10 Sept 2014

নেলকাটার

  
নিজের পায়ের নখগুলো হঠাৎ চোখে পড়লো । নাহ্ কথাটা খুব ভুল বলে নি সে । সেদিন । প্রায় তেরো-চোদ্দো বছরের পুরোনো কথাটা । সত্যি ! ভাঙা, এবড়ো-খেবড়ো, বহুদিন না-কাটা নামগন্ধহীন এমন দশখানা বড় বড় নখ দেখলে কোনো মেয়ে কিছুতে নিজের যোগ্যতার আওতায় আনতে সাহস পাবে না ! নির্ভেজাল, মসৃণ, সযত্নে কাটা ঝকঝকে নখযুক্ত পা যেসব পুরুষমানুষের তারা কি নির্ভরযোগ্য হয় ? নাকি উল্টো বোধের অগম্য হলো আমার ? সমাজবিজ্ঞানের খাতাকলমে আমি একজন হতভাগা হ্যান্ডিকেপ্ড বলে ? সেদিন কিন্তু চ্যাটবক্সে তাকে প্রোপোজ করার সময়ে আমি আমার পায়ের ছবি পাঠাই নি । তাও ? আমার সদ্যপাক ধরা সযত্নে ট্রিমিং করা প্রিয় ছাগলদাড়িতে হাত বোলাতে লাগলাম, যা অচেনা বা দূরাত্মীয়দের কাছে ফিলোজফিক্যাল শো-অফ হলেও আমার দিক থেকে কিঞ্চিন্মাত্র বৈরাগ্য । পরক্ষণে চোখ বুজলাম ।  

সেদিনের আমি । উইন্ডোজ এক্সপি রিলিজড্ হয় নি । কিবোর্ডে আঙুল চালিয়ে টাইপ করেছিলাম তার উদ্দেশে আমার কয়েক লাইনের পোলাপাইন ইশক্ । সাথে পাণিপ্রার্থনার একটি সরলমনা লাইন । অবশেষে চাপলাম সবচেয়ে বড় বোতামে প্রত্যুত্তরের আশায় অমনি দু'অক্ষরের ছোট্ট একটা অ্যান্টি-ইশক্ মেসেজ এলো তার পক্ষ থেকে - "ইশ্ !!!", ক-এ কথা নেই, ক-এ কওয়া নেই, ক-এ কারণ ছাড়াই । তার মিনিটখানেক বাদে "আমি তোমার পায়ের নখের যোগ্য নই" বলে এক লাইনের মেসেজ দিলো সে । আমায় উলঙ্গ অবস্থায় দেখা তো দূরের কথা, উলঙ্গ পা বা পায়ের নখ অবধি দেখেও নি সে । তবু আমার পায়ের নখের যোগ্য না হবার তার দাবীর ভিতরে প্রত্যাখানের একটা যে কূটকচালী খোঁচা ছিলো সেটা বুঝতে নেলকাটার-ও লাগে নি আমার । এভাবে পাণিপ্রার্থী হতে গিয়ে কাটা পাণিফল হয়ে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা যতটা তেতো, তার চেয়েও হেব্বিদিব্বি তেতো লেগেছিলো নিজের অযোগ্যতার কথা ভাবতে গিয়ে ।

ইয়াহু মেসেঞ্জারের চ্যাটবক্সটা তখনো হার্টবিটের মত দুটো কালারের মধ্যে সুইং করছিলো । একবার সাদা, একবার হলুদ । "কি হলো ???", "আছো ???", "কোথায় তুমি ???" - গাদাগুচ্ছের মেসেজ । ফাঁকে ফাঁকে গোটা বক্স কাঁপানোর BUZZ একদৃষ্টিতে দেখছিলাম । সাড়া দিই নি । কেন বা দিতাম ? ভাট ! সে মানুক যে আমি ছিলাম তার রক্তমাংসের একজন প্রেমিক । সে বুঝুক যে তার মস্তিষ্কের কর্টেক্সে কিলবিল করতো ডোপামিন, অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিন ইত্যাদিকার বিতিকিচ্ছিরি হরমোন যেগুলো তাকে "দোদুল্যমানা ললিতলবঙ্গলতার লাবণ্যলীলা"র একজন তুখোড় নায়িকা বানিয়েছিলো । আমার চোখ ফেটে প্রায় জল আসার উপক্রম । শেষে মনিটর অফ্ করলাম । এর আগে আমি কতজনের কাছে দাদা, দাদাই, দাদাসোনা বা দাদাঘেঁষা যত্তসব আলফাল উপাধিলব্ধ হয়েছিলাম । খালি মনে হতো কন্ডোমের মত একধরণের মানসিক সুরক্ষা থাকে এই দাদাহ্লাদী প্রেমের মধ্যে । টু বি অনেস্ট, আমার জীবনের প্রথম প্রেম সোজা গিয়ে পড়ে গেছিলো দাদামাখা ডোবায় । দাদা নং ১. সিজনে এমন চূড়ান্ত সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে আমার জন্মগত বধিরতা কতটা দায়ী সেটা কোনোদিন কেটে ছিঁড়ে দেখি নি । শুধু সেই মেয়েটার কথাটা আমার বুকে এক মোক্ষম ঘা দিয়েছিলো । 

ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে যাওয়া বুকের একবাটি পাউডার সারা মুখে মেখে একদিন গেছিলাম কলেজের লাইব্রেরিতে । একটা স্টাডিরুমে ঢুকে একটা ফাঁকা টেবিল পেয়ে থম মেরে বসে পড়েছিলাম । এক হাত দূরে টেবিলের উপরে রাখা কয়েকটা বইয়ের মধ্যে একটাতে চোখ আটকে গেছিলো । কভার জুড়ে একটা পেখম তোলা ময়ূরের রঙিন ছবি । টাইটেলে ইংলিশ হরফে মোটা মোটা করে লেখা - 'দ্য হ্যান্ডিকেপ প্রিন্সিপল্' । বাবাঃ ! একে ময়ূরের ছবি, তার উপর এরকম একটা সায়েন্টিফিক টাইটেল ! প্রথম প্রথম একটু ইতস্থত করলেও নিজে একজন প্রতিবন্ধী বলে বইটা হাতে নিয়ে পাতা ওল্টাচ্ছিলাম । হঠাৎ একটা লাইনে আটকে গেছিলাম - "The tail is a handicap. A beautiful handicap, but nonetheless, a handicap, a characteristic that in no way other than beauty aids the peacock" ! ল্যাও ঠ্যালা ! ময়ূরের চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা পেখম তার নাকি এমন একটা আলংকারিক বৈশিষ্ট্য যা বিরাট একটা দৈহিক সমস্যা । এটা নিয়ে জোরে দৌড়াতে পারে না । সহজে ধরা পড়ে যায় লোভী বা শিকারীদের খপ্পরে । আত্মরক্ষার্থে আদ্যোপান্ত ইউজলেস্ । অত্যন্ত বিপজ্জনক একটা বাধা । আসলে এটা নাকি তাদের সঙ্গিনী নির্বাচনের জন্যে একটা অস্ত্র । রঙবেরঙের উজ্জ্বল দীর্ঘ পেখম তুলে এরা ময়ূরীদের আকর্ষণ করে । দ্য ওনলি ওয়ান ওয়ে অফ সেক্সুয়াল সিলেকশন । প্রকৃতির নিয়ম কিনা এটা । ময়ূরীদের চোখে একেকটা ময়ূর একেকটা জর্জ ক্লুনি বা জনি ডেপ বা রিচার্ড গিয়ার বা সোম সরকার !!! আজ্ঞে !!! ফিল্মস্টারদের সাথে নিজের নাম উচ্চারণ করতে কার না ভালো লাগে ! 

সেই সুত্রে বধিরতাও বিরাট একটা সমস্যা । ফোনে হেসেখেলে ফ্লার্ট করা তো দূরের কথা, ফোনে গলার স্বর শোনা অসম্ভব । অচেনা কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে নিজে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও পাছে কথা বুঝতে না পারে এই ভেবে গলন্ত মোমবাতির মত মাথাটা মৃদুমৃদু নাড়িয়ে চুপচাপ ঘামতে থাকি । অবশ্যই প্রচলিত মুখ-হাঁ না করে চোখদুটোর মাপযন্ত্র চালু করে মেয়েদের সুডোল-খাঁদা নির্বিশেষে বুকদুটি দেখতে থাকি যা আমার প্রাণাধিক প্রিয় । এর নেক্সট্ ধাপে এগিয়ে যাওয়ার নন্-ভার্চুয়াল ক্ষমতা নেইযখন তখন ধরা পড়ে যাই শ্রীশ্রীব্যঙ্গবিদ্রুপকারীদের পাল্লায় । সামাজিক নিয়ম কিনা এটা । ঠিক ওই হ্যান্ডসাম ময়ূরের মত হেল্পলেস, আবার উল্টোটাও । অমন চাকচিক্য বর্ণাঢ্য সৌন্দর্যে ভরপুর ষাট-পয়ষট্টি ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পেখম আমার নেই যে নেচে কুঁদে ময়ূরীদের থুড়ি মেয়েদের অনায়াসে পটিয়ে ফেলবো, বরং বধিরতার মত দৈর্ঘ্যপ্রস্থহীন নিরাকার অস্ত্র নিয়ে আমি বেঢপ মাল ! দুজনের প্রতিবন্ধকতা, অথচ সঙ্গিনী নির্বাচনের ব্যাপারে পুরো সুমেরু-কুমেরু । ফ্রাস্টের চোটে গবেষণামূলক বইটা সজোরে বন্ধ করেছিলাম । স্টাডিরুমের 'কিপ সাইলেন্স'-এর কড়াকড়ি আবহাওয়াতে ঝিম মেরে থাকা উপস্থিত সকলে চমকে গিয়ে এদিকে তাকিয়েছিলো । পেরেমছেঁড়া একাকী দ্বিপদ গাধার মনে বিঁধে গেছিলো জোড়া জোড়া ট্যারাপেরেক । 


কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধঘরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলাম । পুরো ন্যাংটো হয়ে । চোখে অবশ্যই ছিলো শুধু চশমা, নাহলে নিজের রূপ দেখবো ক্যামনে ?! এপারের ক্ষতবিক্ষত মন নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ শরীরের প্রতিবিম্ব ওপারে দেখায় । প্রতিবিম্বটা কিন্তু সম্পূর্ণ অক্ষত । নিঁখুত । জিমকৃত সুঠাম । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম যে কোথায় ক্ষতস্থান ? কোথায় বা কিসের খুঁত ? প্রতিবিম্বটাও কী বাস্তবিক ক্ষতস্থান দখল করে আছে ? এপারে আমি বুঝি আস্ত একটা পরিত্যক্ত আবর্জনা, ওপারে তার নিঁখুত প্রতিফলন । মাথাভর্তি উস্কোখুস্কো চুল, দুটি সবল হাত, দুটি সবল পা, হালকা রোমশ বুক, ফ্যাট-হীন ফ্ল্যাট পেট আর তলপেটের নিচে সমস্ত মানসম্মানের ঝুলন্ত ধারক । এমন সম্পূর্ণ নিখুঁত প্রতিচ্ছায়াকে দেখতে দেখতে শুধাই, "আমি কালা বলে সে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না ?" 

প্রতিচ্ছায়াটা যেন নড়েচড়ে বসে, "বোধ হয় তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সে নিশ্চিত নয় তাই রিস্ক নিতে চায় নি !"

আমি : "আমার ভবিষ্যৎ তো আমি জানবোই । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি এখন । আর কটা বছর বাদে ক্যাম্পাসে ভালো চাকরি পাবোই পাবো"

প্রতিচ্ছায়া : "পাবি নিশ্চয়ই । কিন্তু তুই তো একজন প্রতিবন্ধী । বোধ হয় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে তোকে নিজের হাজব্যান্ড হিসেবে ভাবতে রাজি নয়"

আমি : "তাহলে মেয়েটার পায়ের নখ না দেখেও বলতে হয় যে আমি তার যোগ্য নই, শুধু তার কেন, এ দুনিয়ার কারোর যোগ্য নই"

প্রতিচ্ছায়া : "ধুর পাগল একটা ! তোর মত ব্রাইট ছেলে আর কটা আছে ? কেউ একজন তোকে শুধু ভালোবাসবে না, জীবনসাথীও করে নেবে । আর ওই কালো মেয়েটাকে তুই ডিজার্ভ করিস না, পুরো গেঁজেল মেয়ে কিনা সে"

আমি : "নাহ মানতে পারলাম না । গোলপার্কের সিসিডিতে তিন-চারবার একসাথে খেয়েছিলাম । লেকে বসেছিলাম পাশাপাশি । আমার কাঁধে তার মাথা রেখেছিলো । তার হাতে আমার হাত রেখেছিলাম কিম্বা তার হাত আমার হাতে । চোখদুটো বড় বড় করে দেখতো আমার দিকে । ওর চোখেমুখে কোনো সিম্প্যাথির ছাপটুকু দেখতে পেতাম না বা চেষ্টাও করতাম না । প্রেমের পাপড়ি তার চোখে ফুটে আসতো, শ্যামবর্ণা গালে তার হালকা আভাস পড়তো । প্রেমের ব্যকরণের নির্ভূল বর্ণ সব খুঁজে পেতাম ওর সমস্ত অভিব্যক্তিতে । আমার অর্ধবোধ্য ভাষায় কথা শুনতো মন দিয়ে । মাঝে মাঝে দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশতঃ ইশারায় কথা বলতাম । সে সব কথা বুঝতো কিনা জানতে একটুও ইচ্ছা করতো না আমার । শুধু ওর সঙ্গলাভে সুখ খুঁজে পেতাম । যখন নিজে থেকে কথা বলতে যেতো তখন খুব টানটান হয়ে বসতো যেন আমি তার বাধ্য ছাত্র । খুব যত্ন করে থেমে থেমে কথা বলতো, কখনো বুঝতে না পারলে আমার হাতের তালুতে তার সরু সরু নরম আঙুল দিয়ে একেকটি অক্ষর এঁকে দিতো, কখনো বা ব্যাগ থেকে খাতা বের করে তার উপরে পেন দিয়ে তার বলা কথাগুলো লিখে দেখাতো"

প্রতিচ্ছায়া : "পিওর গান্ডু তুই একটা । এটাই স্বাভাবিক । এতে তোর অক্ষমতার কিছু নেই"      

আমি : "বস্ ! প্রেম কি সব ? আমার মতো একজন বালের ডেফকে কেউ বিয়ে..."

প্রতিচ্ছায়া : "চোপ ! মহাভারত পড়িস নি কি ? ধৃতরাষ্ট্রকে চিনিস তো ? কমপ্লিটলি ব্লাইন্ড, তার বউ ওকে ভালোবাসতো, নিজের চোখদুটি কালো কাপড় দিয়ে বন্ধ করে ছিলো শেষজীবন অবধি আর একশো একখানা ছানাপোনা হয়েছে । ভাব ! রামায়ণের অন্ধমুনির কথা তো জানিস ? তারও..."  
   
আমি : "আহ ! জানবো না কেন ? কিন্তু অন্ধদের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলিস না । বাল্মীকি বা ব্যাসদেব বধিরতাসম্পন্ন চরিত্র একটাও প্রডিউস করেছে ? শুধু অন্ধ বা পায়ে খোঁড়া বা দশটা মুণ্ডুওয়ালা নিয়ে বাঘা বাঘা কপচালো । অন্ততঃ একটা প্রধান বধিরচরিত্র ভাবতে পারতেন, নাকি সেরকম কেউ একজনকে ঢোকালে গোটা মহাভারত অশুদ্ধ হবে ? শ্রবণহীনতা নিয়ে বুঝি কোনো গল্প হয় না? প্রেমযৌনতা বলে কিছু হয় না ? হোয়াট ননসেন্স !"

প্রতিচ্ছায়া : "হুম ! কি করবো বল তো ? পুরাণেও নেই, কোরানেও নেই, বাইবেলেও নেই । থাকলেও শুধু বলা আছে যীশুখ্রিষ্ট নাকি একজন বোবাকালা লোকের কপালে হাত দিয়ে তার শ্রবণশক্তি আর বাকশক্তি ফিরিয়ে এনে দেয়..." 

আমি : "হা হা হা ওইসব গাঁজাগুরি গল্প রাখ ! যতদুর জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চেক রিপাবলিকের মত প্রগতিশীল দেশের কিছু অনামী লেখক বধিরতা ও তার কিছু চরিত্রসৃষ্টি করে গেছেন । সেগুলো তো হ্যারি পটার গোছের পপুলার নয় যে এখানকার মেয়েরা পড়ার জন্য ঝাঁপ দেবে ? এরাজ্যে ডেফনেস নিয়ে সিংহভাগের কল্পনার কোনো অ আ ক খ নেই । ধারণার বিন্দুমাত্র নেই একজন ডেফ কিভাবে লাইফ লিড করে । কোনো স্রেফ চোখ বন্ধ করলে বোঝা যায় অন্ধত্বের ভয়াবহতা, হাত-পা ভাঙলে বোঝা যায় পঙ্গুত্বের সীমাবদ্ধতা, কিন্তু বধিরতার ব্যাপারে প্রাকটিক্যাল সেন্স তৈরী হয় না যতক্ষণ না কেউ নিজে তার জন্মগত বা দুর্ঘটনায় পড়ে শিকার হচ্ছে । এটা কি হাতের মোয়া ? বরং মোয়া-ভারতের মত কাব্যিক ছক্কাপাঞ্জার যত বহর দিক, বাঃ-বেলের মত যত ভাঁওতাবাজ হোক, গোটা কাহিনীজুড়ে বধিরতার জিরো ফিগার !"

প্রতিচ্ছায়া : "ঠাণ্ডা হো । মানছি । এও জানি যে একদিন সন্ধ্যায় কলেজের 'সাংস্কৃৎ' ফেস্টে ওকে নিয়ে গেছিলি । তুমুল নাচ করেছিলি একসাথে । হে হে হে ! ফেরার পথে তোরা দুজনে হাত ধরাধরি করে ৮বি স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে থানা অবধি হেঁটেছিলি । রাত নটা বা সাড়ে নটা হবে বোধ হয় । অন্ধকারাচ্ছন্ন ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাঝপথে সে তোকে থামিয়েছিলো । তোর গালে টুক করে চুমু খেলো । তুইও শালা পাল্টাচুমু দিতে গিয়ে ওর কালো মুখখানা দুইহাতে বন্দী করে ওর ঠোঁটদুটিতে তোর ঠোঁটদুটি চেপেছিলি । ঠোঁটপর্ব চলতে চলতে তোর ডান হাতটা নেমে গেছিলো ওর বুকের কাছে । সেও একটা হারামির বাচ্চা বলে সামলাতে না পেরে আরো জাপটে ধরেছিলো তোকে । ওর জামার তলায় বেয়াদপের মত হাত ঢুকিয়ে শরীরের প্রাইভেট অঙ্গে..."

আমি : "মনে করাস না প্লীজ ! আবেগে ওইসব তো ঘটে থাকে, বেকার নুন ছিটিয়ে লাভ নেই"

প্রতিচ্ছায়া : "আলবাত মনে করাবো ! শালা উজবুক ! আবেগের নিকুচি করেছে ! যা করেছিলিস তোরা সব নিছক সুড়সুড়িতে । এই সুড়সুড়ির কোনো গাছপাথর নেই..."

আমি চুপ করে থাকি এসময়ে । প্রতিবিম্বও চুপ । মনটা ভীষণ খুঁতখুঁত করে এইসময় । মেয়েটা যদি আমায় এই ন্যাংটো অবস্থায় একটু বেশি সময় নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পেতো মাথা থেকে পা অবধি যেভাবে আমি প্রতিবিম্বকে দেখছি তাহলে আদৌ কী বধিরতা ধামাচাপা পড়ে থাকতো ? বাঞ্চোওওওৎ !! এই মেয়েটা !! আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটা কিনা শেষে চ্যাটে বলে আমার পায়ের নখের যোগ্য নয় ! সারা প্রতিবিম্ব থর থর করে কেঁপে ওঠে । ঘেমে যায় । প্রতিবিম্ব থেকে চোখ সরিয়ে চারদিকে উদভ্রান্ত হয়ে চেয়ে থাকি । মনে হল ঘরের চারটে দেওয়াল আমার স্বমেহনের মুগ্ধতায় যেন একে একে টুপি খুলে নতজানু হয়ে কুর্ণিশ জানাচ্ছে একমাত্র এই পুরুষালি দাম্ভিক অস্ত্রকে । এই চারখানা দেওয়াল বোঝে না যে ভিতরের তলানিতে ঠেকে যাওয়া মুষড়ে যাওয়া কষ্ট মাস্টারবেট করেও দূর করা যায় না ।

কে যেন আমার গায়ের জামা ধরে কয়েকবার টান মারলো । চমকে গিয়ে চোখ খুলে দেখি আমার চার বছরের ছেলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে । বেশ খানিকক্ষণ চেয়ে দেখলাম এই খুদে প্রজন্মের দিকে । হয়তো আর কটা বছর বাদে এর প্রথম ইশক্ কুলকুল করবে কো-এড ইশকুলে যা এসেছিলো আমার বুড়োধাড়ি কলেজলাইফে । এ হয়তো ইশকুলের গণ্ডি পেরোবার আগেই জীবনের প্রথম চুমু খাবে তার প্রথম মেয়েবন্ধুর ঠোঁটে যেটা আমি স্বপ্নে আঁকড়ে ধরে পার করেছিলাম স্কুললাইফের তিনটে বড় পরীক্ষা । হয়তো মেয়েরা একে দাদা-দাদা না করে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে লাভস্টোরি বুনবে যেখানে আমার দাদা নং ১ হওয়ার সাকসেস্ স্টোরি একদম বেমানান । হয়তো হিয়ারিং নর্ম্যাল বলে এর প্রথম প্রোপোজাল নিঃশর্তে গৃহীত হবে একজন যোগ্যতম নারীর কাছে যেখানে সেই পায়ের নখের অযোগ্য মেয়েটা ছাড়াও বেশ কয়েকজনের প্রেমজ মিথ্যাফাঁদে পড়ে আমার মনের হাড়গোড় ভেঙ্গেছিলো, আবার অতিকষ্টে জোড়া লাগিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, এমনকি লাস্ট লেডি থুড়ি আমার স্ত্রীকে পেতেও যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো । 

উত্তরসুরির ভবিষ্যৎ ভাবতে ভাবতে আমার চোখ সোজা গিয়ে পড়লো তার পায়ের নখের উপরে । আঁতকে উঠলাম, "অ্যাই ! নখগুলো সব বড় হয়ে গেছে ! স্কুলম্যামের বকা খেয়ে বসবি নাকি ? যা শিগগির নেলকাটার নিয়ে আয় তো আমি কেটে দিচ্ছি", চটপটে ছেলেটি এক দৌড় দিলো নেলকাটার আনতে যা দিয়ে পায়ের নখ কেটে নিজেকে একজন যোগ্যতম পুত্র বলে পরিচয় দিতে চায় । হয়তো...

No comments:

Post a Comment