বুকের ছাতি তেমন চওড়া নেই আমার । চর্বিটর্বি এমন কিছুও নেই বলে
কঙ্কালঢাকা পাতলাচামড়াযুক্ত রোগাবুক ফুলিয়ে বাঙালিত্ব দেখানোর মত
সুবর্ণসুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় । আমি কি মনেপ্রাণে বাঙালী ? নাকি বাংলায়
জাস্ট লিখি-পড়ি-খিস্তোই আর উল্টোদিকে জীবনে সারভাইভ করার জন্যে মাঝেমাঝে
অক্সফোর্ড ডিকশনারি বই বের করি ? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হল আমার ভিতরে যে
ছটফটে কঙ্কালটা আছে সেটা কি বাঙালী জাতের স্ট্রাকচার ? হতে পারে এটা একটা
অযৌক্তিকতার প্রশ্ন । কিন্তু আঁতে আঁতে কত যে উত্তর দাপিয়ে বেড়ায় সেগুলো
নানা জটিলতায় ভর করে যেকোনো প্রশ্নকে এক ধাক্কায় সহজতম করে দিতে ওস্তাদ ।
ঠিক সেরকম আঁতেলমার্কা উত্তর দিতে গিয়ে যদি বলি যে আমার ভিতরের ছেলেমানুষী
কঙ্কালটা আসলে একটা হাড়কব্জা যেটাকে চামড়া দিয়ে ঢেকেঢুকে রাখা থাকে মমির
মত । সুতরাং আমরা একেকটা চলমান বা জীবিত মমি । এটাই হলো বাঙালীর জাত অর্থাৎ
এক উৎকৃষ্টমানের পিওর আঁতেল ।
এবার বাঙালী পরিবারে বড় হওয়া একজন
মমির পক্ষে নিজেকে বাঙালী বলে দাবী করার পেছনে সঙ্গত কারণ আছে । যেমন আমার
মমিটা ছুটির সকালে উঠে প্রথমে ইংলিশ নিউজপেপার নিয়ে পড়ে । তারপরে সে তার
ল্যাদপ্রবণ হাত বাড়িয়ে দেয় বাংলা কাগজের দিকে তাও যদি সময় থাকে । কাজের
দিনে তার অফিসে সমস্ত কমিউনিকেশনের মাধ্যম ইংলিশ । শুধু কথা বলে বাংলায় ।
তাও অন্যান্য বাংলাভাষী মমিদের সাথে । আর বাকি অবাঙালী মমিদের সাথে বকে
ইংলিশে । তাহলে নিশ্চয়ই খাঁটি বাঙালী তো আমার এই গোবেচারা মমি । টু বি
সঠিক, দোভাষী বাঙালী এই মমিটা ।
এমনকি তার ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে ।
ফার্স্ট ল্যাঙ্গোয়েজ ইংলিশ হলেও সেকেণ্ড ল্যাঙ্গোয়েজ অবশ্যই বাংলা । অ আ ই
ঈ শিখছে আর বাদবাকি সব বই হয় ইংলিশে ছাপা, না হয় খোদ ইংলিশের বই । অমন
পুঁচকে মমিটাও কি তাহলে বাঙালী নয় ? আবার তার ঠাকুর্দার মমির
সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত জমানায় বাড়িতে বাংলার কাগজ পড়া, আর অন্দরমহলের
লোকজনের সাথে বাংলায় বকর বকর করা ছাড়া সবকিছুই ইংলিশে চলতো । বর্তমানে
ফেসবুকে ইংলিশে ঝাড়ে কারণ বাংলা হরফে লিখতে অভ্যস্ত হতে পারে নি । শুধু
পড়তে পারে আর মন্তব্য করে ইংলিশ হরফে, নতুবা শুদ্ধ ইংলিশ ভাষায় আরামসে টাইপ
করে । সে কি তাহলে বাঙালিয়ানা বজায় রাখতে ব্যর্থ ? বাকি বলতে মা-বৌদের কথা
আর তুলতে মন চাইছে না যতই বাঙালী হোক । এরকম মনে হবার কারণটা কি ?
বাঙালীমাত্র পুরুষতান্ত্রিক বলে ?
তা এতকিছু বকছি কেন ? যা বলছি
তার অর্ধেক মানে তো বোঝা গেলো না কিম্বা বলার উদ্দেশ্য ঠিক পরিষ্কার লাগছে
না, কেন ? বাঙালীর তকমাআঁটা কখনো শুকোয় না বলে ?
বাঙালী গায়ে বাঙালী
জ্বর নিয়ে এতো বাঙলামি করা কি হাস্যকর নয় ? আজকের দিনটা বিশেষ একটা দিন
কিনা যার কারণে ফেসবুকব্যাপী ছবিতে দেখা বাংলাদেশের লালরঙের গোলমত
জিনিসটাকে 'বুলস্ আই' ধরা হচ্ছে । আর তাকে নিশানা করি মোবাইলের রিদমিক
কিপ্যাডে সুইচ করে অথবা ল্যাপটপের অভ্র বের করে বাংলায় টাইপ করে
শুভেচ্ছামার্কা প্যারা বাই প্যারা তীর নিক্ষেপ করে । কেন ?
ওরা
বাঙালী আর তাদের দেখাদেখি আমরা ভাবতে, ভাবনাচুরি করতে, নিজের স্টাইল বের
করে একটুখানি আলাদা হতে ভালোবাসি । ভালোবাসি দুমুখো বাঙালী হতে । বাংলা
ভাষায় সেই দ্বিচারিতা প্রকাশ করতে আমাদের বুক কাঁপে না । বোধ হয় ।
অবশ্যই এটা বলতে বাধা নেই - বাংলাভূমিটা একবার কেঁপে উঠলে আমরা ভয়ে এদিক ওদিক চাওয়াচাওয়ি করি ।