16 Mar 2014

ভবিষ্যতের আবীর


আবীর কপাল চাপড়ালো । নিজের মনে দুই বালতি ধিক্কার ঢেলে দিয়ে বললো -
"হোলি শিট্ ! দোল খেতে না গেলে-ই ভালো হতো, তাহলে আমার মনের হাত-পা ভাঙতো না । রঙ ডিসিশন্ ।"


ওদিক থেকে আবীরের কেলো বন্ধুরা সব দল বেঁধে তার কাছে ছুটে আসছে দেখে কাঁদোস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো সে -
"না আ আ আ... না প্লীজ , শুধু আবীর প্লীজ ! শুধু আবীর !"
সেই শুনে বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠলো -
"এক মাত্তো আবীর তো ও ও ও", সাথে সাথে আবীরকে অনাবীর করে দিলো রঙে-বেরঙে । ব্যাস । এখন আর চেনার জো নেই । কোনটা আসল আবীর ? রাস্তায় এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পয়সায় কেনা নষ্ট আবীর নাকি রাস্তার উপরে দাঁড়ানো একটু আগে-ই দোল বোলড্ হয়ে যাওয়া অনাবীর আবীর ?


কেউ তো জানে না আবীর কিনা একটু আগে পাণিপ্রার্থনা করতে গিয়ে কাটা পাণিফল হয়ে গেছিলো । কি করে বা জানবে ? কারণ সে নিজের যুদ্ধের ব্যর্থকাহিনী কারুর সাথে শেয়ার করে না । করতেও চায় না সে । যুদ্ধে হেরে গেলে যেমন নিজের ভাঙা মনকে সমস্ত শক্তি নিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যোদ্ধাবীর, ঠিক তেমনি আবীর । একান্ত আপনে । নিতান্ত গোপনে ।

সেই দোল খেতে-ই গিয়ে যেমন জিরোচ্যুত হলো তেমনি এই দোল খেলতে গিয়ে-ই হলো কেলোভূত সে । কিন্তু পরক্ষণে সে নিজে সামলে নিলো । একগাল হেসে সে সরে গেলো ওখান থেকে । কমপ্লেক্সের মধ্যে অনেকগুলো গ্রাউন্ডট্যাঙ্ক আছে তার মধ্যে একটার উপরে উঠে বসলো । কেন জানি না তার কোনোকিছুতে-ই ভালো লাগছে না । অদূরে তার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে খেলতে ব্যস্ত তখনো । চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া সেই দলে রয়েছে পূর্ণিমা । আজকের দোলপূর্ণিমায় দোলের ভোল পাল্টে দেয় সেই পূর্ণিমা ।

আবীর ভাবতে-ই পারে নি যে পিচকিরির মত সবকিছু-ই প্ল্যানছকের বাইরে ছিটকে পড়ে যাবে একটি সামান্য প্রত্যাখানে । পূর্ণিমা সত্যি এরকম করতে পারে তার সাথে ? কি দোষ আবীরের ? দেখতে শুনতে সে মন্দ নয় । অঙ্কে পিএইচডি স্কলার সে এখন । কমপ্লেক্সে সে খুব জনপ্রিয় । প্রিয়জনদের চোখে হিরো সে । শুধু পূর্ণিমার চোখে হেরো সে ? হিরো থেকে হেরো ? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে এই হিহিহি-ব্যঞ্জক প্রেম থেকে হঠাৎ অজ্ঞাত হেহেহে-বোধক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পেছনে ? এই সব তার কাছে ঠেকে শব্দছকের মত এলোমেলো ধাঁধা । অথচ সুডোকু তার কাছে জলভাতের মত সোজাসাপ্টা । সুডোকু খেলার সব প্রতিযোগিতায় ট্রফিকাপ আবীরের জন্যে কুর্ণিশ জানাতে আগে থেকে-ই প্রস্তুত হয়ে থাকে ।

যাইহোক, ট্যাঙ্ক থেকে আবীর নামলো বাড়ি গিয়ে সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে । নিজের মনে যা রঙ লেগেছে সেটা সবার আগে-ই ধুয়ে ফেলতে হবে । হঠাৎ সে অনুভব করলো কে একজন হাত রাখলো তার পিঠে । সে ঘুরে দেখলো আরেকটা ভূত । তবে ভূতের মুখে হাসি দেখে তার চিনতে কষ্ট হলো না । তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই পেত্নী আর পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে সেই বিখ্যাত হিহিহি । বিস্মিত আবীর কিছুক্ষণের জন্য হলেও সংযত হয়ে আবার পেছনে ফিরে পা বাড়ায় । অমনি পূর্ণিমার গলা থেকে এক সুরেলা কন্ঠে ভেসে এলো -
"আবীর !!!"


আবীর থমকে দাঁড়ালো । কিন্তু ঘুরে দাঁড়ালো না । কেন ঘুরে দাঁড়াবে সে ? এমনকি তার নাম ধরে ডেকেছে কিনা তার মানতে কষ্ট হচ্ছে । হতে-ই পারে তাকে একটু আবীর দেবে । দোলের শুভেচ্ছায় যা হয় । তবুও সে নট নড়ন চড়ন । পূর্ণিমা যেন তার মাইন্ড রিড করলো । আবার সুর করে ডাকলো -
"আবীর তোকে-ই ডাকছি !!!"


আবীরের পা দুটি অবশ হতে থাকলো মুহূর্তে । এমনিতে-ই সে পুরো অনাবীর । হেরো যোদ্ধাবীর । কেলোভূতের বিচ্ছিরি রঙ ধরে যাওয়া মনে আসে অপ্রত্যাশিত ভিড় । বহুকষ্টে সে ঘুরে এসে দাঁড়ালো পূর্ণিমার সামনে । সে দেখলো পূর্ণিমার দুইহাত ভর্তি লাল আবীর । সে দেখেও নিশ্চুপ রইলো । মনে মনে ভাবলো -
"মাখাক গে । বাড়ি ফিরে স্নান করে সব..."


কিন্তু তাকে ভাবার সুযোগ না দিয়ে পূর্ণিমা দুইহাত ভরে তার সারা মুখে মাখিয়ে দিলো আবীরে আবীরে । আবীরের একটু গুঁড়োও মাটিতে পড়তে দিলো না পূর্ণিমা । দুইহাতে যেটুকু ছিলো সবটুকু-ই আবীরের সারামুখ জুড়ে । সাথে সাথে পূর্ণিমা মুখ নামিয়ে নিলো । আর তাকে রীতিমত চমকে দিয়ে বললো -
"করলাম তোমায় আমি বরণ, আবীর ! তবে আগে চাকরি পা..."


আবীরের মনে খেললো এক দমকা হাওয়া । সেই হাওয়ার সাথে একসাথে প্রচুর আবীর উড়ে গেলো জয়ী যোদ্ধাবীর হয়ে । সে আর অনাবীর নয় । এখন সে আসল আবীর যার সারামুখে জ্বলজ্বল করছে ভবিষ্যতের আবীর

No comments:

Post a Comment