28 Sept 2015

লাস্ট সুতো


এটা লাস্ট সুতো । ছিঁড়ে ফেলা যায় একটু পরে । কিম্বা কাল পরশু ব্রেকফাস্ট সেরে ক্যাঁচ করে কেটে দেওয়া যায় । অথবা নেকস্ট উইকেণ্ডে লাঞ্চের পর দাঁতে চেপে একটানে পগারপার করিয়ে দেওয়া যায় । একটু দেরী হলেও সামনের মাসের সব বিল মিটিয়ে টিটিয়ে সুতোটাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা যায় । লাস্ট তো । শেষ বলে ছয় হাঁকার মত টেনশন নেই । শেষ বাস মিস করার মত তাড়া নেই । শেষ ট্রেনে উঠতে না পারার মত চাপ নেই । এই সুতোটার প্রতিকূলতার সংশয়ে ও অনুকূলতার বিষয়ে অতশত ব্যতিব্যস্ত না হয়ে সুপারকুল থাকা শ্রেয় ।

ভাষণ দিতে দিতে স্টেজে আব্দুল কালামের আকস্মিক পতন একটা ঘটনা । দুর্ঘটনাবশত ভাগ্যবঞ্চিত দুঃ গোছের কেস । প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীবিয়োগ আরেকটা কেস । হঠাৎপ্রবণ কালের নিয়মের সাথে নিজেদের তৈরী নিয়ম মিশিয়ে দেবার জন্যে কোনো হালুম শোনার দরকার নেই । হালুম শোনার আগেই বেমালুম কারুর খাদ্যবস্তু হয়ে যেতে পারে বুকের বাঁদিকের টিপটিপুনিটা । তাই বলে এতো ছটফট করার কি আছে ?! কালামের শেষ বক্তৃতায় কোনো ব্যস্ততার ছাপ ছিলো না কারণ তিনি জানতেন না ওইভাবে দুম করে নিভে যাবেন । প্রণববাবুও জানতেন না তাই সুস্থির ছিলেন অনির্ণীত বিয়োগফলের আগে পর্যন্ত, ফের যোগ দিলেন নিজের কাজের জগতে । সুতোর ব্যাপারেও একই কথা খাটে । হয় নিজে থেকে কেটে ঝুলে যাবে, না হয় মানবদেহের যেকোনো একটা সামান্য ধারালো অংশ দিয়ে সুতোটাকে 'দ্য এণ্ড' করবে । সে নরম মাংসপিণ্ডের জিভ হতে পারে, আবার রক্তবাহী মারণরোগ ও হতে পারে ।

সিএবি-এর সেই সুতোটা মিস্ করেছে জনগণ । দেখেও ভালোভাবে দেখতে পেলো না - কবে কী ভাবে লাস্ট সুতোটা বেরিয়ে গেলো । বলা যেতে পারে লাস্ট সুতোটার যা মাহাত্ম্যকাহিনী তা পরিপূর্ণ হবার সুযোগ হলো না । দরকার ছিলো একটা সুনির্বাচনের অপেক্ষা যা অতি পরম যত্নে সুতোটা কেটে ফেলে দিতে পারতো জনসমক্ষে, জনগণের মতামতের কাঁচির ধার নিয়ে । তা হয় নি । মুখ্যমন্ত্রীর সুপারফিসিয়াল দিদিগিরি অনেককাল ধরেই আমাদের মুখস্থকরা নামতার মধ্যে পড়ে রয়েছে । তার সাথে যুক্ত হলো মহারাজের জিভের বেনোজল । এমন লোভী যার হাবভাব 'সম্মানটা আগে নিয়ে নিই, যোগ্যতা পরে দেখাবো' । ঠিক দাদাগিরিসুলভ নয় । 

কেকেআর আর পুনে ওয়ারিয়ার্স দুটোতেই 'শেষ সুতো' নিয়ে দাদার তাড়াহুড়ো-গিরি কেউ ভুলবে না আশা করি । তেমনি সিএবি-তে 'যোগ্য'পদ পাবার লোভে দুনিয়ার চলতি সমস্ত অপেক্ষাকে উপেক্ষা করে লাস্ট সুতোটাকে পটাং করে ছিঁড়ে ফেলা একটা জঘন্যতম কীর্তি ।

14 Sept 2015

হারিয়ে গেলো কানের লতি দুটো


কোথায় যে হারিয়ে গেলো ফুটোসহ কানের লতি দুটো । নরম তুলতুলে । টোকা মারলে খুদে স্প্রিংয়ের মত দু-তিন নড়ক নড়ে এমন হাড়বিহীন কানের লতি জোড়া খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সকাল থেকেই ?! শুধু পড়ে আছে হীরের দুল জোড়ায় জোড়ায় । কী যে হবে এই দুলগুলোর ! আর তো ফুটোতে চড়ে ঝুলতে পারবে না । বোধ হয় কানের লতি দুটো কেউ চুরি করে নিয়েছে । হীরের দুল ছেড়ে কানের লতি ?! কেসটা কম আশ্চর্যের নয় বইকি ।

হাতের কব্জিও হাওয়া । হাতের নাড়ি যেখানে টিপটিপ করতো, সেখানে এখন একটা চারআঙুল সমান ফাঁক । মনে হচ্ছে কেউ জীববিদ্যার ল্যাবে কাজ করবে বলে কব্জিটা কেটে নিয়ে গেছে । রোলেক্স বা টাইটান বা এস্পিরিট বা ফসিলস্ এদের যান্ত্রিক কারুকার্য যেন গুরুত্বহীন আজকাল । কাঁটা ঘোরানোর পেছনে যে জটিল প্রযুক্তি কাজ করে তার মূল্য কব্জির চেয়েও কম । কী যে দিনকাল পড়েছে !

কার বা কাদের এত বড়ো স্পর্ধা এইসব চুরি করার সেটা জানি না । তবে বুঝতে পারি একটা আস্ত হৃৎপিণ্ডের দাম কত হতে পারে এই গরমবাজারে । প্রাণচুরি গেছে অথচ প্রাণহীন মানুষটা আরামসে খাচ্ছে-দাচ্ছে-ঘুমোচ্ছে এমন গল্প কেউ কোনোদিন শুনে থাকলে অবাক হবে না । কারণ টাকার লোভের চেয়ে বড় অপরাধ হলো বোধবুদ্ধির এলোমেলোতা ।

8 Sept 2015

হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়াম


অত বালবিচার না করে একটা দেওয়াল বেছে নিলাম । তার উপরে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকলাম । সারা শরীরের ভর হাতদুটির উপরে ছেড়ে দিলাম । দেওয়াল-হাত-আমি-মেঝে মিলে একটা ট্রাপিজিয়াম তৈরী হলো । বাড়তি বলতে আমার গলাসহ মাথা । হ্যাঁ গলাসহ । গলাকাটা মাথা দিয়ে হয়তো হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়ামটার মতো জিনিস বানানো সম্ভব হতো না কোনোদিন । সারামৃত্যু ট্র্যাপড্ হয়ে থাকার সত্যিই কোনো মানে হয় না । মৃত্যুরূপ জীবনক্ষুধার রয়্যাল্টি রয়্যাল চ্যালেঞ্জ দিয়েও মাপা যায় না । 

মাথাটাকে মেঝের দিকে ঝুঁকে ডান পা একটু তুলে দেওয়ালকে নিজের সমস্ত শক্তিদান করার চেষ্টা করলাম । দেওয়াল কিন্তু নিজেই একটা ধ্রুবক । জানি আমার এমন ঢ্যামনামিতে তার কিছু যায়ও না আসেও না । কিন্তু তাতে কী হয়েছে ! আমিও আমার খোলনলচেসুদ্ধ ঢ্যামনাঢ্যামনি নিয়ে এক ঊজ্জ্বল ধ্রুবতারা । যতই ঠেলা দিই ধ্রুবককে, ধ্রুবতারার মত জ্বলতে থাকি সমানুপাতিক হারে । রাতের আকাশের একধারে আসল ধ্রুবতারা দেখতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছাদের সিঁড়ি দুপদাপ করে ভাঙে, ঠিক তেমন এই নকলাধমকে দেখতে কেউ যদি ধানসিঁড়িটি চুপিসারে ভেঙে আসতো তো ভালো লাগতো ।

ক্রমেই বাড়তে থাকে । এই শক্তিবৃদ্ধির আরেক নাম হলো ফ্রাস্টুলেপনা । এর দিন নেই তো রাত থাকবে ? এর বিরাম নেই তো ব্যারাম থাকবে ? এর আরাম নেই তো হারাম থাকবে ? থাকবে না আবার ? আলবাৎ থাকবে । সব থাকবে বলেই তো কিছু আর বাকি থাকে না । শুধু হতচ্ছাড়া হাফ-লিভিং ট্রাপিজিয়ামটা একইভাবে পড়ে থাকে ।