30 Mar 2015

নাক কেন '২'


'ম্যাথেমেটিকস্ ওয়ার্কবুক ফর কিডস্' বলে একটা শিক্ষামূলক বইয়ের একটা পেজে একটা বাফেলোর (মোষ) ছবি দেওয়া আছে । তার পায়ের কাছে, মাথার কাছে, লেজের কাছে কটা পা,কটা চোখ, কটা কান, কটা নাক, কটা শিং আর কটা লেজ আছে বলে একটা করে বক্স আছে যেগুলোতে নাম্বার দিতে হবে । ছেলে সবেতে-ই ঠিকঠাক নাম্বার দিয়েছে শুধু একটা ছাড়া । কটা নাক (নোজ) -এর বক্সে '২' দিয়েছে । রিভিউ করতে গিয়ে ছেলের মা শুধালো, "নাক '২' কেন?" । জবাবে ছেলে ছবিতে দেখানো বাফেলোর লম্বাটে মুখের সামনের দিকে একটা ফুটোতে আঙুল রেখে ওয়ান, অন্যটাতে আঙুল রেখে টু বললো । সেই শুনে একচোট হেসে নিলো ছেলের মা যার জেরে বিছানা একটু নড়েছিলো । বিশ্রামরত আমার চোখদুটো আর ঠাণ্ডা লাগার কারণে নাকের শুধু ডানফুটোটা বন্ধ ছিলো । বিছানাটা নড়ে উঠতেই চোখদুটো খুললো আমার । নাকের ডানফুটোটা খোলেনি সেটা বলা বাহুল্য । একটু ঝাঁঝ মিশিয়ে বললাম, "কি হলো আবার?" । তখনো হেসেই যাচ্ছিলো সে, সাথে ছবিটা দেখিয়ে জানালো বাফেলোর নাক নিয়ে কীর্তিমানের যুক্তিটা । জেনে আমারও পেলো যারপরনাই হাসি । পরক্ষণে থামতে হলো একটা কথা ভেবে ।

চোখ দুটো হয় । কান দুটো হয় । পশুদের চারটে পা, মানুষদের দুটো করে হাত পা হয় । এদের যেকোনো একটা অকেজো থাকলে তো কমজোরি হয়ে যায় সেই অঙ্গের কার্যকারিতা । তখন বেশ অসুবিধায় পড়তে হয় । নাকের বেলাও তাই । একটা ফুটো দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস না চললে নাকটাও 'কমজোরি' হয়ে যায় । নাকের যাবতীয় কাজকর্ম যেমন ভালোমন্দ গন্ধ শোঁকা বা অক্সিজেন নিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইড ছাড়া এসব পুরোপুরিভাবে করা প্রায় দুষ্কর হয়ে ওঠে । তার বদলে অনেকসময় মুখ ফাঁক করে বাইপাস করাতে হয় । এই একটা নাকের কাজ তার দুটো ফুটোর উপরে নির্ভরশীল যেমন চোখের কাজ চোখের মণিনির্ভর, কানের কাজ কর্ণগহ্বরনির্ভর । যদিও শারীরিক গঠনগত অঙ্গ হিসেবে নাক একটাই হয়, তার ক্রিয়াসম্পাদনার দায়িত্বভার সেই '২'টো ফুটোকে বয়ে নিতে হয় । সেই সরল সূত্রানুযায়ী নাক কেন '২' হবে না ? সত্যিই ছেলেটি ভুল বলেনি সেইদিক থেকে, কারণ মানুষের নাক গঠনরূপে আলাদা করে চিহ্নিত করা গেলেও বেশিরভাগ চতুষ্পদীর নাক সেইভাবে বিশেষ কোনো গঠনরূপধারক নয় । শুধু ওই দুটো ফুটোর জায়গা দিয়ে নাক বলে গণ্য করা হয় ।

আমার নাকের এই হারামি ডানফুটোটা বন্ধ না থাকলে হয়তো এতো যুক্তিযুক্ততায় পড়ে থাকতে হতো না । ভাবি, কেন এসব প্রশ্নে হাতির ছবি দেওয়া থাকে না, থাকলে ছেলে নির্ঘাত '১' দিতো ।

No comments:

Post a Comment