বললো , সঙ্গে সঙ্গে সুনামি শুরু হয়ে গেলো ।  কোনোরকমে বেঁচে গেলো সে । অনেকের প্রাণ গেলো । আরো নোংরা হয়ে গেলো সে । 

এইভাবে কতদিন টিকে থাকতে পারবে সে ? কে জানে ? শুধু ওর একা নয় । যারা টিকে আছে তাদেরও তো একই জীবন । 

 

10 Mar 2014

চশমা যখন খুলি


চশমা যখন খুলি ঠিক তক্ষুনি চোখের সামনের জিনিসগুলোর প্রতিটা একটা করে পুরু কাঁচের চশমা পরে নেয় । সেই কাঁচ পেরিয়ে জিনিসগুলো খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ আর মেলে না । অথচ মনে হয় এরা উল্টে আমার চোখের চত্বরে এসে ভিড় করছে এবং আমায় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখে জেরা করছে । এদের চোখে আমি যেন এক সামাজিক অপরাধী ।

এই বিচারসভায় আমার তর্জনী মাথা উঁচিয়ে ওদের বোঝাতে পারে না যে আমি নিরপরাধ । এমনকি আমার বুড়ো আঙুল এত বুড়িয়ে থাকে যে কাঁচকলা দেখাতেও অপারগ । বরং ওরা দুজন মিলে আমার চোখদুটি চেপে প্রোটেক্ট করতে করতে একে অপরকে ডাকে । নিজেদের মধ্যে আরো আলোচনা করবে বলে নাকের সবচাইতে নীচু পাঁচিল টপকায় ।


দুই আঙুলের মতামত কিছু একটা পাবে বলে অপেক্ষায় বসে থাকে সামনের জিনিসগুলো । কিন্তু সময়াভাব দেখে হতাশার চোটে এরা চশমা খুলে ফেলে দেয় একে একে আর আমাকে চশমা পরার জন্যে ইঙ্গিত দেয় ।

7 Mar 2014

ধু

মাঝে মাঝে ধুত্ , কখনো কখনো ধুস্ , ঘুরে ফিরে ধুর্ !

মানবিক এই 'ধু' কি মনের বিছানায় পাতা নিছক শূন্যপ্রকাশ্য ধু-ধু তসর? যার মুণ্ডুপাত করলে ধুত্, পেট কেটে নিলে ধুস্ আর পায়ে কুড়ুল মারলে ধুর্ নামে ধু-সূচক শব্দের ধুম্ পড়ে ? এই ধু-পতন হালকা চালে হলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একজন সাধারণ মানুষের মনের একচুল নাড়িয়ে দিতে ওস্তাদ । একেকটা লোডেড্ টার্ম এইসব ধু-ধর্মী থুতু । 

কিন্তু কেন এমন থুতু ফেলতে হয় ? সে মনে মনে হোক বা প্রকাশ্যে হোক, কিন্তু কেন?  কেন বিরক্তিভাব দেখাতে এমন সহজতম রাস্তা বেছে নিতে হয় ? কেন এই রাস্তায় মানুষকে রীতিমত হাঁটতে হয় সামান্যতম বিনয়ী হতে গিয়ে? কিম্বা নিজের হাতে তৈরী কাণ্ড কার খানায় গিয়ে পড়বে সেই ভয়ে জিভের ডগায় কেঁপে কেঁপে ঝুলতে থাকে এই ধু-ব্যাঞ্জক লালাবিন্দু , কেন ? 

যাইহোক অতশত কারণ আমার জানা নেই । শুধু 'তোর শালা বাল' ব্র্যান্ডের বাংলা মদ খেতে ইচ্ছা করে আজকাল । আর সবাইকে ভাগ করে খাওয়াতে চাই । 

মদের এই আয়োজনে মাঝে মাঝে ধুত্তোর , কখনো কখনো ধুস্শালা , ঘুরে ফিরে ধুর্বাল বেরিয়ে আসে মুখ ফস্কে । 


6 Mar 2014

Elomelo #65


হাওড়া স্টেশনের মুখে 

মায়ের ফুটপাথ,
বিছানো 
মাটির খবরের কাগজ,
চাপানো

মানুষের হাগু;

ব্যস্ত পা পড়ে কলকাতার বুকে
কলকাতার ঠ্যাং 
হয়ে যায় বুমেরাং

ভাঙ্গা হাঁটু থেকে ঘরে পায়চারী করে 
দুশ্চিন্তা , তার কাঁধে হাত রেখে খুঁড়িয়ে চলে 
চিন্তা 

অচেনা , বড্ড অচেনা , চেনার আকাশে 
চিন্ চিন্ করে ওঠে 
অচেনা তারা 

ডুবুরী


সারা ফ্ল্যাট জুড়ে সাঁতরে বেড়াচ্ছিলাম । মুখে টেনশনের মাস্ক । নল থেকে বেরুচ্ছিল উত্তেজনার বুদবুদ । ডুবুরীর মত ।

অবশেষে পাওয়া গেলো তার সন্ধান । উত্তরপূর্বে যে দশ বাই বারো ঘর আছে, তার উত্তরপূর্বের কোণে ঠাসা আছে একটা ছয় বাই সাত খাট যার মাথা থেকে পা অবধি নীল সমুদ্রের ছবিময় বেডকভার । তার মাঝে শুয়ে আছি । একটা ভাঙাচোরা জাহাজ । প্রাণহীন ।

নিজেকে খুঁজে পেয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে মাথা বের করে মাস্ক খুলে প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম ।

2 Mar 2014

Elemelo #64

একফোঁটা চোখের জল
মাটিতে পড়লে যা শব্দ হয়

তার ভয়াবহতা অনেকদূর
দূরতম হাসপাতালকেও ছাড়িয়ে

ব্রেক মারে ইন্টারকোর্স
নিভে যায় রান্নার গ্যাস
থেমে যায় গাড়ি চলা

খবর পেয়ে
প্লুটো খোঁজে পৃথিবীর কাছে আসার
সহজতম এবং শর্টকাট রাস্তা

কিন্তু একটা নিথর শরীর
মাটিতে পড়লে যা শব্দ হয়
সেই শব্দের তুচ্ছতায় পিছিয়ে যায়
প্লুটোর ছুটি