26 Jan 2014

কবিতার বিয়ে


গাঁড় মেরেছে ! আজ কবিতার বিয়ে । আরে !! কিছু গিফ্ট কেনা হয় নি যে । এদিকে আজ আবার আমার তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী । কি যে বিড়ম্বনায় পড়লাম । আজব বিপত্তি । আজ অব নাউ ।

বারকয়েক আড়চোখে রোবোমিতার বামস্তনে ভেসে ওঠা আজকের ডেট দেখে নিলাম । মনে আড়াই-রাশ বিরক্তি নিয়ে রোবমিতার কাঁধে ঝোলানো আমার জামার বুকপকেট থেকে বের করলাম দশ ভাঁজ করা ল্যাপটপ । বিরক্তি আরো দেড়গুণ বেড়ে গেল এই আজব প্যাঁচালো পোস্টমডার্নাইজ অপদার্থের ভাঁজ খুলতে খুলতে । এর চেয়ে টাইট ব্রার হুক আপ্রাণ চেষ্টা করে খুলে দেওয়া টের অনেক ভালো যে ছিল সেটা এতক্ষণে মনে পড়ল । এই আপশোসের চোটে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে দশম ভাঁজটি খুলে দিলাম । শেষে ন্যাংটো ল্যাপিমণি-কে কোলে নিয়ে বসলাম । ওপেন করলাম কবিতার নিমন্ত্রণপত্র । আগে খুলে দেখা হয় নি কারণ আমার পশ্চাদ্দেশে বাঁশের পর বাঁশ খাওয়ার সুবাদে একদম সময় পাই না, তা বলা-ই বাহুল্য । 

যাই হোক, খুলে দেখি এ যেন ঠিক সাধারণ নিমন্ত্রণ নয়, এটা একটা কবিতামন্ত্রণ । কবিতার ছন্দে , কবিতার মাত্রায় , কবিতার ভাবমূর্তিতে , কবিতার শব্দবিন্যাসে , কবিতার উপস্থাপনায় , বাপ-মাহীন কবিতার নিজস্ব ভঙ্গিতে । পড়তে পড়তে একনিমেষে বিরক্তিভাবটা কখন যে কেটে গেল আমার ।

মনে পড়ে গেল কবিতার সাথে আমার প্রথম আলাপের দিন সেদিন ছিল কুড়ি না বাইশতম প্রজাতন্ত্র দিবস । আর । আজ সেই কবিতার বিয়ে । আজব প্রজাতন্ত্র । আ জবলাইফ । 

ফের মুখ বিকৃত করলাম । চটজলদি ভুলে যাওয়ার জন্যে রোবোমিতার ডানস্তনের বোতামটা টিপলাম । এক ঝটকায় আমার বাম গাল পাতলাম । দুই ঝটকায় রোবোচড় এসে পড়ল যথাস্থানে । iRobot Corporation Ltd . এর তৈরী এই রোবোমিতা আজ অবধি কোনো কাজে ফেল করে নি । একটা কাজেও ডিফেক্ট নেই । আজোবধি Debugger এর দরকার পড়ে নি । সব কাজে সে সুপারনিপুণ । সুপারপটু । সুপারদক্ষ । সুপারস্মার্ট । এমনকি সুপারলেডি ইন বেড ।

খানিকটা ধাতস্থ হওয়ার পরে আমি দেড় চোখ বন্ধ করলাম । আধখোলা চোখ দিয়ে পাত্রের নামটা চট করে দেখার চেষ্টা করলাম । আধবোজা চোখে যেটুকু পড়ল তাতে-ই ভিরমি খেলাম । যেন ভয় পেল রোবোমিতা আমার এই দশা দেখে । পায়ের চাকার স্পীড বাড়িয়ে জলের গ্লাস নিয়ে এল । জল খেলাম কোনোমতে । ননসেন্স ! হাউ সিলি ! এটা কি করে সম্ভব হল ?! কবিতার পাত্র সত্যি এরকম বিশাল বড় মাপের বাল ?! পাত্রের নাম বালকুমার ! পদবী তার বিচি ! 

অসম্ভব । সত্যি অসম্ভবভাবে অসম্ভব । এই বালের সাথে কবিতার কবে আলাপ হল ? জানতাম না যে । বোধ হয় এতদিন এতবছর ধরে নিজের বাল ছিঁড়তে ব্যস্ত ছিলাম , তাই কোনোদিকে আমার হুঁশ ছিল না । সেই শেষদিনের পর আর কোনো খবর নিতাম না তো কবিতার । হয়ত আমার গবেষণার কাজের চাপের দোষ । কিম্বা কবিতার দোষ ।

রাগের মাথায় চুল ছিঁড়তে লাগলাম । পা দিয়ে ঠ্যালা মারলাম সামনের টেবিলটাকে । উল্টে পড়ে গেল । টেবিলের উপরে রাখা ছিল আমার বর্তমান ব্যর্থ গবেষণার কাগজপত্র । এই গবেষণা একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় নিয়ে । বিষয়টা হল - "মানুষ যখন অসম্ভব রেগে যায় তখন মাথার চুল ছেঁড়ে । কেন বাল ছেঁড়ে না ? আর মানুষ যখন আনমনে থাকে তখন নিজের বাল কেন তার অতিপ্রিয় বস্তু হয়ে ওঠে ?" - এই বহুদিনের নিষ্ফল কারেন্ট গবেষণার কাগজপত্র সব হাওয়ায় উড়তে থাকল । টাল খেয়ে খেয়ে কাঁচের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল সারা ঘরে ।

রোবোমিতা হয়ত কিছু একটা যেন আঁচ করল আমাকে এই অবস্থায় দেখে । কারণ সে তার পায়ের চাকা নিঃশব্দে গড়িয়ে আমার পাশে কখন যে এসে বসল খেয়াল করি নি । আমার মাথায় হাত বুলালো সে । মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা । সেদিন ছিল আমার আর কবিতার শেষ দেখা । সেদিনে একটা ছোট ঘরের মধ্যে আমি আর কবিতা ছিলাম । আর কেউ ছিল না । একদম নিবিড় সম্পর্ক ছিল আমাদের দুজনের মধ্যে । আমার হাতে ধরা ছিল একটা পেন । কবিতা তার রহস্যময়ী শরীর নিয়ে বার বার সরে যাচ্ছিল আমার চোখ থেকে , আবার ফিরে আসছিল নতুন নতুন চেহারায় , চমকপ্রদ রূপ নিয়ে , বিবিধ ভাবমূর্তি নিয়ে । কবিতার সেইসময়কার চেহারা ছিল বহুমাত্রিক । আমার হাত কাঁপছিল উত্তেজনায় । পেনটা ঠিকমত ধরতে পারছিলাম না । কবিতার স্তনদুটি এত সুগঠিত সুঠাম সুগোল ছিল সেইসময় যে যেকোনো কবি নিজেকে ভাগ্যবান মনে-ই করত । টেবিলের উপরে রাখা কমদামী ল্যাম্পের আলোতে সাদা পাতায় কবিতার উগ্র ছায়া পড়েছিল । এই ছায়া যেন অচেনা হয়ে উঠতে থাকছিল । আমি আমার পেন দিয়ে সেই ছায়াকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম । কিছুতেই পারছিলাম না । কবিতা যেন সেদিন প্রথম আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিল । এই বিশ্বাসঘাতকতার মাত্রা এতখানি প্রকট ছিল যে আমি সাদা পাতাটা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম আর কবিতাটা যেন আর্তনাদ করে উঠল নিজের ছায়ায় আঘাত পেয়ে । গভীর এক ক্ষতচিহ্ন নিয়ে কবিতা ধীরে ধীরে সায়া-ব্লাউজ-শাড়ী পড়ে নিল আর মিলিয়ে গেল আমার চোখের সামনে থেকে । তারপর এতদিন আর খোঁজার চেষ্টাও করি নি । সেদিনও ছিল আরেকটা প্রজাতন্ত্র দিবস । খুব সম্ভবত পঁচিশ বা সাতাশতম । পাঁচ বছরের দীর্ঘ কাব্যসম্পর্ক একরকমভাবে থেমে গেছিল চিরকালের জন্যে ।

আজ এই আলিঙ্গনরতা রোবোমিতা আমার জীবনসঙ্গিনী । সবে তিন বছর হল আমার বর্তমানের গবেষণার দৌলতে তার সাথে আমার গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছিলেন iRobot-এর কর্তারা । আমার জীবন এখন পুরো রোবোময় । এক প্রাণহীন যান্ত্রিক জীবন । বিয়ের পর থেকেই প্রজাতন্ত্র দিবসে আমি আর কখনো জাতীয় সংগীত গাই নি । গাই শুধু রোবোতীয় সংগীত । আমার সদ্যরচিত গান ।

 নাহ । আজ কবিতার বিয়েতে যাব না , চুলোয় যাক । ওই বালকুমারের দীর্ঘায়ু কামনা করি । তার বিচি শিরোধার্য করে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ি । যাতে পরদিন কিছু ফল পাই আমার গবেষণায় সেই রোজকারের আশায় । 

No comments:

Post a Comment