13 Jul 2015

একটু অন্ধকার পাই কোথায় বলতে পারেন


চাই এমন একটা গা-ছমছমাট অন্ধকারের অ্যাম্বিয়েন্স । তার ভিতরে ডুবে থেকে একটু একটু বাড়তে থাকবে অ্যাডভেঞ্চার-ঘেঁষা ঢুলুনি । যেই সেই অ্যাডভেঞ্চার নয় কিন্তু । 'চাঁদের পাহাড়' বা 'ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স'-এর মত মাংসমোড়া শরীর নিংড়ে রক্ত বের করা অভিযানও নয় । এ অভিযান এমন একটা 'চিরতরে হারিয়ে যাওয়া' যার শেষে অপেক্ষায় থাকে প্রেমের চিরকালীনতা । প্রেমিকা জলজ্যান্তা হোক, মৃতা হোক, বাস্তবের গণ্ডীঘেরা হওয়া চলবে না । এইভাবে অন্ধকার ফুঁড়ে খুঁজে পাওয়া প্রেম আতসবাজি হয়ে এনে দেবে কবিসম্মানের মত সাময়িক রিল্যাক্স ।

বিয়াত্রিস (বিয়াত্রিচে) যেমন তাঁর নিজের পঁচিশবছরের জীবিতকালে কোনোদিন জানতে পারেন নি একজনের ভালোবাসার কথা, বনলতা তেমনি এতো কাছে থেকেও হয়তো আঁচ করতে পারেন নি একজনের ভালোবাসার আর্তি । বিয়াত্রিসকে জীবনে মাত্র একবার না দুবার দেখেছেন দান্তে । জীবনানন্দ আগে কখনো দেখেছেন কিনা জানা নেই, জানতে পারি শুধু সমুদ্রের পর সমুদ্রে কাটিয়ে অবশেষে বনলতাকে দেখতে পান এক গভীর অন্ধকারে ।

দিশাহীন নাবিকের মত মুখ তুলে বনলতাকে দেখতে পান । নাটোরের অন্ধকার বুকে চুল খুলে রেখে বসেছিলেন মিসেস সেন, তাঁর মুখোমুখি বসে শুধু তাঁর পানে চেয়ে বসেছিলেন সমুদ্রক্লান্ত মিস্টার দাশ । তখনো কবি হয়ে ওঠেন নি । একমাত্র অন্ধকারের ব্যাপকতা আর সমুদ্রের বিশালতার মাঝে 'হাজার বছর' কাটিয়ে শেষপর্যন্ত বনলতা সেনের সহযোগিতায় কবিত্ব কুড়িয়ে পান । ঠিক যেন হীরের জ্বলজ্বলানি দেখতে পেয়ে একদৃষ্টে তার জরিপ করা । মন্ত্রমুগ্ধের মত । 

মিস্টার দান্তে আলিঘিয়েরি বাস্তবের বিয়াত্রিসকে মনে রেখেছিলেন নিজের দীর্ঘ কুড়ি বছরব্যাপী ভবঘুরের জীবন কাটিয়ে । শেষজীবনে লেখেন 'ডিভনা কোমডিয়া' (ডিভাইন কমেডি) তাতে বলেছেন যে এক গভীরতম অন্ধকার অরণ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । উনিও ছিলেন দিশাহীন । বেছে নিয়েছিলেন অন্ধকারের ব্যাপকতা আর অরণ্যের গভীরতা । নিজেকে তার মধ্যে রেখে ঢেকে হারিয়ে ফেলেন আর বহুরাস্তা পেরিয়ে স্বর্গরাজ্যের মুখোমুখি হন । সেখানে খুঁজে পান মাত্র নয়বছর বয়সে দেখা সেই প্রেম অর্থাৎ বিয়াত্রিসকে । এই অসামান্য অভিযান চালিয়ে উনি সারা ফ্লরেন্সের পক্ষ থেকে কবিসম্মান পেয়ে যান মৃত্যুর অনেক পরে, যা পান নি ফ্লরেন্সের তৎকালীন পোপের অরাজনৈতিক শাসনকালে থাকাকালীন ।

এই 'পাওয়া'টা আরো অনেকের জীবনে ঘটে এসেছে । নানা ভাবে । বেশিরভাগ আলোর ঝলকানির উপস্থিতিতে । কিন্তু পথহারা মোহময়ী অন্ধকারকে সিলেক্ট করার নেশা সবার মধ্যে থাকে না । সমুদ্রে বা অরণ্যে নিজের তুচ্ছ সত্তাটুকুকে ভাসিয়ে বা পাঠিয়ে সেখান থেকে সর্বকালীনপ্রেম খুঁজে পাওয়ার আইডিয়া বেশ বুনো গোছের । ঠিক যেন দশটা আঙুলের নখ ফাটিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে অন্ধকারের বুক কেটে চিরে ভিতর থেকে অতিদুর্লভ ধনরত্ন পাওয়ার ঊচ্ছ্বাস । নেই কোনো মাথাধরা সূত্র । নেই কোনো খটরমটর ছককষা । নেই কোনো রহস্যাবরণ । বরং সবটাই প্রেম খোঁজার অভিযান । সাথে 'অন্ধকার' হলো সেইসব লিমিটলেস্ অভিযানের প্রতিপদেপদে তেষ্টামেটানো ঠাণ্ডাজল । 

তাই বলি একটু চাইছি অন্ধকার । না পেলে ছটফট করি আর সাথে নাগাড়ে চলে "মশাই, একটু অন্ধকার পাই কোথায় বলতে পারেন ?"

No comments:

Post a Comment