3 Nov 2016

স্মার্ট-বুলেট


খুঁচিয়ে তোলা হয় অন্তর্দাহ
কাঁটাচামচ দিয়ে,


ছড়িয়ে আছে
পৌষমাসের পুরোনো কিছু আসবাব,
সর্বনাশের মুখে
ঝুলে আছে ঝলসানো কাবাব ।


কারো শনিবার,
কারো রবিবার । 


স্মার্ট-বুলেট,
খুবই স্মার্ট একটা বুলেট ।

যা বেরোবে সাধারণ খেলনা বন্দুক থেকে
বিঁধে যাবে কারো পেটে, কারো বুকে,
কারো পিঠে, কারো বা সেক্স অর্গ্যানে;
ফোন স্ক্রীনে তক্ষুনি আসবে ক্রিমিনাল চার্ট ।


কারো আঙুলের ডগায় শনিবার
কারো হাতের শুকনো তালুতে রবিবার ।


স্মার্টবুলেট গলে যাবে
নিরপরাধের শরীরে ।
বিছিয়ে যাবে হাইড্রোফিলিক পলিমারের সাম্রাজ্য
গড়ে উঠবে পটাশিয়াম ফেরেটের সৈন্যশিবির ।


স্মার্টবুলেট বিষিয়ে যাবে অপরাধী,
খুনি, ধর্ষক আর ধর্মান্ধদের শরীরে শরীরে ।


কারো হিংস্র আমিষ শনিবার
কারো নিরামিষ সহিষ্ণু রবিবার,


এর সাথেও
কারো চাই একটিমাত্র নিরিবিলি স্মার্ট শনিবার
কারো প্রাণপণে চাই নিষ্প্রভ কয়েকটি রবিবার ।

12 Sept 2016

থাকতে চেয়েছিলাম চুপ করে


থাকতে চেয়েছিলাম চুপ করে
এরা কিন্তু তাই থাকতে দেয় নি
আমি অনুপম রায় নই
এরা আমার মুখে খোদাই করে দিয়েছে
দাঁতসুদ্ধু হাসি ।


অভিনয় জানি না
এবং দাঁতগুলো ধবধবে সাদা নয় বলে
হাসিটা হাসিই ছিলো,
সাজানো ছিলো প্রকৃত হাসিই
দাঁত ও ঠোঁটের বৈঠকে । 


তিস্তার ফ্রকের কোলে রাখা
ধূসর পাথরগুলো খুব জোর হেসেছিলো
আমাকে দেখে
হাসিমুখে অপেক্ষা করছিলাম
আত্মকথা শোনার জন্য । 


কার আত্মকথা ? তিস্তার নয়,
ওই পাথরগুলোর আত্মকথা ।
তিস্তা হাসে নি তো
আমাকে দেখে, সে শুধু
ফেলে দিয়েছে পাথরগুলো তার ফ্রক ঝাড়িয়ে ।


একটা পাথর কুড়িয়ে নিলাম
আরেকটা নিলাম, আরো দুটো
আরো আরো
এদের আত্মকথা নিশ্চয় আলাদা আলাদা
এই ভেবে ভেবে শেষ হয়
ধূসর পাথর কুড়োনো ।


জানি না কেন হাসি নেই তিস্তার মুখে
বরং এতো কৌতূহল তার চোখে
তার কারণ আমার হাসি নয়
এই পাথর কুড়োনো জীবনটাও কি আমার !
এটাই বোধহয় তাকে একটু ভাবালো । 


হেসে নিলাম আবার, আরো কিছু সময় নিয়ে
এরপর তো থাকতে হবে চুপ করে
আমার আত্মকথা বেশ পরিষ্কার আসে
চুপ করে থাকার ভিতর দিয়ে
পাশাপাশি মিলিয়ে দেখবো ওদের আত্মকথাও ।

5 Sept 2016

ট্রেনে চড়া ভুলে গেছি


কলকাতার বুক ছেড়ে মেঠো রাস্তা ধরে দৌড়চ্ছে আমার ছোটোবেলা । তার সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেন ছুটে চলছে পাশের রেললাইন ধরে । কে আগে পৌঁছাবে মামাবাড়ি ? বোধ হয় আমার ছোটোবেলা । দেখতে দেখতে ট্রেন একসময় পেছনে পড়ে যায় । দিদা আমার মামাবাড়িতে থাকতেন । এখন উনি আর নেই । ট্রেনে চড়া ভুলে গেছি ।

কাউকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করি


কাউকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করি মাঝেমাঝে । টাকাপয়সার জন্য নয় । প্রিয়জনের প্রতি মানুষের শর্তহীন ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে দেয় । সেইজন্যে । কিন্তু একটা মুভিতে দেখলাম একজন জার্নালিস্টকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো, পরে জানা যায় তার ফ্যামিলি তার মুক্তিপণ দিতে রাজি নয়, বরং মেরে ফেললে খুশি হয় । কিডন্যাপারদের চোখেমুখে তাই একইসাথে বিস্ময় ও বিরক্তির মারকাটারি ছাপ ।

কফিরঙা এক যুবতী


কফি খেতে ভালোবাসে অনেকে । কফির কালচে বাদামী রং অনেকের ভীষণ প্রিয় । কফি থেকে ওঠা গন্ধধোঁয়া অনেকের নাকে আসে একেকটা সুখবরের মতো । কালকে দেখলাম কফিরঙা এক যুবতীকে । আমার চোখ তৎক্ষণাৎ 'অনেকের' মতো হতে না পেরে তফাতে সরে যায় ।

ধর্ষণের চেনা মুখ


ভার্জিনিটি ধরে রাখা এখন একটা প্রাচীনপন্থা । লুকোচুরি খেলতে খেলতে কুমারীকাল পেরিয়ে আসা আজকাল সমাজের নতুন শিহরণ । এই দুটোর মাঝে পড়ে যেটা জল থেকে উঠে আসা মাছের মতো কাতরাচ্ছে, তার নাম আমি অনেক ভেবেচিন্তে দিই 'ধর্ষণের চেনা মুখ' ।

হাড় চিবোতে চিবোতে


হাড় চিবোতে চিবোতে গোটা একটা পৃথিবীর ছবি ভেসে ওঠে । পৃথিবীটা কিভাবে শেষ হতে চলছে তার একটা নকসা সাজানো থাকে সেইসব চিবিয়ে ফেলে দেওয়া হাড়গুলোতে । কেউ আর দেখে না আবর্জনা বলে । নিরামিষাশী হয়ে পৃথিবীকে আরেকটু কাছ থেকে দেখার উপায় যে নেই ।

22 Aug 2016

আমি কি বাঙালী?


পুজো আসছে । তার আগেভাগে পুজোর মেজাজ শুরু হয়ে গেছে অনেকের । কটা দিন বাকী সেই কাউন্টডাউন থেকে । বইবাজারে পূজাবার্ষিকী ম্যাগাজিনের বিক্রি দেখে । গড়িয়াহাটে অটোর দৌরাত্ম্যকে ছাপিয়ে ওঠা কেনাকাটারত ভিড়ের দৌরাত্ম্য দেখে । পাড়ায় কারো ফ্ল্যাটে দল বেঁধে গানের রিহার্সাল থেকে । কারো আবার বিরক্তিপ্রকাশ, "পুজো আসছে ? সে অনেক দেরী, দেড়মাস মত ।"

কিছুদিন হলো আমার মায়ের যুগ্মপরিচালনায় ছোটোদের নাটকের পরিচর্যা শুরু হয়ে যায় ।


গতকাল মা হঠাৎ আমার কাছে এসে বসলো । মায়ের মুখের বলিরেখা প্রতিবছরে একটু একটু করে স্পষ্ট হয় । এবারেও লক্ষ্য করলাম বাড়তি কিছু বলিরেখা যা পুজোর মেজাজের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে । আমি উইকএন্ডের শর্টটার্ম মুড একপাশে সরিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে দেখলাম । মা আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
"তুই কি বাংলা লাইনগুলো ইংলিশ হরফে লিখতে পারিস ?"


আমি নড়েচড়ে বসলাম, "কী বললে ?"


মা রিপিট করলো । আমি তাচ্ছিল্যের মুখভঙ্গি করে বললাম,
"হ্যাঁ, আমরা তো তাই করি হোয়াটসঅ্যাপে, ফেসবুকে ।"


মা শুনে মুখের বলিরেখা আরেকটু এক্সটেন্ড করে জানতে চাইলো,
"চার পাতা এরকম বাংলা সংলাপ ইংলিশ হরফে লিখে দিতে পারবি ?"


প্রায় আঁতকে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম, "কেন, কার আবার লাগবে ?"


খাঁটি বাঙালি হবার সুবাদে আমার শুদ্ধ বাঙালিত্বে কে যেন ধারালো জিনিস দিয়ে খোঁচা মেরে দিচ্ছিলো ।


উত্তর এলো, "রিও-এর ।"


আহ্ ! চলছে রিও অলিম্পিক । পদকতালিকায় ভারত লাস্টবেঞ্চার হলেও আবেগের ঝড়বৃষ্টির দাপটে আমাদের সবার মন একেবারে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে ফার্স্ট । কাদের জন্যে সেটা আর বললাম না ।


যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা হলো পুজোর মুখে বাঙালিয়ানার মোড়কে থাকা মনটাকে ছুরি বসিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিলো আমাদের পাড়ার রায়চৌধুরী ফ্যামিলির অবাঙালিত্ব । ওদের যে ১৩ বছরের সুদর্শন কিশোর আছে, তার ডাকনাম 'রিও' । দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর, ফর্সা, লম্বা ছিপছিপে যা সাধারণ বাঙালী গড়পড়তার থেকে অনেক দূরে ।


'রিও'র বাবা-মা দুজনেই খোদ কলকাতার সাউথ পয়েন্টার । ওর মা অর্থাৎ আমাদের বৌদি যাকে অন্যতম হাসিখুশি সুন্দরী মনে করি সে আমার মাকে কবে একদিন বলেছিলো,
"স্কুলে রিও-এর ফার্স্ট ল্যাঙ্গোয়েজ ইংলিশ, সেকেন্ড হিন্দি, থার্ড ফ্রেঞ্চ ।"


যে ফ্যামিলিতে কারো ফ্রেঞ্চকাট নেই, কেউ হিন্দিভাষী নয়, কেউ ইংলিশে ফটাফটায় না পাড়ার কারো সাথে, সেই ফ্যামিলিচিত্রে একটা দাগ কেউ কেটে দিলো । কার বা এমন ডিসিশন বাংলা ভাষাকে পুরো অবহেলা করার সেটা এই রিও অলিম্পিকের ভারতের সোনাপদকলাভের স্বপ্ন আর পুজোর পুরোদস্তুর মেজাজের মাঝখানে এসে আমার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ালো ।


"ওদের এতো কিসের পাকামি ? বাংলায় বলতে পারলেই হলো ? থার্ডেও বাংলা রাখলো না ? ফোর্থ ল্যাঙ্গোয়েজ বলে যদি কিছু রাখতো, তাতেও বুঝি চাইনিজের হিজিবিজি কাটতো ? আলবাৎ কাটতোই ।"
মায়ের সামনে রাগের চোটে কথাগুলো বলতে বলতে মনে হলো চতুর্থ স্থানাধিকারী বাঙালী জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকারের কপাল ঢের ভালো অবহেলিত বাংলা ভাষার থেকে । রিও অলিম্পিকের মাঝে এই বাঙালী 'রিও' রায়চৌধুরীর ভবিষ্যৎ কেরিয়ার আমার কাছে একটু হলেও ধন্দে ফেলে দিলো ।


স্টারমার্কে যতবার যাই, ততবার ওই একটা বই কিনবো কিনবো করেও আর কেনা হয় না । এবারে ভাবছি গিয়ে বইটা কিনে পড়বো । বইটা হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'আমি কি বাঙালী?'

3 Aug 2016

ঠিক কোথায় মন ফেলে এসেছি


মাঝে মাঝে খুঁজি ঠিক কোথায় মন ফেলে এসেছি ।
একসময়ে দেখতে পাই রাস্তার মোড়ে একটা ছোটোখাটো ভিড়,
তাতে গিজগিজ করছে অচেনা কতজনের ফেলে রাখা মনগুলো ।
সেই ফাঁকে আমার মন আমায় দেখামাত্র হাত নেড়ে বলে দেয়, "আমি এখন খুব ব্যস্ত, তুমি পরে একদিন এসো"।

যাওয়া কিন্তু একই রকমের হয়


জায়গা কত রকমের হয় ।
যাওয়া কিন্তু একই রকমের হয় ।
প্লেন, ট্রেন, গাড়ি, বাইক ও সাইকেল এগুলো তো তার বহুরূপতা ।
যারা পায়ে হাঁটে, তাদের কাছে খবর পৌঁছায় যে,
জাহাজটা এখনো মাঝসমুদ্রে ।