10 Mar 2015

মরে গিয়ে অদ্ভূত হবো


কাকে বলবো যে মরে গিয়ে অদ্ভূত হবো ?

অদ্ভূত হওয়া এমন কিছু আহামরি বাহাদুরি নয় যে বললে পিঠচাপড়ানি পাবো । তবে এটা সত্যি যে পিঠে কেউ হাত বুলিয়ে দেয় নি বহুবছর । তার সাথে চাপড়াচাপড়িও ভয়ানক মিস্ করছি । লাস্ট যেদিন পিঠে স্নেহের হাত অথবা 'সাবাশ' পড়েছিলো সেদিনেও আমার বোধ জাগে নি । যবে বোধজাগরণ শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ক্রমশ 'দুর্বোধ্য' হয়ে যাচ্ছি সবার কাছে । পিঠখানি সেই সুবাদে খাঁ খাঁ করছে । খরা চলছে পিঠজুড়ে ।

স্নানের পর কঠিনতম কাজ হলো নিজে নিজের পিঠ মোছা । জামা পরার আগে জামার পিঠের দিকটা বডি-স্প্রে করি যাতে কেউ আমার পেছন থেকে এসে চমকে দিতে পারে তার নরম দুটি বুক অারামসে ঠেকিয়ে আর চোখদুটো হাত দিয়ে চেপে ধরে 'বলো তো কে আমি ?' । ছেলেবন্ধু হলেও আমার পিঠের মানচিত্র পাল্টে যাবে না । কিন্তু বহুদিন হলো কেউ আসেনি এভাবে চমকে দিতে । বাড়ি ফিরে আলমারির বড় আয়না আর হাতের ছোটো আয়না মিলে নিজের পিঠ ঘুরেফিরে দেখে নিই কোথাও অচেনা নদী বইছে কিনা ?! 

ফোটোজেনিক সব পিঠখোলা ব্লাউজ । মাঝবরাবর সুগভীর খাঁজ আর উপরের দিকে মাত্র একটা ফিতে বাঁধা এমন পিঠ যার তাকে আমার ওভারস্মার্ট লাগে ব্যাকলেসনেস নিয়ে আত্মখিল্লি করার জন্যে । প্রাণখোলা হাসির চেয়েও যেন অনেকদামী এইসব হা-হা-হা করে হেসে ওঠা খোলাপিঠ । এরকম একটা প্রিন্টেড ফটো হাতে পেয়ে চুপিচুপি উল্টে দেখি । কেমন যেন সাদাটে এদের বুক । ভাবি ফ্রন্টলেস ব্লাউজের সাজেশন দিলে আমার পিঠে আদৌ 'এই অসভ্য ছেলে কোথাকার' চাপড় পড়তো ? লজ্জানিরোধক চড় আবশ্যিক হলেও আমার পিঠ আমার গালদুটোর কাছে কখনোই যেতে পারবে না ।

আমার সর্বকালীন প্রিয় কমেডিয়ান সন্তোষ দত্তের চড়ার সেই মজার দৃশ্য দেখে উটের পিঠকে ভালোবেসেছি । হাতির পিঠে চড়ার প্রথম অভিজ্ঞতা অ্যানিমাল প্ল্যানেট চ্যানেলে দেখে অর্জন করেছি । রাজা বিক্রমাদিত্যের পিঠ কতবার বেতালের রোমশ সাদা ভূতুড়ে বুকের সাথে যোগাযোগ করেছে তার হিসেব মনে নেই । আর আমার পিঠের কোনো বর্ণনা আজও দেয়নি আমার বৌ আর ছেলে । বরং নিজে নিজে তুলনা করি এই ভেবে - বিয়ের আগে প্রেমচলাকালীন বেশ কয়েকবার বিক্রমাদিত্য হয়েছিলাম আর বিয়ের পরে ছেলের সাথে খেলতে খেলতে এখনো উট কিম্বা হাতি হয়ে যাই ।

এখন সবাই মনেপ্রাণে পিওর নিউক্লিয়ার, অথচ ফেসবুকচত্বরে যৌথভাবে থাকতে কারো আপত্তি নেই । পিঠোপিঠি ভাইবোনের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে আবিষ্কার করে ফেলি ব্লক মানে বন্ধুর পিঠ যেটাকে আর ঘোরানো যায় না । তার চেয়ে বরং বাস্তব বলে সই পিঠের পুরোনো আঁচড়কাটা দাগ । মাঝেমাঝে পিঠের ব্যাথা মনে করিয়ে দেয় যে জীবনমৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মেয়াদ কমতে থাকে । 

কিন্তু কাকে জানাবো মরে গিয়ে অদ্ভূত হবার এই সুপ্ত বাসনার কথা ?

No comments:

Post a Comment