11 Nov 2015

পরীক্ষার্থী ও শিখা


জীবনের সবথেকে বড়ো ধৈর্যের পরীক্ষায় বসলাম ।

খোলা আকাশের নীচে কালচে ধোঁয়াটে ছাদ । এই একলা পরীক্ষার্থীকে ঘিরে কাছেদূরে এ-বাড়ির গা ও-বাড়ির গা । এ-ছাদের পাঁচিল ও-ছাদের পাঁচিল । এ-চিলেকোঠার ঘর ও-চিলেকোঠার ঘর । প্রায় সবেতে-ই আস্তানা গেড়ে বসেছে টুনির ঝলমলে পরিবার । এমন উৎসবমুখর পরীক্ষাগারে দিব্যি হাওয়া । চামড়াশুকানো ঠাণ্ডা । কোনাকুনি একটা সিমেন্টের বেঞ্চের তলায় মোমবাতি । মাথায় তার নিভুনিভু জ্বলন্ত, শিখা উন্মত্ত ।

ছবিতে বুক উঁচু । হলদেটে ক্লিভেজ - কোমর বেঁকানো । পুরো সেডিউজড্ । একনিমেষে খুলে ফেললাম । বেরিয়ে এলো কতকগুলো বারুদকাঠি । চুমকির মত ঝিকিমিকি সবকটাই । একটা বাছলাম । মোমবাতির দিকে এগোলাম । নিরীহ কামানের মত তাক করা হলো । শিখার মুখ খালি এদিক ওদিক করছে, "প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও, পায়ে পড়ি" । তাও শিখাকে হ্যারাস করে যাচ্ছি । তার মুখে কাঠি খুঁচিয়ে মলেস্ট করে যাচ্ছি । একবার ভাবি তার মুখখানা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরি তাহলে শুভকাজটা সেরে নিতে পারবো । না, সারামুখে শুধু আগুন । পুড়ে যাবে হাত । অগত্যা খুঁচিয়ে দিতে থাকি তার অস্থির মুখে । মাঝেমধ্যে এদিক ওদিক তাকাই । পাক খাওয়া খ্যাঁক হাওয়া, উত্তর না জানা অসহায় আমি আর একগুঁয়ে জেদী শিখা । ত্রিকোণ ক্যাওস । প্রেমের এক বারুদ-ও লক্ষণ নেই । 

কোমর টনটন করছিলো । হাঁটুর ডিম পচে যাচ্ছিলো । চোখের তারা গলে গিয়ে খসে পড়ে যাবে এমন ট্রানজিশন । শিখা কখন যে আমার দিকে তাকাবে ? ততক্ষণে শিখার বয়স একমিনিটের হিসেবে একটা বছর ধরলে পনেরো-ষোলো মিনিটে ষোড়শী হয়ে গেছে । কোন যে শাস্ত্রের একটা শ্লোকে বলা আছে - ষোড়শী রমণ সর্বব্যাধিহর । শাস্ত্রের এমন বচন কি মিথ্যা হয় ? কাঠির প্রথমাংশ শুধু কালো হয়ে গেলো ।

আকাশের দিকে নিরুপায় মুখ তুলি । রকেটগুলো উড়ছে । ফেটে ফোয়ারার মত লাল-সবুজ-সোনালী হয়ে আকাশের কোষ্ঠ প্রকোষ্ঠ ভরে দিয়ে মিলে যাচ্ছে । হঠাৎ দেখি হাওয়া নেই । কেবল আমি আর শিখা । আর কেউ নেই এই একলা ছাদে । সাথে সাথে শিখা স্থির হয়ে আমার দিকে তাকালো । তারা ফুটলো অবশেষে । 

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে সহনশীলতা একান্ত কাম্য । তৃতীয় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি কোনোমতে গ্রাহ্য নয় । এটাই রি-উপলব্ধি করলাম পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ।

No comments:

Post a Comment