জয় গোস্বামী । তাঁর 'মায়ের সামনে স্নান করতে লজ্জা নেই' । এটি তাঁর স্বীকারোক্তি কিনা তা নিয়ে কারো কারো দ্বিমত থাকতেও পারে । অকপটচিত্তে বলা কথাটি শুনলে আজও অর্থাৎ টোয়েন্টি-ফিফটিনের লাস্ট ডে-তেও দাঁড়িয়ে অনেকের চোখ ব্রহ্মতালুতে উঠে যেতে বাধ্য । একটা কবিতাবইয়ের মলাটের গায়ে উল্লিখিত নামকরণের পেছনে অসার্থক-সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক । অথচ মাথাব্যাথা নেই প্রকাশকের । আনন্দ পাবলিশার্স । সিগনেট প্রেস । কারণ ততদিনে জয় গোস্বামীর খ্যাতি অম্বুজা সিমেন্টতুল্য । জয় গোস্বামী বলতে আজ বুঝি প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে আসা রবীন্দ্রদাড়িগোঁফভর্তি একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব । তফাৎ শুধু কালোসাদায় ।
আজ চারদিকে বিশেষ করে ক্লাবে, পাবে,নাইটক্লাবে, হোটেলে নিউ ইয়ার ইভের
ধুমধাড়াক্কা । নতুন বছর বরণের নামে ইরোটিক নাচের উদ্দামাক্কা । চলতি বছরের
শেষ কয়েকটা ঘন্টায় নিজেদের মনশরীরকে শেষবারের মতো চরমক্লান্তিতে সঁপে দেবার
জোরজবরদস্তিক্কা । এইসময়ে এই কবিতাবইটা খুলতেই প্রথম কবিতা চোখে পড়লো ।
তার একাংশ তুলে দিলাম নিচে -
"...জগৎ একটা হৃদপিণ্ড, রাতে তোমার হাতের ওপর এসে পড়ে এই জগৎ - দু'হাতে ধরে বসে থাকো তুমি, দ্যাখো কীরকম ধক্ ধক্ ধক্ ধক্ করে সারারাত, একদিন ভোর হবার ঠিক আগেই ওই জগৎ বা হৃদপিণ্ড নিঃশব্দে ফেটে যাবে, তার আগে বলো বলো বলে দাও ওরে বোকার মরণ নইলে পরে আর সময় থাকবে না...",
কার বা কাদের উদ্দেশে লিখে গেছিলেন জয়দা জানা না থাকলেও ঠিক এই সময় বা বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে চমকে দিতে ওস্তাদ উপরের লাইনগুলো । বছর শেষ হতে চলছে । ভোরের আলো বাসিমুখের উপরে পড়ার আগে যা বলার সব বলে দিতে হবে, নাহলে কালের নিয়মে আরেকটা বছর ঘুরে আসবে পিঠে ঠ্যালা মারতে । এক কথায় আগে যেমন মরণ ছিলে, তেমনি মরণ হয়ে থাকবে যদি না মুখ ফুটে কিছু বলো বা কনফেস্ করো ।
আপাতবিচারে আমরা সকলেই কম-বেশি মরণ । সার্বজনীন মোদী থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদীদের নিয়ে শেষে আমরা-তোমরা-বাদী । কেউ স্বীকার করবে না কী কী করেছি বা করি নি আমরা, কার কার সাথে শুয়েছি বা শুই নি, কাকে বা কাদের উপরে বোমটোম মেরেছি বা মারতে ভুলে গেছি বা একটুর জন্য ফস্কে গেলো বলে মাথার চুলটুল ছিঁড়েছি, কাকে কাকে নির্ভয়া নাম্বার দুই তিন চার বানিয়েছি বা ক'জনকে ছেড়ে দিয়েছি বা অ্যাসিড ছোঁড়ার প্ল্যান বের করেছি কিন্তু পেপারে রঙীন ছবিসহ নাম বেরিয়ে যেতে পারে ভেবে কতবার সংযত হয়েছি, কোন কোন অকাজ করি নি বা করতে চাই নি সৎপথে, কী কী ভুল করেছি, কী কী অন্যায় করেছি, কী কী ছড়িয়ে দিয়েছি, সর্বোপরি কী কী ভালোমানুষী শপথ নিয়েছি বা ছেলেমানুষী বিপথে চলেছি সারা বছরজুড়ে । কেউ মানতে চাইবে না গোটা একটা বছরের হিসেব । কেউ দেখেও দেখবে না সেই হিসেবের বিশ্লেষণী গ্রাফলাইন । মরণ আমরা সকলে । তাই রোজ ভোরের আলো এসে লুকোচুরি খেলে আমাদের দু-মুখের মধ্যে । পয়লা জানুয়ারির ভোর ও ব্যাতিক্রম নয় ।
সময় নষ্ট হয় বলে প্রতিটা ভোর আসে । সময় থাকে না বলে আগের সারারাত কেটে যায় কামে-ঘামে-উদ্দামে-নির্দমে । সময় নেই বলে নতুন বছর আসে সমস্ত হিসেব আপসাইড ডাউন করে ফেলতে । জয় গোস্বামী কি এইভাবে বছরের পর বছর ৩১শে ডিসেম্বরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন ? তাতেও সন্দেহ আছে । কারণ আরেকটা কবিতায় তাঁর কথায় বনজঙ্গলের দিকে ছুটতে থাকা একটা কুকুরের "মুখে বলের মতো কামড়ে ধরা আমার প্রাণ । দে, দে, থাম্ থাম্ বলে ওর পিছনে ছুটছি আমি ।"
ইতিহাস ছুটছে যার চেহারা এরকম - বছর ছোটে । তার পেছনে সময় ছোটে । তার পেছনে প্রাণ ছোটে । তার পেছনে মরণ ছোটে । তার পেছনে বছর ছোটে ।
"...জগৎ একটা হৃদপিণ্ড, রাতে তোমার হাতের ওপর এসে পড়ে এই জগৎ - দু'হাতে ধরে বসে থাকো তুমি, দ্যাখো কীরকম ধক্ ধক্ ধক্ ধক্ করে সারারাত, একদিন ভোর হবার ঠিক আগেই ওই জগৎ বা হৃদপিণ্ড নিঃশব্দে ফেটে যাবে, তার আগে বলো বলো বলে দাও ওরে বোকার মরণ নইলে পরে আর সময় থাকবে না...",
কার বা কাদের উদ্দেশে লিখে গেছিলেন জয়দা জানা না থাকলেও ঠিক এই সময় বা বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে চমকে দিতে ওস্তাদ উপরের লাইনগুলো । বছর শেষ হতে চলছে । ভোরের আলো বাসিমুখের উপরে পড়ার আগে যা বলার সব বলে দিতে হবে, নাহলে কালের নিয়মে আরেকটা বছর ঘুরে আসবে পিঠে ঠ্যালা মারতে । এক কথায় আগে যেমন মরণ ছিলে, তেমনি মরণ হয়ে থাকবে যদি না মুখ ফুটে কিছু বলো বা কনফেস্ করো ।
আপাতবিচারে আমরা সকলেই কম-বেশি মরণ । সার্বজনীন মোদী থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদীদের নিয়ে শেষে আমরা-তোমরা-বাদী । কেউ স্বীকার করবে না কী কী করেছি বা করি নি আমরা, কার কার সাথে শুয়েছি বা শুই নি, কাকে বা কাদের উপরে বোমটোম মেরেছি বা মারতে ভুলে গেছি বা একটুর জন্য ফস্কে গেলো বলে মাথার চুলটুল ছিঁড়েছি, কাকে কাকে নির্ভয়া নাম্বার দুই তিন চার বানিয়েছি বা ক'জনকে ছেড়ে দিয়েছি বা অ্যাসিড ছোঁড়ার প্ল্যান বের করেছি কিন্তু পেপারে রঙীন ছবিসহ নাম বেরিয়ে যেতে পারে ভেবে কতবার সংযত হয়েছি, কোন কোন অকাজ করি নি বা করতে চাই নি সৎপথে, কী কী ভুল করেছি, কী কী অন্যায় করেছি, কী কী ছড়িয়ে দিয়েছি, সর্বোপরি কী কী ভালোমানুষী শপথ নিয়েছি বা ছেলেমানুষী বিপথে চলেছি সারা বছরজুড়ে । কেউ মানতে চাইবে না গোটা একটা বছরের হিসেব । কেউ দেখেও দেখবে না সেই হিসেবের বিশ্লেষণী গ্রাফলাইন । মরণ আমরা সকলে । তাই রোজ ভোরের আলো এসে লুকোচুরি খেলে আমাদের দু-মুখের মধ্যে । পয়লা জানুয়ারির ভোর ও ব্যাতিক্রম নয় ।
সময় নষ্ট হয় বলে প্রতিটা ভোর আসে । সময় থাকে না বলে আগের সারারাত কেটে যায় কামে-ঘামে-উদ্দামে-নির্দমে । সময় নেই বলে নতুন বছর আসে সমস্ত হিসেব আপসাইড ডাউন করে ফেলতে । জয় গোস্বামী কি এইভাবে বছরের পর বছর ৩১শে ডিসেম্বরকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন ? তাতেও সন্দেহ আছে । কারণ আরেকটা কবিতায় তাঁর কথায় বনজঙ্গলের দিকে ছুটতে থাকা একটা কুকুরের "মুখে বলের মতো কামড়ে ধরা আমার প্রাণ । দে, দে, থাম্ থাম্ বলে ওর পিছনে ছুটছি আমি ।"
ইতিহাস ছুটছে যার চেহারা এরকম - বছর ছোটে । তার পেছনে সময় ছোটে । তার পেছনে প্রাণ ছোটে । তার পেছনে মরণ ছোটে । তার পেছনে বছর ছোটে ।
No comments:
Post a Comment