এটা লাস্ট সুতো । ছিঁড়ে ফেলা যায় একটু পরে । কিম্বা কাল পরশু ব্রেকফাস্ট সেরে ক্যাঁচ করে কেটে দেওয়া যায় । অথবা নেকস্ট উইকেণ্ডে লাঞ্চের পর দাঁতে চেপে একটানে পগারপার করিয়ে দেওয়া যায় । একটু দেরী হলেও সামনের মাসের সব বিল মিটিয়ে টিটিয়ে সুতোটাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা যায় । লাস্ট তো । শেষ বলে ছয় হাঁকার মত টেনশন নেই । শেষ বাস মিস করার মত তাড়া নেই । শেষ ট্রেনে উঠতে না পারার মত চাপ নেই । এই সুতোটার প্রতিকূলতার সংশয়ে ও অনুকূলতার বিষয়ে অতশত ব্যতিব্যস্ত না হয়ে সুপারকুল থাকা শ্রেয় ।
ভাষণ দিতে দিতে স্টেজে আব্দুল কালামের আকস্মিক পতন একটা ঘটনা । দুর্ঘটনাবশত ভাগ্যবঞ্চিত দুঃ গোছের কেস । প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীবিয়োগ আরেকটা কেস । হঠাৎপ্রবণ কালের নিয়মের সাথে নিজেদের তৈরী নিয়ম মিশিয়ে দেবার জন্যে কোনো হালুম শোনার দরকার নেই । হালুম শোনার আগেই বেমালুম কারুর খাদ্যবস্তু হয়ে যেতে পারে বুকের বাঁদিকের টিপটিপুনিটা । তাই বলে এতো ছটফট করার কি আছে ?! কালামের শেষ বক্তৃতায় কোনো ব্যস্ততার ছাপ ছিলো না কারণ তিনি জানতেন না ওইভাবে দুম করে নিভে যাবেন । প্রণববাবুও জানতেন না তাই সুস্থির ছিলেন অনির্ণীত বিয়োগফলের আগে পর্যন্ত, ফের যোগ দিলেন নিজের কাজের জগতে । সুতোর ব্যাপারেও একই কথা খাটে । হয় নিজে থেকে কেটে ঝুলে যাবে, না হয় মানবদেহের যেকোনো একটা সামান্য ধারালো অংশ দিয়ে সুতোটাকে 'দ্য এণ্ড' করবে । সে নরম মাংসপিণ্ডের জিভ হতে পারে, আবার রক্তবাহী মারণরোগ ও হতে পারে ।
সিএবি-এর সেই সুতোটা মিস্ করেছে জনগণ । দেখেও ভালোভাবে দেখতে পেলো না - কবে কী ভাবে লাস্ট সুতোটা বেরিয়ে গেলো । বলা যেতে পারে লাস্ট সুতোটার যা মাহাত্ম্যকাহিনী তা পরিপূর্ণ হবার সুযোগ হলো না । দরকার ছিলো একটা সুনির্বাচনের অপেক্ষা যা অতি পরম যত্নে সুতোটা কেটে ফেলে দিতে পারতো জনসমক্ষে, জনগণের মতামতের কাঁচির ধার নিয়ে । তা হয় নি । মুখ্যমন্ত্রীর সুপারফিসিয়াল দিদিগিরি অনেককাল ধরেই আমাদের মুখস্থকরা নামতার মধ্যে পড়ে রয়েছে । তার সাথে যুক্ত হলো মহারাজের জিভের বেনোজল । এমন লোভী যার হাবভাব 'সম্মানটা আগে নিয়ে নিই, যোগ্যতা পরে দেখাবো' । ঠিক দাদাগিরিসুলভ নয় ।
কেকেআর আর পুনে ওয়ারিয়ার্স দুটোতেই 'শেষ সুতো' নিয়ে দাদার তাড়াহুড়ো-গিরি কেউ ভুলবে না আশা করি । তেমনি সিএবি-তে 'যোগ্য'পদ পাবার লোভে দুনিয়ার চলতি সমস্ত অপেক্ষাকে উপেক্ষা করে লাস্ট সুতোটাকে পটাং করে ছিঁড়ে ফেলা একটা জঘন্যতম কীর্তি ।