2 Feb 2014

ছুটি



ছুটি নিলো । কে আবার নেবে ? খেটে মরা দেহ থেকে খসে পড়া মন । তবে হঠাৎ করে নয় । 'Species' বলে একটা মুভিতে যেভাবে ডেভেলপ্ করতে করতে আকারে ও আয়তনে বড় হলো , তারপর টুপ্ করে খসে পড়লো মাটিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন মানবদেহী একটা প্রজাতিবিশেষ , ঠিক সে-ই রকম করে টুপ্ করে খসে পড়লো মনটা । গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে নিজে । কিন্তু ওইটুকুতে-ই মিল । বাকিগুলোতে সিপিএম বনাম তৃণমূল । সে যাই হোক ।  

এই ছুটি কিছুদিনের জন্য কিম্বা স্বল্পমেয়াদের চিরকালীন সমাহার । এই ছুটি যা তা রকমের যেই সেই ছুটি নয় । জানি না কিসের ছুটি যদিও স্বঘোষিত সরকার-ই ছুটি ।

একলা ছুটিঘরে বসে আছে এই স্বতন্ত্র বিদেহী মন । একা একা । তার কাছে কেউ আসবে না বা সে নিজে কারোর কাছে যাবে না । মেইন এন্ট্রির মুখে 'নো এন্ট্রি' । আবার প্রস্থানের মুখেও একটা লাল শক্তিশালী পাকাপোক্ত ক্রস । কিন্তু এইসবে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । এমনকি 'ডোন্ট ডিস্টার্ব' এর মত কর্মব্যস্ততার মনোভাব বা নিভৃতে যৌনমিলনের মনোবৃত্তি নেই । নিষ্কাম লিঙ্গহীন মন । 

শূন্যে ভাসমান একটি চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছে এখন সে আপন মনে । চেয়ারটার পা নেই , হাতল নেই , হেলান দেওয়ার পিঠ-ও নেই , আছে শুধু বসার জন্যে উপযুক্ত আরামদায়ক জেলিপদার্থ যা কয়েকটা বিশেষ নিউরোন দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । একেকটা নিউরোনের মধ্যে রয়েছে মনের জন্যে একেকরকম স্বাদের খাবার । টকদইয়ের 'ক' থেকে শুরু করে তেঁতুলের 'চন্দ্রবিন্দু' অবধি পার্মুটেশন এন্ড কম্বিনেশন পদ্ধতিতে রান্না করা । এই কটা-ই তার ছুটির সম্পদ । 
 
তার পেছনে পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে রয়েছে লালচে সাদা দেওয়াল , দেওয়ালের গা বেয়ে ছোটো বড় অসংখ্য শিরা ধমনী । এগুলো সাপের চেয়েও নিষ্পাপ এবং সবগুলো-ই নির্বিষ । দেওয়ালের মাঝখানে একটা পিন ফোটার মত একটা ফুটো আছে যা দিয়ে দিনে একবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে মিষ্টি রক্ত চুঁইয়ে পড়ে । একই ধারায় একই গতিতে একমুখী রক্ত । চেয়ারটির সাথে বেঁধে থাকা একটা ব্যাগে জমা পড়ে । মনতেষ্টা মেটাবার তালে । 

চেয়ারের সামনের দিকে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর হয়ে আছে অনেকগুলো গল্পিকা উপন্যাসিকা । সমান্তরাল ভাবে । ওরা সবাই যেন যোগাসনে ব্যস্ত । কেউ শীর্ষাসন , কেউ পদাসন , কেউ আবার ভুজঙ্গাসন, আর কীসবাসন । এরা এত ব্যস্ত যে মনটা কি করবে বুঝতে-ই পারছে না । ঘন্টার পর ঘন্টা এক-ই ভঙ্গিতে চলে আসনগুলি ।  সবগুলো নির্বিকার । কার ধ্যানভঙ্গ আগে-ই করবে সে নিজে জানে না । সে চেয়ার থেকে নেমে প্রথমে পায়চারী করলো , একবার তাদের কাছে যাবে ভাবছে , কিন্তু ওদের একনিষ্ঠ  ব্যক্তিত্বময়ী ভঙ্গি দেখে সাহস কিছুতে-ই কুলোয় না তার । কারণ সে নিজে একটা ছন্নছাড়া , অগোছালো , অলস , অস্থির , বেহিসেবী প্রকৃতির । এদের সাথে তার কোনোদিন কি স্থায়ী প্রেম করতে পারবে ? পারলেও কি এদের সময় দিতে পারবে কি সময়ে অসময়ে দুঃসময়ে ? এইসব প্রেমজ্ ভাবনা ঝেড়ে মনটা আবার ফিরে গেল তার প্রিয় চেয়ারটির কাছে । খুব ক্ষিদে পেয়েছে । চেয়ারের একটা নিউরোন পটাং করে ছিঁড়ে মুখে নিলো আর চুষতে লাগলো ।

এমন সময়ে তার চোখে পড়লো একটা ছোটখাটো গল্পিকা যে এতক্ষণে ধনুকাসনে মগ্ন ছিলো । চেহারাখানি ছোট হলে কি হবে ? এর আসনের ভঙ্গিতে রয়েছে এক অসামান্যা তেজ আর জেদ । তার সারা শরীর বেয়ে যেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটা অদৃশ্য বুনোবিড়াল , তর তর করে ঘাম ঝরছে তার কপাল বেয়ে , ঘামের বিন্দুগুলো কাঁধের কাছে এসে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে পড়লো । তার উজ্জ্বল চোখদুটি আস্তে আস্তে ঘুরে এলো মনটার দিকে । চোখদুটিতে এমন কিছু একটা মাদকাসক্তি চাহনি আছে যা দেখলে-ই বুক কেঁপে উঠবে । মনটার কিন্তু এতে কোনো হেলদোল নেই । সে খালি স্থির হয়ে দেখে-ই যাচ্ছে সেই বুনো গল্পিকার দিকে । একরকম ভেবলীকান্ত হয়ে । তার এই বেহাল বুঝে চেয়ারটি যেন প্রথমে প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দুলে উঠলো । মনটা টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো আর গড়াগড়ি খেলো । গড়াতে গড়াতে সোজা গিয়ে পৌঁছালো সেই তেজস্বিনী গল্পিকার কাছে ।

এই গল্পিকাটি কিন্তু অনেক আগে-ই অন্য কোনো এক অপরিচিত বুড়োমনের কাছে তার প্রথম কুমারীত্ব হারিয়েছে । অনেকের হাতে ঘুরে এসেছে । কিন্তু এই মনটার কাছে নতুন । আদ্যোপান্ত একদম ফ্রেশ । বুনোবিড়ালী জালের ফাঁদে পা যখন পড়েছে সে কী আর করবে ? মেনে নিলো এটা-ই তার নেওয়া ছুটির প্রথম এবং প্রধান রসদ । 

ঘরের ছাদে ছুটির ঘন্টা "পড় শালা মন দিয়ে" এই শব্দধ্বনিতে বেজে উঠলো বার বার

No comments:

Post a Comment