28 May 2014

কল্পনা


কল্পনা করা-ই বাস্তবোচিত, কিন্তু বাস্তবায়িত করা কাল্পনিকমাত্র ।

হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি


হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করার আগে বিশদভাবে ছেঁড়াছিঁড়ি না করলে-ই বিপদসীমা ছাড়াছাড়ি হতে বাধ্য ।

তিমি মাছ ধরার চেষ্টা


ঋতুভেদে কলম বিবিধার্থে রূপধারণ করে, মানুষ কিন্তু যে তিমি মাছ ধরার চেষ্টা করে সেই তিমি মাছ-ই ধরার চেষ্টা করে ।

17 May 2014

পাছা ব্যথাতুর


স্বাস্থ্যের ভগ্নদশা । ব্যথাতুর পাছা । হয় ল্যাদ খাই, না হয় লাথ খাই । তবে এক ডোজ করে । বেশি ল্যাদাল্যাদি বা লাথালাথি খাওয়া এড়িয়ে যাই । কারণ, প্রথমটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভেঙ্গে-খান-খান-কারক, দ্বিতীয়টা পাছার পক্ষে পটাস্-পটাস্-শব্দ-কারক । 

সুস্বাস্থ্যের অধিকারিনী জে. লোপেজের অমন সুনিতম্ব দেখলে উল্লিখিত কারক-দ্বয়ের ভয়ঙ্করতা বেমালুম ভুলে যাই । যেখানে আমি খেটেখুটে খাই-দাই, আর পাই কয়েকআনা, সেখানে লোপেজ নেচেকেঁদে কেবল গায় আর সোজাসুজি পায় তিরিশকোটি ডলার । অবশ্য-ই আমার এই পুং-স্বাস্থ্য আর পুং-নিতম্বের জায়গায় লোপেজের ওই মেয়েলি 'অমুক্তমুক' নিয়ে মুখ খোলা অনাবশ্যক । প্রসঙ্গক্রমে এ তুলনা অপ্রাসঙ্গিক । কিন্তু একটিমাত্র মিল খুঁজে পাই আমার আর লোপেজের মধ্যে । সেটি হল দিনরাত পরিশ্রম । হাড়ভাঙ্গা খাটুনি । দম ফেলার ফুরসৎ নেই কারুর । জানি, শুধু লোপেজ কেন, নদী-উপচে-পড়া উদাহরণ আছে এরকম । কিন্তু আজকাল লোপেজ কেন আমাকে এমন আচ্ছন্ন করে দেয় তার সদুত্তর লোপেজের কাছেও নেই । 

তাও লোপেজের হয়ে উত্তর খুঁজি তন্নতন্ন করে, বন্য'হন্য' হয়ে ।

লোপেজের হাসি ? নাহ, আমার ঝকঝকে দেঁতোহাসি কোন দিক থেকে বা কম ! চোখ ? নাহ, আমার চোখেও মাঝে মাঝে বিদ্যুতের শক খায় । তাহলে কি চুল ? আরে, আমার মাথাভর্তি নব্বই শতাংশ ঘন কালোচুল আছে, বাকিচুল বয়সের গ্ল্যামার । তবে ? শরীরের বাঁধুনি নাকি ? তাও না, আমার ছিপছিপে শরীরে এখনো খেলে মেদহীন কবিতা যদিও লজ্জায় কেউ দেখেও তাকায় না, স্টাডি করা তো দুরের কথা ।
তাহলে নিশ্চয় ওর বিশ্ববিখ্যাত নিতম্ব ? হয়তো তাই হবে, কারণ আমার নিজের তো অমন মনোময় খণ্ডিত পশ্চাদ্দেশ নেই তার উপরে পাছার হাড়গোড় ঠকাস-ঠকাস করে কাজ চলাকালীন । ঘেমে নেয়ে যেন জাঙ্গিয়া বেয়ে নেমে আসতে চায় মাটির দিকে । যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে, মুক্তিস্বাদ পেতে পেতে মেঝেতে শুয়ে পড়তে চায় এই দুর্ভাগা পাছা । ওদিকে লোপেজ কেমন সুন্দর করে দুলিয়ে দুলিয়ে ছন্দে-বন্দে থাকে যে মন্দ লাগে না দেখতে । মনে হয় মাঝে মাঝে নিজের সিট ছেড়ে তার কাছে একছুট দিই "শ্যাল্ উই ডান্স"-এর ন্যূনতম প্রপোজাল সাবমিট করতে, যা বসে বসে মাথামোটা-ক্লায়েন্ট-উদ্ভটসব-প্রপোজাল সাবমিট করার চেয়ে ঢের ভালো । কিন্তু নেই উপায়ন্তর । এতে স্বাস্থ্য কি আর বাকি থাকে ? আর লোপেজ দিব্যি ব্যালান্স রেখে চলে নিজের ভরাট স্বাস্থ্য নিয়ে সেটা দেখি আর ভাবি । ওর সবকিছু-ই নারীমহলের অনেকাংশের কাছে ঈর্ষনীয় হলেও আমার ইগোতে লাগে না । আবার বলছি এই তুলনা অর্থহীন, তবে ওর এই অসাধ্য সাধনকারী মেইনটেনেন্স আমার কাছে সত্যি বড় ঈর্ষনীয়।

মানুষকে ঈর্ষা করি না, মানুষের সুন্দর স্বাস্থ্য আর শক্তপোক্ত পাকা পাছা দেখলে আজকাল কেমন যেন হিংসে হয় । সেই জ্বালায় ল্যাদ আরো বেড়ে জাগে, লাথ আরো পড়ে পশ্চাদভাগে আর সাথে সাথে যন্ত্রণা আরো চাগিয়ে ওঠে । 

উঃ উফ্ফও !

মোদীফ্রায়েড


মানছি লোকমুখে সেই বহুদিনচল 'মোদীফায়েড' হচ্ছি আমরা, মানে হতে চলছি । নাকি সত্যি-ই হই কিনা সেটা দেখার সময় এসে গেছে বলে যুক্তিতর্কের দায় এড়ানো ভালো?

যাইহোক সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে থাকা ঘাড়বাহী এই মানুষটা এখন আমাদের ঘাড়সহ গোটা দেশের মেরুদণ্ড সিধে করার জন্য প্রতিশ্রুতি নিতে যে বদ্ধপরিকর তাতে সন্দেহের ছিটেফোঁটা দেখছি না, বরং এনার বলিষ্ঠ হাতদুটি, পেটানো কর্মঠ চেহারা দেখে লাখ-লাখ সাধারণাসাধারণ মানুষ মোদীফ্রায়েড (বানান ঠিক আছে আশা করি) হতে যেন আরো বেশি করে বদ্ধপরিকর । মোদীর এতে অবশ্য-ই কোনো দায়িত্ব বা ভূমিকাগত প্ল্যান নেই । শুধু চেষ্টা করবেন মাত্র আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত যে কিনা দীর্ঘযুদ্ধের পরে কিছু প্রত্যাশামত লাভ করার পর সবাইকে আশ্বাসবাণী শুনিয়ে নতুন চেয়ারে বসে । মোদীফাই করার কাজটা সেখান থেকে শুরু হবে ধাপে-ধাপে ধীরে-ধীরে ধুঁকতে-ধুঁকতে । শেষে গিয়ে দেশজুড়ে ধু-ধু করলেও পারেন এতে কেউ অবাক হলে সেটা-ই কিন্তু আজকের গণতন্ত্রের সেই উচ্চাশাণ্বিত মোদীফ্রায়েড হওয়ার শেষ পরিণাম ।

এত লাফালাফি না করে আগামী পাঁচবছর ধরে খালি দেখুন কি করেন ইনি?! ' দশবছর দশবছর করা' মানে পুরো মোদীফ্রায়েড হয়ে ঝলসে যাওয়া আত্মহত্যা-ন্যায় প্রতীক্ষা যা মোটে মদ-ই-সুলভ নয় ।

হার মানে ল্যাদ


মোড়ায় বসে অফিসের জুতোর ফিতে বাঁধতে না বাঁধতে-ই এনার্জি শেষ আর্জি জানিয়ে কোথায় যেন উবে যায় ।

মোড়া ছেড়ে উঠে কোমরঘেরা প্যান্টের মধ্যে দুই হাতের বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে জামা ঠিক করতে না করতে-ই পাম্পযন্ত্র চালু হয়ে যায় ।

হাঁটুদুটি একটু ঝাঁকিয়ে প্যান্টের কোঁচকানো ভাব কাটাতে না কাটাতে-ই পাম্পচালিত ইচ্ছাশক্তি এক ঠ্যালা মারে ।

পিঠে ল্যাপিব্যাগ চাপিয়ে কব্জি ঘুরিয়ে বাসিক্লান্ত টা-টা করতে না করতে-ই ল্যাদ্ ছুটে আসে এদিকে...

কিন্তু গাড়ির স্পিডের কাছে হার মানে ছুটে আসা ল্যাদ ।

সোমের চোখে আমি কেমন


সোমের চোখে আমি কেমন সেটা জানতে খুব ইচ্ছা করে, যদিও আমার চোখে সোম একজন অর্ধপূর্ণ আমিওয়ালা ।

যাইহোক সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল - সোম কোথায়? কোনো খবর নেই যে?! আমি জীবিত কিনা সেই খোঁজখবর সোম অনেকদিন ধরে নিচ্ছে না । কিম্বা আমিও এতদিন নিই নি বলে সোমের জন্যে হঠাৎ উতলা হয়ে পড়লুম বুঝি?!

মনে পড়ে যায় সেইসব দিনের কথা । আমি আর সোম দুজনে দুজনকে কাছছাড়া করতাম না । কিন্তু এখন আমার এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় সোম একাবতার না দশাবতার সেটা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছি না ।

- "সোওওওওওম? "

- " কি হল সোম? ডাকছো কেন? "

- "আরে তোমার তো কোনো পাত্তা নেই, কি ব্যাপার? বেঁচে সেচে আছো? "

- "কিছুটা জীবিত, বাকিটা তোমার মৃত্যুরূপ উজ্জীবিত "

- "মানে?"

- "মানে আর কি?! শালা নিজে-ই তো বেপাত্তা আর আমার অস্তিত্ব নিয়ে ধ্যানফ্যান করতে বসেছো?! "

- "তার মানেটা কি বাবা সোম? সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে... "

- "চিন্তা নেই, আমার মাথার নিচে সব কপি করা আছে । বুঝতে না পারা অবধি রিসেন্ড করতে থাকবো "

- "বেশ তাই হবে । তবে..."

- "প্লিজ্ সোম বিরক্ত করো না আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও । এই কটাদিন যা গেলো তুমি ভাবতে-ই পারবে না "

- "আচ্ছা, কিন্তু বলছি তুমি কি আমার ফাঁপা শরীরে আর কোনোদিন আসবে না?"

- "আসবো সোম, তবে আমার এই রক্তমাংসের দলাপাকানো আরো বিচ্ছিরী ভাবে পাক খেয়ে বসে আছে... "

- "না না সে ঠিক আছে । আমি না হয় আমার বহিরাবরণটাকে সেই বুঝে ফাইন-টিউন করে দেবো । তুমি শুধু বলো কবে ঢুকবে?"

- "বলা মুশকিল! তবে জেনে রাখো আমি ঢুকলে-ই তুমি অসম্পূর্ণ হবে । "

- "তা হোক না সোম । তুমি থাকতে-ই পূর্ণতারোধক নিয়ে ভাবার কোনো কারণ দেখছি না "

- "হুম্ ওক্কে বস্ । আসি এবার, বাই "

আচমকা মনে হলো সোম আসলে একটি অস্তিত্বধারক, আর আমি সেই অস্তিত্বহানি করছি । আমি নির্দোষ সোমের রোষের কারণমাত্র ।

স্বচ্ছমুত্র


এইমাত্র পেচ্ছাপ করে এলাম । পেচ্ছাপের সুস্থতা নিয়ে কোনো কথা হবে না, কারণ আজ বহুদিন বাদে খেয়াল করলাম স্বচ্ছতা, নেই হলদেটে ভাব, নেই অস্বচ্ছ ভাব ।

পরিমাণমত জল খাওয়া জীবনের একমাত্র সঠিক মাপকাঠি । জলের অপর নাম যে জীবন সেটা স্বচ্ছমুত্রের প্রতীকী ছাড়া-ই সংজ্ঞায়িত হওয়া মিনিংলেস্ ।

আহা! প্রাণজুড়ানো ধারা বইয়ে গেলো । বিশুদ্ধতাসাধনের কাজটি যে মহত্ত্ববীজ রোপে তা থেকে এমন বিলিয়নপতি মুহূর্তের কিঞ্চিন্মাত্র আশা করা মোটে-ই পাগলামির লক্ষণ নয় ।

ভ' এ ভোট আসিতেছে তেড়ে


ভ' এ ভোট আসিতেছে তেড়ে
মায়ের মুখ চাহি বারে বারে

বুদ্ধিGB


বুদ্ধিজীবিদের আর GB দিয়ে ব্যঙ্গ করে লাভ নেই । বরং শুধু জীব-ই হয়ে থাকুক যেমন ছিল ।

গণতন্ত্র একটা যা-ইচ্ছে-তাই জীবকুল মাত্র ।

কল্পনা


কল্পনা করা-ই বাস্তবোচিত, কিন্তু বাস্তবায়িত করা কাল্পনিকমাত্র ।

7 May 2014

ফার্স্ট বয়ের যন্ত্রণা


 
পুরোনো কাসুন্দি একটু ঘেঁটে পেলাম তখনকার বেকার নিরাকার যন্ত্রণা । জলজ্যান্ত সাঁটা লেবেল যদিও অনেকবছর হল হারিয়ে গেছে, এখনকার জীবনের সাধারণতত্ত্ব মেনে চলি আর বেশ ভালো-ই আছি

এখনো বাবার সেই উজ্জ্বলমুখ চোখের নিমেষে উধাও হয়ে যাওয়া মনে পড়ে -

কলেজের প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট বেরতে-ই বাবার উচ্ছ্বসিত প্রশ্ন ছিল
"সোম, ফার্স্ট হলি? "

আমার অসহায় উত্তর ছিল - "ক্লাসের সব্বাই যে যার নিজের স্কুলের টপার হয়ে ইঞ্জিরিয়ারিং পড়ছে, আমি সেই টপারদের মধ্যে লাস্ট হয়েছি এবারে । প্লিজ্ বাবা, আর আশা করো না । এই ভালো-ই আছি "

সেই থেকে আমি এখনো জীবিত একজন সাধারণ কর্মী হয়ে

আমার বর্তমান অবস্থা


আমার বর্তমান অবস্থা এমন বর্তে আছে যে মান পাগলের ধারেকাছেও নেই ।

সুপ্রভাত আর শুভরাত্রি অনেকদিন ধরে নিরুদ্দেশ ।

একপাশে শুয়ে আছে আমার অচেনা দেহ যাকে পেঁচিয়ে পচিয়ে ল্যাদ খাচ্ছে মৃত্যুপথযাত্রী । তাকে অবাক চোখে দেখছে সদ্যোজাত পাগলশিশু ।

ভুলেও মাতাল বলো না


ষাট মিলিলিটার খেয়ে-ই তোমায় খুঁজে পাই, পরের শটে তোমায় হারিয়ে ফেলি ।

তারপরের অর্ধশটে একশো কুড়ির রাস্তা তোমার নামে আলাদা করে তৈরী হয় যার উপর দিয়ে আমার একটা পা সেই খুঁজে পাওয়ার আনন্দে নাচে, আরেকটা পা সেই হারিয়ে ফেলার নিছক অভ্যাসে খোঁড়ে।

আমাকে ভুলেও মাতাল বলো না, কারণ মাতালের পাদুটি মায়ের সাথে তালে তাল রেখে চলে , যেখানে আমার পাদুটি তোমার সাথে বোঝাপড়ায় সম্পূর্ণ বেতাল ।

ছুটে আসা ল্যাদ


মোড়ায় বসে অফিসের জুতোর ফিতে বাঁধতে না বাঁধতে-ই এনার্জি শেষ আর্জি জানিয়ে কোথায় যেন উবে যায় । 

মোড়া ছেড়ে উঠে কোমরঘেরা প্যান্টের মধ্যে দুই হাতের বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে জামা ঠিক করতে না করতে-ই পাম্পযন্ত্র চালু হয়ে যায় ।

হাঁটুদুটি একটু ঝাঁকিয়ে প্যান্টের কোঁচকানো ভাব কাটাতে না কাটাতে-ই পাম্পচালিত ইচ্ছাশক্তি এক ঠ্যালা মারে । 

পিঠে ল্যাপিব্যাগ চাপিয়ে কব্জি ঘুরিয়ে বাসিক্লান্ত টা-টা করতে না করতে-ই ল্যাদ্ ছুটে আসে এদিকে... 

কিন্তু গাড়ির স্পিডের কাছে হার মানে ছুটে আসা ল্যাদ ।

1 May 2014

চুকচুক করে ভুল

প্রখ্যাত দার্শনিক কান্ট্ (Immanuel Kant) -এর মতে , 'Man is a crooked timber' অর্থাৎ মানুষ নামক এই প্যাঁচ-খাওয়া গাঁট-মারা কাঠটিকে কেউ ঘুরিয়ে সিধে করতে পারবে না । আল্লা, ঈশ্বর - কেউ-ই না । এই এক সৃষ্টির জবরদস্ত বিকলাঙ্গ খুঁটি । সৃষ্টির নিজের পশ্চাদ্দেশে বাঁশ । আর এই খুঁটির প্যাঁচ খুলে সোজা করে দেওয়া বা বাঁশটিকে প্রানপ্রণে টেনেটুনে বাইরে বের করে আনার ব্যর্থ চেষ্টার চেয়ে আরো বড় অত্যাশ্চর্যজনক একটা ব্যাপার আছে । সেটা হল - সেই খুঁটি ধরে এক ঝাঁকুনি দিলে-ই গা থেকে ছিটকে বেরিয়ে ঝরে পড়বে রাশি রাশি ভুল । গন্ধহীন ভুল । বর্ণহারা ভুল । ছন্দশূন্য ভুল । ব্যাপারটা আপাত অলৌকিক মনে হলেও মূলত লৌকি সব-ই । আসলে আমরা নিজেদের অজান্তে কোত্থেকে এক-একটা ভুলের বোঁটা ছিঁড়ে ফেলি আর হাতমুঠো করে বয়ে বেড়াই । টপ্ ভিউ দিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায় এটা বাস্তবিক-ই । অতি জাগতিক । এবং আবশ্যিক-ও । সূক্ষ্মতার মধ্যে যা পাওয়া যায়, স্থূলতায় তা-ই পাওয়া-টা দৈনন্দিনতার মূলধারায় প্রতীকী হয়ে আসছে । ইম্পার্ফেক্সানিস্ট-পার্ফেক্সানিস্ট নির্বিশেষে সবার জীবনে ।

আচ্ছা, ভুলের রং যদি আমরা লাল ধরে নিই ছোটোবেলার সেই স্কুলখাতায় লালকালিতে কাটা বড়ো সড়ো ক্রসচিহ্ন (X) সমেত ভুলাবলী শিরোধার্য করে ? যা কিনা আজকের পোস্ট-মডার্নাইজড্ যুগে ল্যাপটপস্ক্রীনে ফুটে ওঠা লাল অক্ষরযুক্ত  'Authentication Failed' এর সমার্থক । লাল ফুল নিয়ে প্রেমের ভুল ব্যাকরণের ঠ্যালায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যতটা চোটআঘাত পায়, তার চেয়েও ভয়ানক হল সেই লাল ভুল নিয়ে জীবনের 'অলি'র অন্ধকারে, গলির বন্ধদ্বারে বার বার ধাক্কা খেয়ে আসা । দুরের লাল সাইরেনের তীব্রতা এড়িয়ে, পোড়োবাড়ির লাল বাতির ভৌতিকতা মাড়িয়েনিষিদ্ধ লাল জায়গায় আধ-দেড় ঘন্টা কাটিয়ে, মাথায় লাল আলো নিয়ে ছুটন্ত রোগী-নেই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নির্জন রাস্তাকে আরো নির্জন করে ছেড়ে দিয়ে, শেষে বাড়ি ফিরে মোবাইল-ঘড়ি-চশমাসমেত রোজকারের লাল ভুল-টাকে বালিশের পাশে রেখে দিব্যি-ই ঘুম দেয় মানুষ । আর ভুলভাল স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ করে পরদিন ভুলকুমারীর সাথে ফের মুখোমুখি হওয়ার আগে । কাজে-ই পুরোটা ‘full-cycle-এ চলে না বলে ভুল-সাইকেলে চড়ে বসে আছে - এ কথাটি বললে ভুল শোনাবে না । 

এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই । অবশ্য-ই অতি সতর্কতা সহকারে । তার আগে একটি প্রশ্ন হল - 'ভুল'-এর সত্যি কোনো Unit of Measurement ( UoM ) আছে ? নাকি ভুল একটি নিরাকার মানবসৃষ্টি যাকে আমরা নিজেদের দৃষ্টিসীমা দিয়ে আকার দিই ? যেকোনো একটা 'ভুল'কে ছোটো-বড়, সামান্য-মারাত্মক ইত্যাদি বিশেষণ দিয়ে স্লাইডার দিয়ে মেপে বসি, কেন ? আসলে 'মানুষ মাত্রে-ই ভুল করে' - এই বহুপ্রচলিত প্রবাদবাক্য আমাদের সবার মুখে এখনো নিখুঁতভাবে সচল । কিন্তু চিরাচরিত নিখুঁত ভাঁজহীন এই পর্দার পেছনে যে একটা অতিনাটকীয় মঞ্চ আছে এবং সেই মঞ্চে ঠাঁই করে থাকা 'মানুষ' নামের ছাপমারা আঠালো নায়কের খলনায়কীয় বিবেক বা খলনায়কের নায়কীয় রিটেক চলে সেটা হয়তো অনেকের দৃষ্টির গোচরে পড়ে না, বা পড়তে-ই দেয় না মানুষ স্বয়ং । কারণ ওই মঞ্চটা এতো সূক্ষ্ণভাবে পরিকল্পিত এবং হাতসাফাইয়ের মত সুপরিচালিত যে পুরোটা-ই ম্যাজিক শো-এর মত হয়ে যায় বস্তুতঃ ম্যাজিশিয়ানরা স্টেজে যা ম্যাজিক দেখায়, তার আড়ালে কত কূটকৌশল থাকে, সেগুলো আমরা চোখে দেখে বুঝতে পারি না । কিন্তু আমরা জানি এর পেছনে কোন কায়দা-ফায়দা আছে, তাই কোন ম্যাজিক দেখে চমৎকৃত হলেও আমরা বলি - "এর পেছনে কোন মারাত্মক চালাকি আছে নিশ্চয়ই" । বাস্তবেও ঠিক তাই অর্থাৎ মানুষের একটা সহজাত প্রবণতা আছে যে সে যা দেখে সেটা-ই বিশ্বাস করে । "আমি স্বচক্ষে দেখেছি" - বলে নিজেকে জাস্টিফাই করার একটা কমন হাতিয়ার এখন আমাদের সবার হাতে পাকাপোক্ত ভাবে এসে গেছে ফলস্বরূপ এখানে চলে আসে সেই স্লাইডার । 

'
ভুল' নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার শেষ নেই । ভুল-বিষয়ক এই নিরন্তর গবেষণার ধরণ কেমন হয় বা কিসের ভিত্তিতে হয় সেটা-ই ভাবতে গিয়ে এখনো অবাক লাগে আমার । এমনকি ভুলের আবার যে আপেক্ষিক ব্যাপার-স্যাপার আছে সেটা-ও মানুষের ভাবনার বাইরে পড়ে নি । প্রফেসর আইজ্যাক আজিমোভ ( নামের বিশুদ্ধ বাংলা বানান সঠিক জানা নেই বলে অনিচ্ছাকৃত ভুল বানানের জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী )-এর বিখ্যাত বই 'The Relativity of Wrong' এর ফুটন্ত উদাহরণ না বাবাঃ, আমি বইটি পড়ি নি, শুধু নাম শুনেছি মাত্র । নিজে জীবনের অর্ধেকরাস্তা পেরিয়ে ভুলের কোটিপতি হলাম, তার উপরে কেং-শিং-টন থেকে প্রকাশিত মাত্র দুশো ছাপান্ন পাতার ভুলের ওইসব আপেক্ষিকতাবাদ পড়বো ? বাপের নিকুচি করেছে ! পারলাম না, কারণ ভুলের ভবিষ্যৎ এমনিতে-ই অনেক ভুলময় উজ্জ্বল । তাই ওই কেং-শিং-টন থেকে ছাপা বইটি পড়ে নিজের মাথায় নতুন করে শিং গজিয়ে লাভ নেই, ভাই !

১. "আরে চটে গেছিস দাদা ! তখন বললাম না, ভুল বলেছিলাম..."
২. "সরি স্যার, খুব ভুল হয়ে গেছে..." ৩. "মশাই, আপনি যেটা বললেন সেটা-ই ভুল..." ৪. "আঃ মারলে কেন, মা ? উঃ দাঁড়াও বলছি তো...উফফ... লাগছে মা, প্লী-ঈ-ঈ-ঈ-জ ছেড়ে দাও, আর কখনো-ই করবো না এই ভু-উ-উ-উফফ..."  উপরের ফর্দ আরো লম্বা করা যায় অনায়াসে । ভুলের এই ফর্দটি নিয়ে হাটবাজার বসে যেখানে-সেখানে, মুহূর্তের আনাচে-কানাচে এই ধরণের ভুলোৎসব পালিত হয়, সময়ে-অসময়ে-দুঃসময়ে ভুলাসর জমিয়ে রাখে ভুলের স্রষ্টা । প্রতিটি ক্ষেত্রে সামান্যতম একটি ভুলের যে মারাত্মক পরিণাম হতে পারে সেটা অনেকে-ই মুক্তাক্ষরে মানে, যুক্তাক্ষরে জানে, কিন্তু স্রেফ অক্ষরে অক্ষরে ভুলে যায়  অনেকে আবার নিরক্ষর । তারা না বোঝে বিজ্ঞান, না বোঝে ধর্ম, না বোঝে দর্শন । এদের সাথে খুব বেশি যুক্তিতক্কে লিপ্ত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় । সাধারণতঃ এদের কু-যুক্তি বেশিক্ষণ ধোপে টেকে না । তারপর তারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসে এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে গালিগালাজ করে একে অন্যকে ট্র্যাক থেকে সরাতে চেষ্টা করে । এখানে বড় ভারী দুঃখের সাথে জানাই যে একটা বেনামী সার্ভে-তে দেখা যায় বাঙালিদের মধ্যে এই জাতীয় 'ক্র্যাব মেন্টালিটি' (Crab Mentality) প্রকটভাবে প্রকটিত হয় । যা এক এক সময়ে এমন লাগামছাড়া হয়ে যায় তাতে-ই 'ভুল'-এর বাস্তবিক অস্তিত্বটুকু-ও শূন্যে হাত-পা ছোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায়

প্রসঙ্গতঃ এখানে উল্লেখ করি, অস্কার ওয়াইল্ড উবাচ - "Whenever people agree with me I always feel I must be wrong" - এটা আমি আজ-ও চুপচাপ মেনে চলার চেষ্টা করি । তবে এই ধরণের উক্তি নিয়ে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করা আমার মত নিতান্ত সাধারণ দ্বিপদ প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়, বরং এড়িয়ে যাই । নইলে ভুলভাল ব্যাখ্যা বেরোতে পারে যে 'ভুল'কে zoom in করলে-ই ভয়ানক লাগবে, zoom out করলে-ও চুকচুক করবে ভুলটা ।