8 Feb 2016

মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই


পরশুরাম বলে গেছেন, "যারা ট্রাজেডি লেখে আর তা পড়তে খুব ভালোবাসে, তারা সব মরবিড, প্রচ্ছন্ন নিষ্ঠুর । মানুষের এমনিতে দুঃখের অভাব নেই, তার উপর আবার মনগড়া-দুঃখের কাহিনী চাপাবে কেন ?" 

আমি এই উবাচ কয়েকবার পড়লাম । মাকে পড়ালাম । বাবাকে পড়ালাম । বৌকেও বাদ দিলাম না । ছেলেকেও পড়াবো পড়াবো করেও ছেড়ে দিলাম কারণ এখনো দুঃখবোধ তৈরী হয় নি যতই না কিত্ কিত্ করে কেঁদে ভাসাক । আরেকটু বড় হোক দুঃখের ঝোলাব্যাগ কাঁধে বয়ে নেবার মত ।

দুঃখের যখন অভাব নেই, তখন ধরে নিতে হবে এতো সেন্টিমেন্টাল হবার বিশেষ কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই । কেউ দিতে এলেও দূরপাল্লার কোনো ট্রেন ছুটে এসে থামবে না । কারণ সামনের দিকে সর্বদা সবুজ আলো জ্বলে উঠবেই । ওই সবুজ আলোর দিকে ছুটে পালাবে বহুলোক নিয়ে, গোটা একটা জগৎ । কেউ অন্যের দুঃখে বসে নেই । তাই দুঃখের কোনো ইউনিকনেস্ নেই । স্বকীয়তা নেই । স্বাতন্ত্র্য নেই । মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে মানুষ সুখ খোঁজে । আঁচড় কেটে রক্ত বের করে সুখের জ্বালা মেটায় । দেওয়ালে মাথা ঠুকে সুখের আলু গজায় । বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সুখী হয় । চোখের জলের অপর নাম সুখ । খানিকটা "জলের অপর নাম জীবন" গোছের । 

হিসেব কষলে হয়তো রেজাল্ট বেরোবে যে সুখের বড়ো অভাব । তাই সুখের কাহিনী কেউ লেখে না । লিখতেও চায় না সুখী মানুষেরা । নাহ্, ভুল বললাম । আসল কথাটা হচ্ছে সুখকে আমরা তাড়াতাড়ি ভুলে যাই বা মনে রাখি না । শৈশবকে সহজে মনে রাখতে পারি না ঠিক এই কারণে । এও একধরণের ন্যাচারাল নিষ্ঠুরতা । খালি মনে রাখতে পারি রঙীন রঙীন দুঃখ । সত্যিই তো ! কী বা দরকার ছিলো এতো রঙ নিয়ে দুঃখখেলার ?!

আমি এখন ভাবি সুখের নিজস্ব কোনো রঙ নেই । যদি একটুখানি সাদা সুখের সাথে একটুখানি কালো সুখ মিশিয়ে দেওয়া যায়, তবে মন্দ কিসের ?

No comments:

Post a Comment