29 Feb 2016

মিডিয়ানির্ভর মানবজাতির মুখ


রোজ নিজেকে দেখতে পাই । দেখতে হয় এমন কোনো নিয়ম নেই । খালি দেখা পাই প্রতিনিয়ত । এই দুনিয়ায় ছোটোবড়ো সাইজের যেকোনো আয়নার পাশ কাটিয়ে যাবার মুহূর্তে ঘাড়সমেত চোখমুখ কেমন একটা যাদুবলে ঘুরে যায় সেই আয়নার দিকে । নিছক বললেও কম বলা হয় । ঘাড় ঘুরে নিজের মুখ একঝলকে দেখে ফেলার পেছনে শুধু সৎ কেন, বদ্-ব্যাখ্যাও নেই । 

আয়না আছে বলে নিজের মুখ দেখতে পাই, না নিজের মুখ দেখার জন্য আয়না লাগে - কোনটা ঠিক ? তেমনি আমি ঠিক বুঝতে পারি না - মিডিয়া আছে বলে রোজ দেখতে পাই রাহুল গান্ধী, স্মৃতি ইরানি, অর্ণব গোস্বামী, বিরাট কোহলি, কানহাইয়া কুমারদের মুখ নাকি ওদের মুখ দেখার জন্য (পড়ুন ওদের খবর জানবার জন্য) মিডিয়ার প্রয়োজন পড়ে । অথচ প্রতিনিয়ত দেখতে পাই এদের । এরা হয়ে উঠেছে দৈনন্দিনতার মুখপাত্র । এরা নাহয় জীবিত । কিন্তু মৃতব্যাক্তি ? কবে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে অথবা চলে যেতে হয়েছে স্বেচ্ছায় কিম্বা অন্যের ইচ্ছায়, তবুও এদের মুখ দেখতে পাই - রোহিত, নির্ভয়া, অরোরা এদের ছবি । এদের পারিবারিক ছবি । এদের ভিতরের অসুখের ছবি । এদের ভিতরের রক্তক্ষরণের ছবি ।

সত্যি জীবিত বা মৃত কোনোটাই শেষ কথা নয় । মুখছবি শেষ কথা যা নিজেকে রোজ দেখতে পাই সকালে ওঠবার পর আর রাতে শোবার আগে । মৃত্যু আর নিজের মুখদর্শনের মধ্যে কি আশ্চর্য মিল ! আয়না আর মিডিয়ার মধ্যে কি অদ্ভূত মিল !

মিডিয়াকে যত ধিক্ ধিক্, ততই মিডিয়ানির্ভর এই মানবজাতির মুখ ।

8 Feb 2016

মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই


পরশুরাম বলে গেছেন, "যারা ট্রাজেডি লেখে আর তা পড়তে খুব ভালোবাসে, তারা সব মরবিড, প্রচ্ছন্ন নিষ্ঠুর । মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই, তার উপর আবার মনগড়া-দুঃখের কাহিনী চাপাবে কেন ?" 

আমি এই উবাচ কয়েকবার পড়লাম । মাকে পড়ালাম । বাবাকে পড়ালাম । বৌকেও বাদ দিলাম না । ছেলেকেও পড়াবো পড়াবো করেও ছেড়ে দিলাম কারণ এখনো দুঃখবোধ তৈরী হয় নি যতই না কিত্ কিত্ করে কেঁদে ভাসাক । আরেকটু বড় হোক দুঃখের ঝোলাব্যাগ কাঁধে বয়ে নেবার মত ।

দুঃখের যখন অভাব নেই, তখন ধরে নিতে হবে এতো সেন্টিমেন্টাল হবার বিশেষ কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই । কেউ দিতে এলেও দূরপাল্লার কোনো ট্রেন ছুটে এসে থামবে না । কারণ সামনের দিকে সর্বদা সবুজ আলো জ্বলে উঠবেই । ওই সবুজ আলোর দিকে ছুটে পালাবে বহুলোক নিয়ে, গোটা একটা জগৎ । কেউ অন্যের দুঃখে বসে নেই । তাই দুঃখের কোনো ইউনিকনেস্ নেই । স্বকীয়তা নেই । স্বাতন্ত্র্য নেই । মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে মানুষ সুখ খোঁজে । আঁচড় কেটে রক্ত বের করে সুখের জ্বালা মেটায় । দেওয়ালে মাথা ঠুকে সুখের আলু গজায় । বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সুখী হয় । চোখের জলের অপর নাম সুখ । খানিকটা "জলের অপর নাম জীবন" গোছের । 

হিসেব কষলে হয়তো রেজাল্ট বেরোবে যে সুখের বড়ো অভাব । তাই সুখের কাহিনী কেউ লেখে না । লিখতেও চায় না সুখী মানুষেরা । নাহ্, ভুল বললাম । আসল কথাটা হচ্ছে সুখকে আমরা তাড়াতাড়ি ভুলে যাই বা মনে রাখি না । শৈশবকে সহজে মনে রাখতে পারি না ঠিক এই কারণে । এও একধরণের ন্যাচারাল নিষ্ঠুরতা । খালি মনে রাখতে পারি রঙীন রঙীন দুঃখ । সত্যিই তো ! কী বা দরকার ছিলো এতো রঙ নিয়ে দুঃখখেলার ?!

আমি এখন ভাবি সুখের নিজস্ব কোনো রঙ নেই । যদি একটুখানি সাদা সুখের সাথে একটুখানি কালো সুখ মিশিয়ে দেওয়া যায়, তবে মন্দ কিসের ?