- সময়, তোমার ব্যাপার স্যাপার দেখছি আলাদা ।
- মানে ? কিসে আলাদা আমি ?
- লোকে তোমায় সম্মান করে সেটা বোঝো না ।
- না তো ।
- বাহ্ রে শালা ! লোকে বলে তুমি নাকি নিজে গিয়ে সব ঠিক করে দাও । কথায় কথায় তোমার নাম মন্ত্রের মতো উচ্চারণ করে, 'সময় সব ঠিক করে দেবে' ।
- দূর ব্যাটা ! আজকাল লোকের অত সময় নেই আমার নাম মনে রাখার । যখন বলে, 'আমার সময় খুব কম' কিম্বা 'আমার একদম সময় নেই রে', তখন বুঝে উঠতে পারি না যে জ্বলন্ত কয়লা হয়ে পুড়ছি না ছাই হয়ে উঠছি । শুধু ভিতরে ভিতরে অসম্ভব কষ্টে মরি ।
- হুম । সে তো ঠিক । একে বলে সময়ের দুঃসময় । কেউ আর তোমার সাথে থাকতে চায় না, কারণ তোমাকে শুধু ২৪ ঘন্টায় বেঁধে রাখা হয় না । কোটি কোটি আলোকবর্ষতেও তোমার নাম পাল্টায় না ।
- আমার নাম পাল্টাবে বা কেন ?! নাম স্থিতিশীল হলেও গতি একমুখী এবং একই হারে প্রগতিশীল । যদিও মাঝে মাঝে স্লো হই বা ফাস্ট ও হই পাঁচ-দশমিনিটে লোকের লাইফস্টাইলের কথা মাথায় রেখে ।
- ঠিক ! তাই বলে তো আমি ঘড়িতে তোমাকে পনেরো মিনিট এগিয়ে রেখেছি । দেখছো না তোমাকে কত ভালোবাসি যে সামনের দিকে এগিয়ে রেখেছি । আই লাভ ইউ, সময় !
- ভালোবাসার নিকুচি করেছে ! আজকাল দেশেবিদেশে আমার নাড়িভুঁড়ি সব বের করে কীসব টেকনোলজি দিয়ে বিদঘুটে একটা যন্ত্র বানিয়ে বসছে । কী বলে তাকে যেন ?
- টাইম মেশিন ?
- ইয়েস ইয়েস । ওই ভূতুড়ে কাণ্ড চলছে আমায় ক্লোনিং করে আর উল্টোদিকে ছুটছে লোকজন । সাদাকালো স্মৃতি, সেপিয়া অ্যালবাম,মোনোক্রমের রমরমা একটু চেখে দেখতে অ্যাত্তো বাড়াবাড়ি করার মানে বুঝি না । সত্যিই বুঝছি না, ভাই !
- আরে ! এটা তো মজা । এরে কয় খ্যাতির বিড়ম্বনা । আমি হলে এরকম একটা টাইম মেশিন পেলে চড়বো-ই চড়বো । কিন্তু পাই কোথায় ? হাম গরীব আদমি হ্যাঁয় ।
- ঝাট জ্বালাস না তো । লাখ লাখ কামাচ্ছিস । আমার ইউনিট বছরহিসেব ধরলে দশটা মাইলস্টোন কমপ্লিট হলে তুই শালা কোটিপতি হবি রে । সবাইকে না হলেও আমাকে তো ভুলে বসবি নির্ঘাত ।
- কখনোই না । তোমাকে কি ভুলতে পারি আমি ? পনেরো মিনিট এগিয়ে রাখা কি চাড্ডিখানি কথা ? তাছাড়া ওইরকম একটা টাইম মেশিন পেলে তোমার অমন সুন্দর মুখখানা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাবো । বলো যাবে তো ?
- না, যাবো না । আমার কাজ শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা । বাকিসব আমাকে ফলো করে প্রতি সেকেণ্ডে । পৃথিবীর ঘূর্ণনকালের সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে উল্টোপথে হেঁটে বিশ্বকে কনফিউজড করে দিতে চাই না ।
- আরে ব্যাকএন্ডে চলবে তোমার সরি মানে তোমার ক্লোনের মোটর । আর তুমি রিয়েল থাকবে যেমনটি আছো আর ফ্রন্টএন্ডে চলতে থাকবে । কেউ কিছু করবে না । অযথা চাপ নিও না এসব নিয়ে । টেকনোলজির পক্ষে সবই সম্ভব ।
- থাক ! তুমি তোমার টাইমমেশিন নিয়ে কেটে পড়তে পারো । আমাকে আমার মতই চলতে দে ।
- কি মুশকিল ?! একটুও দেখতে ইচ্ছে করে না তোমার শৈশবকাল ? তোমার আবিষ্কারক কে সেটা আমরা কেউ জানি না, অনেকে হয়তো নানাভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছে তোমাকে নিয়ে সে বিজ্ঞানে হোক, ধর্মে হোক বা দর্শনের হাত ধরে হোক । কিন্তু নিজের ক্ষেত্র নিয়ে সেই বির্বতনের ইতিহাসে চোখ রাখতে কৌতুহল হয় না তোমার ? সময়, তুমি এত অনাগ্রহী নিজের দেশের বাড়িঘর নিয়ে ?
- স্টপ ইট ননসেন্স ! এভাবে আমাকে নস্ট্যালজিয়াতে জড়াবি না । আমার নিজের বড় একটা সম্পদ হলো নস্টালজিয়া । তাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে একদম পছন্দ নয় আমার । ওকে যত্ন করে ভাঁজ করে বুকপকেটে রেখে চলি । বুকপকেটের দিকে তাকাই না ভুলেও । শুধু চলি আর চলি ।
- তোমাকে নিয়ে আর পারি না । তোমার জেদের কাছে হার মানতে হচ্ছে । অথচ চারপাশে দেখি টাইমমেশিন নিয়ে লোকের ম্যানিয়া । আর তোমার তাতে ভ্রুক্ষেপ ও নেই । বেশ তো । চললাম আমি ।
- যা । তবে ঘড়ির ব্যাটারি চেঞ্জ করতে ভুলিস না । নাহলে আমাকে আর পাবি না ।
- দেখা যাবে । সময় পেলে চেঞ্জ করবো ।
- আগে চেঞ্জ কর । চেঞ্জ না করলে আমাকে থুড়ি সময় খুঁজে পাবি না ।
- বস্ ! আমার সময় হবে কিনা জানি না ।
- হা হা হা । রাগ করলি ? আচ্ছা বুঝলাম । আমার কিন্তু আয়-উপায় নেই । চলি আমি । শুধু চলি আর চলি ।