27 May 2016

নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড়ো গুণ


সানসেট আমার তেমন প্রিয় নয় । শুধু অপেক্ষায় থাকি তার অস্ত দেখার। 

রোজ দেখতেও পাই না । অফিসকারাগারে বন্দী থাকলে সে সুযোগ পাই আর কোথায় ! তবু সারা মন যেন অপেক্ষায় মরতে চায় ।

অন্ধকার নামতে না নামতে রাস্তায় বাড়িতে গলিতে আলো জ্বলে ওঠে । জ্বলে ওঠে সিগারেট । জ্বলে ওঠে মাদকাসক্তি । জ্বলে ওঠে শহরের হাসি । 

সাথে হাইড এন্ সিক্ খেলে ছায়া । এ ছায়া তোমার আমার সবার । তোমার ছায়ার যমজবোন তো আমার ছায়া । টুইন-টুইন ছায়ার সাথে ফ্ল্যাশিং আলোর কম্বিনেশন আমার খুব প্রিয় । 

শহরের আলোতে কাউকে না কাউকে লাগে সুনয়নী সুবক্ষী সুনিতম্বী সর্বোপরি সুহাসিনী । এতোকিছু লাগে বলে আলো উপহার দেয় ছায়া । এই ছায়ার হাত ধরি কেমন করে ?

রোজ কেবল স্থির তৈলচিত্রের মত দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে অন্ধকারে । এখানেই আলোছায়া আমার সাথে নিঃসঙ্গতা করে ।

মিটিং রুমে সেদিন লিওনার্দো, ভন গগ্, পিকাসো, দালি সবাইকে থামিয়ে কে একজন যেন জোরগলায় বলেছিলো, নিঃসঙ্গতার সবচেয়ে বড়ো গুণ হলো বিশ্বাসঘাতকতার সাথে মোকাবিলা করতে করতে জিতে যাওয়া ।

16 May 2016

ডিসক্রিমিনেশনের শিকার শুধু বর্ষা একা নয়


কাল বৃষ্টি পড়েছিলো । একে চমকবৃষ্টি বলে ছেড়ে দেওয়া ভালো । এর থেকেও আরো ভালো হয় যদি বিদ্যুতের ঘ্যানঘ্যানানি না শোনো । শোনার দরকার নেই যখন চমক সেরকম আর নেই ।

তুই বড্ড বেশি ঘ্যানঘ্যান করছিলিস, না ? ঠিক যেন মড়াবিদ্যুৎ । 

চোখে গাদাগুচ্ছের মেঘ জমা রাখার অনেক কারণ যে আছে তা বুঝি । খুব যে বুঝি তা নয় । প্লেনে বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে ভরা আকাশের মেঘরাজ্য থেকে সরে এসে তোর ওই মেঘস্য চোখদুটোকে আমার মুখের উপরে ফেলেছিলি, মনে আছে ?

এভাবে আবহবিদের মত বোকা বোকা বিশ্লেষণ করতে পারবো না তোর মনের ভিতরটা । এক্সট্রিমলি সরি !

ইশারায় বুঝিয়ে দিলো তার পিরিয়ড শুরু হয়েছে কাল মাঝরাত থেকে । সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দিকে মুখ তুলে তাকালাম । চশমা কিন্তু রোদের নয় । তাকাতেও পারলাম না ।

চশমা মুছতে মুছতে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার তো হলো, অথচ প্রকৃতির এখনো কেন এমন অনিয়ম ?"

রাস্তায় একটা ক্ষণস্থায়ী ছায়া পেয়ে শুয়ে পড়েছে একটা কুকুর । মেঝেতে শুয়ে পড়লাম আমি । ওই কুকুরের মত চোখকান বুজে । কতক্ষণ বা শুয়ে থাকা যায় ?

কুকুরের গায়ে একটাও কাপড় নেই । ও-ই বেশি আরাম পাচ্ছে বোধ হয় ।

"বেশ হয়েছে ! বাঞ্চোৎ কোথাকার !" জিজা ঘোষের হয়ে আত্মপ্রসাদে ডুব দিচ্ছি । চান হয় নি এখনো । সারা গা থেকে বেরোচ্ছে আবেগের বিটকেল গন্ধ । ভুলে যাস না ভাই, ডিসক্রিমিনেশনের শিকার শুধু বর্ষা একা নয় ।

সেও জিজাদিদির মত দারুণভাবে ফাইটব্যাক করবে বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ।

সব্যসাচীর আরেক ডিফেনিশন


সব্যসাচীর আরেক ডিফেনিশন হলো - বাঁ হাতখানি বেডরুমের জানালা গলিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে রেখে ক্রমাগত ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডায় ভিজিয়ে দেওয়া, সাথে ডান হাতে ধরা ম্যাগাজিনে কোলকুত্তা নিয়ে স্বপ্নময়দার রম্যরচনায় ক্রমাগত খিল্লিয়ে হেসে নেওয়া ।

9 May 2016

গুচ্ছ-বুমবুম



১)
আজ কী বার ? কার যেন মৃত্যুদিন ?
ঠিক এই রকম একটা দিনে, একটা কড়া রোদ্দুর, কাঁকড়াবিছের মত, চেপে ধরে বসেছিলো একটা ফর্সা গালে ।

এই গালটা যার, তার জন্যে এনেছো রজনীগন্ধা ? কই দেখি !
.
২)

দার্জিলিংকে সারপ্রাইজ্ নেমন্তন্ন করতে গেছে নাকি দার্জিলিং নিজে এসে ওদের হাতে টিকিট তুলে দিয়েছিলো - কিছুতেই মনে পড়ছে না । পুরোনো রেকর্ড একটু ঘেঁটে দেখা হোক।
এটা তো সেই জ্যাকেট যে ঘুমোতে ঘুমোতে গোটা দার্জিলিং ঘুরে এসেছিলো ।
.
৩)

তারপর ? আবার খুন । আবার । তারপরেও আবার খুন । খুন অ্যাফটার খুন । একই ছোরা চলছে এই শরীরে, ওই শরীরে । এই নবাগত লেফ্ট হ্যান্ডেড নাইফস্-ম্যান থামবে না কি শালা ?
শ্রীযুক্ত চার্লস্ শোভরাজ কমেন্ট্রি বক্সে এইমাত্র মাইক হাতে নিয়ে বলে বসলেন, 'খুনবিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি বার-বার পড়ো ধরা' ।
.
৪)

সিটি লাইটস্ দেখার পর সে প্রতীক্ষা করলো পাঁচদিন একটা কথাও বলবে না । একটা শব্দও উচ্চারণ করবে না । একটা আওয়াজও বের করবে না গলা থেকে ।
এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে নিজের সুন্দর গোঁফের দুইপাশ আধইঞ্চি করে ছেঁটে ফেলেছে ।
.
৫)

ধবধবে সাদা ব্রায়ের দু'কাপে কতটা রাত ভরে নেওয়া যায় ? এই উত্তর খোঁজার জন্য সব জানালা খুলে রাখা ছিলো সারা অমাবস্যা জুড়ে । গত পূর্ণিমায় সাদা দাড়ি কেটে ফেলেছিলো, পাকধরা চুলে কলপ দিয়েছিলো, সাদা জামা আর কালো প্যান্ট কেচে নিয়েছিলো বুড়োলোকটা ।
তাই, পরিষ্কার হয়ে যাওয়া প্রতিটা সুতোর লিবিডো আজ একটু পরেই হঠাৎ বেড়ে গেলো ।

2 May 2016

ভোট দিতে যাচ্ছি


যখন বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) সব ছোটো বড়ো শহর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণে অসহায়, সেখানকার মানুষেরা অসহায়, চারদিকে আশাহত অন্ধকার ও বিরামহীন ক্লান্তি, তখনকার পরিস্থিতির ভয়াবহতার ছবির মাঝে এক জায়গায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন,

"রহমান অসাধ্য সাধন করতে পারে । রহমানকে যদি বলা হয় - রহমান, তুমি যাও তো, সিংহের লেজটা দিয়ে কান চুলকে আসো । সে তা করে আসতে পারবে । সিংহ সেটা বুঝতেও পারবে না । অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে - রহমান অসম্ভব ভীতু ধরণের ছেলে ।"

এরকম একটা সেল্ফ-কনট্রাডিক্ট চরিত্র । যে কঠিন-কঠিনতর-কঠিনতম কাজ অনায়াসে করে দিতে পারে, সেই একটা আস্ত কাওয়ার্ড । কোথাও দেখেছি আমরা এমন সুমেরু-কুমেরু ? সচরাচর দেখা যায় না । হুমায়ূন নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা লিখেছেন কিনা নো আইডিয়া, তবে মোটেই ভুল করেন নি । যেমন আমি । ওই সুমেরু-কুমেরু জাতীয় । রহমানের মত । কাল ভোট দিতে যাচ্ছি বলে । 

একটা নির্দিষ্ট বোতামে টিপবো । লাল ইলেকট্রনিক অ্যারো জ্বলবে । একটা দলের জন্যে । কোন দল ? নাহলে সোজা নোটা ! এই ডিসিশন মেকিং শুধু বোতাম টেপার মুহূর্তের নয় । চলছে অনেকদিন ধরে । পশ্চিমবাংলায় আগেরগুলো দফায় গুণ্ডাপাণ্ডামির খবর জানতে জানতে চলছে । চলছে 'যত মত তত পথ'-এর কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার সাথে । চলছে দুর্নীতির রুমাল দিয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘাম মুছতে মুছতে । রক্তাক্তজীবনের ছবি দেখতে দেখতে শুধুমাত্র একটা বোতাম টেপার 'অসাধ্যসাধন' করার দায়িত্ব সেরে আসতে হবে । ঠিক যেন রহমানের মত আদেশ পালন করতে যাবো । সিংহরূপী দলের কান চুলকে দিয়ে আসবো তার লম্বা লেজ দিয়ে, অথচ কেউ জানতেও পারবে না, বুঝতেও পারবে না কার কানে লেজের খোঁচা মেরে চম্পট দিলাম ! 

তবু আমি কাওয়ার্ড । হ্যাঁ বুকে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে বলবো, একশোবার বলবো, 'আমি অত্যন্তরকমের ভীতু' । হয়তো ভীতু হওয়ার সৌভাগ্য আমার একার নয় । অনেকের । তোমাদের সকলের । আমরা ভয় পাই পুরোনো আমলের রাজসিক সরকারকে । সদ্যোজাত সরকারকে দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যাই । অজানা তীব্র ভয়ের ঠাণ্ডাস্রোত বইছে মনের শিরায় শিরায় - নতুনভাবে যে দল ক্ষমতায় আসবে তার নতুন দুর্নীতিবাজির দুশ্চিন্তায় ।

একাত্তর সালের দুর্বিষহ আবহমানে রহমানের মত যদি কন্ট্রোভার্সিয়াল ক্যারেক্টার বাস্তবজীবনে দেখে যান আহমেদ সাহেব, তাহলে গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠা এই 'ভয়' গণতন্ত্রের এখনকার প্রধান হাতিয়ার । সেই হাতিয়ার সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি সিংহ তথা মনস্টারের কানে একটু সুড়সুড়িয়ে আসার উপলক্ষে ।

শেক্সপীয়ারিয়ান ক্ল্যাসিক গালভাণ্ডার


প্রতিটা গালির ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে একটা ইউনিভার্সাল ট্রুথ । ভালোমন্দ স্বাদ পেতে গিয়ে যেমন টেস্টবাড গুলো জিভজুড়ে চাতকপাখির মত মুখ হাঁ করে থাকে, তেমনি শেক্সপীয়ারিয়ান ক্ল্যাসিক গালভাণ্ডার থেকে শুরু করে নবারুণীয় অাধুনিক ফ্যাঁতাড়ুসত্তা যেকোনো সময়ে প্রস্তুত থাকে টকঝালমিষ্টি গালিগালাজ যখন তখন ফ্যায়ার করার জন্য ।

আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে 'দ্য ব্যার্ড অফ্ অ্যাভন' এমন এক অসামান্য স্টোরেজ বানিয়ে গেছেন তাঁর বিখ্যাত নাটকগুলোর নানা চরিত্রের সংলাপের পর সংলাপে । এই স্টোরেজের বিপুলতা সামলাতে একজন সাধারণ মানুষের স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট নয়, হয়তো সম্ভব হতে পারে সদ্যআবিষ্কৃত ডি.এন.এ. এর প্রতি গ্রামে এক মিলিয়ন টেটাবাইট ডিজিট্যাল তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে । ধরা যাক, 'আ মিডসামার নাইটস্ ড্রিম' থেকে পাওয়া একটা খুব মিষ্টি স্বাদের গালি - "ক্যাঙ্কার ব্লসম্" (Canker Blossom) অথবা 'হেনরি ফোর - পার্ট ওয়ান' থেকে নিঃসৃত টক স্বাদের গালি - "ফলস্ ক্যাটারপিলার" (False Caterpillar), কিম্বা একটা বেশ বড়ো সাইজের অপমানজনক শব্দবিন্যাস - "ম্যাড মস্টাচিও পার্পল হিউড্ মল্ট-ওর্মস্" (Mad Moustachio Purple hued Malt-Worms) । কি ভয়ঙ্কর রকমের ক্ল্যাসিক সব ! কি পাওয়ারফুল শৈল্পিক কামান একেকটা ! আরো আছে এই 'ইনসাল্ট কিট'-এ যা গত চার শতক ধরে সমানে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । এমনকি একটা চার্ট রেডি আছে যার তিনটি আলাদা লম্বা লম্বা লিস্ট । এই প্রতিটা লিস্ট থেকে যেকোনো একটা শব্দ তুলে পাশাপাশি জুড়ে দিলে হয়ে যাবে শেক্সপীয়ারিয়ান গালিবোমা । 

কে বয়ে বেড়াবে এই পাহাড়সমান গালিবোঝা ? কে দাঁতে কামড়ে পিন ছিঁড়ে অন্তত সাত সেকেণ্ড অপেক্ষা করবে গালিবোমা ছোঁড়ার আগে ? কারা বা শিল্পসংস্কৃতির বাপ-মার নামধাম জপবে ? বাঙালীরা তো নয় যদি না আগ্রহ থাকে । ওই পাটি ব-এ উগড়ে দিতে পারলেই খুশি । খুব বেশি হলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বাপ-মা তুলে মনের সব বিষ এজ্যাকুলেট করে দেয়, তবে ক্ষান্ত দেয় । কিন্তু কোনোটাই ক্ল্যাসিক নয় । নেই সংস্কৃতির ছোঁয়া, নেই সাহিত্যসম্পদের বাঁচোয়া । নবারুণবাবু দেখিয়ে গেছেন এইসব গালিগালাজের ব্যাপার অত শিল্পযত্নের দরকার নেই । আমাদের অনেকের সেটা নিয়ে আপত্তি থাকে না । 

তবু একেক সময় মনে হয় এসব সস্তা মেটাফরিক্যাল পরিবেশ ছেড়ে কোথাও চলে যাই । চলে যাই দূরে কোনো এক নির্জন জায়গায় । আমার সাথে যাবেন উইলিয়াম শেক্সপীয়ার । দরকার হলে একজন ইন্টারপ্রেটার রিক্রুট করবো । প্রতি উইকএন্ডে একথলি সাম্মানিক ঝকঝকে গালিমুদ্রা তার হাতে তুলে দেবো । কেননা সবার মত ইন্টারপ্রেটারেরও খুব দরকার কাছের বা দূরের কাউকে না কাউকে চরম মৌখিক শাস্তি দেওয়া । কিন্তু তা হবে মিড-ভিক্টোরিয়ান অার্কিটেকচারের কাছাকাছি পর্যায়ের ।

সে ভুগছে ভার্টিক্যাল কমপ্লেক্সিটিতে


এক অতি বৃদ্ধ হেঁটে চলছে
বয়সের ভার তার দু'পায়ে 


পাশ বরাবর সারি সারি গাছ
সবকটাই কুঞ্চিত প্রাচীন


গাছগুলোকে ছাড়িয়ে সে হেঁটে চলছে একভাবে
চলছে সে
যেন বাকি বয়স মেপে মেপে


এই বৃদ্ধ জানে না
তার বয়স কখনো ছাড়িয়ে যেতে পারবে না
গাছের বয়সকে


হয়তো বা সে ভুগছে ভার্টিক্যাল কমপ্লেক্সিটিতে