29 Dec 2014

হারামিভূত


সারা হলে আমি একা । সোফায় গা এলিয়ে কম্বলালিঙ্গনবদ্ধ ছিলুম । ঘড়িতে আড়াইটের রাত তখন ঝিমোচ্ছিলো । সামনের দিকের ঘরের দরজা পর্দাঢাকা । তার পাশের বাথরুমটা বন্ধ । তার পাশের রান্নাঘরটা খোলা কিন্তু এই হলের হ্যালোজেন বাল্বের আলোয় কিছুটা আধান্ধকার । 

মোবাইলে কুটকুটানি চলছিলো একমনে । এমন সময়ে মনে হলো কে যেন হন্ হন্ করে রান্নাঘরে গেলো । চমকে গিয়ে ওদিকে তাকাতেই বুঝলাম মনের ভুল ।

তাও কোথায় যেন খুঁতখুত করলো মনটা । প্রথমে ভাবছিলাম একবার উঠে গিয়ে রান্নাঘরের আলো জ্বালাবো, পরে নেতিবাচক হলাম । বুড়োবয়সে এসে ভয় পেয়ে গেলুম নাকি যে একটু যেচে দেখতে চেয়েও পারলুম না ? ভূতের ভয়ডর না থাকলেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি লাগছিলো । মনে হচ্ছিলো এবার বেডরুমে ঢুকে পড়া ভালো ।

তার আগে কনফার্মড্ হবার জন্য একবার ভালো করে চেয়ে নিলুম চারধারে মাথাটাকে ঘুরিয়ে । ৩৫৯ ডিগ্রি অবধি ঘোরার পর মনে দপ করে একটা বাল্ব জ্বলে উঠলো । ভয়ের বাল্ব । শুধু ৩৬০তম ডিগ্রিতে থাকা একটা না-দেখা ভূত বোধ হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে । বহুকষ্টে শেষতম ডিগ্রি অর্জন করে দেখলাম নাহ্ ফালতু ভয় পাচ্ছিলুম । 

আর থাকতে না পেরে গুটিসুটি মেরে যেই বেডরুমে ঢুকতে গেলুম তখনই মনে হল রান্নাঘরের আলো যেন জ্বলে উঠলো । থমকে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আলোটা জ্বালানো নেই, উল্টে হলের হ্যালোজেনের আলোর সদ্যোজাতসন্তান হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়েছে । খেয়াল করলাম তার ছন্নছাড়া গতিবিধি আর আমার ভীতিবিধির মধ্যে কোনো অমিল নেই ।

বিজ্ঞান নিজেই একটা হারামিভূত ।

No comments:

Post a Comment